সরকারি চাকরিতে শাস্তিমুলক একটা ব্যাবস্থা আছে। তার নাম ও এস ডি। রাজনৈতিক কারণেই হোক বা বসদের কোপানলে পড়লেই হোক, এ বস্তটি শুনেছি বেশ মানসিক পীড়াদায়ক। কাজ কর্ম কিছু নেই, বসে থাকা আর বেতন তোলা।
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মাইনাস টু এর পক্ষ্যে বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা জড়িত ছিলেন। আওয়ামি লিগের সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও আব্দুর রাজ্জাক হাসিনাকে মাইনাস করতে গিয়ে বেশ নাকাল হয়েছিলেন। আঃ লিগ ক্ষমতায় আসার পর তাই এই চারজন ও এস ডি হয়েই আছে। মন্দের ভালো হচ্ছে সুরঞ্জিত। যাকে সংবিধান সংশোধনি কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে।
হাসিনা ভালো করেই জানে যে, দেশকে পশ্চাদমুখি করার চেস্টার কারণে অনেক নিন্দা আর সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে। তাই তার ঠ্যালা সামলাতে সুরঞ্জিতকে সামনে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অথচ এই সুরঞ্জিত ৭২ এর সংবিধানে সইও করেনি। তেতো ওষুধ গেলার মত আজ তাকেই এই সংবিধানের প্রতি সমর্থন দিতে হচ্ছে।
এতদিন ধরে যখন রাজনীতিতে জড়িত, তার আঃ লিগের নেতারা ভালো করেই জানে যে, গণভোট হলে তাদের এই প্রস্তাব পাশ করা যাবে না। তাই আপাতত সেটাকে অগ্রাহ্য করাই ভালো। আর লোক দেখানো সমর্থন জোগানের জন্য দেশের "বিশিস্ট নাগরিক"দের দিয়ে মতামত নেয়া হচ্ছে। যাদের অধিকাংশই হচ্ছে তথাকথিত প্রগতিশীলতা আর অসাম্প্রদায়িকতার সোল এজেন্ট। তবে রাজনৈতিকভাবে তারা একান্তই আঃ লিগের বাধ্যগত ও অনুগত। মুখরা লোকজনের কাছে এরা অবশ্য আতেল চামচা বলেই অধিক কুখ্যাত।
বিশিস্ট নাগরিকের সংজ্ঞা কি? দেশ ও সমাজের প্রতি যারা কর্তব্যপরায়ণ তারাই তো? যাদেরকে বিশিস্ট নাগরিক বলে মিডিয়াতে ক্রমাগত প্রচারণা চালান হচ্ছে, তাদের মধ্যে দেশ ও জাতির চেয়ে ভিন্ন ধর্ম, আওয়ামি লিগ এবং ভারতের প্রতিই কর্তব্যের পরাকাষ্ঠার অধিক্যই প্রবল।
যেমন প্রফেসর কবির চৌধুরি দুর্গা পুজার সময় ঘটপুজা করে এসে বলেই ফেললেন এটা বাঙালি সংস্কৃতি। একসময় ক্যালকেশিয়ান লেখকরা বাঙালি বলতে শুধু হিন্দুদের বূঝাতো। এর মধ্যে শরৎচন্দ্রও পড়েন। আজ এত বছর পরে কবির চৌধুরিরাও সেই সংজ্ঞাকে বেদ বাক্য জ্ঞান করে চলেছেন। যে সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বিনা ভাড়ায় তিনি থাকতেন, বেতন তুলতেন, সেই জনগণকে এভাবে অপমান করেও কোন বিচারে তিনি বিশিস্ট নাগরিক?
আসুন সুলতানা কামাল চক্রবর্তির কথায়। তিনি রঞ্জন চক্রবর্তি নামের একজন হিন্দু ভদ্রলোককে বিয়ে করেছে, সেই কেতায় কপালে বিশাল ফোটা দিয়ে ঘুরে বেড়ান, তাহলে স্বামীর নাম নিজের নামের সাথে লাগাচ্ছেন না কেন? কোন বদ মতলবে? সেটাও না হয় বাদ দিলাম। তথাকথিত মানবতার দোহাই দিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসিদের নিধনের বিরুদ্ধে তার এত মাথা ব্যাথা কেন? বিদেশি লালমুখো ফিরিঙ্গি, যমের অরুচি বৃটেনের লর্ড এভেরির সাথে মিলে পার্বত্য অঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার পড়েও কেন তিনি বিশিস্ট ব্যাক্তিদের তালিকায় পড়লেন?
সৈয়দ হাসান ইমাম ওরফে বোমা ইমামের জন্ম পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলায়। ১৯৪৭ এর সময় সেখানকার গোড়া হিন্দুরা তাকে জ্ঞাতি গুস্টি সহ পশ্চাতদেশে বের করে দিলেও তার ভারত মাতার প্রতি তার ভালবাসা এতটুকুও কমেনি। কথায় কথায় অখন্ড ভারতের প্রতি তার ভালবাসা উপচে পড়ে। এই দেশদ্রোহি দুরাচারকে ধাওয়া দেয়ার পর দৌড়ে সেই ভারত মাতার পদতলে অনেকদিন পড়ে ছিল।
এই যে এত এত বিশিস্ট লোকের ভীড় দেখা যায়, এরা সমাজের কি উপকারটা করেছে শুনি? আচ্ছা কিছু না করুক, আয়কর দিচ্ছে তো? আয়ের সাথে ব্যায়ের সঙ্গতি আছে তো? দুর্নীতির দায় শুধু কেন রাজনীতিবিদ, ব্যাবসায়ি কিংবা সরকারি কর্মচারিরা নিবে? আসাদুজ্জামান নুর তো কোন জমিদারের বাচ্চা না। বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মালিক হলেন কি করে? এরাই আবার আমাদের সাংস্কৃতিক জগত আর মিডিয়ার বাপ মা।
এই রকম দুরাচার আর দেশদ্রোহিদের দিয়েই আমাদের মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক জগত ভর্তি হয়ে আছে। আর দেশের সিংহভাগ মানুষের সাথে এদের জীবনাচারণের কোন মিল নেই। অথচ এরাই আমাদের বুকে বসে আমাদের দাড়ি উপড়াচ্ছে। এদের কারণেই তাই আমাদের একান্ত নিজস্ব স্বতন্ত্র সংস্কৃতি আজ বিজাতিয় হিন্দি দিয়ে আক্রান্ত।
আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। হাতে গোণা শিক্ষিত লোকজনদের প্রতি তাদের ভয় মিশ্রিত একটা শ্রদ্ধা আছে। সেই সুযোগকেই এই সব পাপাচারিরা কাজে লাগাচ্ছে। সাথে আওয়ামি লিগ নামের ভারতপন্থি ফ্যাসিবাদি এবং সন্ত্রাসি রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকাতে এরা সহ্য সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।
অনেকে আবার সুশিল ম্যানিয়ায় আক্রান্ত বলে, এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে বেশ ইতঃস্তত বোধ করেন। পাছে লোকে তাদের অশিক্ষিত মনে করে। মোল্লাটোল্লা এমন কি রাজাকার টাজাকার বলে হেনস্থা করে ! তাছাড়া তাদের বিরুদ্ধাচারণ করা লেখা গুলি মিডিয়ায় আসার পথটুকুও বন্ধ। যেহেতু তারাই মিডিয়া মাফিয়া।
তবে ব্লগ সৃস্টির পর বুঝা যাচ্ছে যে, এই সব দেশদ্রোহি সুশিলদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ কতটা প্রবল। তাই ওই সব সুশিল আতেল রাজারা অদৃশ্য পোষাক পড়ার ভানে নগ্ন হয়ে গেলেও, গল্পের সেই বালকের মত আমিই না হয় বললাম, "একি ! রাজা দেখি ন্যাংটা!"