১. ময়ুর পালক
এইতো সেদিন! একটা ময়ুর পালক দিয়েছিল তানিয়া। বইয়ের মধ্যে রেখেদিলে একদিন নাকি সেটার বাচ্চা হবে! তারপর কেটে গেল অনেক দিন। বাচ্চা হলনা। তখন সে বলেছিল, শুধু মা দিয়ে তো হবে না। বাবাও লাগবে। অনেক খুজে পেতে একটা বাবা পালক জোগাড় করা হল। আবারো কেটে গেল অনেকগুলো দিন! তবুও বাচ্চা হল না। কেউ কেউ বলল, ময়ুর পালকটা বাজা। ‘বাজা’ মানে জানিনা। তানিয়া বলল, দেখিতো কোথায় রেখেছিস?
বই খুলে দেখালাম!
-এএ মা!! এ তো ধর্ম বই।
-তাতে কি?
-এইসব আরবী লেখার মধ্যে শুয়ে ময়ুর পালকরা বাচ্চা বানাবে কি করে? !!!
সমস্যাটা কোথায় বুঝিনা! তবে এরপর তাদের ঠাই হয় আমার বাংলা বইএ। যেখানে ষড় ঋতুর বর্ণনা দিতে দিতে থেমে গেছে বসন্তে! তারপর আবারো কাটে অনেক অনেক দিন...
ময়ুর পালকদের বাচ্চা হয়েছিল কিনা জানিনা। বসন্ত নয়, তাদের ঋতুতো বর্ষা। তবে তানিয়ার বিয়ে হয় একদিন। একদিন দুএকটা বাচ্চাও হয়ে যায় তার!
ওদের ঘরে মনে হয় কোন আরবী লেখা টানানো নেই...
২. ভোকাট্টা
বাড়িটা ছিল আমাদের একতলা। ভোকাট্টা ঘুড়ি গুলো তাই সব সময় আশে পাশের দু-তিন তলা বাড়ির ছাদে গিয়ে পড়ত। অথবা আটকতো কোন নারিকেল গাছে।
এইতো সেদিন! একটা ঘুড়ি ভুল করে আটকিয়েছিল আমাদের আন্টিনার বাশে। যেন একটা সত্যিকারের ঈদ ছিল সেটা!! সুতা ধরে টেনে নামাতে নামাতে সেই বিচ্ছিরী এন্টিনাটা ছিড়ে ফেলল ঘুড়িটাকে। সেদিন হাতে জড়ানো সুতার একাংশ ভিজে গিয়েছিল জলে। অশ্রু!
জানেন? আজ হুঠ করে আবার একটা ঘুড়ি পড়েছে আমাদের ছাদে! এই ঢাকা শহরে!! এইতো এখন পড়ে আছে পড়ার টেবিলে। কোথা থেকে উড়ে এসেছে কে জানে? কিন্তু কই? কিছুই তো মনে হচ্ছেনা! আসলে আমার ছেলেবেলাটাও হয়তো ভোকাট্টা হয়ে চলে গেছে কোথাও। এই ঘুড়িটার মতই...
৩. তৃতীয় চিঠি
এইতো সেদিন! আরবী শেখানোর জন্য এক হুজুর রাখল বাবা। সপ্তাহে ছয়দিন চলত দুজনের আপ্রান ব্যর্থ চেষ্টা! শেখানোর। আর শেখার। কিছুই শিখতে পারিনি সে সময়। তবে হুজুরের একটা কথা মনে আছে এখনো। চিঠির কথা!
মানুষকে নাকি সারা জীবনে চারটা চিঠি পাঠানো হয়। যেগুলো তাকে কিছু একটা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা!! প্রথম চিঠিটা আসে যখন তার প্রতথম দাঁত ওঠে। পরের টা, যখন তার গোফ ওঠে। তৃতীয় চিঠি টা আসে যখন তার প্রথম চুল পাকে। আর চতুর্থ টা, যখন আবার দাত পড়ে যায়! হুজুরকে বলেছিলাম, মেয়েদের তো গোফ ওঠেনা তাদের কাছে কি চিঠি একটা কম আসে? সে বলেছিল, তাদের কাছেও চিঠি আসে। তাদের মত করে।
আজ সকালে হুঠ করে তৃতীয় চিঠিটা পেয়ে গেলাম!! বেসিনের আয়নার সামনে ঝুকে দাড়িয়েছি। হঠাৎ দেখলাম একটা পাকাচুল ব্রৃদ্ধ! ক্ষনিকের জন্য। তারপর কালো হয়ে গেল সব চুল। শুধু একটা বাদে। এটাই বোধ হয় সেই চিঠি।
বার্ধক্যের যে বীজ বুকে নিয়ে জন্ম হয়েছিল অনেক অনেক দিন আগে। আজ সেটা অঙ্কুরিত হল...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




