somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাগজের নৌকা

১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তিতির ভাইয়ের পাশে বসে নৌকা বানাচ্ছে। ভাই কাঁথায় শুয়ে। তিতিরের হাতে একটা লাল চকমকে কাগজ। ছোটকাকা কিনে এনেছিল গিফট প্যাক করার জন্য। কিছুটা বেঁচে ছিল। তিতির চেয়ে নিয়ে এসেছে। নৌকা তৈরি করার আগেই কল্পনায় লাল ঝকঝকে নৌকাটা দেখতে পাচ্ছে। গা থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে। সবাই অবাক হয়ে দেখবে নিশ্চয়ই বানাবার পরে! নিজের মনেই ভাবছে ময়ূরপঙ্খী নির্ঘাত এরকম দেখতে হবে। কিন্তু কাগজটা কী রকম ফসফসে প্লাস্টিকের মত। ভাঁজ হচ্ছে না ঠিক করে। তবে তিতির দমার পাত্রী নয়। অনেক কষ্টে প্রায় বানিয়ে এনেছে। একবার মুখ তুলে ভাইটার দিকে তাকায় তিতির। ভাই ফিক করে হাসে। এখনও একটাও দাঁত ওঠেনি। তবুও মুখটা কি সুন্দর!
হঠাৎ মনে পড়ে যায়, হায়! আজকে ভাইকে তো পড়ান হয় নি একবারও! তিতির সিরিয়াস মুখ করে ভাইকে বলে, 'ভাই বল - অ। 'তিতির কে কথা বলতে দেখে ভাই ধড়পড়িয়ে ওঠে। হাত পা চালাতে চালাতে বলে, 'ক ক অ। 'তিতির হেসে বলে, 'দূর বোকা অ বল অ, অ। 'ভাই আনন্দে আবার হাত পা ছুড়তে শুরু করে।
এদিকে নৌকা তৈরি শেষ করে ভাইকে দেখাতে যেতেই ভাইয়ের পা লেগে নৌকার ভাঁজ খুলে যায়। তিতিরের হঠাৎ রাগ হয়ে যায়। ভাইয়ের পায়ে আলতো করে একটা চিমটি মেরে দেয়। মা যে
পিছনেই কাপড় গুছাচ্ছিলেন তিতির খেয়াল করেনি। মা'ও সাথে সাথে তিতিরের কানটায় একটা হালকা প্যাঁচ দিয়ে বললেন, 'এত ছোট ভাইকে কেউ মারে?'
তিতির ভাই হবার পর থেকে দিদি হয়ে গেছে । এখন তাই ইচ্ছে হলেও কাঁদতে পারে না। কান্নার তোড়ে ঠোঁট উল্টে আসে, চোখ থেকে জলের ফোঁটা ঝরে কিন্তু মুখে আওয়াজ করে না। । নৌকা হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মা বোধ হয় ভাইকেই এখন বেশি ভালবাসে। এসব ভাবতে ভাবতে দাদীর ঘরে গিয়ে দাদীকে জড়িয়ে ধরে কোলে মুখ লুকায়।
দাদী মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্রশ্ন করেন, ' কি রে তোর মন খারাপ? মা বকেছে? 'তিতির সে কথার উত্তর না দিয়ে বলে, 'দাদী, একটা গল্প বলো না! 'দাদী বলেন, 'এই সাত-সকালে গল্প? রাতে শুনবি বরং ।' তিতির ছাড়ে না। দাদী গল্প শুরু করেন। এক রাজা ছিল...... ।
তিতিরের মন আজ গল্পে ঠিক বসছে না। পাশের ঘর থেকে ভাইয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। মা ভাইকে আদর করে কি যেন বলছেন! তিতির মন শক্ত করে নৌকাটার দিকে তাকায়। ভাবে, আহা কী সুন্দর! নৌকা। এরকম নৌকা রিয়া, সোমা, অদিতি কারো কাছে নেই! সবাই দেখলেই হামলে পড়বে।
দাদী জিজ্ঞাসা করেন, 'তিতির কত অবধি গল্পটা বললাম?'
তিতির উত্তর দেয়, 'আবার প্রথম থেকে বলো।'
দাদী বলেন, 'পরে শুনবি। তোর আজকে গল্পে মন নেই। তুই এখন নৌকো নিয়ে খেল।'
তিতির বিছানায় বসে এক অদৃশ্য নদীতে নৌকো ভাসায়। নৌকো যাচ্ছে যাচ্ছে... কিন্তু মন বার বার পাশের ঘরে চলে যাচ্ছে। প্রায় আধ ঘন্টা কেটে গেছে। অনেকক্ষণ ভাইকে দেখেনি। ভাই খাটের উপরে হাত পা ছুঁড়ে খেলছে! মুখে কী সব আওয়াজ করছে। তিতিরের ভাইয়ের জন্যে মন হু হু করে ওঠে। তবু মনের কষ্ট এখনও পুরোটা কমেনি। তাই জোর করে নৌকো নিয়ে খেলতে থাকে।
কিছু পরেই সব উল্টো ভাবনা আসতে থাকে তিতিরের। ভাবে আগে কাগজটা যখন পেয়েছিল তখনই বেশি চকচক করছিল। নৌকা বানানোর পরে তেমন আর লাগছে না। কাগজটাও খুব ফসফসে শুধু খুলে যায়! জলে ছেড়ে দিলেও মনে হয় সোজা হয়ে চলতে পারবে না। এখন মনে হচ্ছে জলে চালাবার জন্য খাতার পৃষ্ঠার নৌকোই বরং ভাল। খাতার কাগজের নৌকো বানালে রিয়া, সোমা অদিতি কেউ লোভ দেবে না। ঝগড়াও হবে না। যাই এটা বরং ভাইয়ের হাতেই দিয়ে দি। ভাই খচমচ করে ধরবে। খেলবে আর হাসবে। এই নৌকোটা নড়েনা চড়েনা বিচ্ছিরি! ভাই কত্তো ভাল। কী সুন্দর করে হাসে দিদিকে দেখলে। যাই ভাইকেই দিয়ে দি নৌকাটা।
দৌড়ে গিয়ে তিতির ভাইয়ের ঘরে ঢুকে বিছানায় উঠে পড়ে। ভাইয়ের কাছে নৌকোটা এগিয়ে দেয়। ভাই খপাৎ করে নৌকোটাকে ধরে। খচমচ শব্দে নৌকোর ভাঁজ খুলে যায়। ভাই মজা পেয়ে ধড়পড় করে হাত পা চালায়। দিদির দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে শব্দ করে, 'অ- অ- অ!' তিতির উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে থাকে, 'মা দাদী কে কোথায় আছ শীগগিরই এস! দেখে যাও ভাই অ বলেছে ! কী দুষ্টু দ্যাখো নৌকাটা হাতে পাবার পর অ বলছে!'
তিতিরের ডাকে মা শুধু কাজ করতে করতে মুখ তুলে তিতির কে দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলেন। ভাইয়ের দিকে একবার তাকালেনও না। আর দাদী তো অন্য ঘর থেকে সাড়াই দিলেন না ! অবশ্য তিতিরের এসব সয়ে গেছে। বড়রা যে কী কারণে হাসে আর কী কারণেই বা কাঁদে তিতির কিছু বুঝতে পারে না !
তবে তিতির দমার পাত্রী নয়। ফট করে খাটে রাখা স্কুলের খাতা থেকে একটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে আবার নৌকা বানাতে বসে পড়ে। এবার ভাইকে দিয়ে 'আ ' বলাতে হবে। কিন্তু তখন না এলেও মা এবারে এলেন। তিতিরের কানটায় আবার একটা হালকা প্যাঁচ দিয়ে বললেন, 'আবার স্কুলের খাতা ছিঁড়েছিস? ভাল খাতা থেকে পৃষ্ঠা ছিড়বি না তোকে কত বার বারণ করেছি!'
তারপরে আর কী। আবার সেই নৌকা হাতে ছলছল চোখে দাদীর ঘরে গমন - রূপকথার বায়না -কিছুক্ষণ পরে আবার নৌকা হাতে ভাইয়ের কাছে আগমন। তবে ভাই নৌকা হাতে নিয়ে এবার 'আ' বলবে কি না সেটার কোন গ্যারান্টি দেওয়া যাচ্ছে না!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×