পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) ইন্ধনে বিএনপি নেতা ওয়াদুদ ভুঁইয়ার নেতৃত্বেই পাহাড়ে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। আর এ সংঘাতে সরাসরি সম্পৃক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী খুন করে পাহাড়ে আত্মগোপন করা জামায়াত কর্মীরা। সেখানে কয়েকটি এনজিওর কর্মকাণ্ডও রহস্যজনক। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘুরে এসে আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রথম বৈঠকে বসে
ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে কমিটি। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন ও ভবিষ্যতে এ জাতীয় ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে তারা।
কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটি সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ খান, কেএম খালিদ এবং যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা। বৈঠকে পাহাড়ে প্রশাসনের দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী পোস্টিং দেয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, পাহাড়ে বাঙালি-পাহাড়িরা একসঙ্গে যুগযুগ ধরে বসবাস করে আসছে। তারা শান্তিতে থাকতে চান। অথচ একটি বিশেষ মহল সরকারকে ব্যর্থ বোঝাতে সুপরিকল্পিতভাবে সংঘাত সৃষ্টি করেছে। ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পাহাড়ি ও বাঙালি বসতিতে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে। আর এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির ওয়াদুদ ভুঁইয়া। তাদের ইন্ধনেই সংঘর্ষ হয়েছে।
কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে মেরে ম্যানহোলে লাশ ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছে ওয়াদুদ ভূঁইয়ার লোকজন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিবির কর্মীরা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পার্বত্য এলাকায় আশ্রয় নেয়। পরে তারা দিনেদুপুরে মাথায় হেলমেট পরে ওয়াদুদ ভূঁইয়া সমর্থকদের নিয়ে একযোগে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায়। তাদের এ অপকর্মে সহযোগিতা করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারে পাহাড়ি এলাকা অরক্ষিত হওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে বিরোধী দল যে দাবি তুলেছে তা নাকচ করে তিনি বলেন, পাবর্ত্য এলাকা থেকে ছোট ছোট ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলের ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়নি। এটা বিরোধী দল রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য বলছে।
কমিটির আরেক সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, পরিদর্শনে তারা দেখেছেন পার্বত্য এলাকায় এ সহিংসতায় মারা গেছে তিন জন। এরমধ্যে একজন বাঙালি। তিনি জানান, ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন এনজিও পার্বত্য এলাকায় কি ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, কোথায় কিভাবে অর্থায়ন করছে তাও কমিটি আলোচনা করেছে। সেখানে এনজিও কার্যক্রম পরিষ্কার নয়। এনজিও কার্যক্রম খতিয়ে দেখতেও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা হবে।
এ সহিংসতায় রাজশাহী থেকে পলাতক জামায়াত কর্মীদের যোগ দেয়ার ঘটনা সম্পর্কে আগাম তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করা হচ্ছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি এর সদুত্তর দিতে পারেননি। এমনকি গোয়েন্দা সংস্থা ব্যর্থ বলেও স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, এলাকাটি এত দুর্গম যে না গেলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। সেখানে এক স্থানের ঘটনা খুব দ্রুত জেনে ফেলা সম্ভব নয়। তবে প্রশাসনে কিছু দুবর্লতা ছিল স্বীকার করে তিনি বলেন, পাবর্ত্য এলাকার পোস্টিংকে ভালো না বলে ধরে নেয়া হয়। ভবিষ্যতে যাতে সেখানে দক্ষ কর্মকর্তা পাঠানো হয় তার সুপারিশ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউএনডিপির উপযুক্ত যানবাহন থাকায় তারা পরিদর্শনকালে সেগুলো ব্যবহার করেছেন।
কমিটি জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার ইতিমধ্যে রাঙ্গামাটিতে ৫শ বান্ডিল টিন, ২শ মেট্রিক টন চাল ও ৩০ লাখ টাকা এবং খাগড়াছড়িতে ২৯৪ বান্ডিল টিন, ৫৮ দশমকি ৫ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা ও তিন মাসের জন্য ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ দিয়েছে। সংসদীয় কমিটি সেখানে আরও ৯ মাস ভিজিএফ কার্ড রাখা এবং প্রতি পরিবারকে ৫শ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া যায় কিনা তা বিবেচনা করতে বলবে সরকারকে।
সূত্র: শীর্ষ নিউজ