somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঋণের জিম্মাদার হওয়ার আগে ১০০ বার ভাববেন যেসব কারণে

২২ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেকে আমাদের কাছে এসে বলেন; আমি তো ঋণ গ্রহণ করি নাই, আমি ঋণ সম্পর্কে কিছুই জানিনা, ওমুকের কথায় শুধু স্বাক্ষর দিয়েছিলাম! কিংবা হঠাৎ গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার পর জানতে পারেন মামলা সম্পর্কে। এমনকি অনেকে বলেন, আমার স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও স্বামীর ঋণের মামলায় আমাকে জড়ালো কেন?

তখন আসলে আইনী রুটিন কার্য সম্পদান ব্যাতিত আইনজীবীর কিছুই করার থাকে না। জিম্মাদার হয়েও এমন সব বিপদ কেন, দায় কী জিম্মাদার/গ্যারান্টরের?
এই বিষয়টি ঋণ গ্রহণের সময় যেমন গ্রাহকের খেয়াল থাকে না তেমনি ব্যাংক/নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গ্রাহক বা গ্যারান্টরকে বুঝিয়ে বলা হয় না। যার জন্য যত বিপদ, বিপত্তি। সহজ কথায় বললে, আপনি কোন ঋণের গ্যারান্টার হলে ঋণ গ্রহিতার সময় দায় আপনার উপরও বর্তাবে। ঋণ গ্রহিতা কোন কারণে ডিফল্ডার/খেলাপি হয়ে গেলে শুধু ঋণ গ্রহিতার নামে না আপনার নামেও মামলা হবে। ঋণ গ্রহিতারে সাথে সাথে আপনার নামেও ওয়ারেন্ট হবে। ঋণ গ্রহিতাকে ধরতে না পারলে আপনাকে ধরে টাকা উদ্ধার করার কিংবা আপনার জামানতকৃত সম্পত্তি নিলামে তুলে ব্যাংক বিক্রি করে দিতে পারবে। গ্রেফতার না হয় মামলা হওয়ার পর হলেন কিন্তু নিলাম করতে ব্যাংকে মামলা করতেই তো হবে না বরং আইনে বলছে আগে নিলামের চেষ্টা করো তারপর মামলা। আর রায় হলৈ গ্যারান্টর গ্রেফতার হলে আপীল করতে হলে রায়ের টাকার উপর ২৫% জমা দিয়ে জামিন নিতে হবে এবং ৫০% দিয়ে আপীল করতে হবে। আপীল করতে না চাইলে অবশিষ্ট টাকা ৯০ দিনের মধ্যে জমা প্রদানের বন্ড দাখিল করলে তবেই কোর্ট জামিন দিবে। তাহলে ভাবুন, ঋণের জিম্মাদার বা গ্যারান্টার হবেন কিনা? হলে বুঝে শুনে হবেন কিনা? মামলা হওয়ার পর যতোই বলেন আমি না বুঝে স্বাক্ষর করেছি বা এই স্বাক্ষর আমি ইচ্ছেকৃত দেই নি এসব বলে কাজ হবে না। এমনকি বিবাহ বলবৎ থাকাকালীন স্বামী/স্ত্রী একে অপরের ঋণের জিম্মাদার হলে ডিভোর্স হয়ে গেলেও সে দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ আইনের নেই। এসব কথা আবেগী কথা নয়, গত দশ বছরে আদালত পাড়ায় ঘুরে ঘুরে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং আইনের আলোকে বলা।

তাহলে আসুন আইনের আলোকে একটু জেনে নি;

ঋণখেলাপি হলে ঋণ আদায়ের জন্য কেবলমাত্র ঋণগ্রহীতা নয় গ্যারান্টরের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রয়েছে বিদ্যমান অর্থঋণ আদালত আইনে।
অর্থঋণ আদালত আইনের ৬(৫) ধারার বিধানে এ সংক্রান্তে আলোচনা করা হলো। তা হলো-"আর্থিক প্রতিষ্ঠান মূল ঋণ গ্রহীতার (Principal debtor) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সময়, তৃতীয়পক্ষ বন্ধকদাতা (Third party mortgagor) বা তৃতীয়পক্ষ গ্যারান্টর (Third party guarantor) ঋণের সহিত সংশ্লিষ্ট থাকিলে, উহাদিগকে পক্ষ করিবে; এবং আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়, আদেশ বা ডিক্রি সকল বিবাদীর বিরুদ্ধে  যৌথভাবে ও পৃথক পৃথক ভাবে (jointly and severally) কার্যকর হইবে এবং ডিক্রি জারির মামলা সকল বিবাদী-দায়ীকের  বিরুদ্ধে একই সাথে পরিচালিত হইবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, ডিক্রী জারীর মাধ্যমে দাবী আদায় হওয়ার ক্ষেত্রে আদালত প্রথমে মূল ঋন গ্রহীতা-বিবাদীর এবং অতঃপর যথাক্রমে তৃতীয় পক্ষ বন্ধক দাতা (Third party mortgagor) ও তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টর (Third party guarantor) এর সম্পত্তি যতদূর সম্ভব আকৃষ্ট করিবে। " তার মানে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রথমে ধরবে মূল ঋন গ্রহীতাকে। তার নিকট হইতে যদি টাকা আদায় করা সম্ভব না হয় কিংবা তার বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে নিয়েও ঋণ সমন্বয় না হয় সেক্ষেত্রে ধরা হবে বন্ধক দাতা (Third party mortgagor) ও তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টর (Third party guarantor) কে।  যেক্ষেত্রে জিম্মাদার হিসাবে আপনার সম্পত্তি বন্ধক রেখেছেন সেক্ষেত্রে জিম্মাদার হওয়া সত্ত্বেও আপনার সম্পত্তিটি মামলার আগে নিলামে উঠে যেতে পারে।


- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×