somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সলিলে ভালোবাসা.................দিনু

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সলিলে ভালোবাসা.................দিনু

মাথার উপর বর্ষার গোমড়া মুখো আকাশ আর নিচে জলের তরঙ্গ লীলা তার সাথে ঝিরি ঝিরি বাতাস । রোমান্টিকতায় পরিপূর্ণ এক সকাল । সেই সকালে লঞ্চের ডেকের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তপু । দূরে দাঁড়িয়ে তিথী । তিথী নামের এই মেয়েটিকে তপু কত যে ভালোবাসে তা তিথী জানে না! তিথী তাকিয়ে আছে নদীর পাড়ের দিকে আর তপু তিথীর চোখের দিকে তাকিয়ে । যেন সে সেই চোখেই প্রকৃতির সৌন্দর্য খুজে পেয়েছে ।
কেমন আছ” তিথীর কাছে এসে তপু জিজ্ঞেসা করে ।

- ভালো । আপনি ? কোথায় যাবেন?
=চাঁদপুর ।
- আপনি চাঁদপুর যাচ্ছেন কেন? ঐখানে তো আপনার কেউ নেই?
=ওখানে কেউ নেই কিন্তু ওখানে আমার কেউ একজন যাচ্ছে তাই ।
- অসহ্য ।
এই মেয়েটা তপুকে মোটেও সহ্য করতে পারে না । অথচ তপু কি না ওর জন্যই চাঁদপুর যাচ্ছে । এটাই হয়ত ভালোবাসা, যদিও টা একতরফা ।
তিথীদের মেডিক্যাল কলেজ থেকে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন হচ্ছে চাঁদপুরের একটা প্রাইমারী স্কুলে । সেই ক্যাম্পেইনে তিথীও একজন মেম্বার । ক্যাম্পেইন শুরু হবে ২০শে মে দুপুর ১২ টায় শেষ হবে বিকেল ৫ টায় । সন্ধ্যা ৬ টার লঞ্চে তারা ঢাকা ফিরবে ।তপু খবরটা পেয়েছে কাল রাতে । তিথীর পাশে কিছুটা সময় থাকার এই সুবর্ণ সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবে না । তাই অফিস সবকিছু বাদ দিয়ে তপুও চাঁদপুরের যাত্রী ।


সকাল ছয়টায় রওয়ানা হয়েছে তারা । চাঁদপুর পৌছতে পৌছতে প্রায় ১০ টা বেজে গেল । মেডিক্যাল টিমের সবাই চলল পুরান বাজার স্কুলের দিকে । ঐ স্কুলের মাঠেই আয়োজন করা হয়েছে ফ্রি মেডিকেল চেকআপের ।
তপুর বেশ ক্ষুধা লেগেছে । তাই তারাতারি নদীর পাড়ের টিনের বেড়া দেয়া খাবারের দোকানে ঢুকে পরটা, ডালভাজি আর ডিমের অর্ডার দেয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই এক হাতে গরম গরম ধোঁয়া তোলা পরটা আর অন্য হাতে ডালভাজি নিয়ে ১২-১৩ বছরের একটা ছেলে চলে আসে। “স্যার ডিম ভাজি আসতেছে, ডালভাজি দিয়ে শুরু করেন” কথাগুলো বলে ছেলেটা আরেকটা টেবিলে অর্ডার নিতে যায় ।
তিথীরও নিশ্চয় ক্ষুধা পেয়েছে, সেই সকালে লঞ্চে উঠেছে । অত সকালে কি খাওয়া যায় ! এসব ভাবতে ভাবতে তপুর পেটের মধ্যে ছুঁচোর নাচন তোলা ক্ষুধাটা কেমন যেন মিলিয়ে যায় । ঠিক করে থাক এখন খাবে না, আগে তিথী খেয়ে নিক ।
“এই ছেলে ? এদিকে এদিকে” দোকানের ছেলেটাকে ডাকে তপু ।
- কি নাম তোমার ?
= রুবেল
-শোন রুবেল, ডিম ভাজার দরকার নাই ।আমি নাস্তা করব না ।
= স্যার ডিম তো ভাজা হইয়া গেছে ।আর আপনার বিল তো ঠিকই দেওন লাগব ।
-সমস্যা নাই নাস্তাগুলো তোমার জন্য ।

তপু আর কথা বাড়ায় না । দোকানের ক্যাশ কাউন্টারের সামনে গিয়ে বলে “৩ টা পরটা, ১ টা ডিম আর ডালভাজি, কত হইছে?” । ক্যাশে বসা বুড়ো জিজ্ঞেস করে “ খাইবেন না ক্যান, খাবারে কোন সমস্যা হইছে ?”
-না, কোন সমস্যা হয় নাই । এমনি খাব না । কত হইছে বলেন?
= ৪০ টাকা ।
ক্যাশের বুড়ো লোকটা এই ৪০ টাকার হিসেব বলতে ৩ বার ক্যালকুলেটর ব্যাবহার করেছে ।

খাবারের দোকান থেকে বের হয়ে তপু পুরান বাজার স্কুলের দিকে যায় । মেডিকাল ক্যাম্পেইন উপলক্ষে স্কুল আজ বন্ধ । অসংখ্য মানুষের ভিড় করেছে স্কুলের মাঠে । এদের বেশিরভাগই বয়স্ক মানুষ । স্কুলের ছাত্র- ছাত্রীরা ভোলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছে । এদের সবার মাথায় সাদা রঙের ক্যাপ । ক্যাপের সামনের অংশে নীল কালিতে লেখা রয়েছে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন, তার নিচে তিথীদের মেডিক্যাল কলেজের নাম, একেবারে নিচে লেখা “স্থানঃ পুরানবাজার স্কুল মাঠ” । নিচের লাইনের অপ্রয়োজনীয় লেখাটা দেখে তপু হাসে। সেই হাসিতে তাচ্ছিল্য প্রকাশ পায় ক্যাপের ডিজাইনারের মেধার প্রতি !
এত মানুষের ভীরে তপু তিথীকে খুঁজতে থাকে । তিথী তখন স্কুলের এক ক্লাসরুমে বসে নাস্তা করছে । দূর থেকে দারিয়ে দারিয়ে তপু তিথীর খাওয়া দেখে । ক্ষুধার্ত মানুষ অন্যের খাওয়া দেখেও মজা পায় তপুর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে কি না তা বলা যাচ্ছে না । আসলে মানুষের মনকে কোন ফর্মুলাতেই ফরমুলেশন করা যায় না ।

দুপুর ১২ টায় ক্যাম্পেইন শুরু হয় । তিথী সহ ছয় জন ডাক্তার বসেছে । তাদের সবার পরনে সাদা আপ্রন আর সামনে সাদা কাপড়ে ঢাকা টেবিল । প্রত্যেক ডাক্তারকে সামনে রেখে একেকটা লাইন তৈরি হয়েছে। বয়স্ক রোগীদের বেশীরভাগরই সমস্যা কোমরে বাথা না হয় বুকে বাথা ।

তপু দূরে দাঁড়িয়ে তিথীকে দেখছে কিন্তু তিথীকে কাছে থেকে দেখতে ইচ্ছা করছে তার । তাই তপু তাই তিথীর সামনের লাইনাতে দাঁড়ায়।

প্রত্যেকটা লাইন বেশ দ্রুতই আগাচ্ছে, কেবলমাত্র এই লাইনটা ছাড়া ! অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর তিথীর সম্মুখ-দর্শন পায় তপু । প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে তিথী জিজ্ঞেস করে
- নাম ?
= আক্কাস আলি (ইচ্ছে করেই এই নাম বলে তপু)
- বয়স?
তিথী নাম লিখতে লিখতে জিজ্ঞেস করে ।
= ২৬
- কি সমস্যা ?
তিথীর চোখ এখনও প্রেসক্রিপশনের দিকে
= সমস্যা কিছু না, কাছে এসে তোমাকে দেখতে ইচ্ছা হোল তাই কাছে এসে দেখে গেলাম ।
শুনে চমকে উঠে তপুর দিকে তাকায় তিথী
- ফাজলামোর একটা সীমা আছে । কেন এমন করছেন আপনি ?

তপু উত্তর না দিয়ে তিথীর চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে আসে ।

এখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা । কিছুক্ষণ আগে লঞ্চ ছেড়েছে । লঞ্চে উঠেই কেবিনে শুয়ে একটা ঘুম দিয়েছিল তপু ।

“সার নাস্তা-চা কিছু লাগবো ?” -কেবিন বয়ের এই ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার । বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে তিথী তার বন্ধুদের সাথে গল্প করছে । নদীর পাড়ের আধারে শূন্য দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে তপু ।

“তপু ভাই” – তিথীর ডাকে ফিরে তাকায় সে ।
“আপনি কি শুরু করেছেন এসব ? সেই ঢাকা থেকে আমার পিছু নিয়েছেন?” নিরবতা ভেঙ্গে তিথীই জিজ্ঞেস করে ।
= আমি আবার কি করলাম ? আমি তো শুধু আমার ভালোবাসার মানুষের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছি । আর কিছু না। তপুর উত্তর ।

তিথী আবারও চুপ হয়ে যায় । কি বলবে এই পাগল ছেলেটাকে সে ভেবে পায় না । তপুকে তিথীর ভালই লাগে তারপরেও কি যেন একটা ভয় কাজ করে মনের মধ্যে । কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে তিথী কেন জানি ছেলেটার প্রেমে পরে যাচ্ছে । নিজের মনের এই আকাশ পাতাল খেলা থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্যই সে তপুর সাথে খারাপ ব্যাবহার করে । হায়রে মানুষের মন!
বাইরে বেশ বাতাস । হঠাৎ করেই বাতাস শুরু হয়ে গেছে । লঞ্চের গায়ে জলের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে । ঝড়ো বাতাসে দুলছে লঞ্চ । সেই দুলুনি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ।

ইতোমধ্যে লঞ্চের নিচতলা পানিতে ভরে গেছে যাত্রীরা সবাই দিক্বিদিক ছুটাছুটি করছে । তপু ছুটছে তিথীর খোঁজে তার হাতে একটা বয়া । ইতোমধ্যে
তিথী তার কেবিনের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল আসহায়ের মত । কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না সে । তপু তিথীর হাত ধরে বলে “সাঁতার জানো” ?
তিথী মাথা নাড়িয়ে বলে “না” । ঠিক আছে, শক্ত করে আমাকে ধরে থাকবে আমরা দুজন এখন পানিতে লাফ দেব ।

তিথী ও তপু পানিতে বয়ার উপর ভাসছে । তপু সাঁতার জানে না তারপরেও সে একহাতে সামনের পানিকে টানছে , আরেক হাতে তিথী ও বয়া ধরে রেখেছে । তিথী দুহাতে তপুকে জড়িয়ে ধরে আছে ।

সামনেই পাড় দেখা যাচ্ছে । কিন্তু ঝড়ের কারণে ঢেউগুলো কয়েক ফুট উচ্চতা নিয়ে আছড়ে পড়ছে । এমনি একটা বড় ঢেউ আঘাত করে তপু ও তিথীকে । তপু আপ্রাণ চেষ্টা করে তিথীকে ধরে রাখতে । কিন্তু প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা তপুর ইচ্ছা শক্তিকে ছাপিয়ে তিথীকে আলাদা করে নিয়ে যায় । তপু তার চোখের সামনেই তার প্রিয়ার সলিল সমাধি দেখে !

আজ ২০শে মে । তপু চাঁদপুর যাচ্ছে । তার হাতে ৭ টি কালো গোলাপ । প্রতি বছর তার হাতে একটি করে কালো গোলাপ যুক্ত হয় !
১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×