somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবাকে দিয়েই প্রথম যাদু-মন্ত্রের সফলতা যাচাই! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-১০ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)

১০ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পীতাম্বর শাহ! নিশ্চয়ই এই নাম ভুলে যান নাই। আমি জানিনা এই ব্যক্তি কে ছিলেন এবং এই নামের অর্থই বা কি? চট্টগ্রাম শহরে সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই তিনি এবং তার বংশধর একচেটিয়া ব্যবসা করে চলছেন। তাদের পৈত্রিক বাড়ী ভারতে। ট্রাকে ট্রাকে ভারত থেকে মালামাল আসে আর এসব দেদার বিক্রি হয়। হেন জিনিষ নাই, যা এই দোকানে পাওয়া যায় না। শোধন করা পারদ, লোহা জারণ, রূপা জারণ, মৃগ নাভি, কস্তূরী, রাজা-রাণী লতার গোটা, মুনামুনী লতার বোঁটা, রাজমোহিনী দানা, বাঘের দুধের ছানা, উলট কম্বলের মূল, শতমূলীর শিকড়, যৈত্রিকের ছাল, দেবদারুর শাঁস, সোনা তোলার পাতা, রূপা তোলার কাণ্ড, চিতায় পোড়ানো বাঁশ, অমাবস্যায় মৃতের কাফনের কাপড়, জন্মান্ধের লাটি, শ্মশানের ঘটি, বারবনিতার ঘরের মাটি, ঘটি চালান দেবার বাটি ইত্যাদি। এসব উপাদান সত্যাসত্য যাচাইয়ের সুযোগ নাই, কেউ যাচাই করেও না। যার দরকার শতভাগ বিশ্বাসের সহিত দরদাম ব্যতীত সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এছাড়াও তাবিজ, যাদু, টোনা, মন্ত্রের জন্য ব্যবহৃত সকল প্রকার উপাদান তাদের কাছে রক্ষিত আছে। আমি এই দোকানের সন্ধান পেয়ে পুলকিত হলাম এবং তাদের বিরাটকায় দোকানটির জিনিষ পত্র দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘুরে দেখার সুযোগ হল। দুই ঘণ্টা দাড়িয়ে অবলোকন করলাম কত বিচিত্র ধরনের কাষ্টমার তাদের দোকানে আসা যাওয়া করছে!

যাই হোক বাড়ীতে এনে বইগুলো সব যথারীতি পড়া হল। কেউ সন্দেহ করেনি কেননা আমার এমনিতেই বই পড়ার বাতিক ছিল। সন্তান হবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন বইতে অনেক গুলো তাবিজের নকশা আঁকা আছে এবং ব্যবহার বিধি ও নিয়ম পদ্ধতি বলা আছে। কৌতূহল বেড়ে গেল। এই প্রবন্ধ লিখার শুরুতেই বলেছি, বিভিন্ন বৈদ্যের কিছু পুরানো বই আমার সংগ্রহে আগেই চলে এসেছিল। সে গুলো পড়েছিলাম, তখন মাথা মুণ্ডু কিছুই বুঝিনি। কেননা সেসব বইয়ে এমন কিছু জিনিষের নাম লিখা ছিল যার সাথে আমার কোন পরিচয় ছিলনা। পীতাম্বর শাহের দোকান পরিদর্শনের পর আমার কাছে দিনের মত পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এই বইয়ে যত উপাদানের কথা বলা হয়েছে তার বেশ কিছু সেই দোকানে দেখেছি, সুতরাং বাকীগুলোও সেখানে পাওয়া যাবে। বাজারের তাবিজের বইয়ে, মানুষের ক্ষতি করা যায় এমন তাবিজের উল্লেখ নাই। তবে সংগৃহীত এসব বইয়ে মানুষের খারাপ কিছু ঘটানোর ব্যাপারে বহু তাবিজ, কবজ, মন্ত্র, যাদুর নকশা ও উপাদানের বর্ণনা আছে। খারাপ কাজের জন্য বিখ্যাত শাস্ত্রের নাম ‘রাজমোহিনী বিদ্যা’। এখানে তাবিজ গুলো বার্মা ও পার্লি ভাষায় অঙ্কিত যার অর্থ বোধগম্য নয়। তবে বৈদ্যরা নিজে বুঝার জন্য হাতের কলমে বাংলায় কিছু ব্যাখা ও বর্ণনা লিখেছেন। এতটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। সব বই গুলো একে একে গিলে ফেললাম।

মন্ত্র ও মন্ত্রের কার্যকারিতার উপর লিখিত বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যগুলো পড়ে নিলাম। কাউকে বাণ মারা, কারো মেয়ের বিয়েটা বন্ধ করে দেওয়া, কাউকে অসুস্থ করে রাখা, সবগুলো এইধরনের বর্ণনাতে ভরপুর। বিভিন্ন ধরনের চালানের মন্ত্র আছে, বাটি চালান, লাটি চালান, আতশি চালান ইত্যাদি। চোরাই জিনিষ উদ্ধার করতে বাটি চালান, চোর ধরতে লাটি চালান, কে কোথায় হারিয়ে গেছে তা জানতে আতশি চালান। রাজমোহিনী বিদ্যায় কারো ক্ষতি কিংবা কাউকে আকর্ষণ করতে চাইলে, সেই ব্যক্তির চুল, নখ, ব্যবহৃত কাপড়ের সুতা ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। ভারতীয় উপমহাদেশ তান্ত্রিকদের স্বর্গরাজ্য, একজন সঠিক তান্ত্রিক সৃষ্টি হলে, তার সাথে কমপক্ষে বিশ জন ভণ্ড তান্ত্রিক সৃষ্টি হবে। যেহেতু তান্ত্রিক হবার জন্য কোন স্কুলে লেখাপড়া লাগেনা, সার্টিফিকেটও নাই, শুধু দাবী করলেই চলে। হাতের কৌশলের সাহায্যে দুই একটি ম্যাজিক দেখিয়েও অনেকে নিজেকে তান্ত্রিক দাবী করে। কেননা মানুষ তান্ত্রিক বলে তাকেই মনে করে, যার কাছে ব্যখা যোগ্য নয় এমন কিছু কাজের উপস্থিতি আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সহজ-সরল মানুষকে ধোঁকা দেওয়া সহজ হয়। বইয়ের ভাষানুযায়ী, একজন ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ তান্ত্রিক হতে গেলে, অনেক কিছু অর্জন করতে হয়। চৈনিক পরিব্রাজক ‘হিউ য়েং সাং’ একদা ভারতের কালিকট বন্দরে এক তান্ত্রিক সাধুর নর বলি দেবার দৃশ্য দেখতে গিয়েছিলেন! অবশেষে পরিব্রাজক নিজেই বলির জন্য নির্বাচিত হয়ে যান। অতি ক্ষীণকায় এই সাধুর প্রচণ্ড শারীরিক বলের কাছে তিনি হার মেনেছিলেন। ভাগ্যক্রমে তুফান শুরু হওয়াতে তিনি প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হন। এই ঘটনা তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে লিখেছেন। তাই আমার প্রাপ্ত মন্ত্র-তন্ত্রের বইয়ের এসব বর্ণনা বিশ্বাস অবিশ্বাস কোনটাই করতে পারছিলাম না। তবে কৌতূহল উত্তরোত্তর বেড়েই চলছিল।

মন্ত্র-তন্ত্র পরীক্ষার জন্য একজন তুলা রাশির মানুষ দরকার। মাকে প্রশ্ন করলাম আমাদের এলাকাতে তুলা রাশির কোন মানুষ আছে নাকি? মা বললেন, কেন তোমার বাবাই তো তুলা রাশির মানুষ। আমাদের ঘরে কোত্থেকে যেন একটি তামার বড় বাটি এসে যায়, সচরাচর এগুলো হিন্দুদের বাড়ীতে থাকে। পাত্রটি বাবার হাতে দিয়ে বললাম, আব্বু এটা ধর, একটা জিনিষ দেখব। কি মনে করে কোন প্রশ্ন না করে বাবা সেটা ধরে বসলেন। আমার একটা হবি ছিল, এটা ওটা মিশিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। সম্ভবত বাবা নতুন কোন পরীক্ষা করছি ভেবে বাটি হাতে ধরেছিলেন। যাক সেটা আরেকটা ভিন্ন অধ্যায়। বাটি বাবার হাতে তুলে, মনে মনে বাটি চালানের মন্ত্র আওড়াতে শুরু করলাম। দেখলাম পুরো বাটি বাবার হাতের মধ্যে সেঁটে গেল। তিনি ভয়ঙ্কর ভাবে কাঁপছেন। প্রচণ্ড গতিতে দরজায় আঘাত হানলেন. দরজা ভাঙ্গতে চাচ্ছেন। আমি ভয়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়লাম। আতঙ্কে মাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার দিলাম। তিনি হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে দেখলেন, বাবার হাতে পিতলের বাটি। আমাকে হুঙ্কার দিয়ে বলল তুমি কি করেছ! তাড়াতাড়ি হাত থেকে বাটিটা কেড়ে নাও। আমি ও মা প্রচণ্ড ধস্তাধস্তি করে বাবার হাত থেকে বাটি টা কেড়ে নিলাম। বাবা জ্ঞান হারালেন! আমি কান্নায় বুক ভাসিয়ে ফেললাম। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল, কি করলাম, আর মুহূর্তের মধ্যে কি ঘটনাই না ঘটে গেল। বাবা সুস্থ হবার পর মা-বাবার হালকা তর্কা-তর্কীর মাঝে শুনতে পেলাম। মা বলছেন, ‘এই বাটি নিয়ে তুমি তৃতীয়বার এই ঘটনা ঘটালে, তোমাকে বলেছিলাম এই বাটি দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আস। কোন পাপের কারণে আবদুল কাদেরের সাথে পরিচয় হয়েছিল বুঝলাম না’। বুঝতে পারলাম এই বাটি আবদুল কাদেরই ঘরে ঢুকিয়েছিল এবং আজকের মত কাণ্ড অতীতে আরো দুবার ঘটেছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, পরিণাম সম্পর্কে ধারনা না থাকা পর্যন্ত আর কোন মন্ত্র প্র্যাকটিস করব না। এই বিষয়টি আজো সমাধা হয়নি, সেটা কি বাটির দোষ ছিল, না আমার মন্ত্রের গুন ছিল, তবে মা কোনদিন এই ব্যাপারে কথা তুলেন নি। আজ অনুভব করছি, এটা নিয়ে কোন একদিন প্রবন্ধ লিখব, আগে থেকে যদি জানা থাকত, তাহলে মাকে প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারতাম, রহস্যটা কি ছিল!

আগের পর্ব: যে ভাবীর কারণে আমি হলাম বালক পীর! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-৯ পড়তে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০০
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×