আন্ডা হেনীর হানি ভারতেরে দিতাম ন, দরকার অইলে হরান দিয়ালামু!!!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
‘হেনী নদীর হানি হেতাগোরে দে, হেঁইচ্চা অইলে এমুই ব্যক হুয়াই যাইবোগোই। আন্ডা হেনীর হানি ভারতেরে দিতাম ন, দরকার অইলে হরান দিয়ালামু।’
হঠাৎ করে ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়ার খবর শুনে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার বাসিন্দা সিরাজুল আলম মজুমদার তার আক্ষেপ ও তা প্রতিহত করার আকুতি প্রকাশ করেন এভাবেই।
তিনি বলেন, ‘কোন দিনই শুনিনি ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়া হবে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে তিস্তার পানি চুক্তির সাথে ফেনী নদীর পানি চুক্তির বিষয়টি সামনে আনা হয়।’
তিনি বলেন, ‘তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই নদীর পানির হিস্যা বাংলাদেশকে দিতে ভারত বাধ্য। তারা আলোচনার মাধ্যমে না দিলে আন্তর্জাতিক আইনে মামলা করলেও আমাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে বাধ্য হবে।’
অন্যদিকে যে ফেনী নদীর পানি চুক্তির কথা বলা হচ্ছে ওই নদী বাংলাদেশের নদী। এই নদী কোনও আন্তর্জাতিক নদী নয়। সে কারণে এই নদীর পানি ভারতকে দিয়ে আমাদের বিপদ ডেকে আনার কোন যৌক্তিকতা দেখি না।’
তিনি দাবি করেন, ফেনী নদীতে শুষ্ক মৌসুমে এখনই প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না। ভারতকে পানি দিলে এ নদী মরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ত্রিপুরার একমাত্র মুসলিম নবাব শমসের গাজীর সপ্তম বংশধর জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এবং নদীতীরের বাসিন্দা এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ভারতের পানির দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
তিনি দাবি করেন, খাড়গাছড়ি জেলার মাটিরাঙা ও পানছড়ি উপজেলার মধ্যবর্তী ভগবানটিলা নামের একটি পাহাড় থেকেই এ নদীর যাত্রা শুরু।
পাহাড়ের ছড়া থেকে উৎপত্তির পরপরই নদীটি ভারতের ইজেরা গ্রামে কোল ঘেষে দুই দেশের সীমান্ত ঘেঁষে বেশ কিছুটা অগ্রসর হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার গড়েরহাট ইউনিয়ন আমলীঘাট দিয়ে বাংলাদেশে মুল ভুখণ্ডে প্রবেশ করে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর, সোনাগাজী উপজেলার উপরদিয়ে ১১৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে এই নদীর উৎপত্তিস্থলে একাধিকবার গিয়েছি।’
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার বাসিন্দা পূর্ণজ্যোতি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ নদী আমাদের। এ নদীর উপর ভারতের দাবি থাকতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারত চুক্তি ছাড়াই দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম মহকুমার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ চালিত ২৪টি লো লিফ্ট পাম্প দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ২ কিউসেক পানি তুলে নিচ্ছে। যে কারণে এখন বর্ষাকালেও ফেনী নদীর সেই আগের অবস্থা নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেনী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একাধিক কর্মকর্তা এই বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে বলেছেন, ‘পাউবো পারিচালিত জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।’
তারা দাবি করেছেন-কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে ফেনী জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজি, সোনাগাজি, চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার প্রায় ২২ লাখ লোক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ও পরোক্ষভাবে প্রায় অর্ধকোটি লোক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
ফেনী পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল্লাহ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, শুধুমাত্র মহুরী সেচ প্রকল্পের আওতায় ফেনী নদীর পানি ব্যবহার করে বোরো চাষ হচ্ছে ২৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমি। যা এই প্রকল্প চালুর পূর্বে চাষের আওতায় ছিল না। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮৭-৮৮ সালে ৪১৫৯ দশমিক ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়।
এছাড়া নদীর দীর্ঘ চলার পথে অনেকেই এর পানি ব্যবহার করে বোরো চাষ করছে বলে তিনি দাবি করেন।
ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়া হলে এই সেচ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিনা এ প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে চান নি তিনি।
জাতীয় পার্টি ফেনী জেলা শাখার সভাপতি মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে বলন, ‘এই নদীর পানি দেওয়া হলে ফেনী জেলার ৬ টি উপজেলা ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হবে।’
তার মতে, সাগর নিকটবর্তী হলেও তাদের খাওয়া গোসল বিশেষ করে জমি চাষের ক্ষেত্রে মিঠা পানির একমাত্র উৎস হিসেবে কাজ করছে ফেনী নদী।
ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, ভারতের সাথে পানি চুক্তি করা আর ফেনীকে মরুকরণ করা একই কথা।
ছাগলনাইয়া উপজেলার গোপালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ফেনী নদীর পানি চুক্তি হওয়ার খবর শোনার পর থেকেই ফেনীবাসী আতংকিত এবং চরম ক্ষুব্ধ।’
প্রতিদিনই সাধারণ লোকজন সর্বশেষ খবর জানার জন্য ভিড় করছে। এই নদীতে শুষ্ক মৌসুমে যা পানি থাকে এর পরে চুক্তি করে পানি দেওয়া হলে শুধু নদী থাকবে পানি থাকবে না।
ফেনী জেলাবাসী সর্বস্তরের শ্রেণী পেশার লোকজনদের নিয়ে পানি চুক্তির প্রতিরোধ করার জন্য জেলা সচেতন নাগরিক সমাজ নামে একটি সংগঠন করেছেন।
ওই সংগঠনের আহ্বায়ক হাজী গোলাম নবী বাংলানিউজকে জানান, প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু পানি দিয়ে ধীরে ধীরে মরুভূমি হতে দিব না ফেনীকে।
ফেনী জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের কষ্ট হলো বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতের চামচামিতে ব্যস্ত। আর বিরোধীদল বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় যেতে ভারতের চামচামি করছে। যে কারণে কেউ ফেনী নদীর বিষয়ে জোর গলায় কোনও কথা বলছেন না।’
প্রেসক্লাবের সভাপতিও দাবি করেন ফেনী আন্তর্জাতিক নদী নয়।
খবরঃবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ
বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার
মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪
ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla
ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।
প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন