somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময় এবং আমরা

০২ রা মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় বদলেছে। আমরা আজ বাস করছি এক আধুনিক যুগে। যেখানে আছে বিজ্ঞানের অনবদ্য সব আবিষ্কার এবং যুগান্তকারী সাফল্য। শুধু যেটা নেই তা হচ্ছে আন্তরিকতা। যুগ পাল্টেছে। সাথে প্রযুক্তি ও। আগে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বসবাসকারী আমাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ এর মাধ্যম বলতে ছিল চিঠি। আর আরেকটু ধনী শ্রেণীর কাছে জনপ্রিয় ছিল টেলিফোন। খাকি পোষাকের সেই ডাকপিয়ন কে বাসার দিকে আসতে দেখলেই মনের মাঝে ধুকধুক শুরু হয়ে যেত, বা বেঢপ সেই টেলিফোন সেটের কর্কশ আওয়াজ ও তখন ছিল কতই না মধুর। মাঝ রাতে বেজে উঠা সেই টেলিফোন এর আওয়াজে ঘুম ভাঙত আশেপাশের প্রতিবেশীদেরও। আর এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। কারও কারও হাতে তো আবার দুই তিনিটাও। একটা রাফ উইজ মোবাইল,একটা নেট সার্ফিং এর জন্য। চিঠির জায়গা দখল করেছে এস এম এস। কাগজের পৃষ্ঠায় কলমের কালিতে লেখা সেই চিঠি আর কই। সেই জায়গা করে নিয়েছে আজকের যান্ত্রিক খুদেবার্তা। সাথে আছে মেসেঞ্জার,ইমো,হোয়াটস এ্যাপ সহ অসংখ্য মেসেজিং সফটওয়্যার।
আগের সেই সীমিত ফিল্ম এর ক্যামেরা আজ অতীত। এখন এসেছে আধুনিক ডিএসএলআর। আর মোবাইল ক্যামেরার তো কোন কথাই নেই। ৩৩/৩৪ ফিল্ম এর ক্যামেরার জায়গায় এখন শত শত ছবি তোলা যায় অনায়াসে। আবার আছে ফটোশপ এর মত জাদুকরী সফটওয়্যার। যা মানুষের ভোলই পাল্টে দিতে পারে অনায়াসে। সেলফি নামক জিনিসটা যেন আজ এক ভয়াবহ রোগ এর নাম। মানুষ আজ কোথায় না সেলফি তোলে। টয়লেট এ বসে,খেতে বসে,নামাজের মাঝে,মাঝ আকাশে প্লেনের ককপিট এ বসে,লাশের সাথে, কবরে শুয়ে। সেদিন পত্রিকায় পেলাম মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে সেলফি তোলার সময় অসাবধানতা বশত মিস ফায়ার হয়ে একজন এর মৃত্যু। কোথায় যাচ্ছি আমরা? একবারও কি ভেবে দেখেছি?
আগে বন্ধুরা মিলে আড্ডা গুলো ছিল জমজমাট। আড্ডায় ছিল প্রাণবন্ততা। আর এখন আড্ডায় বসে হাতে মোবাইল এর ঠুকঠাক আওয়াজ যেন অঘোষিত আইন। জোকস এ পড়েছিলাম, "আগে মানুষ ঘুরতে যেন নিজের মাইন্ড কে ফ্রেশ করতে আর এখন যায় ছবি/সেলফি তুলতে,চেক ইন দিতে"
আগে বিকেলের মাঠ ছিল সবার মিলন মেলা। ছোট বাচ্চাদের হৈচৈ এ মুখর। আর এখন বৃদ্ধ বনিতা ছাড়া ছেলে মেয়েদের মাঠে দেখতে পাওয়া যেন দুঃসাধ্য। কারন মাঠের থেকে COC তেই বেশি আগ্রহ বর্তমান বাচ্চাদের। আর আমরা আশা করে বসে আছি আগামীতে আমরা পাব নতুন নতুন সাকিব তামিম মুশফিকুর এর মত খেলোয়াড়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত সামাজিকতা আজ তলানিতে এসে ঠেকেছে। বন্ধুদের বা আত্মীয়দের সাথে এক সাথে বসে আমরা ফেসবুক এ অচেনা অজানা মানুষদের সাথে সামাজিকতা রক্ষা করতে করতে পাশে বসা বন্ধু, আত্মীয়দেরই দূরের মানুষে কনভার্ট করে ফেলেছি। এই আমাদের সামাজিকতার অবস্থা।

আমরা সীমানা অতিক্রম করে ফেলেছি অনেক আগে। এখনই সচেতন হতে হবে সকলকে। বলছিনা তথ্যপ্রযুক্তি কে অগ্রাহ্য করতে। বলছি না এর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে,শুধু বলছি একটু সহনীয় হতে। ঘরে ফিরে দিননা স্ত্রী সন্তানকে একটু বেশী সময়। ছুটির দিনগুলোয় ঘরে বসে ফেসবুকিং না করে ঘুরে আসুন তাঁদের নিয়ে কাছাকাছি কোথাও। বা ফেসবুক এ কোন আত্মীয়ের সাথে হাই-হ্যালো না করে একটু ঢু মেরে আসুন বাসা থেক। দেখবেন খুশি হবে। গার্লফ্রেন্ড এর সাথে রাত জেগে স্কাইপি তে গুজুরগুজুর না করে দেখা করে একটু সময় দিন, দেখবেন সম্পর্কের মাঝে ফাটল ধরবে না। পাঁচ মিনিটের রাস্তা যাবার জন্য ইগো ধরে জ্যামে নিজের গাড়িতে বসে না থেকে একটু হেঁটেই যান না। তাতে কি আপনি অফিসের ডিরেক্টর থেকে ম্যানেজার হয়ে যাবেন? লিফটের জন্য দশ মিনিট না দাঁড়িয়ে যান না একটু সিঁড়ি বেয়ে আপনার ফ্লোরে। তাহলে তো আর রোজ রোজ আপনাকে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এ দেখতাম ৩তলায় লিফটে যাবার জন্য লম্বা লাইন এ দাঁড়িয়ে থাকতো ছাত্রছাত্রীরা ১০/১৫ মিনিট । এই সময়টুকু তো বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে অনায়াসে ৯/১০ তলায় উঠে যাওয়া যায়।

আসুন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি। অন্যথায় সেই দিন আর দূরে নেই যেদিন আমরা এক পঙ্গু সমাজে পরিণত হবো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×