ভাইসব, আশরাফ বলেছিল বাআলে জামায়াত শিবির ঢুকেছে, সর্বনাশ এখন দেখছি সৌদি পুলিশেও জামায়াত শিবির ঢুকেছে, নাকি সৌদি পুলিশও জামায়াত শিবির হয়ে গেছে ??
জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পলিটিক্যাল কাউন্সিলরের বাসভবন থেকে সৌদি গোয়েন্দা পুলিশ এক আদম ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। গত শনিবার রাত ১টায় এই গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়। এ সময় পলিটিক্যাল কাউন্সিলর শফিকুজ্জামান বাচ্চু বাসায় ছিলেন না। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মাইনুদ্দীন। তার বাড়ি চট্টগ্রামে। তবে জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ আলমগীর টেলিফোনে আমার দেশকে বলেন, আমরা জেনেছি কাউন্সিলর সাহেবের বাসা থেকে তার বাবুর্চিকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। বাবুর্চির আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) ছিল না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর জন্য সৌদি সরকারের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। এদিকে দেশে ছুটিতে আসা শফিকুজ্জামান বাচ্চু আমার দেশকে বলেন, কোনো কূটনীতিকের বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাতে পারে না। এটা জামায়াত-শিবিরের চক্রান্ত বলে আমি মনে করি।
সৌদি আরব থেকে সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সৌদি পুলিশ গত শনিবার রাত ১টার দিকে শফিকুজ্জামান বাচ্চুর বাসায় অভিযান চালায়। বাসার ভিতরে অবস্থানরত মাইনুদ্দীন দরজা না খুললে পুলিশ তা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। বাসার বিভিন্ন রুমে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আকামার কপিও উদ্ধার করে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে তিনটার দিকে কনস্যুলেটের লোকজন ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ততক্ষণে পুলিশ চলে যায়।
জানা গেছে, শফিকুজ্জামান বাচ্চু গত বছরের আগস্ট মাসে তিন বছরের চুক্তিতে জেদ্দা যান। তিনি মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাবা অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দীর্ঘদিন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার ছোটভাই সাইফুজ্জামান শিখর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস। বাচ্চু গত ২২ ডিসেম্বর মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে বাংলাদেশে ছুটিতে আসেন। চলতি মাসের ২০ তারিখ তার জেদ্দা ফেরার কথা।
সূত্র জানায়, সরকার থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার চেয়ে তিন ভাগের একভাগ দিয়ে পলিটিক্যাল কাউন্সিলর বাচ্চু হাই আল নাজলা এলাকায় থাকেন। কিন্তু কনস্যুলেটের অন্য কর্মকর্তারা ডিপ্লোমেটিক জোন জামেয়ায় থাকেন। জেদ্দার কনস্যুলার জেনারেল গোলাম ছরোয়ার বর্তমানে ঢাকা রয়েছেন। তার শ্বশুর মারা যাওয়ায় ঘটনার দিন (শনিবার) সকালেই তিনি ঢাকা আসেন। ভারপ্রাপ্ত কনস্যুলার জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন মক্কায় দায়িত্বরত কাউন্সিলর (হজ) মোহাম্মদ আলমগীর।
তিনি বলেন, আসলে বিষয়টি আমাদের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। আমরা জেনেছি, কাউন্সিলর সাহেবের বাসা থেকে তার বাবুর্চিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এও শুনেছি, বাবুর্চির কোনো আকামা নেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আমরা সৌদি সরকারের কাছে চিঠি লিখেছি। একই সঙ্গে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’ এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ঘটনার কথা আমরা শুনেছি। তবে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। শুনেছি, জেদ্দা কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তার পিএসের কাছে অনেকগুলো অবৈধ পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।
শফিকুজ্জামান বাচ্চু বলেন, বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করি। আপনারা জানেন, সৌদি আরবে জামায়াত-শিবিরের প্রচুর লোক রয়েছে। তারা পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে আমার বাসায় পাঠিয়েছে। কারণ, কোনো কূটনীতিকের বাসায় পুুলিশ তল্লাশি চালাতে পারে না। গ্রেফতারকৃত মাইনুদ্দীন সম্পর্কে তিনি বলেন, এই লোক বাবুর্চি। তার বাড়ি চট্টগ্রামে। গত ২৫-৩০ বছর ধরে তিনি সৌদি আরব থাকেন। বাসায় অবৈধ পাসপোর্ট ও কাগজপত্র পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো বাসায় ছিলাম না। কি পাওয়া গেছে তাতো জানি না। আগামী ২০ মার্চ ছুটি শেষে ফিরে গিয়ে আমি বিস্তারিত জানতে পারব।’ পরে তিনি ফোন করে আমার দেশকে আবার বলেন, আমি জেনেছি সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, বাবুর্চির কাছে পাওয়া আকামা’র মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ জন্যই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে এ বছর হজ খুব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমি ছিলাম এ হজ অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়কারী। এজন্যই একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার পেছনে লেগেছে। তারাই এসব ঘটাচ্ছে।
এদিকে জানা গেছে, গত মাসের শেষ দিকে জাল কাগজপত্র ও পাসপোর্টসহ জেদ্দা স্বেচ্ছাসেবক লীগ শাখার সভাপতি মজিবুর রহমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে সৌদি পুলিশ। পলিটিক্যাল কাউন্সিলরের বাসা থেকে আদম ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের ঘটনা জেদ্দাসহ সৌদি আরবে এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই শ্রমবাজার এখন প্রায় হাতছাড়া।
গত বছর প্রধানমন্ত্রী দেশটি সফরে গিয়ে শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে আশ্বাস পেলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি।
সূত্র: আমার দেশ