লিথা গোরামের মতে, আমাদের জীবন আমাদের ইচ্ছার উপর নয় আমাদের কর্মের উপর দন্ডায়মান। কর্ম মানুষকে বড় করে, অর্থ নয়। অথচ মানুষ সেই অর্থকে কাছে পাবার আশায় নিজের কর্মটাকে আরো বিস্তৃত করছে দিনকে দিন। এখানে কর্ম নয়, অর্থই মূল। কর্মেরও শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। অধিক অর্থলাভের আশায় কর্ম আবার চিরদিন মানুষের হৃদয়ে স্থান লাভের কর্ম। দুটি দুই জিনিস। এই দুই প্রক্রিয়ায় কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করছে মানবজাতি। অনন্তকাল এ প্রক্রিয়াটি মানুষের মধ্যে অব্যাহত থাকবে। এটিই হচ্ছে স্রষ্টার ‘জগৎগঠণতন্ত্র’র মূলমন্ত্র।
সমাজের মানুষজন আজ বড্ড মাতাল হয়ে টাকার পিছনে ছুটাছুটি করছে। একজনকে ঠকিয়ে অন্যজনের জয় নিশ্চিত করছে। আর সেই জয়ের পিছনেও টাকার গন্ধ নিহিত থাকে। রাত-দিন তাদের অবিরাম ছুটাছুটি যেন তাদেরকে এক অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে। যে পর্যায়ে মানুষ তার মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে মানুষরূপী জন্তু-জানোয়ারে রূপ নিতে একটুও দ্বিধাবোধ করছে না। আমি এখানে সেই পর্যায়ের কথা বলছি। যে পর্যায়ের মানুষেরা অভাব-অনটনে সংসার পরিচালনার কষ্ট বুকে লালন করে রাতের বেলায় ঘুমাতে যায়। পুবের আকাশে যখন সূর্যটা মিটমিটিয়ে জ্বলে উঠে সমস্ত অন্ধকারকে দূরে ঠেলে দিয়ে আলোকিত করতে শুরু করে আর তখনই মাথায় ঘুরপাক খায় সাংসারিক খরচপাতির। গায়ে কাথা মোড়িয়ে একটু আরাম-আয়েসের সুযোগ আর হয়ে উঠে না। বেরিয়ে পড়ে আয়ের উৎসের সন্ধানে।
আমাদের এ জগত সংসারের সাধারণ নিয়ম-নীতির একটি হলো- কর্ম করে বেঁচে থাকো। কর্মই ধর্ম তাতে থাকো মত্ত। নৈতিক মূল্যবোধকে আঁকড়ে ধরে সৎ পথে উপার্জনের কথা বলা হয়ে থাকে প্রতিটি ধর্মেই। আমরা যে যেই ধর্মের অনুসারি হই না কেন, আমাদের টাকা উপার্জনের মাধ্যমটা হতে হবে হালাল। আজকাল টাকা উপার্জনের জন্য কতজনই বা বৈধ রাস্তা অবলম্বন করে থাকে? এমন প্রশ্নটাকে বুকে ধারণ করে অনেকেই জড়িয়ে পড়েন অবৈধ পথে। দু’হাত দিয়ে টাকা কুড়িয়ে বুকে তুলে নেন। তবে ক্ষণস্থায়ী সেই মুহূর্তটার সময়কালও কতদিন? এমন প্রশ্ন কারো মনে উদিত হয় না একটি বারের জন্যও। পবিত্র কোরআনের আয়াত উদ্ধৃতি দিয়ে বলা বাহুল্য, প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ক্ষুদ্র অণূজীব থেকে শুরু করে জীব জগতের প্রত্যেককে এবং বহুকোষী জীবের প্রত্যেকটি জীবকোষই এক একটি জীবন্ত সত্ত্বা। একদিন আপনার সেই অবৈধ পথের উপার্জন বন্ধ হবে। জবাবদাহিতার জন্য ক্ষণস্থায়ী জীবনের যাবতীয় সুকর্ম ও অপকর্মের হিসাব-নিকাশও প্রস্তুত করতে হবে।
কাউকে জিম্মির মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন কিংবা ক্ষমতার অপব্যাবহার প্রয়োগের মাধ্যমে টাকা-পয়সা উপার্জন অবৈধ। আর সেই উপার্জনের টাকা আপনি-আমি, দুনিয়ার কেউ কাজে লাগাতে পারি না। সেই উপার্জনের টাকা আপনার সংসারের কাজে খরচ করেন, ছেলে-মেয়েদের পেছনে খরচ করেন দেখবেন কিছুদিন পর তার ফলাফলটা স্পষ্ট। প্রত্যক্ষভাবে না হউক পরোক্ষভাবে কোন দুর্ঘটনা কিংবা সংসারের অভাব-অনটন আর অশান্তির জন্য দায়ী সেই অবৈধ পথের উপার্জন। কারণ সেটাতো হালাল নয়, হারাম উপার্জন। আপনার সন্তান কিংবা আপনার প্রিয়জনের অসুখ-বিসুখ। অতঃপর ডাক্তারের কাছে ছুটাছুটি বাবাদ ওই অবৈধ পথে উপার্জনের চেয়েও আরো বেশি খরচ হয়ে যায়।
তাই আর দেরী না করে আজ থেকে বৈধ পথে টাকা-পয়সা উপার্জনের চেষ্টা করুন, মানুষকে মূল্যায়ন করুন দেখবেন আপনাকেও অন্যরা মূল্যায়ন করছে। এভাবে আর কতদিন ওই পথে হাঁটবেন? তার কি অবসান হওয়া বলে মনে করেন না আপনি???
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০০