somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিথ্যা মামলা হলে করণীয়/ মিথ্যা মামলা হলে আইনী প্রতিকার যেভাবে নিবেন

২২ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বার্থ উদ্ধারে প্রতিপক্ষকে প্রায়ই সামাজিক এবং আর্থিকভাবে হয়রানি করার ঘটনা ঘটাতে দেখা যায়। মিথ্যা মামলার শিকার হলে আইন অনুযায়ী মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

মিথ্যা মামলা হলে মামলা চলাকালীন সময়ে করণীয়ঃ
মিথ্যা মামলা হলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলাটি লড়তে। মামলা থেকে পালিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে আপনার অনুপস্থিতিতেই সাজা হয়ে যেতে পারে। তবে, ফৌজদারি মামলায় জামিনের বিষয় জড়িত থাকে। সেক্ষেত্রে আগে জামিন নিতে হবে। মামলার ধরণ ভেদে আইনজীবীর সহিত পরামর্শ করে জামিনের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উত্তম।

মামলা তদন্ত কালীন সময়ে করণীয়ঃ

তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যথাযথ সত্যতাসহ যাবতীয় দলিল উপস্থাপন করতে হবে। পুলিশ ইচ্ছে করলে মামলার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দায়ের করতে পারে।


মামলায় আপনার বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্ট দিলে করণীয়:

তদন্তকারী কর্মকর্তা যে কোন কারণে আপনার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিলে তাতেও আপনার রেহাই পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

মামলাট অভিযোগ গঠনের দিন মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করতে হবে। নিম্ন আদালতে অব্যাহতি না পেলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি আদালতে সরাসরি মামলা হয়, তাহলেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। মামলা সাক্ষ্য পর্যায়ে গেলে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। যদিও মামলার অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ যিনি মামলা করেন তাঁর ওপর বর্তায়।

মিথ্যা মামলা করে বাদী আদালতে হাজির না হলে করণীয় ঃ

অনেক সময় মিথ্যা মামলা হলে মামলাকারী মামলা ঠুকে দেওয়ার পর আর হাজির হন না। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি তারিখ যাওয়ার পর মামলা থেকে খালাস পাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ আইনে রয়েছে।

মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে অবশ্যই মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা আপনি গ্রহণ করতে পারেন।

মিথ্যা মামলা কারীর বিরুদ্ধে আইনে যে শাস্তির বিধান রয়েছেঃ
ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা অভিযোগের শাস্তির বিধান রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।

দণ্ডবিধির ১৯১ ও ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তির জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের কথা উল্লেখ আছে।

দণ্ডবিধির ২০৯ ধারামতে, মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। আবার ২১১ ধারায় মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করার শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো অভিযোগ দায়ের করলে অথবা কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছে মর্মে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে মামলা দায়েরকারীকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করারও বিধান রয়েছে। তবে অভিযোগের বিষয় যদি এমন হয় যে যার কারণে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা সাত বছরের ওপর সাজা হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তাহলে দায়ী অভিযোগকারীর সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

**মিথ্যা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করার শাস্তিঃ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১৭ ধারায়ও মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অন্য কোনো ধারায় মামলা করার জন্য আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন অথবা করান, তবে সেই অভিযোগকারী অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।


এছাড়া Law of Torts অনুসারে বিদ্বেষ পরায়ণ মামলার ক্ষেত্রে প্রতিকার পেতে চাইলে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে,


(ক) বিবাদী তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল

(খ) পূর্বের মামলার প্রকৃতি দেখে মনে হয় , মামলাটি বাদীর অনুকূলে শেষ হতে পারত

(গ) মামলাটি যুক্তিসংগত এবং সম্ভাব্য কারণ ছাড়া করা হয়েছিল

(ঘ) মামলাটি বিদ্বেষবশত করা হয়েছিল


(ঙ) মামলার ফলে বাদীর ক্ষতি হয়েছে


এখানে উল্লেখ্য যে, কোন মামলায় যদি কাউকে দণ্ডিত করা হয়, তবে দণ্ডিত ব্যক্তি ঐ দণ্ডাদেশকে বিদ্বেষবশত বলে বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না।


দণ্ডবিধির ১৯৩ ধারা অনুসারে বিচারিক প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে বা সাক্ষ্য বিকৃত করলে ঐ ব্যক্তি সাত বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে বা সাক্ষ্য বিকৃত করলে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।


দণ্ডবিধিরি ১৯৪ ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য বা সাক্ষ্য বিকৃত করে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোন অপরাধে কাউকে দণ্ডিত করায়, সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন । এক্ষেত্রে মিথ্যা সাক্ষ্য বা সাক্ষ্য বিকৃত করার ফলে যদি নির্দোষ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়, তাহলে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী মৃত্যুদণ্ড বা ১৯৪ ধারায় বর্ণিত অন্যান্য দণ্ডে দণ্ডিত হবেন ।


দণ্ডবিধির ১৯৫ ধারায় উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য বা সাক্ষ্য বিকৃত করে কাউকে এমন কোন অপরাধে দণ্ডিত করায় যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সাত বছরের কারাদণ্ড, তাহলে উক্ত ব্যক্তিও সমদণ্ডে দণ্ডিত হবেন ।


এছাড়াও তথ্য প্রমাণ গোপন করা, অপরাধ সংগঠনের মিথ্যা সংবাদ প্রদান করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলাও করতে পারেন।


আমাদের দেশের বিজ্ঞ আদালতসমূহ যদি সতর্কতার সঙ্গে নিয়মিতভাবে মিথ্যা মামলাসমূহের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা অভিযোগ আনয়নকারী পক্ষকে কারাদণ্ড ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ প্রদান করেন, তাহলে প্রথম দিকে আদালতে কাজের পরিধি বাড়লেও একটা পর্যায়ে মিথ্যা মামলা দায়েরের সংখ্যা দ্রুতগতিতে হ্রাস পাবে। ফলে একদিকে যেমন স্তূপীকৃত মামলার সংখ্যা হ্রাস পাবে, অন্যদিকে মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ অন্তত তাদের আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে।

** মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
আইনজীবী
০১৭৩৩৫৯৪২৭০
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×