somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনবৃক্ষ-১

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ওপরে সবুজ, আলোর মুখোমুখি। ভেতরে শেকড়, মন খুড়ে, মাটির মুখোমুখি

আমার বাড়ী মফস্বলে। ছিমছাম ছোট্ট একটা শহর। সন্ধ্যা লাগতেই টিমটিমে আলোয় ভরে যায় চারপাশটা। পাড়ার চাচার দোকানটায় বসে চায়ের আসর। শীতকালে ওই দোকানটার পাশেই তার টেনে এনে চলে রাতভর ব্যাডমিন্টন।
মাঝে মাঝে পড়ার টেবিল থেকে উঠে উঠতি বয়সী ছেলেরা চাচার দোকানে চলে যায় চা খেতে। বাসায় চাইলেই চা পাওয়া যায়, কিন্তু টং দোকানের চা না হলে কেন জানি তাদের মনে হয় চা ই খাওয়া হয়নি!

আমাদের বাড়ীটাও বেশ ছিমছাম। বারান্দায় দুটো ইজি চেয়ার পাতা। গ্রীলে মাধবীলতার গাছ। গাছের পাতার ফাঁক গলে দেয়ালে আলো এসে পড়ে। আমি দুপুর বেলাতে খেয়ে দেয়ে ভরা পেটে ক্যাসেট প্লেয়ারটা নিয়ে বারান্দায় বসি, গান শুনতে শুনতে চোখটা লেগে আসতেই বাবা সাইকেলটা নিয়ে ঘরে ফেরে। ঘরে ঢোকার সময় বাবা প্রতিদিনই মাথায় ক্যামন যেন একটা আরামের হাত বুলিয়ে দিয়ে যায়। ঘুম নেমে আসে যেন চোখে আবার।

দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেলের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন উঠোনের লোহার গেট টায় শব্দ করে আমার বন্ধু সাইফুল আসে। আমার ঘুরে বেড়াবার সময় সেটা। দুইজনে মিলে সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াই শহরতলী, কিম্বা নদীর ধারে। আমাদের রাজ্যের যত প্ল্যান করা হয় তখন!
বিকালটায় নদীর পাশটা দিয়েই যাওয়া হয় বেশি। সবুজ পাড় জুড়ে গাছগাছালির কমতি নেই। পাশেই ছোটখাটো বাজার থাকায় লোকজনের সমাগম ভালোই বলা যায়।
হুট করে সাইকেল থামিয়ে মাঝে মাঝেই আমরা নৌকার গুণ টেনে হেঁটে যাওয়া পেশীবহুল লোকগুলোকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি। উচ্ছ্বাসহীন চোখগুলোকে দেখে মায়াই লাগে।
ঘাটলায় ভেড়া নৌকাগুলোর প্রতিও আমাদের আগ্রহ অসীম। ঝকঝকে রূপালী মাছে ভর্তি থাকে ওগুলো। আমাদের খুব ইচ্ছে হয় জেলে হতে তখন। কানের কাছে সাইফুলের ফিসফিসানি চলতেই থাকে অনবরত, কোন মাছটা ক্যামন করে, কি দিয়ে খেতে ভালো লাগবে, তার কোন খালার বাসায় রিঠা মাছ আর বেগুনের ঝোল খেয়েছিলো। শুনে জিভে পানি এসে যায়।
চল যাই, বলে তাগাদা দেই সাইফুলকে।

ছোট বাজারটায় হ্যাজাক বাতি আর হারিকেন জ্বলতে থাকে সন্ধ্যা নামতেই।
হারুন মিয়ার দোকানটা একটু নিরিবিলিতে। বটগাছটার ওপাশে রাস্তার শেষ প্রান্তে। ওটার সাথেই ক্লাবঘর। ক্লাবঘরটার আশেপাশে গেলেই আমাদের মনের মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব লেগে যায়। সবসময় কিছু না কিছুর আয়োজন চলতেই থাকে যেন। কখনো নাটক, বা কবিতা কিম্বা বই নিয়ে আড্ডা। হারুন মিয়ার দোকান থেকে পালা পালা করে চা যায় সেখানে। ক্লাবঘরে না গিয়ে বরং হারুন মিয়ার দোকানটাতেই বসি আমরা।
উনি সব খবর রাখেন বলেই হয়তো ক্লাবের আশু কর্মসূচীর গল্প শুনতে শুনতে এক অন্যরকম আনন্দে উত্তেজিত হতে থাকি মনে মনে।

ভাইয়া এসবের সাথে ছিলো অনেককাল আগ থেকেই।
ভাইয়া এখন আর এখানে নেই। ঢাকাতে থাকেন। ছুটিতে আসলে আমাদের বাড়ীর সাথে সাথে ক্লাবঘর টাতেও আনন্দ বয়ে যায় যেন।
ভাইয়ার জন্যে পথ অপেক্ষা করে থাকি আমি আর সাইফুল ও। আমাদের সব ঘোরাঘুরি আর উদ্ভট সব প্ল্যানগুলো থাকে ভাইয়াকে সাথে করেই।

আজ বাসায় ফিরেই সবচাইতে আনন্দের খবরটা পেলাম। ভাইয়া আসছে!
এই শুক্রবারেই। আজকের বিকেলের ডাকেই নাকি এসেছে চিঠিটা!
পড়ার টেবিল এ মনই বসছিলোনা একদম। খালি কান পেতে শুনছিলাম বারান্দায় মা আর বাবার ভাইয়াকে নিয়ে গল্প। আপাও ছিলো সেখানে। আমারও খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওদের সাথে গিয়ে সামিল হতে, কিন্তু উপায় নেই। মায়ের চিৎকার শুনতেই হবে তাইলে।
সাইফুল কেও খবরটা জানানো হয় নাই! কত্তোকাজ যে বাকি এখনো!
পড়ার টেবিল এ 'আমার বই' টার পাতা উল্টাতে থাকি আনমনে।
বাংলা গল্পগুলোর সাথে ছবিগুলো আমার খুব প্রিয়। একটা ছোট্ট নদীর ছবি দেখে মনে হল, ভাইয়া কে নিয়ে এবার মাছ ধরতে যাব!
বুকের মধ্যে এক অজানা আনন্দ আর উত্তেজনায় কেমন যেন শিরশির করে উঠলো।

মাঝখানে আর একটা দিন। মা আর বাবাকে দেখলাম বাজার এর লিস্ট বানাতে। আমি এঘর ওঘর করছি অদ্ভুদ এক আনন্দ নিয়ে। আপার রুমে উঁকি দিয়ে আপাকেও বেশ খুশি খুশি মনে হলো। আমি জানি এ দুদিন আমার ঘুমও হবে না ঠিক করে।

রাতে মশারির ফাঁক গলে চাঁদের আলো আমার গায়ে এসে পড়ে। রূপালী রং এর মিশেলে অন্যরকম রং তৈরী হয়। আমার কৈশর চোখ সেই রং এর তাকিয়ে আরেক রং এর স্বপ্নে ডুব দেয়। সেই রং ধীরে ধীরে হয় সবুজ তারপর একসময় ফিকে হয়ে হয় সোনালী।

[ বানান ভুল মার্জনীয়। অলসতায় কিম্বা ব্যাস্ততায় অথবা অনভ্যস্ততায় এডিটিং করা হয়নি]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১১:৫৪
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×