somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

**আল্লাহর পরিচয়** : পর্ব (১)

০৭ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আল্লাহ রাব্বুল আলামিন

প্রোফেসর সাহেবের ইউনিভারসিটি পড়ুয়া মেয়ে টেবিলে বাবার জন্য খাবার প্রস্তুত করে রেখেছেন ঘণ্টা দেড়েক থেকে। প্রতিদিনের মতো আজও বাবার সাথে খাবে-এ আশায় অপেক্ষা করছে অনেকক্ষণ থেকেই। কই ! বাবা যে আসছে না এখনও। বারবার হাতঘড়ির প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছে আর বারান্দায় পায়চারি করছে প্রোফেসর সাহেবের একমাত্র মেয়ে অনার্সের শেষ বর্ষের ছাত্রী। পরীক্ষাও খুব কাছে এসে গেছে তার। খাওয়া শেষ করে পড়তে বসবে। হঠাৎ বাবার ফিরতে দেরি হওয়া অস্থিরতার কারণ হলো। খাওয়ার টেবিলে প্রতিদিনই নানা কথা হয় বাবা-মেয়ের মাঝে। মেয়ের কিশোর বয়সেই মা পৃথক হয়ে চলে গেছে অন্যত্র বিয়ে বসে। বাড়িতে বাপ মেয়ে ছাড়া অন্য কেউ নেই। হঠাৎ বারান্দা থেকেই দেখা গেল বাবা আসছেন। মলিন চেহারা, উসকো-খুসকো মাথার সাদা চুল। অবসাদের চিহ্ন ফুটে উঠেছে সারা মুখমণ্ডলে। অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট সারা অবয়বে। আঁৎকে উঠে বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে। ‎

কি হয়েছে বাবা ? তোমার এ অবস্থা কেন ? কারো সাথে ঝগড়া হয়েছে, না অন্য কোন সমস্যা ? প্রোফেসর সাহেব মুখ খুলছেন না। বলেন, না কিছুই হয়নি মা, আমি ঠিকই আছি। কিন্তু মেয়ে নাছোড়বান্দা। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে, তোমাকে বলতেই হবে। বাবা, আমি জানতে চাই তুমি কেন আপসেট। মেয়ের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হন প্রোফেসর ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, লোকেরা নানা প্রশ্নে আমাকে জর্জরিত করে দিয়েছে আজ। সারা জীবন যে মতবাদ প্রচার করেছি, যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে প্রমাণ করে এসেছি, ক্লাসে, লেখায় ও বক্তৃতায় দীর্ঘদিন শিক্ষা দিয়ে আসলাম। এখন এ চিন্তাধারা ভুল প্রমাণ করে আমাকে নাজেহাল করল তারা। আমি বাধ্য হয়ে বেরিয়ে এলাম ফিলোজফির ক্লাস থেকে। শুনে মেয়ে বলল, বাবা, তুমি এভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে ? তোমার পূর্বে যারা এ চিন্তাধারার সূচনা করেছে, তাদের কথা স্মরণ কর।

সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছুই নেই। সবকিছু প্রকৃতি-এটা প্রচার করতে তাদেরকেও হিমশিম খেতে হয়েছিল। কিন্তু যতই যুক্তি-প্রমাণ আসতো, তাদের কথা ছিল একটিই। কোন যুক্তিতর্ক নেই। যা বলা হচ্ছে, তাই একমাত্র সত্য, এটাই মানতে হবে। এককথার উপর সুদৃঢ়ভাবে টিকে থাকতে হবে। বাবা, প্লেটো, ডারউইন, কাল মার্কস-ইত্যাদি বড় বড় নামকরা বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আর দার্শনিকরা এমনই বলত। সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছুই নেই। এটা যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে ঠেকানো যাবে না- কোনকালেও। তারপরও বলে যেতো সুদৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে। এটাই হচ্ছে মূলত নাস্তিকদের একমাত্র অস্ত্র। যুক্তিতর্কের ধার তারা ধারে না। তারা এবং তাদের গুরুরা মূলত: এভাবেই প্রচার করতো নাস্তিকতাবাদ। পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে আমরা এসকল অথর্ব বোকা ও অর্বাচীনদের জন্য কিছু আলোচনা করব অতি সংক্ষিপ্তভাবে। পাঠকদের অনুরোধ করব এদের হাতে বইটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য, যা তাদের আখেরাতের পাথেয় হিসাবে কাজে লাগবে।

ভূমিকা

মানব ইতিহাসের কোন স্তরেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউ কখনও কোন সন্দেহ করেনি, করার প্রশ্নও আসেনি। কোন বিবেকবান মানুষ, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক বা বুদ্ধিজীবী অতীতে কল্পনাও করতে পারেনি এ ধরনের চিন্তাধারার। প্রকৃতির প্রতিটি নিদর্শন, আর সৃষ্টির প্রতিটি পত্র-পল্লব যখন তাদের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের কথা চিৎকার করে ঘোষণা করছে . তখন মানুষ নামী একদল অনুভূতিহীন গোষ্ঠী বলে বেড়াচ্ছে যে, সবকিছু আপনা-আপনিতে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্টি হয়েছে। কেউ এসব সৃষ্টি করেনি। অন্যকথায়, সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই, কিছু নেই। বিস্মিত হতে হয় যখন দেখা যায় যে এদেরকে আবার সমাজের কিছু লোক দার্শনিক বা বুদ্ধিজীবী বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে এসব তথাকথিত লোকদের যুক্তি ও তথ্যসমূহ খুবই হাস্যকর। দর্শনের নামে কতগুলো উদ্ভট তথ্য তারা সমাজে প্রচার করে যাচ্ছে। আধুনিক যুগে খ্রিস্টান ধর্ম-যাজকদের একক সৃষ্টিকর্তার বদলে ত্রিত্ববাদ অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্‌ভাবনের বিরুদ্ধে গোঁড়ামিসূচক আচরণ দ্বারা পৌরোহিত্য প্রতিষ্ঠার কারণে গোটা পাশ্চাত্য সমাজ এ-ভ্রান্ত ও খুবই অযৌক্তিক মতবাদটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠে। এ সুযোগে একদল দার্শনিক অমূলক যুক্তি প্রদর্শন করে সেক্যুলার মিডিয়ার মাধ্যমে অবিরামভাবে জগৎব্যাপী প্রচার করতে সক্ষম হয়। সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কিত তথাকথিত দার্শনিকদের সেসব যুক্তিকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপের পরিবর্তে আরও যুক্তির দাবি আসতে থাকে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে। প্রসিদ্ধি লাভের জন্য এসব তথাকথিত দার্শনিকগণ এভাবে অরও উৎসাহী হয়ে উঠে। জগৎবাসী তাদেরকে ঘাড় ধরে জিজ্ঞেস করেনি যে, ঘর থাকলে নির্মাতা থাকবে, কুড়াল থাকলে কামার থাকবে, নৌকা থাকলে কাঠ-মিস্ত্রি থাকবে, তাহলে কেন এ বিশাল জগৎটির সৃষ্টির পিছনে একজন সৃষ্টিকর্তা থাকবেন না ? অথচ মস্তিষ্কবিকৃত ব্যক্তি ছাড়া, একজন সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিও জানে যে, একটি ঘরের জন্য নির্মাতা, কুড়ালের জন্য কামার, গাড়ির জন্য ইঞ্জিনিয়ার যেমন অপরিহার্য, তেমনি এ বিশাল বিশ্ব-ব্যবস্থা সৃষ্টির পিছনে রয়েছেন মহান শক্তিশালী ও সুদক্ষ একজন কারিগর। আমাদের বাস্তব জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই এ ধরনের অসংখ্য নিদর্শন সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ হিসাবে উদ্ভাসিত হয়ে আছে। যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। আমরা এ জগতের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ও অতি সাধারণ সামান্য জিনিসগুলো সম্পর্কেও বিশ্বাস রাখি যে, এসব কিছুর পিছনে একজন কারিগর রয়েছেন। এটা অস্বীকার করাকে অত্যন্ত নির্বুদ্ধিতা ও গোঁয়ারতুমি ধরে নেয়া হয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যে, এ বিশাল জগতের সৃষ্টি রহস্যের পেছনে সর্বশক্তিমান ও বিচক্ষণ সত্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে যারা সন্দেহ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে যাচ্ছে, তাদেরকে এ যুগে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে মস্ত বড় বৈজ্ঞানিক-বিরাট দার্শনিক হিসাবে।

মূলত: অষ্টাদশ শতাব্দীতেই তথাকথিত বিবর্তনবাদের প্রবর্তক ডারউইন এবং কমিউনিজমের উদ্ভাবক কাল মার্কস এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ধারণা সর্বপ্রথম ব্যাপকভাবে প্রচার শুরু করেন পাশ্চাত্যের খ্রিস্ট মতবাদের ভ্রান্ত ধর্মবিশ্বাসীদের মাঝে, যা তাওহীদবাদী যুক্তি ভিত্তিক ইসলামের মোকাবিলায় টিকতেই পারে না। এদেরই অনুসারীরা অন্ধবিশ্বাসের ন্যায় এ মতবাদেও স্বপক্ষে ওকালতি করে বেড়াচ্ছে। পৃথিবীর সর্বত্রই এদের কিছু অনুচর রয়েছে, যারা ধর্মহীন উচ্ছৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ডারউইন ও কাল মার্কস-এর উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি বাংলাদেশে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মুক্ত-বুদ্ধির দাবিদার কিছু কবি, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীর মাঝে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করার প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার সত্তাকে অস্বীকার করা আজকাল যেন একটা ফ্যাশানে পরিণত হতে চলেছে। মানুষ নামী এসব জীবগুলোকে আশরাফুল মখলুকাত এর উচ্চাসনে ফিরিয়ে আনার একটা প্রয়াসের প্রয়োজন অনেকদিন থেকেই অনুভূত হচ্ছে। আলাপ-আলোচনা আর তর্কবিতর্কের পরিবেশ দেশে অনুপস্থিত থাকায় লেখা বা প্রকাশনার মাধ্যমে এ কাজ সহজেই করা যায় বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

যুক্তিতর্ক ও প্রমাণাদির মাধ্যমে তাদেরই পদ্ধতিতে বইটি প্রকাশের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। পাঠক সমাজের নিকট পকেট সাইজ এ বইটি সমাদৃত হলে আমাদের সাধনা সার্থক হবে বলে মনে করব। আল্লাহ তাআলা আমাদের এ তৃণসম প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। এটাই কামনা করছি। আমিন।

আল্লাহর পরিচয়


আল্লাহ একটি আরবি শব্দ। এ শব্দটি এমন এক সত্তার জন্যে নির্ধারিত, যিনি অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্বের অধিকারী, যিনি যাবতীয় পবিত্রতা, পরিপূর্ণতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার গুণাবলিতে ভূষিত এবং সকল প্রকার অসম্পূর্ণতা, অপবিত্রতা ও যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। সর্বোপরি যিনি এসব গুণাবলির একমাত্র অধিকারী। অর্থাৎ, যিনি ব্যতীত এসব গুণাবলির অধিকারী অপর কেউই নেই, তিনিই হলেন আল্লাহ। সর্বময় ক্ষমতার মালিক ও শক্তির একক আধার।

আল্লাহ ছাড়া এরূপ মর্যাদায় মর্যাদাবান আর কেউ নেই। এক্ষেত্রে তিনি একক, অনন্য। তার সমকক্ষ ও সমতুল্য কেউ নেই এবং থাকতে পারে না। তিনি তার সত্তা, গুণাবলি ও কার্যাবলির ব্যাপারে এক কথায় সর্বদিক থেকে একক, অনন্য ও অদ্বিতীয়। তাই তিনি শির্‌ক থেকে যেমন পবিত্র, তেমনি মুক্ত ও পবিত্র সৃষ্টির সাথে যাবতীয় সাদৃশ্যতা থেকে। বিশ্বজগতের তিনিই একমাত্র স্রষ্টা, তিনিই একমাত্র অবশ্যম্ভাবী সত্তা (ওয়াজিবুল ওজুদ)। যাবতীয় সৃষ্ট বস্তুর সাথে সাদৃশ্য থেকে তিনি পবিত্র। মোটকথা, গোটা সৃষ্টিজগতের কেউ কোন দিক থেকে তাঁর মত নয়। তাঁর সাথে কারোই যেমন কোন প্রকার তুলনা হয় না, তদ্রুপ কোন কিছুর সাথে তাঁরও সামান্যতম তুলনা বা সাদৃশ্য নেই। আল্লাহ তা‘আলআহাদ’ তথা একক ও অনন্য হওয়ার প্রকৃত অর্থ এটাই। তাঁর সম্পর্কে এরূপ আকিদা বিশ্বাস পোষণ করাকেই ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় তাওহীদ’। আর এটাই ইসলামের প্রথম ও প্রধান ভিত্তি।

আল্লাহ কোন বস্তু নন এবং তাঁর গুণ-রাজি শুধু তাঁরই জন্য। তাঁর কোন গুণই অপর কারো মধ্যে কল্পনা করা যায় না। আল্লাহকে জানবার অসংখ্য পন্থা তাঁর সৃষ্টিজগতে উপস্থিত আছে। বিশ্বজগতের সকল সৃষ্টির মাঝেই মূলত: আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্বের নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে নিজ পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন -

اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ. ( البقرة : 254 )

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া ? দৃষ্টির সামনে বা পিছনে যা কিছু রয়েছে, তিনি তার সবই জানেন। তাঁর জ্ঞান-সীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না-তবে যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর আসন (সার্বভৌম ক্ষমতা) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। সুরা বকারা (আয়াতুল কুরসি), আয়াত নং ২৫৪। তিনি আরও বলেছেন -

تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴾ الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ ﴾ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَوَاتٍ طِبَاقًا مَا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِنْ تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِنْ فُطُورٍ ﴾ ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَهُوَ حَسِيرٌ. ( الملك: 1-4 )

পুণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব বা সর্বময় ক্ষমতা। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান, যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমতাময়। তিনি সপ্ত আকাশকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিতে কোন খুঁত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোন ভ্রান্তি দেখতে পাও কি ? অতপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখ, তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে। (সুরামুলক ১-৪ আয়াত)

নাস্তিকদের যুক্তি ও সৃষ্টির নিদর্শন

নাস্তিকরা আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকার করার যুক্তি হিসেবে কতগুলো উদ্ভট ও অযৌক্তিক প্রমাণাদি পেশ করার অপ-প্রয়াস চালিয়ে থাকে। তারা বলে আল্লাহকে কেউ দেখে না, ধর্মের ধ্বজাধারীরা সাধারণ মানুষকে শোষণ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর একটা ধারণা প্রসূত মতবাদ দাঁড় করানোর জন্য অদেখা-অদৃশ্য জগৎ সম্পর্কে মনগড়া কথাবার্তা চালু করে রেখেছে। জীবন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা এখন আর অসম্ভব নয় বলে অবৈজ্ঞানিক অস্পষ্ট চিন্তাধারার বিশ্বাস করারও কোন প্রয়োজন নেই। ভীতি প্রদর্শনের জন্য পরকালের কঠোর আজাবের কথা আর ভোগ লালসার আশ্বাসবাণীর জন্য স্বর্গ-এগুলো ধর্মেরই তৈরি, যার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা যা অনুভাব করা যায় না, তা কিভাবে বিশ্বাস করা যেতে পারে ? আল্লাহ নামক এই ধারণা মানুষেরই সৃষ্টি। মূলত: আল্লাহ বলতে কিছু নেই।

নাস্তিকদের মোটামুটি যুক্তিগুলো এ ধরনেরই। এসব কথাকেই নানাভাবে, নানা ভঙ্গিতে তারা পেশ করার চেষ্টা করে। অথচ তারাই আবার এমন সব জিনিস সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় না-যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত অনুভাব করি ও বিশ্বাস করি। অদেখা হাজারো জিনিস আমরা প্রতিনিয়ত অনুভাব করে, না দেখে বিশ্বাস করি। মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ। দেয়ালের অপর পাশে কি আছে, তা দেখার শক্তি আমাদের নেই। ধুয়ার কুণ্ডলী দেখলেই আমরা বুঝতে পারি পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছে। আগুনের লেলিহান শিখা কিন্তু আমরা দেখিনি, দেখেছি তার নিদর্শন। তাতেই আমাদের বিশ্বাস হয়েছে-ওখানে অবশ্যই আগুন আছে। তখন কিন্তু আমরা যুক্তি দিতে চেষ্টা করি না যে, না, আগুনতো দেখা যাচ্ছে না। তাই বিশ্বাসও করব না। এ যুগের অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ইলেক্ট্রনিক, ইথর, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন-আরো অনেক জিনিস আমরা শুধু নিদর্শন দেখেই বিশ্বাস করে থাকি। রেডিওর আওয়াজ, বিদ্যুতের আলো আর শ্বাস-প্রশ্বাসের নির্গত ও বহির্গত বায়ুও আমরা দেখি না, শুধু অনুভব করি। কেউ কি বলতে পারে যে এসব অদৃশ্য কথাবার্তায় আমরা বিশ্বাস করব না। এগুলো আমাদের দেখতে হবে। তবেই মাত্র বিশ্বাস করা যাবে। এ ছাড়াও বলা যায়, আগামী কিছুদিন পরই আরম্ভ হচ্ছে ২০০০ সালের বর্ষ বরণ উৎসব। তা শুনে আমরা সবাই বিশ্বাস করেছি। এটা কেন বলা হচ্ছে না যে- ২০০০ সাল আসুক, উৎসব উদ্‌যাপিত হক, তারপর বিশ্বাস করব-এখন না দেখে কীভাবে বিশ্বাস করব ? ক্রুজ মিসাইল আমরা দেখি না। কিন্তু আছে, তা বিশ্বাস করি। এখানে এ প্রশ্ন করি না কেন-দেখি না তাই বিশ্বাসও করব না। তাহলে স্রষ্টার এ বিশাল জগৎটা এত সুন্দর ও সুবিন্যস্ত আর সুশৃঙ্খল দেখেও কেন আমরা তাঁর শক্তিধর সূক্ষ্ম কারিগর সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করব ? আহম্মকী-বোকামি আর বিকৃতিরও একটা সীমা আছে।

মানুষ ব্রেনের করণেই সৃষ্টির সেরা জিব-আশরাফুল মখলুকাত। কিন্তু এ ব্রেন থাকা সত্ত্বেও এর অপব্যবহার করে সে যদি নিজেকে গরু-ভেড়া আর ছাগলের স্তরে নামিয়ে পশুর লাইনে দাঁড়াতে চায় তাহলে কে তাকে রক্ষা করতে পারে ! এসব বিকৃতমনা তথাকথিত বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিকরা মূলত: নিজেরাই নিজেদের জন্তু জানোয়ারের স্তরে নিয়ে গেছে। আমাদের দেশে সেই অ-কবরী” বুদ্ধিজীবীদের এখনও যারা শ্রদ্ধা জানাতে ব্যস্ত তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা দরকার, ওরা যখন আবার ঢাকার আবহাওয়াকে দূষিত-কলুষিত করার চেষ্টা করবে তখনও কি এরা ছুটে যাবে সেখানে নাকে কাপড় গুঁজে ওদের শ্রদ্ধা জানাতে ? মূলত: এদেরকে লক্ষ করেই কোরআন বলেছে-

خَتَمَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ وَعَلَى سَمْعِهِمْ وَعَلَى أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ (البقرة :7 )

তাদের হৃদয় ও কর্ণকুহরে সিল মেরে দেওয়া হয়েছে আর তাদের চক্ষুর সম্মুখে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অন্ধত্ব। (সুরা বাকারা :৭)
ঐ অ-কবরীর এ জ্বলন্ত আজাব দেখেও তারা দীক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না, এটাই বিস্ময়ের ব্যাপার।

কিছু মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্টতর

আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানুষের নিজের শরীরের মধ্যে তার অস্তিত্বের বহু নিদর্শন রেখে দিয়েছেন। বিস্মিত হতে হয় যখন কেউ গভীরভাবে তার নিজস্ব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর চিন্তা করে। সামান্য একটি অঙ্গকে বিশ্লেষণ করলেই সে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে। এসব কথা ভাবলে কোন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ছাড়াও যে কোন বিবেকবান লোক অনায়াসেই আল্লাহর অস্তিত্বের বিশ্বাসী হতে বাধ্য। হৃৎপিণ্ডের চালিকাশক্তি ঠিক জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলছে। এক মুহূর্তও এর গতি বন্ধ হয়নি। চলছে আর চলছে। কে এ মেশিনটাতে রক্ত সঞ্চালন করছে ? এ ধরনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম শারীরিক মেশিনসমূহ দিন-রাত ক্রমাগত চলছে, কোন বিরতি নেই। সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকারকারী নাস্তিক আর তাঁর আনুগত্যকারী মোমিন একই ভাবে এর দ্বারা বেঁচে আছে। আরও অসংখ্য মেশিন তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রতিনিয়ত সেবায় নিয়োজিত। এসব নিদর্শন রয়েছে তার অতি নিকট এবং নাগালের মধ্যে। কিন্তু আল্লাহ যাকে অন্ধ বানিয়েছেন, সে কি আর দু চোখ মেলে কিছু দেখতে পায়? এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা মোমিনদের বলেছেন চক্ষুষ্মান আর কাফেরদের বলেছেন অন্ধ। কাফির শব্দটা কোন ফতোয়া নয়। এর অর্থ হচ্ছে অস্বীকারকারী | ঠিক দুপুর সময়ে মধ্য আকাশে যখন সূর্য থাকে, তখন যদি কোন লোক বলে এখন রাত্রি-দ্বিপ্রহর, তখন তাকে আপনি কি বলবেন ? মূলত: এরা বোকা, অজ্ঞ আর জন্তু-জানোয়ারের মত। নিজেদের তারা যতই বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী মনে করুক না কেন।

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آَذَانٌ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ (الأعراف: 179 )

আমি অনেক জিন ও মানুষকে দোজখের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর রয়েছে, তারা তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা তারা দেখে না আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শুনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। (সুরা আরাফ:১৭৯)



মূল লেখা এখানে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×