প্রচন্ড রোদে খাঁ খাঁ করছিল চারদিক,তপ্ত মাটির বুক ফেঁটে হয় চৌচির ।পবন দেবতা, সূর্য্য দেবের তেজ সহ্য করতে না পেরে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তা স্বয়ং বহ্মাও বলতে পারে না ।আমি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত পথিক ,গাছের ছায়ায় গা এলিয়ে বসতে গিয়ে কখন যেন পবন দেবতাকে পদদলিত করেছি ।হায়!হায়!!এতো ঘোর অনিষ্ট। পবন দেবতা যে আমার উপর চটেছে তা কি আর বুঝার বাকি থাকে?হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া আমার পাশ দিয়ে বয়ে গেল ।আমি শুধু শোঁ শোঁ শব্দ শুনতে পেলাম ।পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেল ,পাখিসব আত্মচিৎকারে উড়ে যাচ্ছে দিগ্বিদিক-দাঁড় কাকের গগণ বিদারী কা কা শব্দে প্রকম্পিত হয় ধরণী ।পরিষ্কার নীল আকাশটাতে ঘন কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে ।আকাশ পানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অমৃতার মেঘ কালো চুল যেন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে-পিঠ বেয়ে সে চুল নেমে গেছে তার সুঢোল নিতম্ব ছাড়িয়ে ।তার কথা না হয় একটু পরেই বলি ।মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ল সূর্য্য দেব ।আবছা অন্ধকারে ছেয়ে গেল ধরণী ।পবন দেবতা মহাক্রুধে শোঁ শোঁ শব্দে ছুটে চলেছে দিগ্বিদিক ।বড় বড় গাছ গুলো যেন দুমড়ে-মূছড়ে যাচ্ছে ।আবস্থা বেগতিক দেখে হিমালয়ে ধ্যানমগ্ন মহাদেব রণে ভঙ্গ দিল ।কিন্ত ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে ।পবন দেব তার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে এখন শুধু অপেক্ষা-অপেক্ষা এক মহাপ্রলয়ের ।স্বর্গপুরী থেকে বিচলিত দেব-দেবীদের অসহায় দৃষ্টি ধরণীর পানে ।
"ধুর মশাই! এইসব সাহিত্য চর্চা আমাকে দিয়ে হবেনা ।"
কাগজ-কলম রেখে উঠতে গিয়েও পারলেন না,জনালা দিয়ে আনমনে তাকিয়ে রইলেন নীল আকাশটাতে ।জমিদার বাবু লেখালিখি করেছেন ঢের কিন্তু আজ অবধি কোন গল্প-উপন্যাস লিখে শেষ করা তো দূরের কথা দুই প্যারার বেশী লিখতে পারেন নাই ।তার নিজের কাছেও এ এক রহস্য, রহস্য ভেদের চেষ্টা করেছেন বহুবার কিন্তু ফলাফল একই । অমৃতার কথা,ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত সেই পথিকের কথা হয়তো আর কখনো লেখা হবে না ,চাপা পড়ে থাকবে অসমাপ্ত গল্প-উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীদের সাথে ।
"বাবু্,আপনার একখানা চিঠি এসেছে"।
হরিপদের ডাকে পিছন ফিরে তাকায় জমিদার বাবু ।চিঠিটা হাতে নিতেই বাবুর গম্ভীর মুখখানায় হাসির ঝলক ।এ চিঠি যে পরম বন্ধু শ্রীকান্তের লেখা ।
"জল খাবার দিব, বাবু"?
বাবু ,ভ্রৃত্রের কথায় কর্ণপাত না করে চিঠি পড়তে আরম্ভ করলেন । একদমে চিঠি পড়া শেষ করে হাসি মুখে হরিকে বললেন, "শ্রীকান্ত আসছে ।"
চলবে..