মানুষ মরণশীল। মৃত্যু আছে বলেই জীবনটাকে আমাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। যদি কেও অমরত্ব লাভ করত তাহলে জীবনটা তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ত। মৃত্যু আমাদের চারপাশে সবসময় ঘুরঘুর করে। যেকোন মুহূর্তে যেকোন ভাবে মৃত্যু আপনার সামনে চলে আসতে পারে। আজ আমি আপনাদের সামনে আমার কয়েকবার সম্ভাব্য মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরব। মহান আল্লাহ্র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আজও আমি বেঁচে আছি।
০১
আপনারা কমবেশি সবাই জানেন যে আমি গ্রামে থাকি। আর আমাদের বাসার স্পেসটা বেশ বড়। আঙ্গিনাতেই অনেক শাক-সব্জি চাষ করা যায়। শিম, শশা, কুমড়া, লাও, চিচিঙ্গা এই জাতীয় সবজি কোনোদিন কিনে খেতে হয় না। বাড়ির আশেপাশে মাচা করে কিংবা চালার উপর এই গুলোকে তুলে দেওয়া হয়। আসল ঘটনাতে আসি, আমাদের বাসার যেখানে ইলেকট্রিক মিটার লাগানো আছে। সেই মিটারের নিচেই কয়েকটা শিম গাছের জন্ম হয়েছিল। বেশ কয়েকদিনেই তার সমস্ত লতা প্রশস্ত করে আরথিং এর তার বেয়ে টিনের উপরে উঠে যায়। ব্যপারটা খেয়াল করতে করতে শিম গাছটা বেশ বড় হয়ে যায়। আমার আম্মা বলে, ‘থাক এখন কাটার দরকার নাই, শিম শেষ হয়ে গেলে কাটিস।’ যথারীতি গাছ বড় হয়, ফুল ধরে, ফল ধরে একসময় মারা যায়। তখন আমাকে আম্মা একদিন ডেকে বলে সেগুলো পরিষ্কার করতে। আমি লোহার বটি (স্থানীয় ভাসায় হাস্যা) নিয়ে গিয়ে লতা কাটতে শুরু করেছি। আমাদের বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া আছে বি আর বির সবুজ রঙের তার দিয়ে যেটা দেখতে প্রায় শিমের লতার মতই। আমি তারটাকে লতা ভেবে কেটে দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছি। তারটা কাটার পরপরই একটা বিশাল ধাক্কা খাই, এই ধাক্কা ইলেকট্রিক শক নয় মানসিক শক। আল্লাহ্র রহমতে সরকারের বদলতে সে সময় বিদ্যুৎ ছিল না।
০২
যে বিদ্যুৎ একটু আগে আমার জান কেড়ে নিচ্ছিল এখন সে বিদ্যুৎ কিভাবে আমার জান বাঁচিয়েছে তার ঘটনা বলি। তখন স্পোকেন ইংলিশ এর একটা কোর্সে ভর্তি হয়েছি। সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস, স্যারও খুব মজার, তারপরে ক্লাসের টপ সুন্দরীর সাথে আমার বেশ ভাব হয়ে যায়। যার ফলে রেগুলার ক্লাস করতাম। একদিন ক্লাসে যাব বলে সাইকেলটা বের করলাম। আকাশে হালকা মেঘ ছিল তখন যাক ওসবের তোয়াক্কা না করে বের হয়ে পড়লাম। ক্লাস শেষে যখন বের হতে যাব তখন দেখি আকাশ পুরা অন্ধকার। মাঝে মাঝে মেঘ চিলিক দিচ্ছে। এদিকে সন্ধ্যাও লেগে যাচ্ছিল যার জন্যে মাথার উপর মেঘ নিয়েই বের হয়ে গেলাম। আমি সাথে আমার এক বন্ধু আছে। আমি বরাবরই খুব দ্রুত সাইকেল চালায়। সেদিন আরও দ্রুত বেগে চালাচ্ছিলাম। পেছনে খেয়াল করে দেখি আমার বন্ধুটি নাই। তখন তার জন্য দাঁড়ালাম। মেঘ সশব্দে ডাকাডাকি করছে। আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি। এমন সময় দেখি একটা আলোর রশ্মি যা দেখতে অনেকটা বর্শার মত, আমার দিকে ছুটে চলে আসছে। হঠাৎ সেটা দিক পরিবর্তন করে পাশের ইলেকট্রিক খাম্বার দিকে চলে গেল। তারপরেই শুনলাম কান ফাটানো শব্দ। আমার এবং সেই খাম্বার দূরত্ব খুব বেশি হলে ৬-৭ ফুট হবে। এরপর দেখি রোডের অপর পাশে একটা ডাবগাছে আগুন জ্বলছে। ঐ মুহূর্তের কথা মনে হলে এখনও আমার গায়ে কাটা দেয়।
০৩
এবারকার ঘটনা ট্রেন। খবরের কাগজে প্রায়ই দেখি অমুক জায়গায় রাস্তা পারাপারের সময় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু। সেটা আমার সাথেই ঘটতে যাচ্ছিল। আমি সাইকেলে চড়ে বাজার যাচ্ছিলাম। যথারীতি খুব দ্রুতই চালাচ্ছিলাম। আমাদের ওখানে চারখুটা নামক একটা জায়গা আছে একটা চিকন রাস্তা রেললাইনকে ক্রস করে যায়। সেখানে কোন স্পীড ব্রেকার কিংবা রেলগেট বা গেটম্যান নাই। অন্য আমি সেই স্থানটা সবসময় দেখে পার হই, কিন্তু সেদিন আর খেয়াল করিনি। আমি যখন লাইনটা ক্রস করব সেই মুহূর্তে ট্রেনের তীব্র হর্ন শুনলাম। রেললাইন ক্রস করার সাথে সাথে আমার পেছন দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে ট্রেনটি চলে গেল। ট্রেনের বাতাসের সেই শব্দ আমার আজও মনে আছে। আর এক সেকেন্ড!
০৪
এবার সড়ক পথ এবং যথারীতি সাইকেল। আমাদের জমিতে সেচ দিচ্ছি। এমন সময় তেল শেষ হয়ে গেল আব্বা আমাকে কিছু টাকা দিয়ে ডিজেল তেল আনতে বললেন। আমি জারকিনটা সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। রাজশাহী টু চাঁপায় সড়ক সম্বন্ধে মনেহয় কমবেশি সবারই ধারণা আছে। রোডটা একে খুব ন্যারো তারপরে খুব ব্যস্ত। সবসময় বাস ট্রাক যেতেই থাকে। কোন ফুটপাত নেই। রোডের সাইডে বেশীরভাগ জায়গাতেই মাটি নাই। রোডে থাকলে নিচে যাওয়া সম্ভব না। আবার নিচে ভাঙ্গার মধ্যে থাকলে রোডে উঠা প্রায় অসম্ভব। আশাকরি রাস্তাটা কেমন সেটা বুঝাতে পেরেছি। তো আমি সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছি। সাইকেলের হ্যান্ডেলে থাকে জারকিনটা খুব বেশি বড় হওয়ায় ঠিকমত পা ঘুরাতে পারছিলাম না। এমন সময় পায়ের সাথে জারটা আটকে গিয়ে সাইকেল রোড থেকে নিচের খাদে নেমে যায়। আমি সেটা কোনমতে সামলে নিয়ে আবার রোডে উঠি এবং আবারও পায়ের সাথে জারকিন আটকে যায় এবং হ্যান্ডেল ডান দিকে ঘুরে যায় এবং দ্রুত গতিতে রাস্তার ওপাশে যেতে থাকে। আমি মাঝরাস্তায় সেসময় সাইডে হালকা ধাক্কা খায় দেখি একটা বড় কোচ আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। আর আমি রাস্তার ওপাশে গিয়ে ছিটকে পড়লাম। কিছুটা আহত হলেও জানে বেঁচে যায় সে যাত্রায়।
০৫
এবারকার ঘটনা মায়ের কাছ থেকে শোনা। আমার বয়স তখন মাত্র ১০ দিন। জানুয়ারি মাস, প্রচণ্ড শীত, সেই শীতে আমাকে নিউমোনিয়াতে ধরে। সেদিন সকাল থেকেই নাকি আমার শরীর নীল বর্ণ ধারণ করতে থাকে একসময় পুরো শরীর এমনকি জিহ্বাও নীল হয়ে যায়। একসময় আমার নড়াচড়াও নাকি বন্ধ হয়ে যায়। পাশের ছোট ক্লিনিকটাতে নিয়ে গেলে তারা আমাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এমন সময় নাকি আমি কিছুটা নড়ে উঠি। তারপর রাজশাহী মেডিক্যালে নিয়ে গিয়ে মাস দুয়েক থাকার পর নাকি আমি সুস্থ হই।
এছাড়াও একবার পানিতে ডুবে গেছিলাম। একবার ফুটন্ত ভাতের হাড়ির উপর পড়ে গেছিলাম আর গাছ থেকে পড়ার ঘটনা তো কমন। ।
মহান আল্লাহ্র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আজও আমি বেঁচে আছি।
নিশ্চয় আপনাদেরও এমন অনেক ঘটনা আছে। কমেন্টে শেয়ার করবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ।