জানেনই তো ! চাকরি আছে কাজ নেই। তাই সকাল বিকাল মহল্লা বেড়াই। সেদিনও বেড়িয়েছিলাম। পথের ধারে দেখি বেশ ডাসা ডাসা পেয়ারা নিয়ে এক পাব্লিক বসেছে।
বেতন যা পাই আর জিনিসপত্রের যা দাম, তা দিয়ে যাই হোক, ফল কিনে খাওয়া চলে না। তাই মাঝে মাঝে ফাপড় দিয়ে ফাও খাবার চেস্টা করি
- ওই মিয়া, ফরমালিন দেওয়া ফল বেচতাছো। আমি কিন্তু পুলিশরে কল দিমু !
- আরে বাইজান, বেগগুইন আড় গাছের ফেয়ারা। আন্নে খাই টেস্ট করি লন। কুনো ভেজাল হাইতেন্ন।
হুম চিড়ে ভিজেছে তাহলে।
এক খাবলায় এক হালি বড় বড় পেয়ারা হাতিয়ে নিলাম। দুইটা দুই পকেটে, আরেকটা বুক পকেটে রেখে বাকিটা চিবুতে চিবুতে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম।
ওমা, কোত্থেকে দেখি পুলিশের গাড়ি আমার সামনে এসে দাড়ালো। কেমনে কি? দেশে লোক জন হাজার হাজার কোটি টাকা খেয়ে ফেললেও পুলিশ কারো টিকিটি পর্যন্ত ছোয় না। আর আমি মাত্র ৪টা পেয়ারা নিয়েছি এতেই দোষ?
তাছাড়া এই পুলিশই এখানে আসলো কোত্থেকে? এদের তো সব গাজিপুরে থাকার কথা !
চিলের মত ছো দিয়ে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে উল্কার গতিতে গাড়ি ছুটলো। কি সর্বনাশ। শেষমেস কোন কেসে পড়ি আল্লাহ মালুম। যা দিনকাল চলছে। পান থেকে চুন খসলেই তো সন্ত্রাস, গাড়ি ভাংচুর্ প্রধানমন্ত্রির কার্যালয়ে বোমা হামলা কিংবা তার প্রাণনাশের চেস্টার ষড়যন্ত্র এমন হাজারটা কেসে ফেসে যাচ্ছে অনেকেই।
নাহ ! থানার বদলে দেখলাম আমাকে সিধা এয়ারপোর্টে নিয়ে গেছে।
কি বিষয় কি আশয় জানার আগেই দেখি শামিম ভাই দাঁড়িয়ে আছেন।
- বাচ্চু ভাই, কোন কথা নাই। এমনি অনেক লেট হয়ে গেছে। জলদি ওই গেট দিয়ে ইমিগ্রশনে চলে যান।
আরে ! কথা নাই বার্তা নাই। কই যাচ্ছি কেন যাচ্ছি খবর নাই। কোন চক্করে পড়লাম রে বাবা !
ইমিগ্রশন অফিসাররা দেখলাম পাসপোর্টে সিল দিচ্ছে আর বলছে,
সিল মারো ভাই সিল মারো, নৌকা মার্কায় সিল মারো।
এটা আবার কিসের মধ্যে পড়লাম। গাজিপুরের ইলেকশন তো আরো দুই দিন পড়ে। এর মধ্যে মার্কায় সিল দেবার কথা আসছে কেন?
একজন অফিসার শুধু বললেন, আরে আগামি নির্বাচনের জন্য প্রাকটিস করছি আর কি ! বুঝেনই তো সরকারি চাকরি করছি। সরকারের কথা না মানলে হয়?
পাসপোর্টে সিল দেয়া শেষ হতেই শামিম ভাই একদম প্লেনে নিয়ে গেলেন। সেখানে দেখি আত্মিয় স্বজন নিয়ে বুবু বসে আছেন।
- বাচ্চু আইছোস? ভালা হইছে। চল বিয়া খাইয়া আসি।
বিয়ে? কার বিয়ে? কেমন বিয়ে?
আমার চোখে প্রশ্ন দেখে বুবু নিজেই বললেন
- আরে টিউলিপের বিয়া। তোর ভাগ্নি লাগে। চিনতে পারোস নাই?
ওহ ছোট বুবুর মেয়ে? মাশাল্লাহ। আসলে বুবুদের পরিবারটা আন্তর্জাতিক। বুবুর ছেলের বৌ আমেরিকান। আর ছোট বুবুর ছেলে মেয়ে দুই জনেরই আত্মিয়তা ইউরোপিয়ান !
প্রেম মহাব্বাত যে দেশ জাতি ধর্ম মানে না, বুবুর পরিবার তার যোগ্য উদাহারণ।
কিন্তু বিয়েতে এই অবস্থায় যাবো? আমার মনের কথা বুবু ঠিকই ধরে ফেললেন।
- শুন, হোটেলে তোর লাগেজ আগেই পাঠাইয়া রাখছি। সেইখানে তোর জামা কাপড় সবই আছে। কয়েকটা ঘণ্টারই তো ব্যাপার। মটকা মাইরা পইড়া থাক।
আসলেও আমার বুবুর মত বুবুই হয় না।
খালি পেটে মটকা মেরে পড়ে থাকা যায়? তাছাড়া ভাত খাওয়াও হয়নি। দেশি প্লেন যেহেতু ভাতই খাবো। সামনে এয়ারহোস্টেকে পেতেই বললাম,
- শুনুন, আমার জন্য গরম গরম ভাত, ভাজি, ডাল, মাছ, শুটকির ভর্তা যা যা আছে নিয়ে আসুন। আর হ্যা সাথে কাচা পিয়াজ আর মরিচ আনতে ভুলবেন না।
আমার কথা শুনে বেচারির মুখের অবস্থা দেখুন
ভাত পেয়েছিলাম ঠিকই, তবে এত দামি চালের ভাত বাপের জন্মের খাইনি। তাই মনে হয় এমন বেশিই খেয়েছিলাম যে এক ঘুমেই লন্ডন। ঘুম ভাংলো শামিম ভাইয়ের কথায়।
যাক এসে গেছি। আহা লন্ডন। আগে কত নাম শুনেছি। মুরুব্বিদের মুখে বিলাত বিলাত শুনে কত ইচ্ছা ছিল। কিন্ত এই গরিব না খান্দাকে বিলাত নেবে কে? বুবু ছিল বলে কত স্বপ্ন পুরণ হচ্ছে।
আল্লাহ বুবুকে চিরকার ক্ষমতায় রাখুক।
বুবুর সফর সঙ্গি সবার চেকিং হচ্ছে। হু হু বাবা, এতো আর বাংলাদেশ নয় যে, ভি আই পি হলেই আইন কানুন সব মাফ।
চলবে...।