somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লন্ডনে বিলাতি বাচ্চু ! (প্রাপ্ত বয়স্ক/মনস্কদের জন্য)

০৭ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানেনই তো ! চাকরি আছে কাজ নেই। তাই সকাল বিকাল মহল্লা বেড়াই। সেদিনও বেড়িয়েছিলাম। পথের ধারে দেখি বেশ ডাসা ডাসা পেয়ারা নিয়ে এক পাব্লিক বসেছে।

বেতন যা পাই আর জিনিসপত্রের যা দাম, তা দিয়ে যাই হোক, ফল কিনে খাওয়া চলে না। তাই মাঝে মাঝে ফাপড় দিয়ে ফাও খাবার চেস্টা করি :)

- ওই মিয়া, ফরমালিন দেওয়া ফল বেচতাছো। আমি কিন্তু পুলিশরে কল দিমু !

- আরে বাইজান, বেগগুইন আড় গাছের ফেয়ারা। আন্নে খাই টেস্ট করি লন। কুনো ভেজাল হাইতেন্ন।

হুম চিড়ে ভিজেছে তাহলে।

এক খাবলায় এক হালি বড় বড় পেয়ারা হাতিয়ে নিলাম। দুইটা দুই পকেটে, আরেকটা বুক পকেটে রেখে বাকিটা চিবুতে চিবুতে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম।

ওমা, কোত্থেকে দেখি পুলিশের গাড়ি আমার সামনে এসে দাড়ালো। কেমনে কি? দেশে লোক জন হাজার হাজার কোটি টাকা খেয়ে ফেললেও পুলিশ কারো টিকিটি পর্যন্ত ছোয় না। আর আমি মাত্র ৪টা পেয়ারা নিয়েছি এতেই দোষ?

তাছাড়া এই পুলিশই এখানে আসলো কোত্থেকে? এদের তো সব গাজিপুরে থাকার কথা !

চিলের মত ছো দিয়ে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে উল্কার গতিতে গাড়ি ছুটলো। কি সর্বনাশ। শেষমেস কোন কেসে পড়ি আল্লাহ মালুম। যা দিনকাল চলছে। পান থেকে চুন খসলেই তো সন্ত্রাস, গাড়ি ভাংচুর্‌ প্রধানমন্ত্রির কার্যালয়ে বোমা হামলা কিংবা তার প্রাণনাশের চেস্টার ষড়যন্ত্র এমন হাজারটা কেসে ফেসে যাচ্ছে অনেকেই।

নাহ ! থানার বদলে দেখলাম আমাকে সিধা এয়ারপোর্টে নিয়ে গেছে।

কি বিষয় কি আশয় জানার আগেই দেখি শামিম ভাই দাঁড়িয়ে আছেন।

- বাচ্চু ভাই, কোন কথা নাই। এমনি অনেক লেট হয়ে গেছে। জলদি ওই গেট দিয়ে ইমিগ্রশনে চলে যান।

আরে ! কথা নাই বার্তা নাই। কই যাচ্ছি কেন যাচ্ছি খবর নাই। কোন চক্করে পড়লাম রে বাবা !

ইমিগ্রশন অফিসাররা দেখলাম পাসপোর্টে সিল দিচ্ছে আর বলছে,
সিল মারো ভাই সিল মারো, নৌকা মার্কায় সিল মারো।

এটা আবার কিসের মধ্যে পড়লাম। গাজিপুরের ইলেকশন তো আরো দুই দিন পড়ে। এর মধ্যে মার্কায় সিল দেবার কথা আসছে কেন?

একজন অফিসার শুধু বললেন, আরে আগামি নির্বাচনের জন্য প্রাকটিস করছি আর কি ! বুঝেনই তো সরকারি চাকরি করছি। সরকারের কথা না মানলে হয়?

পাসপোর্টে সিল দেয়া শেষ হতেই শামিম ভাই একদম প্লেনে নিয়ে গেলেন। সেখানে দেখি আত্মিয় স্বজন নিয়ে বুবু বসে আছেন।

- বাচ্চু আইছোস? ভালা হইছে। চল বিয়া খাইয়া আসি।

বিয়ে? কার বিয়ে? কেমন বিয়ে?

আমার চোখে প্রশ্ন দেখে বুবু নিজেই বললেন

- আরে টিউলিপের বিয়া। তোর ভাগ্নি লাগে। চিনতে পারোস নাই?

ওহ ছোট বুবুর মেয়ে? মাশাল্লাহ। আসলে বুবুদের পরিবারটা আন্তর্জাতিক। বুবুর ছেলের বৌ আমেরিকান। আর ছোট বুবুর ছেলে মেয়ে দুই জনেরই আত্মিয়তা ইউরোপিয়ান !

প্রেম মহাব্বাত যে দেশ জাতি ধর্ম মানে না, বুবুর পরিবার তার যোগ্য উদাহারণ।

কিন্তু বিয়েতে এই অবস্থায় যাবো? আমার মনের কথা বুবু ঠিকই ধরে ফেললেন।

- শুন, হোটেলে তোর লাগেজ আগেই পাঠাইয়া রাখছি। সেইখানে তোর জামা কাপড় সবই আছে। কয়েকটা ঘণ্টারই তো ব্যাপার। মটকা মাইরা পইড়া থাক।

আসলেও আমার বুবুর মত বুবুই হয় না।

খালি পেটে মটকা মেরে পড়ে থাকা যায়? তাছাড়া ভাত খাওয়াও হয়নি। দেশি প্লেন যেহেতু ভাতই খাবো। সামনে এয়ারহোস্টেকে পেতেই বললাম,

- শুনুন, আমার জন্য গরম গরম ভাত, ভাজি, ডাল, মাছ, শুটকির ভর্তা যা যা আছে নিয়ে আসুন। আর হ্যা সাথে কাচা পিয়াজ আর মরিচ আনতে ভুলবেন না।

আমার কথা শুনে বেচারির মুখের অবস্থা দেখুন



ভাত পেয়েছিলাম ঠিকই, তবে এত দামি চালের ভাত বাপের জন্মের খাইনি। তাই মনে হয় এমন বেশিই খেয়েছিলাম যে এক ঘুমেই লন্ডন। ঘুম ভাংলো শামিম ভাইয়ের কথায়।

যাক এসে গেছি। আহা লন্ডন। আগে কত নাম শুনেছি। মুরুব্বিদের মুখে বিলাত বিলাত শুনে কত ইচ্ছা ছিল। কিন্ত এই গরিব না খান্দাকে বিলাত নেবে কে? বুবু ছিল বলে কত স্বপ্ন পুরণ হচ্ছে।

আল্লাহ বুবুকে চিরকার ক্ষমতায় রাখুক।

বুবুর সফর সঙ্গি সবার চেকিং হচ্ছে। হু হু বাবা, এতো আর বাংলাদেশ নয় যে, ভি আই পি হলেই আইন কানুন সব মাফ।

চলবে...।




১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুমি অথবা শরৎকাল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১০


রোদ হাসলে আকাশের নীল হাসে।
গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ দল ব্যস্ত হয়ে
দূর সীমাহীন দিগন্তে ছুটে।

লিলুয়া বাতাসে তোমার মুখে এসে পড়া চুল আর
ঢেউ খেলানো আঁচলের সাথে—
কাশবনে সব কাশফুল নেচে যায়।
নিভৃতে একজোড়া অপলক... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৪০

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

সেই ষাট সত্তর দশকের কথা বলছি- আমাদের শিক্ষা জীবনে এক ক্লাস পাস করে উপরের ক্লাসে রেজাল্ট রোল অনার অনুযায়ী অটো ভর্তি করে নেওয়া হতো, বাড়তি কোনো ফিস দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন্দির দর্শন : ০০২ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি পূজা মন্ডপ ও নাচঘর বা নাট মন্দির

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের জমিদার বাড়িগুলির মধ্যে খুবই সুপরিচিত এবং বেশ বড় একটি জমিদার বাড়ি। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি সম্পর্কে একটি লেখা আমি পোস্ট করেছিলাম সামুতে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতা থেকে রামকৃষ্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদিন সবকিছু হারিয়ে যাবে

লিখেছেন সামিয়া, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



একদিন সবকিছু ফিকে হয়ে যাবে,
সময়ের সাথে হারিয়ে যাবে স্মৃতি।
মনে থাকবে না ঠিক ঠাক কি রকম ছিল
আমাদের আলাদা পথচলা,
হোঁচট খাওয়া।
মনে থাকবে না
কাছে পাওয়ার আকুতি।
যাতনার যে ভার বয়ে বেড়িয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে না'ফেরা অবধি দেশ মিলিটারীর অধীনে থাকবে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৯



একমাত্র আওয়ামী লীগ ব্যতিত, বাকী দলগুলো ক্যন্টনমেন্টে জন্মনেয়া, কিংবা মিলিটারী-বান্ধব।

আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ অনেকটা সমর্থক শব্দ ছিলো: বাংলাদেশ ব্যতিত আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই, আওয়ামী লীগ ব্যতিত বাংলাদেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×