somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্ল্যাক হোল-২(ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে জানা প্রয়োজন কেন?-এস্ট্রোফিজিক্স)

১৬ ই এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটা করে দানব ব্ল্যাক হোল থাকে(জায়ান্ট ব্ল্যাক হোল) যাকে কেন্দ্র করে মাত্র এক মিলিয়ন কিলোমিটার ব্যসার্ধে কয়েক হাজার নক্ষত্র প্রবল বেগে ঘুরতে থাকে।অর্থাৎ এখানে স্টার ডেনসিটি গ্যালাক্সির অন্যান্য যায়গা থেকে প্রায় কয়েক লক্ষ গুণ বেশী।এই গতির তুলনায় আমাদের সূর্য বা অন্যান্য নক্ষত্র যেগুলো গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে দূরে তাদের প্রায় স্থির ধরা যায়......



ব্ল্যাক হোলের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য তৈরী এক্স-রে ডিটেক্টর



যখন আমরা ব্ল্যাক হোল বা এ জাতীয় কোন বস্তু যা অদ্ভুত এবং যা সম্পর্কে জানা প্রায় অসম্ভব সেগুলো সম্বন্ধে জানতে চাই তখন আমাদের প্রথমেই দেখতে হবে যে এটা সম্পর্কে জানা কতটা জরুরী।বা এটা সম্পর্কে জানা আদৌ দরকার কিনা...তাহলে ব্ল্যাক হোলের পেছনে বিজ্ঞানীরা যে সময়,মেধা,অর্থ ব্যয় করছেন তা কি অপচয় নয়।তারা কি এই সময়টা অন্য কোন কাজে যেটা আরও বেশী ব্যবহারিক তার পেছনে ব্যয় করতে পারতেন না???!!!এর উত্তর এক কথায় না।কারন ব্ল্যাক হোল যে মহাবিশ্বের অনেক মৌলিক প্রক্রিয়ার সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত তার প্রমাণ প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছি...এর কারণ প্রথমত স্পষ্টতই এরা হল সাধারন মহাকর্ষের তীব্র উপস্থাপন।আর মহাকর্ষ হল সেই বল যা সমগ্র মহাবিশ্বকে একত্রে বেধে রেখেছে...আর বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষ সম্পর্কে যতই বেশী জানতে ততই তারা মহাবিশের উৎপত্তি,গঠণ এবং পরিণতি সম্পর্কে জানতে পারব।মহাশূন্যে ব্ল্যাক হোলের উপস্থিতি পরীক্ষা করার এটা ছিল একটা বড় কারণ।পদার্থবিজ্ঞানী মিচেল বিগলম্যান এবং মার্টিন রিস বলেন, “যেহেতু ব্ল্যাক হোল এমন একটা বস্তু যাতে মহাকর্ষ বল অন্য সব বল থেকে তীব্র তাই একমাত্র ব্ল্যাক হোলের সাহায্যেই আমরা মহাকর্ষের সকল থিওরী চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করে নিশ্চিন্ত হতে পারি।”
আরো যেসব কারনে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে জানতে চায় তার মধ্যে একটি হল, অধিকাংশ ব্ল্যাক হোল সাধারন নক্ষত্রের ববর্তনের মাধ্যমে তৈরী হয়।তার মানে ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে জানতে পারলে আমরা আন্তঃনাক্ষত্রিক বিবর্তন(স্টেলার ইভালিউশান) সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে পারব...জানতে পারব একটা নক্ষত্র তার শেষ পর্যায়ে এসে কিভাবে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়।এছাড়াও এখন এটাও প্রতীয়মান হ্যেছে যে গ্যালাক্সির বিবর্তনও(ইভালিউশান অফ গ্যালাক্সি) গ্যালাক্সির পরিণতি এর কেন্দ্রের দানব ব্ল্যাক হোলের জন্ম এবং জীবনচক্রের সাথে অঙ্গা-অঙ্গিভাবে জড়িত।(গ্যালাক্সি হল শত কোটি(বিলিয়ন) নক্ষত্রের সমন্বয়ে তৈরী বিশাল ভরের ঘূর্ণন)


এছাড়াও এখন বিজ্ঞানীরা এটাও বিশ্বাস করেন যে ব্ল্যাক হোলের মাঝে স্পেস-টাইম(স্থান-কাল সম্পর্ক) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা সম্পর্ক থাকতে পারে।মানে আমাদের ত্রিমাত্রিক স্পেসের সাথে চতুর্থ মাত্রা সময়ের সম্পর্ক।ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি স্পেসটাইম বিচিত্র রকমের আচরণ করে।বিগলম্যান বলেন,
“কেউ যদি ব্ল্যাক হোলের ঘটন দিগন্তের খুব কাছ থেকে চারপাশে অরবিট করতে পারে তাহলে সময় তার জন্য স্থির হয়ে যাবে...ফলে সে মহাবিশ্বের পুরো ভবিষৎ দেখে ফেলবে যদিও তার কাছে সময়টা খুবি সামান্য মনে হবে...আর কেউ যদি ব্ল্যাক হোলের ঘটন দিগন্তের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে পারে...কারণ যেহেতু আমরা ব্ল্যাক হোলের অভ্যন্তর সম্পর্কে কখনোই জানতে পারব না...যদিও আমাদের পক্ষে এই ঘটনার ফলে বাইরে কি পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে তা সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব...”একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটা বুঝাচ্ছি... “পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভিতর অনেক অজানা এবং অদ্ভুত জিনিস থাকতে পারে কিন্তু তা আমাদের পরমাণুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে এবং তা সম্পর্কে গণনা করতে কোন বাধার সৃষ্টি করে না...”অর্থাৎ আমরা ব্ল্যাক হোলের ভিতরে কি হচ্ছে তা না জানতে পারলেও একটা ব্ল্যাক হোলের প্রভাবে তার আশে-পাশের ইউনিভার্সে কি হতে পারে তা সম্পর্কে আমরা ধারণা করত পারি...


সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে,ব্ল্যাক হোল মহাবিশ্বের বহু মৌলিক বৈশিষ্ট্য এবং ঘটনাপ্রবাহের সাথে সম্পর্কিত।উদাহণস্বরুপ মহাকর্ষ,স্টেলার ইভালিউশান,ফরমেশান অফ গ্যলাক্সি এবং স্পেস টাইমের পরস্পরের সাথে সম্পর্ক এই ঘটনাগুলোর সাথে ব্ল্যাক হোলের সম্পর্কের অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে।কাজেই ব্ল্যাক হোল নামক এই গোলকধাঁধা সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।

পরবর্তি পর্বে থাকছে “মহাকর্ষ এবং ব্ল্যাক হোলের প্রাথমিক ধারণা”
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×