somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার আমর বিন লোহাই কে ?

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

এক

ব্রাজিলের কার্নিভালের শোভা যাত্রা







ঢাকার পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা







হ্যালোইনের মুখোশ





পহেলা বৈশাখ এর মুখোশ






দুই
ইসলাম পূর্ব মক্কার কথা। মক্কায় তখন বাস করত জোরহাম গোত্র। কুরায়েশদের পূর্ব-পুরুষেরা তখন মক্কা থেকে বহিস্কৃত হয়ে, মক্কার আশে-পাশে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করছিল। আমর বিন লোহাই তখন জোরহাম গোত্রের উপ গোত্র বনু খোজায়া’র নেতা। একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি হিসাবে তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র, ইব্রাহীম আলায়হিয়াসসালাম এর হাতে প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর সর্ব প্রথম মসজিদ কাবা গৃহের তিনি তত্ত্বাবধায়ক। মক্কার মানুষেরা তখন দ্বিনী ইব্রাহীমের অনুসারী, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী। আমর বিন লোহাই একবার বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়া গেলেন। তিনি সিরিয়ার মানুষকে দেখলেন নিজেদের হাতে তৈরী করা নানা রকম মুর্তি বানিয়ে তার পুজা করছে। সিরীয় সভ্যতা তখন নামকরা সভ্যতা, নবী-রসুলদের পদ চারণা ধন্য পুণ্যভুমি, সভ্য জাতির এ রকম চিত্তাকর্ষকপুর্ণ অর্চনা পদ্ধতি দেখে আমর বিন লোহাই মুগ্ধ হলেন, তিনি বুঝলেন, মক্কার মানুষ তাকে জ্ঞানী বললেও আসলে তার জ্ঞান কত স্বল্প। আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোনো কিছুর যে উপাসনা করা যায় (!) তিনি তা জানতেনই না (নাউযবিল্লাহ) । তার এই জ্ঞানের বন্ধাত্ম্য ঘোঁচাতে তিনি একটি মুর্তি ক্রয় করলেন এবং মক্কায় নিয়ে আসলেন, কাবা শরীফের সামনে মুর্তিটিকে বসালেন এবং তার অনুসারীদের এর পুজা করতে বললেন। আর এভাবেই হলো মক্কার মুশরিকদের প্রধানতম দেবতা হোবালের অধিষ্ঠান।

কুসাই বিন কিলাবের নেতৃত্বে কুরায়শরা মক্কার কর্তৃত্ব পুণরূদ্ধার করে। কিন্তু কুরায়শরা মুর্তি পুজার প্রথা রহিত না করে বরং এর আরো পৃষ্ঠপোষকতা করে, কালক্রমে সেখানে প্রায় ৩৬০টি মুর্তির জায়গা হয়।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আমাদের জানিয়েছেন যে, মক্কার সেই বুদ্ধিজীবী আমর বিন লোহাই তার বুদ্ধিহীনতার কারণে জাহান্নাম প্রাপ্ত হয়েছে।

তিন
সম্রাট আকবর একজন দক্ষ শাসক ছিলেন। আমাদের দেশে তখন প্রচলিত ছিল চান্দ্র মাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা হিজরী ক্যালেন্ডার। কৃষি প্রধান দেশের শাসকের খাজনা আদায় নির্ভর করত, কৃষির ফলনের উপর । বাংলার কৃষি কাজ নির্ভর করত ঋতু চক্রের উপর, তখন প্রচলিত ছিল হিজরী ক্যালেন্ডার। আর এ সন গণনা চান্দ্র বর্ষ (৩৫৪ দিনে এক বছর) হওয়ার কারণে প্রত্যেক বছর প্রত্যেক মাস ১১ দিন এগিয়ে আসত, আর এতে করে খাজনা আদায়ে শাসক ও প্রজা উভয়কেই বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। কারন কোনো কোনো বছর ফসলের ফলনের আগেই খাজনা আদায়ের সময় হয়ে যেত। এ সমস্যার সমাধান কল্পে সম্রাট আকবর বিদ্যমান চান্দ্র বর্ষকে সৌরবর্ষে রূপান্তরিত করেন এবং হিজরী ক্যালেন্ডার থেকে নতুন বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন করেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর হিজরতের বছর থেকে এই পঞ্জিকার গণনার রীতি অব্যাহত রাখেন। সে হিসাবে বলা যায় এই বাংলা সন মূলত ইসলামিক সন অথবা এই সনের প্রবর্তন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু ছিলনা। একজন একত্ববাদী হিসাবে সম্রাট আকবরের সুনাম না থাকলেও, এই পঞ্জিকাকে কেন্দ্র করে কোনো পৌত্তলিকতার রীতি চালু করেছেন, ইতিহাসে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়না।

সে সময়, জমিদার কর্তৃক প্রজাদের মিষ্টি মুখ করানো যা পুণ্যাহ নামে পরিচিত বা ব্যাবসায়ী কর্তৃক হাল-খাতা পালন করা ছিল পহেলা বৈশাখের প্রধান কার্যক্রম। এ ছাড়া গৃহস্থ পরিবারে এ দিনে উন্নত মানের খাদ্য পরিবেশনের রেওয়াজ পরিলক্ষিত হয়। কালক্রমে হিন্দু সম্প্রদায় এ দিনটিকে কেন্দ্র করে নানা রকমের পুজা- অর্চনার উদ্ভব ঘটায়, যা তাদের ধর্মের অনুষংগ হিসাবেই বিবেচিত হয়।
বাঙ্গালী মুসলমান সমাজে এ ছাড়া অন্য কোনো রেওয়াজ, রসমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়না। তাছাড়া গ্রামে-গঞ্জে বৈশাখী মেলা নামে এক প্রকার মেলার প্রচলণ হয়। নির্মল বিনোদন দেয়াই এ সব মেলার উদ্দেশ্য থাকলেও ধীরে ধীরে পৌত্তলিকতার প্রবেশ এখানে ঘটে এবং সচেতন মুসলিম সমাজ সচেতন ভাবেই তা এড়িয়ে চলতেন। অবশ্য সে সময় মুসলমানেরা বাঙ্গালী হিসাবে পরিচিত ছিলনা। শরৎ চন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাস ১ম খন্ড দ্রষ্টব্য।

নাগরিক জীবনে পহেলা বৈশাখ সর্ব প্রথম পালিত হয় রমনার বটমূলে ১৯৬৫ সালে ছায়া নট কর্তৃক। এ আসরের মুল উদ্দেশ্য ছিলো পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত সর্বেশ্বরবাদী রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠা। তার ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো গানটি’ বাংলা নব্বর্ষ পালনের থিম সং হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যা মুলতঃ প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি নিবেদিত পুজাঞ্জলী, যাকে বলা হয় প্রকৃতি পুজা বা প্যাগানিজম।
প্রতিবছর এ ভাবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলতে থাকে। ১৯৮৩ সালে যুক্ত হয় নতুন আরেকটি বিষয় পান্তা- ইলিশ। তবে ১৯৮৯ সালে এসে নববর্ষ উদযাপন নতুন মাত্রা পায়। চারুকলা থেকে যাত্রা শুরু করে মঙ্গল শোভা যাত্রা, বিভিন্ন পশু পক্ষীর মুর্তি বানিয়ে জাতির মঙ্গল কামণায় তা সহকারে মিছিল করাকে বলে মঙ্গল শোভা যাত্রা।

হজার হাজার মানুষের অংশ গ্রহণে মূর্তি-মুখোশ মিছিলে ঢাক-ঢোল, কাঁসা-তবলার তালে তালে চলতে থাকে সঙ্গীত-নৃত্য, উল্লাস-উন্মত্ততা। লক্ষণীয় যে, মঙ্গল শোভাযাত্রার মঙ্গল কামণার প্রতীক হলো চারুকলার মাসব্যাপী পরিশ্রমে বানানো ঘোড়া, হাতি, ময়ুর, পেঁচা, পুতুল, পাখি, মূর্তি, বিভিন্ন মুখোশ প্রভৃতি।

আমাদের দেশে হিন্দু সম্প্রদায় শ্রীকৃষনের জন্মদিন জন্মাষ্টমীতে মঙ্গল শোভা যাত্রার আয়োজন করে। তবে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভা যাত্রা প্রকৃতিতে কিছুটা ভিন্ন, আর ভিন্নতার কারন, বিভিন্ন পশু পাখীর মুর্তি ও মুখোশ। যা সুস্পষ্ট শিরক এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় এই মুর্তি ও মুখোশ এলো কোথা থেকে? আমি উপরে প্রথম তিনটি ছবিতে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরের কার্নিভালের সাম্বা প্যারেডের ছবি দিয়েছি, আর ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ ছবিটি বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভা যাত্রার ছবি, ছবি গুলোর মধ্যে কি অদ্ভুত মিল! ৭ম ও ৮ম ছবি দুটো পাশ্চাত্য সভ্যতার হ্যালোইন উৎসবের মুখোশের ছবি আর শেষ দুটি ছবি হলো পহেলা বৈশাখের মুখোশের ছবি।

উপরের ছবি গুলোই প্রমাণ করে বাংলাদেশের এক দল বা কোনো একজন আমর বিন লোহাই নিজের জ্ঞানের দৈন্যতা ঘোঁচাতে ল্যাটিন আমারিকার কার্নিভাল এবং হ্যালোইন উৎসব থেকে মঙ্গল শোভা যাত্রার থিম আমদানী করে মনের মাধুরী মিশিয়ে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভা যাত্রা বানিয়েছে। তবে আমরা জানি ঢাকায় ১৯৮৯ সনে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার আগে যশোরে চারুপীঠের উদ্যোগে ১৯৮৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয়। হয়ত যশোরে খোঁজ করলে বাংলার আমর বিন লোহাই এর সাক্ষাৎ পাওয়া যেতে পারে।
তবে আমর বিন লোহাই যেই হোক না কেন, তার আদর্শে অনুপ্রানিত শতশত আবু জেহেল, আবু লাহাব বাংলার মানুষকে বিদ্যা-বুদ্ধি দানে ব্যাস্ত। হয়ত তারা একদিন বৈশাখ দেবীর মুর্তি প্রতিষ্ঠা করবেন ! তবে সচেতন মুসলমান মাত্রই জানে মক্কার বুদ্ধিজীবী আবু জেহেলের পরিণতি কি হয়েছিল।

শিরক-বিদাতে পরিপূর্ণ এই বাংলাদেশে, এই নিবন্ধ লিখার মাঝখানে, আল্লাহর তরফ থেকে বেশ শক্তিশালী একটি ভুমিকম্পন জানান দিয়ে গেল, ‘ এখনো সতর্ক হও আল্লাহর আযাব থেকে গাফেল হয়োনা’। এই সতর্ক বার্তা আমাদের প্রাণে পৌছেছে কি?
আর হ্যাঁ পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর হাজার বছরের প্রাণের উৎসবতো নয়ই, এমনকি শত বছরের পুরণো উৎসবও নয়। হাজার বছর আগে বাঙ্গালীর কোনো অস্তিত্বই ছিলোনা।

আর এটি মৌলিক কোনো উৎসবও নয়, অন্য সংস্কৃতি থেকে ধার করা একটি আগাছা, কিছু রাজনৈতিক মুফতি আর কর্পোরেট বেনিয়াদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে যা এ জাতির প্রাণ ওষ্ঠাগত করছে, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারছেনা।

রেফারেন্সঃ
১। আর রাহিকুল মাখতুম- শফিউর রহমান মোবারকপুরি
২। বর্ষ বরণ ঈমানহরণ- শরীফা খাতুন
৩। হ্যামিলনের ইঁদুরঃ সত্য বনাম হাজার বছরের বাঙ্গালী সংস্কৃতি-আবু পুতুল

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:১৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×