somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ - জেনোসাইড (Genocide - Anthony Mascarenhas) -২ য় পর্ব

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুমিল্লার ৯ম ডিভিশন হেডকোয়ার্টারে কর্মরত কর্নেল নাঈমের যুক্তিতে, হিন্দুরা অর্থের জোরে মুসলমানদের এ প্রদেশে দমিয়ে রেখেছিল। ওরা প্রদেশটার সম্পদ নিংড়ে খেয়েছে। ওরা অর্থ, সম্পদ আর খাদ্য ভারতে পাচার করেছে। স্কুল, কলেজের অর্ধেকের বেশী শিক্ষকদের পদ দখল করেছে অথচ নিজেদের সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্য পাঠিয়ে দেয় কলকাতা। বাঙ্গালী সংষ্কৃতি আদতে এখন হিন্দুদের সংস্কৃতি আর কলকাতার মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রন করে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি। আমরা এদের উপড়ে ফেললে এ জায়গার মুসলমানরা দেশ এবং বিশ্বাস দুটোই ফেরৎ পাবে

কিংবা ধরা যাক মেজর বশিরের যুক্তি। বশির বর্তমানে কুমিল্লার ৯ম ডিভিশনের এসএসও। তার মতে, এ জায়গাতে সংঘাতটা আসলে বিশুদ্ধ জাতের সাথে মিশ্র জাতের মধ্যকার সংঘাত। গ্রিন টির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে সে আমাকে বলে, এখানের মানুষগুলো নামে মুসলমান। যদিও এরা নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করে কিন্তু এদের অন্তরটা হিন্দু। তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, এই সেনানিবাস মসজিদের মৌলভী জুম্মার নামাযে ফতোয়া দিয়েছে যারা পশ্চিম পাকিস্তানীদের মারবে তারা জান্নাত পাবে। এজন্য অবশ্য বেজন্মাটাকে আমরা উচিত শিক্ষা দিয়েছি এবং বাকীগুলোকে খুঁজে বের করা হচ্ছে। সবকিছু শেষ হবার পর যারা থাকবে তারা হবে সব সত্যিকারের মুসলমান। ওরা এমনকি উর্দুও বলতে পারবে।

এমনি করে সব জায়গাতেই অফিসাররা নিজেদের ধারনা থেকে তৈরী করা যুক্তিগুলো আমাকে শুনিয়েছে। সমস্যা সমাধানের এমন ভয়াবহ পদ্ধতিকে বিবেকের কাছে গ্রহনযোগ্য করার যত যুক্তিই তারা তুলে ধরুক না কেন এই সমস্যা এবং এর সমাধান দুটোই রাজনৈতিক । বাঙ্গালীরা নির্বাচনে জিতেছে । তারা এখন শাসনক্ষমতা চায়। অন্যদিকে পাঞ্জাবীরা, যাদের আকাক্ষা এবং চাহিদা দ্বারা ১৯৪৭ এ পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে প্রতিটি সরকারী নীতি নির্ধারিত হয়েছে তারা তাদের ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। সেনাবাহিনী পাঞ্জাবীদের পেছনে দাঁড়িয়েছে।

আলাপচারিতায় অফিসাররা প্রায়শই যা হচ্ছে তা সেনাবাহিনী দৃশ্যপটে আসার আগে অবাঙ্গালীদের হত্যাকান্ডগুলোর বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভের ফলাফল বলে থাকে। কিন্তু যেভাবে ঘটনাপ্রবাহ চলছে তাতে এটা অনুমান করা যায় এটা হঠাৎ প্রতিক্রিয়া নয়। এটা পরিকল্পিত।

আজ এটা পরিষ্কার, ভদ্র-মার্জিত অ্যাডমিরাল আহসানের কাছ থেকে পূর্ব বাংলার গর্ভনরশিপ এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল শাহেবজাদা খানের মত প্রাজ্ঞ মানুষের নিকট থেকে সামরিক কমান্ডের দায়িত্ব যখন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান গ্রহন করে তখন থেকেই এ নিষ্ঠুর পরিকল্পনার সূচনা হয়। মার্চের শুরুর সময়টাতে বাঙ্গালীদের অনেক আকাঙ্খার সংসদ অধিবেশন স্থগিত করার ফলশ্রুতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। এটা বলা হয়ে থাকে পূর্ব বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের হেনস্তা হবার কল্পনা-প্রসুত খবরগুলোতে সেনাবাহিনীর নীতি-নির্ধারকদের উত্তেজিত হয়ে উঠার পেছনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নিরব সমর্থন ছিল। পাঞ্জাবী নিয়ন্ত্রিত ঢাকার ইষ্টার্ন কমান্ড কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি প্রনয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। (এখানে এটা বলে রাখা ভাল খান উপাধীরা কোন রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় নন। খান পাকিস্তানে একটা বহুল ব্যবহৃত টাইটেল।)

যখন সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলো ২৫ শে মার্চ রাতে ঢাকার রাস্তায় বিদ্রোহ দমনের নামে নেমে আসে তখন তাদের অনেকের কাছেই নিশ্চিহ্ন করতে হবে এমন মানুষের একটা তালিকা দেয়া হয়েছিল। সে তালিকাতে ছিল হিন্দু, মুসলমান বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং যেসব ছাত্র, শিক্ষক এবং সাংবাদিকরা শেখ মুজিবের আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিল তাদের নাম। হিন্দু ছাত্রাবাস জগন্নাথ হল আক্রমনের পক্ষের সাফাই হিসেবে হল থেকে সেনাবাহিনীর উপর মর্টার হামলার যে যুক্তি এখন প্রচার করা হচ্ছে তা কোনভাবেই একই সময়ে রমনা রেসকোর্সের মন্দিরের চারপাশের দুটো হিন্দু আবাসিক এলাকা এবং পুরানো ঢাকার শাঁখারী বাজারের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার ধ্বংসযজ্ঞকে ব্যাখা করতে পারে না। আরও ব্যাখা করতে পারে না কিভাবে ২৬ ও ২৭ শে মার্চের টানা কারফিউর ভেতর দিয়ে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের উল্লেখযোগ্য হিন্দু পরিবারের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেল। একইভাবে কারফিউর ভেতর আটক করা মুসলমানদেরও কোন হদিশ পাওয়া যায় না। কল্পিত হিন্দু আগ্রাসন মোকাবেলার আড়ালে এদেরকে পরিকল্পনা মোতাবেক সরিয়ে ফেলা হয়েছে ।

এপ্রিলের ১৫ তারিখ ঢাকার ইকবাল হলের ছাদের উপর পড়ে থাকা চারজন ছাত্রের মাথা পঁচার দৃশ্য আমি দেখতে পাই। কেয়ারটেকারের ভাষ্যমতে এদের হত্যা করা হয়েছে ২৫ শে মার্চ রাতে। হলের চারটি রুম আর সিঁড়িতে পাওয়া যায় রক্তের ভারী চিহ্ন। ইকবাল হলের পেছনের বড় আবাসিক ভবনটাকে দেখে মনে হল ওটার জন্য সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। যদিও ডিডিটি পাউডারের বহুল ব্যবহার করা হয়েছে তবুও সিঁড়িগুলো ছিল দুগর্ন্ধে ভরা আর দেয়ালগুলোকে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশীরা আমাকে জানায় ঘন্টাখানেক আগে মহিলা ও শিশুদের ২৩ টি মরদেহ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মরদেহগুলো সেই ২৫ শে মার্চের রাত থেকে ছাদে থাকায় ওতে পঁচন ধরেছে। অনেক প্রশ্ন আর অভয়ের পর আমি জানতে পারি ওরা ছিল নিকট বর্তী হিন্দু বস্তির মানুষ। সেনাবাহিনীর আক্রমনে ওরা এখানে এসেছিল আশ্রয়ের জন্য।

এটা এমন একটা গনহত্যা যা অসাধারন নির্বিকারচিত্তে দৈনন্দিন কার্যাবলীর অংশ হিসেবে সম্পাদন করা হচ্ছে। এপ্রিলের ১৯ তারিখ সকালে কুমিল্লা শহরের মার্শাল ল এডমিনিস্টার মেজর আগার রুমের বসে তার একটা ছবি যেন আমি দেখতে পেলাম। পুলিশের এক বিহারী সাব ইন্সপেক্টর পুলিশ হেফাজতে থাকা বন্দীদের একটা তালিকা মেজরের কাছে নিয়ে আসে। আগা ওটা হাতে নিয়ে কোন রকম ভাবান্তর ছাড়াই অন্যান্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে তালিকার চারটি নামের পাশে টিক চিহ্ন বসিয়ে দেয়।
এই চারজনকে শেষ করার জন্য বিকেলে আমার কাছে নিয়ে আসবে - এই কথা বলতে বলতে সে আবার তালিকার দিকে তাকায়। তালিকার একটা নামের পাশে খোঁচা দিয়ে বলে, ওদের সাথে এই চোরটাকেও নিয়ে আসবে।

ডাবের পানি খাবার ভেতরেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। আমি জানলাম এর ভেতর দু’জন হিন্দু। একজন ছাত্র আর চতুর্থ জন আওয়ামী লীগ সংগঠক। আর চোর- যার নাম সেবাষ্টিয়ান তার অপরাধ ছিল সে এক হিন্দু বন্ধুর মালামাল নিজের বাড়িতে সরিয়ে নিচ্ছিল।

সেদিন বিকেলে আমি ওদের দেখতে পাই। সার্কিট হাউজ এর সংযোগ সড়কের রাস্তায় একটা দঁড়ি দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওরা রাস্তায় পরে আছে। কারফিউ শেষ হবার কিছু পর , সন্ধ্যে ৬ টার দিকে খেয়াল করলাম ময়না পাখির একটা দল হাড়-মাংস এক করার শব্দে একটু পর পর লাফিয়ে উঠছে।

বেলুচ রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আজমত সর্ম্পকে জানতে পারলাম মেসের আড্ডায়। সে দুটো কারনে বিখ্যাত। প্রথমত সে ৯ম ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল শওকত রাজার এডিসি। দ্বিতীয়ত সে সহকর্মীদের ক্রমাগত হাসি-ঠাট্টার উৎস। জানা গেল, আজমত এখানকার একমাত্র অফিসার যে এখন পর্যন্ত কোন হত্যায় অংশ নেয় নাই। মেজর বশির অমানবিকভাবে ক্রমাগত তাকে খুঁচিয়ে চলত।

এক রাতে মেজর বশির তাকে বলে, আগামীকাল আমরা তোমার ভেতরের পুরুষটাকে বের করে আনব আজমত। কাল আমরা দেখব কিভাবে তুমি ওদের দৌড়াতে পার। খুব সহজ একটা কাজ।

ব্যাপারটার গূরুত্ব বোঝাবার জন্য বশির তার স্বভাবসুলভ লম্বা যুক্তিগুলো তুলে ধরল। এসএসও ছাড়াও বশির ছিলেন এ হেডকোর্য়াটারের শিক্ষা কর্মকর্তা। সে ছিল আমার দেখা একমাত্র পাঞ্জাবী অফিসার যে অনর্গল বাংলা বলতে পারত। বশির ছিলেন সেইসব মানুষদের একজন যারা কেবল উচ্চস্বরের শক্তিতে নিজেদের যুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইত।

আমাদের বলা হল সকালে একজন দাঁড়িওয়ালা মানুষ তার ভাই সম্পর্কে জানার জন্য বশিরের সাথে দেখা করতে আসে । তার ভাই ছিল কুমিল্লা শহরে আওয়ামী লীগের একজন বিখ্যাত সংগঠক যাকে কিছুদিন আগে ধরে আনা হয়েছে। বশির তাকে বলে, দৌড়ে সে পালিয়ে গেছে। বৃদ্ধ মানুষটির মত আমিও বুঝতে পারি না ভেঙ্গে থাকা পা নিয়ে কিভাবে তার ভাই পালিয়ে যেতে পারে। মেজর বশিরের হাসিমুখের সাথে চোখ টেপ্পনী দেখে ব্যাপারটা বুঝে নিলাম।

রেকর্ড ঘাটলে দেখা যাবে ওখানে লেখা, দৌড়ে পালাবার সময় গুলিতে নিহত।

আমি কখনই জানতে পারি নাই ক্যাপ্টেন আজমত হত্যাটা করেছিল কিনা। বিদ্রোহী বাঙ্গালী সৈন্যরা চট্টগ্রামের সত্তুর মাইল উত্তরের ফেনীতে অবস্থান নিয়ে ব্রীজ, কালভার্ট ধ্বংস করে চট্টগ্রাম-কুমিল্লা মহাসড়ক অচল করে ৯ম ডিভিশনকে এক জায়গায় আটকে রেখেছে। ঢাকার ইস্টার্ন কমান্ড থেকে দক্ষিন-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে বিদ্রোহীদের পালিয়ে যাওয়াটা বন্ধ করার জন্য জেনারেল রাজা ক্রমাগত চাপের ভেতর ছিলেন । তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া সামগ্রী আনার জন্য এই রাস্তাটা চালু করাও অত্যন্ত জরুরী।

তাই জেনারেল রাজাকে সব সময়ই চলাচলের উপর থাকতে হত। তিনি প্রায় প্রতিদিনই কমান্ড এরিয়াতে বিচরন করতেন। ফেনীর কাছে মোতায়েনকৃত ব্রিগেডকেও অনবরত নির্দেশনা দিতেন তিনি। ক্যাপ্টেন আজমতও ছায়ার মত জেনারেলের সাথে থাকতেন। তার সাথে আমার আর দেখা হয় নাই। তবে অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করি আজমত হত্যাটা সম্পন্ন করে না থাকলে তাকে আবারও তামাশার মুখোমুখি হতে হবে। মে মাসের ৮ তারিখ নবম ডিভিশন বাঙ্গালী বিদ্রোহীদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়। ক্রমাগত বোম্বিং আর আর্টিলারীর শেলের ভেতর দিয়ে বিদ্রোহীরা তাদের অস্ত্র সহ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়।

নিয়মিত বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সশস্ত্র ও প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত বাঙ্গালী সৈন্যদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা লেফটেনেন্ট কর্নেল আসলাম বেগকে ভাবিয়ে তুলেছে। নবম ডিভিশনের জি-১ হলেন এই বেগ। সে আমাকে জানায়, ভারতীয়রা বিদ্রোহীদের নিজেদের মাটিতে আস্তানা করতে দেবে না। এটা তাদের জন্য বিপদজনক। ওরা তাদেরকে ততক্ষনই সহায়তা করবে যতক্ষন ওরা সীমান্ত পেরিয়ে হামলা করতে সক্ষম থাকবে। আমরা ওদেরকে দ্রুত হত্যা করতে না পারলে তারা আমাদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।

লেঃ কর্নেল বেগ ছিলেন গোলন্দাজ বাহিনীর অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন অফিসার যিনি চীনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সরঞ্জামাদি চীনা সামগ্রী দ্বারা প্রতিস্থানে গূরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। বলা হয়ে থাকে তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন সংসারী মানুষ। চাটুকারদের তিনি পছন্দ করতেন। একবার তিনি খুব গর্বের সাথে কুমিল্লা হের্ডকোয়াটারের পুকুরের বড় বড় লাল পদ্মগুলো দেখিয়ে বলেন ওগুলো তিনি চীন থেকে এনেছেন। মেজর বশির এ মানুষটির ভক্ত। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনে বিভিন্ন অফিসারদের সক্ষমতা সর্ম্পকে বলতে গিয়ে বশির আমাকে জানায় একদিন তারা এক বিদ্রোহী অফিসারকে আটক করে। সবাই যখন ওকে নিয়ে কি করা হবে তার জন্য এখানে সেখানে ফোন করছে তখন উনি সমস্যার সমাধান করে দিলেন। দৌড়ে পালিয়েছে। গর্তের বাইরে কেবল মানুষটার পা খুঁজে পাওয়া গেল।

এপ্রিলের শেষ দিকের কুমিল্লার অপরূপ প্রাকৃতিক শোভার সাথে নিষ্ঠুরতা অকল্পনীয়। রাস্তার উভয় পাশের দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের গালিচা। আম ও নারকেল গাছ ফলে ফলে ভরে আছে। এমনকি রাস্তা দিয়ে অবিরাম লাফিয়ে লাফিয়ে চলা টেরিয়র সাইজের ছাগলগুলোও বাংলার অকৃপণ প্রাকৃতিক সম্পদের অস্তিত্ব জানান দেয়। ওরা বলে, একমাত্র পোয়াতী হলেই পুরুষ আর মহিলা ছাগলকে এখানে আলাদা করা যায়।

কুমিল্লা মত পৃথিবীর অন্যতম ঘন বসতিপূর্ন এলাকায়, যেখানে প্রতি বর্গমাইলে ১৯০০ জন বসবাস করে, সেখানের রাস্তায় একজন মানুষেরও দেখা পাওয়া যায় না।

বাঙ্গালীরা কোথায়? - এ প্রশ্নটা ক’দিন আগেই আমি ঢাকার নিরব রাস্তায় আমার সহযাত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তার কাছে একটাই মাত্র উত্তর ছিল। ওরা গ্রামে চলে গেছে। অথচ মফস্বলেও কোন বাঙ্গালী সহজে চোখে পড়ে না। ঢাকার মতই কুমিল্লা শহরের দোকানপাট সব বন্ধ। লাকসামের দিকে দশ মাইল এগিয়ে যাবার পরও গ্রামগুলো ছিল একেবারে নীরব আর রাস্তার দু’পাশের সব মানুষকে দু’হাতের আঙ্গুল দিয়ে গোনা যায়।

অবশ্য খাকী পোষাকের কঠিন মুখের শত শত সৈন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে
অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে। হুকুম আছে কখনও হাত থেকে রাইফেল নামানো যাবে না। বন্দুকের নলের সুখে বিভোর মানুষগুলো রাস্তায় অনবরত রাস্তায় টহল দিচ্ছে। যেখানে আর্মি আছে সেখানে বাঙ্গালীকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। রেডিও আর সংবাদপত্রে অনবরত ঘোষনা করা হচ্ছে নাশকতায় জড়িত থাকাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। যদি কোন সড়কে প্রতিবন্ধকতা পাওয়া যায় কিংবা কোন ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্থ হয় অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তবে ও জায়গার আশেপাশের দশ গজের ভেতরের সকল বাড়ীঘর নিশ্চিহ্ন করার পাশাপাশি অধিবাসীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যথাযথ ব্যবস্থা - শব্দটি কি ভয়াবহ হতে পারে তা বাঙ্গালীরা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে।

এপ্রিলের ১৭ তারিখ সকালে চাঁদপুরের নিকটবর্তী হাজীগঞ্জে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন প্রক্রিয়াটি প্রত্যক্ষ দেখার সুযোগ হয়। হাজীগঞ্জের মাইল খানেক আগে ১৫ ফুটের একটা ব্রীজ আগের রাতে বিদ্রোহীরা ক্ষতিগ্রস্থ করে রেখেছে। মেজর রাঠোর থেকে জানা গেল সাথে সাথেই সেনা সদস্যের একটা দলকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য পাঠানো হয়। ব্রীজের চারদিকের কোয়ার্টার মাইলের ভেতর কেবল ধোঁয়ার কুন্ডলী। ক্ষতিগ্রস্থ অংশের উপর কাঠের পাটাতন দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। সাবধানে কাঠের অংশ টুকু পাড়ি দেবার সময় আমরা দেখি ডান পাশের গ্রামের বাড়িগুলোতে আগুন জ্বলছে।

গ্রামের ভেতর জওয়ানরা আগুন দেবার জন্য শুকনো নারকেল পাতা ব্যবহার করে। এগুলোতে সহজেই আগুনে জ্বলে বলে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্রামে ঢোকার মুখেই দেখা গেল নারকেল গাছের আড়ালে একটা মানুষের মরদেহ দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে। রাস্তার অন্যপাশের জ্বলন্ত ধানক্ষেতগুলো যেন পুড়িয়ে দেয়া ঘরবাড়ির স্বাক্ষ্য বহন করে। সেনাবাহিনী আসার আগেই শত শত মানুষ পালিয়ে যায়। আর নারকেল গাছের আড়ালে পড়ে থাকা মানুষটির মতই অন্যরা পালাতে বড্ড দেরী করে ফেলেছিল।

যেতে যেতে মেজর রাঠোরের মত শুনতে পাই। ওরা নিজেরাই নিজেদের উপর এ বিপদ ডেকে এনেছে। আমি বললাম ক’জন বিদ্রোহীর জন্য অনেকগুলো নিরাপরাধ মানুষের উপর ভয়াবহ প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে। রাঠোর কোন উত্তর দেয় না।

ক’ঘন্টা পর চাঁদপুর থেকে ফেরার পথে আবার এ হাজীগঞ্জেই কিল এন্ড বার্ন মিশনগুলোর ব্যাপকতা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়।

সবে মাত্র দুপুরের কালবৈশাখী ঝড়টা শেষ হয়েছে। মসজিদের চূড়ার উপরের আকাশটা ভরে আছে কালো মেঘে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের পেছনে থাকা খোলা জীপের সফরকালীন সঙ্গী ক্যাপ্টেন আজহার এবং চার জোয়ানের ইউনিফর্ম ভিজতে শুরু করেছে।

মোড় ঘুরতেই দেখা গেল ট্রাকের বহর মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে। গুনে দেখলাম ট্রাকের সংখ্যা সাত। সবগুলোর ভেতরে যুদ্ধ সাজে সজ্জিত জোয়ানরা বসে আছে। ট্রাকের সারির সামনে দাঁড়িয়ে আছে জিপ। রাস্তার অপরপাশে একজন মানুষের তত্ত্বাবধানে দু’জন জোয়ান একশয়ের উপর বন্ধ থাকা দোকানের একটার দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। মেজর রাঠোর তার টয়োটা গাড়িটা থামাতে থামাতে দেখা গেল ভারী সেগুনের দরজাটা দুই কুড়ালের আঘাতের ধাক্কা সামলাতে না পেরে প্রায় ভেঙ্গে এসেছে।

এই তোমরা কি করছ?

লম্বা যে মানুষটি ওদের কাজের নির্দেশনা দিচ্ছিল সে আমাদের কথা শুনে চোখ কুঁচকে তাকায়। চীৎকার করে বলে, মোটু, তোর কি মনে হয় আমরা কি করছি?

কন্ঠ চিনতে পেরে রাঠোরের মুখটা হাসিতে ভরে যায়। আমাকে জানায় ওটা তার বন্ধু ইফতি- মেজর ইফতেখার, কর্মস্থল ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রাইফেলস। ওদের কথাবার্তাটা এমন-

রাঠোরঃ আমি ভেবেছিলাম কেউ লুট করছে।

ইফতেখারঃ লুট? না। মিশন। কিল এন্ড বার্ন।

ইশারা দিয়ে কি কি জ্বালাবে তা দেখাল ইফতেখার।

রাঠোরঃ কতজনকে পেয়েছিস?

ইফতেখার অর্থপূর্ন হাসি হাসে।

রাঠোরঃ বল না! কয়জন?

ইফতেখারঃ মাত্র বারোটা। অবশ্য আমার ভাগ্যটা ভাল। পেছনদিক থেকে
লোক না পাঠালে এগুলোও পেতাম না।

মেজর রাঠোরের চাপাচাপির ফলে ইফতেখার এবার বিস্তারিত বলতে শুরু করল কিভাবে অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওরা শহরের কোনার এক বাড়িতে ১২ জন হিন্দুকে খুঁজে পেল। ওদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখন সে তার মিশনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করেছে। আগুন দেবার পর্যায়।

এর ভেতরেই দোকানের দরজাটা খুলে ফেলা হয়েছে। আমরা ভেতরে তাকালে দেখতে পাই এ অঞ্চলের অন্যান্য দোকানগুলোর মতই সবগুলো জিনিষ একসাথে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা মেডিকেল এন্ড ষ্টোরস। সাইনবোর্ডের বাঙ্গালী লেখার নিচে ইংরেজীতে লেখা- অশোক মেডিকেল এন্ড ষ্টোরস। তার নিচে লেখা প্রোপাইটার এ এম বোস। বোসবাবু হাজীগঞ্জের অন্যান্য মানুষের মত দোকানে তালা মেরে পালিয়ে গেছেন।

দোকানের সামনের কেবিনেটে রাখা আছে ওষুধ, সিরাপ, রঙ্গিন কাপড়, শরবতের বোতল, ইলাস্টিকের প্যাকেট আর ইমিটেশনের গহনা। ইফতেখার লাথি মেরে কেবিনেটের একটা অংশ ভেঙ্গে ফেলে। ভেতরের একটা দেরাজ থেকে কিছু চটের বস্তা নামায় সে। কিছু খেলনা নামিয়ে আনে। রুমাল আর লাল কাপড়ের বান্ডেল এক সাথে স্তুপ করা হয়। আমাদের গাড়িতে বসা এক জওয়ানের কাছ থেকে একটা শুকনো দেয়াশলাই চেয়ে নেয় ইফতেখার। ওদিকে জোয়ানের মাথায় নতুন চিন্তা খেলে যায়। গাড়ি থেকে দৌড়ে নেমে দোকানের ভেতর থেকে ঝুলতে থাকা ছাতাগুলো নামাতে শুরু করে সে। ইফতেখার বেরিয়ে যাবার হুকুম দেয়। লুট করার হুকুম নাই।

ভাল করে আগুনটা ধরার পর ইফতেখার জ্বলন্ত চটের বস্তা একদিকে ছুঁড়ে মারে। অন্যদিকে ছুঁড়ে দেয় কাপড়ের স্তুপ। দোকানটায় আগুন ধরে যায়। মিনিটখানেকের ভেতরই বামপাশের বদ্ধ দোকানের ভেতর থেকে আগুন জ্বলার শব্দ শোনা যায়। তারপর তার পরেরটা।

এদিকে অন্ধকার হয়ে আসায় রাঠোর আমাদের তাড়া দিয়ে গাড়িতে তুলে চলে আসে।

পরদিন যখন ইফতেখারের সাথে দেখা হয় সে তখন আক্ষেপের সুরে বলে, মাত্র ছয়টা দোকান পোড়াতে পেরেছি। যদি বৃষ্টি না আসত তবে সবগুলোকেই পোড়ানো যেত।

মুদাফরগঞ্জের কাছে এক গ্রামের কাছে আমাদের আচমকা থামতে হয়। মনে হচ্ছিল কে যেন মাটির দেয়ালের ওপাশে লুকিয়ে আছে। জোয়ানদের মতে ওটা বিদ্রোহী ফৌজিদের কেউ হতে পারে। কিন্তু সতর্কতার সাথে নজর বুলিয়ে জানা গেল লুকিয়ে থাকা মানুষটি আসলে এক সুন্দরী হিন্দু তরুনী। ঈশ্বরই জানে ওখানে সে কার জন্য অপেক্ষা করছে। জোয়ানদের একজন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এ দশ বছর চাকুরি করার সুবাধে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা জানত। তাকে বলা হল ওকে গ্রামে ফেরৎ যাবার জন্য। মেয়েটি হুকুমের উত্তরে কিছু বলে কিন্তু জায়গা পাল্টায় না। দ্বিতীয়বার তাকে হুকুম দিয়ে চলে আসার সময়ও দেখা যায় মেয়েটি ওখানেই বসে আছে। আমাকে জানানো হল মেয়েটির কোথা যাবার জায়গা নাই। না পারিবার, না বাড়ি।

কিল এন্ড বার্ন মিশনগুলোতে যে কজন অফিসারকে সংযুক্ত করা হয়েছিল , মেজর ইফতেখার ছিলেন তাদের একজন। সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের সরিয়ে দেবার পর তারা যায় চিরুনী অভিযান চালাতে ও জায়গায় থাকা হিন্দু ও বিচ্ছিন্নতাবদীরে ধ্বংস করার জন্য এবং যে জায়গাগুলো থেকে সেনাবাহিনীর দিকে গুলি ছোঁড়া হয়েছে তা পুড়িয়ে দিতে।

পাঞ্জাবী এ অফিসারটি তার কাজ সম্পর্কে বড়াই করতে ভালবাসত। অন্য এক সময়ে ইফতেখারের সাথে সার্কিট হাউজে যাবার সে আমাকে তার শেষ অভিযান সম্পর্কে বলতে থাকে। আমরা এক বুড়োকে ধরেছিলাম। বেজন্মাটার মুখ ভর্তি দাঁড়ি। নিজেকে দাবী করছিল সে নাকি ধার্মিক মুসলমান। নাম নাকি আবদুল মান্নান। আমরা মেডিকেল পরীক্ষা করতেই ওর খেলাটা ধরা পড়ে গেল।

ইফতেখার বলে চলে। আমি ওখানে তখনই তাকে শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার লোকরা বলল বেজন্মটাকে মারতে তিনটে বুলেট খরচ না হলে নাকি পোষাবে না। তাই প্রথম গুলিটা করলাম অন্ডকোষে, দ্বিতীয় গুলিটা দিলাম পেটের ভেতর। তারপর মাথায় গুলি করে শেষ করলাম ওকে।

যখন আমি ইফতেখারকে ছেড়ে আসি তখন সে ব্রাক্ষনবাড়িয়ার পথে রওয়ানা হয়ে গিয়েছে। তার মিশনঃ আরেকটি কিল এন্ড বার্ন।

আংতকিত বাঙ্গালীদের সামনে দুটো পথ ছিল। যাদের পালানোর ক্ষমতা ছিল তারা এক কথায় যেন উধাও হয়ে যেত। সেনাবাহিনী দেখলেই পুরো শহরটা জনশূন্য হয়ে পড়ত। যারা পালাতে পারত না তারা কাকুতি-মিনতি করে বেঁচে থাকার বিনিময়ে পেত কেবল আতংক। চাঁদপুর ছিল প্রথম পথের উদাহরন।

অনেক আগে থেকেই মেঘনার বুকের প্রধান এ নদী বন্দরটা ছিল জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র। নদীর বুকে রাতের বেলা হাজারো ছোট ছোট নৌকার হারিকেনের আলো এ জায়গাকে পরিনত করত স্বপ্ন রাজ্যে। এপ্রিলের ১৮ তারিখ চাঁদপুর মরুভূমির মত খাঁ-খাঁ করছে। মানুষ বা নৌকা কোনটাই নাই। সব মিলিয়ে হয়ত এক শতাংশ মানুষ ছিল সেদিন। বাকীরা, যার ভেতর অর্ধেকই হিন্দু, পালিয়ে গিয়েছে।

পালিয়ে যাবার সময় তারা বেখাপ্পাভাবে বাড়ি-ঘর, দোকানপাটে পাকিস্তানের পতাকা লাগিয়ে রেখে গেছে। দেখে মনে হয় জনহীন অবস্থায় জাতীয় দিবস পালন করা হচ্ছে। এই ব্যাপারটা ভয়াবহতার মাত্রাটা যেন আরও পরিষ্কার করে দেয়।

পতাকাগুলো অবশ্য কেবল জীবন বাঁচানোর জন্য লাগানো হয়েছিল। কিভাবে জানি একটা কথা প্রচার পেয়েছিল যে যেসব বাড়ি ঘরে পাকিস্তানের পতাকা থাকবে না তাদের সেনাবাহিনী শত্রু মনে করবে এবং ধ্বংস করবে। পতাকার মাপ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় নাই। কেবল চাঁদ আর তারা থাকলেই হল। বিভিন্ন আকারের আর রংয়ের পতাকা আমরা দেখতে পাই। এটা পরিষ্কার বুঝা যায় এ পতাকাগুলোর বেশীরভাগই বানানো হয়েছে বাংলাদেশের পতাকা কেটে-ছিঁড়ে। তাই পাকিস্তানের পতাকার পরিচিত রং এর বদলে এ পাকিস্তানী পতাকাগুলোর রং অন্যরকম।
চাঁদপুরের এ দৃশ্যের সাথে হাজীগঞ্জ, মুদাফরগঞ্জ , কসবা, ব্রাক্ষনবাড়িয়ার মত সকল ভূতুড়ে শহরের দৃশ্য এক রকম।

লাকসামে পাওয়া গেল অন্যচিত্র। আনুগত্য স্বীকার করানোর চিত্র।

বিদ্রোহীদের সরিয়ে দেবার পর সকালে যখন আমাকে ওখানে নিয়ে যাওয়া হয় তখন চোখে কেবল দুটো জিনিষ পড়ে। সেনাবাহিনী এবং সত্যিকার অর্থেই হাজার হাজার পাকিস্তানী পতাকা। ও জায়গার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ক্যাম্প করেছিলেন থানাতে। মেজর রাঠোর আমাদের সেখানে নিয়ে যায়। পাকিস্তান টিভির আমার এক সহকর্মীকে একটা প্রপাগোন্ডামূলক তথ্যচিত্র বানাতে হবে। লাকসামের জীবনযাত্রা কিভাবে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে তার তথ্যচিত্র। এতে থাকবে সেনাদের স্বাগত জানাবার দৃশ্য, প্যারেড আর শান্তি সমাবেশ।

জনহীন শহরে কিভাবে এটা করা সম্ভব তা আমার মাথায় না আসলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর আমাদের জানায় তার প্রস্তুতির জন্য মিনিট বিশেক সময় লাগবে। এখনও হাজারো বেজান্মা বেঁচে আছে যাদের দিয়ে শুটিং করানো যাবে।

৩৯ বেলুচের ল্যাফটেনেন্ট জাভেদকে মানুষ জোগাড় করার দায়িত্ব দেয়া হল। সে একজন দাঁড়িওয়ালা বয়স্ক মানুষকে ডেকে পাঠায় যাকে আসলে প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য আনা হয়েছিল। মানুষটি পরে আমাকে জানায় তার নাম মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ সাঈদুল হক এবং সে একজন মুসলিম লীগার, আওয়ামী লীগার নয়। (মুসলিম ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান তৈরীরর আন্দোলন করেছিল)। সে আমাদের সন্তুষ্ট করার জন্য বড্ড ব্যস্ত ছিল। জাভদকে সে জানয়, অবশ্যই আমি আপনার জন্য ২০ মিনিটের ভেতর ৬০ জন মানুষ নিয়ে আসতে পারব। কিন্তু আমাকে দুই ঘন্টা সময় দিলে আমি নিয়ে আসতে পারব ২০০জন।

মাওলানা সৈয়দ সাঈদুল হকের কথা ও কাজে মিল পাওয়া গেল। মেজরের অ্যাপায়ন করা ডাবের পানি শেষ করার আগেই আমরা ওদের স্লোগানের শব্দ শুনতে পেলাম। পাকিস্তান জিন্দাবাদ। পাকিস্তান আর্মি জিন্দাবাদ। মুসলিম লীগ জিন্দাবাদ। (জিন্দাবাদ উর্দু শব্দ যার অর্থ চিরজীবি হোক)। কয়েক মূহুর্ত পর হাতের পাকিস্তানী পতাকাটা নাড়তে নাড়তে সবটুকু শক্তি দিয়ে স্লোগান দেওয়া হাঁটু সমান উচ্চতার বাচ্চা, বুড়ো আর পক্ষগাতগ্রস্থ মানুষদের দলটাকে দেখতে পেলাম। লেফট্যানেন্ট জাভেদ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×