[ইদানিং ব্লগে অনিয়মিত হয়ে পড়েছি। তবু কিছু প্রিয় লেখকের লেখা দেরিতে হলেও পড়ি। এমন একজন চমৎকার ব্লগার বিডি আইডলের বিরুদ্ধে কুৎসিত এবং জঘণ্য ভাষায় গালাগালির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সাথে সেই গালিবাজ এবং ব্লগে সবচেয়ে কুখ্যাত আরেকজন আত্মসম্মানহীন লেখক এবং তাকে সমর্থনকারি আরেক নির্লজ্জ কবির বিরুদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছি।]
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একটি সফল অভ্যত্থানের মাধ্যমে বাকশালি সরকারের পতন হয়েছিল। এবং সপরিবারে (হাসিনা রেহানা ছাড়া) শেখ মুজিবর রহমান নিহত হয়েছিলেন। মোটাদাগে এটাই ৭৫ এর সবচেয়ে বড় ঘটনা বা দুর্ঘটনা।
এর পক্ষ্যে বিপক্ষ্যে অনেক রকম ইতিহাসের উৎপত্তি হয়েছে। রাজনৈতিক দৃস্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে সে ইতিহাস নির্মান, লালন পালন এবং ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যারাদের জন্ম ৭৫ এর অনেক পরে, এমনকি ৯০ এর ও পরে, তাদের কাছে পুরো ব্যাপারটি যেন খুব স্পস্ট নয়। অথচ এরা জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। ইতিহাস সমন্ধে স্বচ্ছতা না থাকলে, জাতি আত্মগরিমার বদলে আত্মশ্লাঘায় ভুগতে পারে। যার বেশ কিছু উদাহারণ নতুন প্রজন্মের মাঝে দেখা যাওয়াতে আতংক হয়।
১৯৭৫ এর পরবর্তিদের নিয়ে, সহব্লগার ত্রিশোংকু ভাই, চমৎকার একটি সিরিজ লেখা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। ( এপর্যন্ত ১০টা পর্ব পোস্ট হয়েছে)। তার জীবনধর্মী বাস্তব ঘটনাগুলিই সে লেখায় উঠে এসেছে। তাই নতুন করে কি কারণে আপাত দৃস্টিতে স্বাধীন বাংলাদেশে এমন মর্মান্তিক হত্যকান্ড ঘটেছে, কেনই বা এর বিরুদ্ধে মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রতিবাদ করেনি, সে প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে লেখার কলেবর বাড়াবো না।
তবে যদি বলা হয়, ২০০৮ সালে আ" লিগের শাসনের মাঝে ৭৫ এর শাসনের ছায়া খুজে পাওয়া যাচ্ছে, তাহলে অত্যুক্তি হবে না। তবে যেটুকু পার্থক্য আছে সেটা হলো অজুহাতের।
আওয়ামী লিগের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, লুটপাট, অপশাসনের বিরুদ্ধাচারনকারিদের প্রতিবাদ করায়, খোদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধেই দমন পীড়ন হত্যা নির্যাতন করা হয়েছিল। আর এখন আওয়ামী বিরোধি মাত্রেই যুদ্ধাপরাধি অপবাদ দিয়ে রাজনৈতিক বিরোধিদের নিশ্চিহ্নের একটা সুস্পস্ট পরিকল্পনা চোখে পড়ছে।
৭৫ এ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকলেও, শ্রেফ পার্টির লোক বলে প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দলীয় লোক বসানোয়, প্রশাসন হয়ে পড়েছিল তামাশার বস্তু। ( এদেরকে তোফায়েল ক্যাডার বলা হতো)। বলা বাহুল্য, সরকারি কাজে দুর্নীতি সম্পৃত্ত হয়েছিল সে আমল থেকেই। সরকারি চাকুরেরা যার পুর্ণ সুযোগ সব সরকারের আমলেই নিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো, সব সরকারই এদের এই অবৈধ কর্মকান্ডকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে গেছে। এখনো দেখা যাচ্ছে, প্রশাসনে পার্টির লোকেদের ( এমন কি বিচার বিভাগেও একই অবস্থা) দাপটে সুশাসন দুরহ হয়ে পড়েছে। সাথে চোয়াল দুর্বৃত্ত মন্ত্রিদের নির্লজ্জ সাফাই, তাদের ব্যার্থতার ষোলকলাকে আরো প্রকাশ করে দিয়েছে। ফলাফল, আইন শৃংখলার ক্রম অবনতি, দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসবাজি, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, সবকিছু নিয়ন্ত্রন এবং সাধারণ মানুষের সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
বিরোধি কন্ঠকে স্তব্ধ করার বালখিল্য অপচেস্টার অংশ হিসেবে ৭৫ এ সরকারি নিয়ন্ত্রানাধিন ৪টি পত্রিকা রেখে সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তবে মিডিয়ার ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই বেশ কুশলি ভুমিকায় অবতীর্ন হয়েছে আঃ লিগ। যেমন নামেই ধর্মনীরপেক্ষতার ধব্জা ধরে, বামধারার লেখক বুদ্ধিজীবি কলামিস্ট সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব এদেরকে নিজেদের দলে ধরে রেখেছে। তাছাড়া সাংবাদিকতা শিক্ষার সুতিকাগারটি কৌশলে নিয়ন্ত্রনে রেখে, তাদের মাধ্যমেই ভবিষ্যত সাংবাদিকদের মগজ ধোলাইয়ের কাজটি অনেকদিন ধরেই নিখুতভাবে করে আসছে তারা। সাথে নিজেদের পাড় সমর্থকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে
(২য় পর্বের শুরু)
মিডিয়ায় একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের কাজটা ভালোভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছে তারা। ফলে আওয়ামী লিগের ব্যার্থতার কাহিনী দুই একটা পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও, মিডিয়ার চোয়ালের জোরে, হয় সে ব্যার্থতার কথা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে, নতুবা শ্রেফ বিরোধি দলের অপপ্রচার বলে গণ্য হচ্ছে। তাই ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে সব-কিছু-ঠিকঠাক-চলছে নামের আত্মতুস্টিতে ভুগে একেরে পর এক আরো বড় ভুলের পথে পা বাড়াচ্ছে আঃ লিগ।
এর সবচেয়ে বড় প্রমান বিগত এক বছরে, দেশের স্বার্থ বিরোধী অজস্র কর্মকান্ডের পরেও, সেগুলি সঠিক বলে খোদ প্রধানমন্ত্রি থেকে শুরু করে আঃ লিগের নেতা পাতি নেতাদের নির্লজ্জ চোয়ালবাজি।
যে দু তিনটি পত্রিকা আঃ লিগের ব্যার্থতাকে শিরোনাম করে প্রতিদিন খবর পরিবেশন করে, তা আঃ লিগ বিদ্বেষ প্রসুত হলেও, শ্রেফ অপপ্রচার এমন তো নয়। যেমন খাদ্যদ্রব্য মুল্য পরিস্থিতি কিংবা আইন শৃংখলার অবনতি। তাছাড়া আমাদের রাজনৈতিক কৃস্টির অন্যতম দুস্টক্ষত হলো, একেবারে মাথা থেকে পাতি পর্যন্ত নেতাদের দুর্নীতি। সে খবর প্রকাশিত হলে, কেন একটি পত্রিকার সম্পাদকের নামে হামলা মামলা করা হলো? খবরটি মিথ্যা হলে, প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করা যেতো। তা না করে, একজন সন্ত্রাসি এম পি নানক কি করে একটি পত্রিকার সম্পাদককে দেখে নেবার কথা বলতে পারে? কেনই বা দুই আনার মুল্য নেই এমন আওয়ামী নেতারা কোটি কোটি টাকার মানহানির মামলা করতে পারলো ওই সম্পাদকের বিরুদ্ধে? সাংবাদিকরা একে অপরের মাংস খায় না বলে যে নীতি চলে আসছে, আঃ লিগের উচ্ছিস্ট ভোগকারি সাংবাদিকরা ওই হামলা মামলার বিরুদ্ধে চুপ করে থেকে ( সময়ে সময়ে সরকারের পক্ষ্যে কলম হাতে নিয়ে) সে নীতিটি ভঙ্গ করেছে।
মোদ্দা কথা, বিরোধি দলের মতকে অথবা সরকারে আসীন আঃ লিগের ব্যার্থতাকে গায়ে জোরে স্তব্ধ করে দেবার নগ্ন চেস্টা চলছে। মতপ্রকাশের স্বাভাবিক ধারাকে বন্ধ করলে, শুধুমাত্র যে পথটি খোলা থাকে, তার নাম সশস্র প্রতিবাদ। সেটাই ৭৫ এ দেখা গিয়েছিল।
স্বাধীনতার পর হারানোর তালিকায় ছিল বেরুবাড়ি, স্বাধীন স্বতন্ত্র পররাস্ট্র নীতি, স্বনির্ভর অর্থনীতির একটা চালিকাশক্তি কলকারখানা, আর পাওয়ার মধ্যে ছিল গোলামি চুক্তি, ফারাক্কা বাধ ইত্যাদি। ২০০৮ সালে একই ধরনের হুবুহু হারানো আর প্রাপ্তি যোগ কোন দৈব কারণ বা কাকতলিয় নয়।
টিপাইমুখ বাঁধ কিংবা সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশ চুক্তির মধ্যে কোন পার্থক্যই নেই। দেশের স্বার্থ বিরোধী এই পদক্ষেপের হোতা দুই সময়েই কিন্তু আওয়ামী লিগ ! সে সময় বাংলাদেশের মানুষ যা পছন্দ করেনি, এ সময় এসেও সেটা তারা গ্রহন করবে না, এটাই স্বাভাবিক।
স্বাধীনতার পর ভারতী সৈন্যদের নির্বিচারে লুটতরাজ যদিও বা "কৃতজ্ঞতা শোধের" কারণে মেনে নেয়া যায়, কিন্তু ৯৬ এর আওয়ামী শাসনকালে, রাস্ট্রের প্রত্যক্ষ মদতে ভারতীয় মাড়োয়াড়িদের শেয়ার মার্কেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুঠ কি করে মেনে নেয়া যেতে পারে? আর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসবার পর আগ পিছ বিবেচনা না করেই, অনুগত ভৃত্যের মত ভারতের চাহিদামত জল-স্থল-অন্তরীক্ষে কড়িডোর দিয়ে সার্বভৌমত্ব লঘুকারি পদক্ষেপগুলি আপাতত সীমান্তের ওপারে আওয়ামী প্রভুদের সন্তুস্টি অর্জন করলেও, দেশের মানুষের স্বাধীনচেতা মানসিকতার পরিপন্থি বৈত নয়।
স্বাধীনতার পর শেখ পরিবারের নেতৃত্বে যে মাৎসন্যায়ের সৃস্টি হয়েছিল, সে একই ধারায় হাসিনা আর তার আত্মিয় স্বজন লুঠপাট দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়েছে। ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট তাই সামরিক অভ্যুত্থানের কেন্দ্রই ছিল শেখ পরিবার। এজন্য ধানমন্ডি অবস্থান না করেও, অন্য এলাকায় নিজ ঘরেই আব্দুর রব সেনিয়াবাদ কিংবা শেখ ফজলুল হক মণিকে নিকেষ করে দেয়া হয়েছিল। লক্ষ্য করুণ আওয়ামী লিগের নেতাদের সিংহভাগ নেতাই কিন্তু সেদিন বেঁচে গিয়েছিল। কারণ শেখ পরিবারের প্রত্যক্ষ মদতে তারা ছিল শুধু হুকুমের গোলাম। তাই ক্ষোভের তীর শুধুমাত্র শেখ পরিবারের উপর নির্দিস্ট ছিল।
এ সত্যটা হাসিনা ভালো করে জানেন বলেই, শেখ পরিবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা আইন পাশ করিয়ে নিয়েছেন। কিন্ত দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বার বার প্রতারণা করে জনরোষ থেকে বাঁচতে সে আইন কতটুকু কাজে লাগবে?
৭৫ এ যেমন মন্ত্রি মিনিস্টাররা কাজের চেয়ে অকাজে বেশি নিয়োজিত ছিল, এবং নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকতে শেখ পরিবারের চাকর বাকর কিংবা চামচামির ভুমিকায় অবতীর্ণ হতেন, ঠিক একই ঘটনা ঘটছে এখনকার মন্ত্রিদের বেলায়ও। আর সে সময় তোষামদকারিদের স্তুতি বাক্যে যেভাবে বঙ্গবন্ধু আত্মহারা হয়ে পথভ্রস্ট হয়েছিলেন, হাসিনাও একই পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন। নইলে সাহারা, দিপুমনি, ফারুক খান, শামসুল হক টুকু, ডঃ আব্দুর রাজ্জাক, এদের সীমাহীন ব্যার্থতার পরেও কেন বহাল তবিয়তে মন্ত্রিত্ব পদে আসীন এরা?
নির্বাচনি প্রচারের সময় এক কথা, আর ক্ষমতায় আসলে সেগুলি বেমালুম ভুলে, ফ্যাসিস্টদের কায়দায় কখনো মিডিয়ার জোরে, কখনো পেশিশক্তির বলে, নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকা, বরং জনরোষকে তীব্র করবে। তাছাড়া বিরোধী মতকে জোর করে বন্ধ করতে চাইলে চাপা ক্ষোভ বিস্ফোরিত হবেই।
সিকিমের লেন্দুপ দর্জির ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে, নিরাপত্তা আইন পাশ করে নিজেকে হাসিনা যতই নিরাপদ ভাবুন না কেন, তার প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। সেই সাথে সেনাবাহিনী এবং বি ডিয়ার উভয় পক্ষই এখন বুঝতে পারছে, এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করতে আওয়ামী লিগ এককভাবে দায়ি। গতবছর পিলখানা হত্যাকান্ড চলাকালে যেভাবে ভারত প্রকাশ্যে হাসিনাকে সুরক্ষা দেবার ঘোষনা দিয়েছিল, তাতে একথা বুঝতেও বাকি নেই, জনগণের সমর্থনের চেয়েও হাসিনা ভারতের সমর্থনের প্রতি বেশি আস্থাশীল। এটাও তার জন্য নেতিবাচক হয়ে দাড়াবে।
দেশ বিরোধি ভুমিকায় অবতীর্ণ আওয়ামী লিগ তথা শেখ হাসিনা, সারা বাংলাদেশকে শেখিয় করণ (নাম বদলের উৎসব), ছাত্রলীগ নামের সন্ত্রাসি লালন পালন ধারণের মাধ্যমে দমন পীড়ন, প্রশাসনে দলবাজির রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়া, নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ভুলে একে অস্বীকার করা, আত্মীয় স্বজনদের দেশ চালানোতে সংক্লিষ্টতা এবং প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দান, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনি বাতিলে সরকারি হস্তক্ষেপ এবং বাকশালি সংবিধান চালু করা, ইত্যাদি আর কিছুই নয়, বরং ৭৫ এর পুনরাবৃত্তি।
চাটুকার লেখক কবি সুশিল (কু)বুদ্ধিজীবি এদেরকে অগ্রাহ্য করে, হাসিনা তার ভুল গুলি সংশোধন না করলে, ভারতের সেবাদাসের ভুমিকা থেকে সরে না আসলে, ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের চেয়েও কঠিন সময়ে পড়বে আঃ লিগ। আর সেই খাড়ায় এবার শুধু শেখ পরিবারের বাকি সদস্যরা নয়, নিকট বা দুর আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে, নেতা উপনেতা পাতি নেতা, দলিয় মুখপাত্রের ভুমিকায় অবতীর্ণ মিডিয়া, সুশিল, (কু)বুদ্ধিজীবি, ছাত্রলীগ, সবাই এক সাথে কাটা পড়বে। কালের আবর্তেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়ে থাকে। যার সব চিহ্ন ইতিমধ্যেই বিদ্যমান।