somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনবৃক্ষ -২

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রেইলগাড়ী ঝমাঝম, পা পিছলে আলুর দম !

ষ্টেশন টা দেখতে আহামরি কিছু নয়। লাল ইটের পুরোনো জরাজীর্ন দেয়াল, শ্যাওলা পরা। সন্ধ্যাবেলায় ছোট বারান্দায় লাল আলো জ্বলে। বেঞ্চি পাতা আছে কয়েকটা। একটা ওয়েটিং রুম ও আছে। এক কোনায় ছোটো মতো একটা চায়ের দোকান। সারাদিনে বেচাবিক্রি খারাপ হয় না।
এছাড়া আনাচে কানাচে সারাদিনে হকার রা মেলা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে।

সন্ধ্যার পরেই ষ্টেশনটা কে আমার বেশি চেনা মনে হয়। কোলাহল টাও একটু কমে আসে। চারিদিক আরো আঁধার করে ওই লাল বাতি গুলো জ্বলে ওঠে যেনো। আমার সাথে সাইফুল ও এসেছে যথারীতি। আশেপাশে মালাই চা এর ম' ম গন্ধ। আমরা গিয়ে বেঞ্চিটায় বসি।

হরেক রকম মানুষ আর তার হরেক রকম কারবার। বিপুল বিস্ময় নিয়েই ব্যাপারগুলো দেখি আমি। এই দেখাদেখির সময়টা আমাদের কারো মুখেই কোন কথা সরে না সাধারনত।

ষ্টেশনের এক পাশে ষ্টেশন মাষ্টারের রুম। সবসময়েই ব্যাস্ত থাকেন উনি। একটু পর পরেই চা চেয়ে পাঠান। হয়তো আসলেই অনেক কাজ তাঁর। সারাদিনের ট্রেন গুলোর কাগজে কলমের হিসাব ও নিশ্চয়ই অনেক আছে।
বাসায়ও উনি মনে হয় খুব কম কথার মানুষ। কথাবার্তা হয়তো কারো সাথেই হয়না তেমন। সাইফুলের অবশ্য ধারণা ভিন্ন। ওর ধারণা, বাসার ভিতরে উনি একেবারে অন্য মানুষ। বাড়ি গিয়েই হয়তো গিন্নীকে চা এর কথা বলে মুখ হাত ধুয়ে বিছানায় পা তুলে বসেন। চা আসবার পর গিন্নীর সাথে প্রতিবেশীদের নিয়েও কথা বলেন।

এখানটায় এলে আমার চা ওলা'র দ্রুতগতিতে চায়ের কাপে টুংটাং আওয়াজ শুনতে বেশ লাগে। আর ওই পাশটায় ঝালমুড়ি ওলা'র ঝাঁপি থেকে পেঁয়াজ আর কাশুন্দির ঝাঁঝালো গন্ধ কেমন যেন গল্প আর আড্ডার আমেজ এনে দেয়।

ওয়েটিং রুমে কয়েকজন চিন্তিত মুখের বসে আছে। ট্রেন এর জন্যে অপেক্ষা, ঠিক মতো আসলেই হয় ট্রেন। দু-এক জন টিফিন ক্যারিয়ার খুলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই।
চায়ের দোকানে বড় ডেকচিতে দুধের বলক। শব্দটা বেশ মিষ্টি! দুধের সর উঠে আসা মালাই চা খেতে আমিও উৎসুক থাকি সবসময়।

বিচিত্র এই ষ্টেশন। হয়তো সব ষ্টেশনই এ রকম। বিচিত্র মানুষের সমাহার। একেক ভাবের একেক মানুষ। আনন্দ আর দুঃখের মিশেল। রেইলগাড়ি গুলোও আসে সেই আনন্দ আর দুঃখের পাল্লা হালকা কিম্বা ভারি করতে। লাল বগি গুলোর সাথে যেন মানুষের স্মৃতির এক অদ্ভুদ খেলা।

ঘণ্টি বেজে উঠলো, ট্রেন আসছে। খুশি লাগতে থাকে ভেতরে। একটু আগে আগেই চলে আসলো না?
অল্প কিছু লোক নামলো ট্রেন থেকে, সাইফুল বলে উঠলো, ' উহু, এর পরেরটায়।'
ষ্টেশন ফাঁকাই হয়ে গেছে অনেকটা। ওয়েটিং রুম কাছে দেখা গেলো একটা ছোটমতো জটলা। রাগী চেহারার এক ভদ্রলোককে ব্যাস্ত দেখা গেলো জিনিসপত্তর সামলানো নিয়ে। পুরো বাড়ি সাথে করে নিয়ে এসেছেন মনে হলো। উনার ছেলেটাকে যেতে দেখা গেলো ষ্টেশন মাষ্টারের রুমের দিকে।
বয়স ভাইয়ার কাছাকাছি হবে। সাথের দু মেয়ের একজনের বয়স আপার চাইতে বড় হবে, আর ছোট টার বয়স আমাদের চাইতেও বছর তিন চারেক এর ছোট হবে।

আমি সাইফুলের দিকে কি বুঝে জানি তাকালাম। ও আমার দিকেও কি বুঝে যেন তাকালো। দুজনেই আবার দৃশ্যপটে মন দিলাম।

মেয়েটা ভারি চঞ্চল, দৌড়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে একটু পর পর। দৌড়ে দেখলাম একবার রেইল লাইনের কিনারায় এলো হুট করে। এসে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন রেল লাইনের ওপর পড়ে থাকা পাথরের দিকে। আমি আর সাইফুল ও উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম সেদিকে। ব্যাপার কি? কি দেখছে অমন করে?

ভুরু কুঁচকে আমাদের দিকে আড়চোখে তাকালো সে। চোখে মুখে ভারি মায়া মেয়েটির। লজ্জ্বাই পেলাম এবার একটু একা একা।
'বাবুলী!' পেছন থেকে আপামতো মেয়েটি চেঁচিয়ে উঠলো যেন,' পড়ে যাবে তো, শিগ্‌গীর এসো!'
ধবধবে শাদা ফ্রক পড়া মেয়েটি তার দুপাশের ঝুটি দুলিয়ে দুলিয়ে হুট করেই আবার দৌড় দিলো!

রাগী চেহারার লোকটির জন্যে ষ্টেশন মাষ্টার দেখলাম দুটো ভ্যান গাড়ী যোগার করে এনেছে। মালপত্র তোলা হচ্ছে একটায়। ভাইয়া মত ছেলেটি ওই দিকে চা, ঝালমুড়ি আর ঘুঘনির ব্যাবস্থা শুরু করে দিলো। হয়তো বাড়ি যাবার আগে চা টা সেরে নেবার পাঁয়তারা তাদের। বেশ করিৎকর্মা বোঝা গেলো।
আমার বেশ ভালোই লাগছিলো দেখতে!
বাবুলী নামের মিষ্টি মেয়েটাকে দেখলাম তার ভাইয়ার সাথে চা এর পেয়ালা হাতে নিয়ে বসে আছে।

আমাদের ট্রেন চলে আসবে একটু পরেই হয়তো। একটু একটু ঠান্ডা লাগছে যেন। বৃষ্টি নামতে পারে। আকাশে মেঘ জমেছে। ছড়ানো ছিটানো লোকজনেরা চায়ের দোকানটায় জাঁকিয়ে বসলো যেন।
বাবুলীরা চলে যাচ্ছে। বাবুলী গোঁ ধরেছে ও ঠিক চালকের পেছনেই বসবে! কী মেয়েরে বাবা!

ওরা চলে যেতেই যখন ষ্টেশনটা আরেকটু নীরবতায় ঢেকে গেলো, ঠিক তখুনি ঘন্টার শব্দ আর দূরের ট্রেন এর শব্দ শুনতে পেলাম।
বুকের মধ্যে আনন্দ চিলিক দিয়ে উঠলো।

বৃষ্টি টিপটিপ করে পড়তে শুরু করেছে। 'ও ই তো!' আঙুল তুলে দেখালাম সাইফুল কে!
বাতাস বইছে বেশ। হাড়ে কাঁপুনি ধরে গেছে একটু। লোকজন নামছে এক এক করে। আমি আমার সাইকেলটা নিয়েই দৌড় মতো দিলাম একটু। দেখলাম, সুন্দর একটা হাসি দিয়ে আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে ভাইয়া!



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১১:৫১
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×