somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ - জেনোসাইড (Genocide - Anthony Mascarenhas) -৩ য় পর্ব

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিনিটখানেকের ভেতরেই মিছিলটা পাবলিক মিটিং এ বসে পড়ে। মাইক জোগাড় করে আনা হয়। বক্তাদের চিহ্নিত করাও শেষ।

সেনাবাহিনীকে স্বাগত জানাতে প্রথমে এগিয়ে এলেন মাহবুব উর রহমান। তার পরিচয় পর্ব এ জানা গেল তিনি এন এফ কলেজের ইংরেজী ও আরবীর প্রফেসর। মাঝে মাঝে ইতিহাস পড়াবার চেষ্টা করেন এবং আজীবনই তিনি মহান মুসলিম লীগ পার্টির একজন নিষ্ঠাবান সদস্য।

ভূমিকা শেষ হল। মাহবুব উর রহমান উপভোগ্য বক্তব্য শুরু করলেন।

পাঞ্জাবী এবং বাঙ্গালীরা পাকিস্তানের জন্য অতীতে এক হয়েছে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতি আছে। কিন্তু আজ আমরা শিকার হয়েছি হিন্দু ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসের। খোদার কাছে লাখ শুকরিয়া পাঞ্জাবী সৈন্যরা আমাদের বাঁচাতে এসেছে। এনারা হলেন পৃথিবীর সেরা সৈনিক এবং মানবতার মহানায়ক। আমরা তাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালবাসি ও সম্মান জানাই।

এভাবে একই সুরে, একই রকমভাবে বাকী কথা বলে গেলেন তিনি।।
মিটিং শেষ হবার পর মেজরকে জিজ্ঞেস করা হল বক্তব্য ঠিক আছে কিনা। মেজর বললেন, কাজ চলবে। তবে আমি বেজন্মাটাকে বিশ্বাস করি না। আমার লিস্টের ভেতর ওর নামটাও টুকে রাখতে হবে।

পূর্ব বাংলার দুদর্শা শেষ হবার নয়। কিংবা সত্যিকার দুদর্শা হয়ত এখনও শুরুই হয়নি। সেনাবাহিনী প্রদেশটাকে নিজের মত করে পরিচ্ছন্ন করতে বদ্ধ পরিকর। সবেমাত্র ওদের অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯ম ও ১৬ তম ডিভিশনকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাঙ্গালী বিদ্রোহী ও হিন্দুদের খুঁজে বের করার জন্য উড়িয়ে আনা হয়েছে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় এটা অত্যন্ত বড়মাপের পদক্ষেপ। ২৫,০০০ হাজারের বেশী সৈন্য পশ্চিম থেকে পূর্বে এসেছে। মার্চের ২৮ তারিখ ৪৮ ঘন্টার নোটিশে ডিভিশন দুটোকে আনার কাজ আরম্ভ হয়। প্রথমে খারিয়ান ও মুলতান থেকে তাদের ট্রেনে আনা হয় করাচীতে। পরবর্তীতে যুদ্ধাস্ত্র এবং হালকা বিছানাসহ সৈন্যদের ঢাকায় আনার কাজটা হাতে নেয় পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা - পিআইএ (বাকী জিনিষপত্র আনার কাজে ব্যবহার হয় সমুদ্রপথ)। পিআইএ এর সাতটি বোয়িং বিমানকে আন্তজার্তিক ও দেশীয় রুট থেকে প্রত্যাহার করে টানা ১৪ দিন সিলন হয়ে এ রুটে চলাচল করানো হয়েছে। সেই সাথে ছিল বিমান বাহিনীর কিছু এয়ার ট্রান্সপোর্টার।

সৈন্যরা পৌঁছা পরপরই ইষ্টার্ন কমান্ডের ১৪ ডিভিশনের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে অভিযানে নেমে পড়ে। বিদ্রোহীদের যাতায়াত ও সাপ্লাই নিয়ন্ত্রনের জন্য কুমিল্লায় ঘাঁটি করা ৯ম ডিভিশনকে পূর্ব সীমান্ত বন্ধ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। আর যশোরে ঘাঁটি করা ১৬ ডিভিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয় প্রদেশের পশ্চিম সীমান্ত বন্ধ করার। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব প্রায় গুছিয়ে ফেলে। বিদ্রোহীদের যে অংশ সীমান্ত বন্ধ হবার আগে পালাতে পারে নাই তারা আক্ষরিক অর্থে এক খাঁচায় আটকা পড়ে। দুটো ডিভিশনই অনবরত চালাতে থাকে চিরুনী অভিযান। সীমান্ত বন্ধ থাকায়, যে নৃশংসতা সীমান্ত এলাকায় দেখানো গেছে তা এখন দেশের মধ্যবর্তী এলাকায় শুরু করা যাবে। এটা হবে আরও বেদনাদায়ক। মানুষ্য এ নিশানাগুলোর এখন আর পালিয়ে যাবার কোন পথ থাকছে না।

এপ্রিলের ২০ তারিখ পর্যন্ত পুষ্প প্রেমিক ৯ম ডিভিশনের জি-১ লেফটেন্যান্ট কর্নেল বেগের ধারনা ছিল মধ্য জুন পর্যন্ত দুই মাসের চিরুনী অভিযানই চালানোই যথেষ্ট। কিন্তু ধারনাটা মাঠে মারা গেল। বিদ্রোহী সেনারা গেরিলা পদ্ধতি বেছে নেওয়ায় সেনাবাহিনীর কার্য সমাধান সহজ ছিল না । নিঃসঙ্গ সমন্বয়হীন বিদ্রোহীরা রাস্তা, রেললাইন ধ্বংস করায় সেনাবাহিনীর চলাচলের ক্ষমতা এখন শূন্য। নিজেদের রুটিন থেকে নবম ডিভিশন বেশ পিছিয়ে আছে। আর এখন তিন মাসের বর্ষা মৌসুমের কারনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে।

বর্ষা মৌসুমের ব্যবহার জন্য পাকিস্তান সরকার মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ অল্পপানিতে চলাচল উপযোগী নয়টি গানবোট চীন থেকে আমদানী করে। আরও আসছে। ৮০ টন ওজনের এ গানবোটগুলোর অধিক বিধ্বংসী ক্ষমতার কারনে বিমান ও গোলন্দাজ বাহিনীর কিছু দায়িত্ব এদের উপর ছেড়ে দেয়া হয়। বৃষ্টির কারনে বাহিনী দুটোর কার্যকারিতা অনেকখানি হ্রাস পেয়েছিল। গানবোটগুলোর পাশপাশি নেয়া হয়েছে শত শত দেশী নৌকা যেগুলো আলাদা মোটর বসিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। জলপথে বিদ্রোহী দমনের জন্য সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি কম ছিল না।

সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় দুর্ভিক্ষের আশংকা করা হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের ২৩ টি জেলার ভেতর ১৭ টি জেলায় খাদ্যে সংকট থাকে এবং এ জেলাগুলোর জন্য প্রচুর চাল ও গম আমদানী করতে হয়। এবার গৃহযুদ্ধের কারনে তা করা যাচ্ছে না। হাজার হাজার ছোট-খাট ব্রিজ ও কালভার্ট ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ৬ টি প্রধান সেতু ক্ষতিগ্রস্থ থাকায় সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। রেলওয়ের অবস্থা একই রকম যদিও সরকার বলে চলেছে ’ অবস্থা প্রায় স্বাভাবিক ’।

বিদ্রোহীরা ফেনী দখল করে রাখায় মে মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রামের সাথে দেশের উত্তর অংশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ ছিল সম্পূর্ন বন্ধ। খাদ্যশস্য এ সময়ে আনা-নেওয়া করা যায় নাই। স্বাভাবিক সময়ে কেবলমাত্র ১৫ শতাংশ খাদ্যপন্য নদীপথে চট্টগ্রাম থেকে পরিবহন করা হয়। বাকী ৮৫ ভাগের সরবরাহ নির্ভর করে সড়ক ও রেলপথের উপর। নদী পথের সক্ষমতাকে যদি ১০০ ভাগও বৃদ্ধি করা হয় তবুও ৭০ শতাংশ খাবারের মজুদ চট্টগ্রামে থেকে যাবে।

এর সাথে দুটো ব্যাপার খেয়াল করা যায়। যেসব মানুষ ইতিমধ্যেই দুভির্ক্ষের বিষয়টা আঁচ করতে পেরেছে তারা খাদ্যশস্য মজুদ শুরু করেছে। এটা খাদ্য পন্যের সঠিক মূল্য ও সরবরাহকে অসম্ভব করে তুলতে পারে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান সরকার কোন রকম দুর্ভিক্ষের আশংকা স্বীকার করছে না। এপ্রিলের ১৮ তারিখ পূর্ব বাংলার সামরিক গর্ভনর এক বেতার ভাষনে খাদ্যপন্যের সরবরাহ নিয়ে তার দুঃশ্চিন্তার কথা জানান। তখন থেকে সরকারী দপ্তরগুলো খাদ্যপন্যের অপ্রতুলতার কথা চাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর একটা বড় কারন এর আগের সাইক্লোনের মতই দুর্ভিক্ষ শুরু হলে বিদেশী সাহায্য আসতে শুরু করবে এবং সে সাহায্যগুলোর বিলি বন্টন দেখার জন্য বিদেশীরাও আসতে চাইবে। এমনটা হলে বিশ্বের কাছে সেনাবাহিনীর চলমান কার্যক্রম লুকানো অসম্ভব। কাজেই সেনাবাহিনীর পরিচ্ছনতা অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষুধার্ত মানুষদের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোন পথ নাই।

কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান জনাব কুরানীর সাথে তার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে এ সমস্যাটা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তিনি বেশ অসহিষ্ণুভাবে বলেন, ওরা তো নিজেরাই নাশকতা করে দুর্ভিক্ষ ঢেকে এনেছে। ওদের মরতে দাও। বাঙ্গালীদের হুশ হয়ত এভাবেই ফিরবে।

সামরিক সরকারের পূর্ব বাংলা সম্পর্ক এ বির্তকিত এবং অসমাঞ্জস্যপূর্ন নীতিগুলো দেখে এটা অনুমান করা যায় শাসকরা হয়ত করনীয় সম্পর্কে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারছে না। প্রথম পর্যায়ের শক্তি প্রয়োগের ভুল দমন নীতি আঁকড়ে থাকায় সরকার ধীরে ধীরে চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে।
দূর থেকে দেখে সরকারের কাজে যুক্তি খুঁজে পান অনেকে।

সন্ত্রাসকে চলতে দেয়া যায় না। পূর্ব বাংলার দমননীতিটা নিশ্চয়ই অতি উৎসাহের সাথে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে প্রতিদিনই সরকারের জন্য হাজারো নতুন শত্রুর সৃষ্টি হচ্ছে যা থেকে পাকিস্তানের দু-অংশের ভাঙ্গন আরও তীব্র হচ্ছে।

তবে কোন সরকারের পক্ষেই এটা অনুমান করা দূরুহ না যে এমন নীতি ব্যর্থ হতে বাধ্য ( পূর্ব বাংলার সাথে পশ্চিম পাকিস্তানীদের জনসংখ্যা অনুপাতটা এমন যে কিছুতেই তারা বাঙ্গালীদের অনন্তকাল দমিয়ে রাখতে পারবে না )। আমেরিকার মত উন্নয়ন সহযোগীদের চাপ এবং প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক রূঢ় বাস্তবায়তায় যত দ্রুত সম্ভব একটা রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানো জরুরী। মে মাসের ২৫ তারিখের প্রেস কনফারেন্স এ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বক্তব্য শুনে এটা অনুমান করাই যায় তিনি এসব চাপ সর্ম্পকে সচেতন। ওদিনের বক্তব্য মোতাবেক জুনের মাঝামাঝি প্রতিনিধিত্ব মূলক সরকারের রূপরেখা তিনি প্রদান করবেন।

সবকিছু দেখে মনে হয় দেশের ২৪ বছরের সবচেয়ে গূরুতর সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সামরিক সরকার একটা প্যারাডক্সের ভিতর আটকে থাকায় ঠিক পথটা খুঁজে পাচ্ছে না।

অধিকাংশের মতামতটা এমনই। এগুলোতে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু সত্যটা কি পাওয়া যায়?

আমার ব্যক্তিগত মত হল , না। এটা আমার দুভার্গ্যজনক সৌভাগ্য যে আমি প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানের নেতৃত্বের পশ্চিম ও পূর্ব অংশে কথা ও কাজের তফাৎটুকুর স্বাক্ষী।

আমি মনে করি পূর্ব বাংলায় গৃহীত নীতি সম্পর্কে সরকারের ভেতর কোন টানা পোড়ন নাই। পূর্ব বাংলাকে উপনিবেশ বানানো হবে। এটা কোন আমার স্বেচ্ছাচারী মতবাদ নয়। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তই এ মতামতের ভিত্তি।

এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর একমাত্র লক্ষ্য পূর্ব বাংলার বিচ্ছিন্ন হবার যে কোন চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। মার্চের ২৫ তারিখ হতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে সরকার যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সবকিছু থেকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে চলমান এই হত্যাযজ্ঞকে। সামরিক নেতৃত্ব যেমন ঠান্ডা মাথায় এ সিদ্ধান্ত প্রনয়ন করেছে, তেমনি ঠান্ডা মস্তিষ্কে তা বাস্তবায়নও করছে।

কোন গ্রহনযোগ্য ও অর্থপূর্ন রাজনৈতিক সমাধান এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালীন সময়ে পাওয়া অসম্ভব।

সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ন প্রশ্নটা হল, হত্যা কি বন্ধ করা হবে?

এপ্রিলের ১৬ তারিখে ৯ম ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল শওকত রাজার সাথে কুমিল্লায় যখন আমার প্রথম দেখা হয় তখন এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর উত্তর পাওয়া যায়।

তিনি আমাকে বললেন, আপনি নিশ্চিত থাকুন আমরা বিনাকারনে এমন কঠোর এবং ব্যয়বহুল ( মানুষ ও অর্থ উভয় হিসেবেই) অভিযান হাতে নেইনি। আমরা একটা দায়িত্ব পালন করছি। আমরা এটা শেষ না করে, অর্ধ-সমাপ্ত অবস্থায় তালগোল পাকাবার জন্য রাজনীতিবিদদের হাতে তুলে দেব না। প্রতি তিন বা চার বছর পর পর সেনাবাহিনী এভাবে বারবার দৃশ্যপটে আসতে পারবে না। তার অনেক গূরুত্বপূর্ন কাজ রয়েছে। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করে বলতে পারি যা আমরা শুরু করেছি তা শেষ হবার পর আর কখনও এমন অপারেশন করার প্রয়োজন হবে না।

সরেজমিনে যে তিনটে ডিভিশন নিয়োজিত আছে তার একটির প্রধান হচ্ছেন এই মেজর জেনারেল শওকত রাজা । তিনি একজন গূরুত্বপূর্ন পদমর্যাদার ব্যক্তি। তিনি নিশ্চয়ই নিজের কল্পনা প্রসূত বক্তব্য রাখবেন না।

পূর্ব বাংলায় আমার ১০ দিনের অবস্থান সময়ে সেনা অফিসারদের বক্তব্যে জেনারেল রাজার কথাগুলোর প্রতিধ্বনিই যেন আমি শুনতে পাই।প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ভাল করেই জানেন বাস্তব ক্ষেত্রে যে মানুষরা সরাসরি সৈন্যদের পরিচালনা করছেন তাদের হাতেই পাকিস্তানের গন্তব্য রচিত হবে।

সেনাবাহিনীর কেবলমাত্র একমুখী চিন্তাটাই সেনা পরিকল্পনায় মস্ত বড় গলদ। যে কোন সূচকে এটা একটা অনেক বড় মাপের সিদ্ধান্ত। এটা এমন বিষয় না যে ভয়াবহ ফলাফল ছাড়াই এটাকে সুইচ টেপে শুরু বা বন্ধ করা যাবে।

এর মধ্যেই সেনাবাহিনীর ভেতরে হতাহতের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। ঢাকায় ব্যক্তি পর্যায়ের আলাপচারিতায় জানা যায় সেনা অফিসারের হতাহতের পাশাপাশি মানুষ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব ১৯৬৫ এর সেপ্টম্বর এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে ছাড়িয়ে গেছে। অতীতের মত সেনাবাহিনী এ হতাহতগুলোকে কাল্পনিক রাজনৈতিক বিবেচনার আড়ালে এবার ভুলে থাকতে চাইবে না।

সামরিকভাবে অভিযানের এ পর্যায়ে এটাকে থামিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। তা করা হলে বিদ্রোহীদের অবস্থানকে শক্তিশালী করার সুযোগ দেয়া হবে। দু’পক্ষের ভেতরই ঘৃণার তীব্রতা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখানে কোন সমঝোতা বা সন্ধি আশা করা যায় না। কেবল মাত্র সম্পূর্ন বিজয় অথবা সম্পূর্ন পরাজয়ই নিয়তি। সময়টা বিচ্ছিন্ন এবং অসংগঠিত বিদ্রোহীদের বিপক্ষে আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে। সংঘর্ষে অন্যকোন বৃহৎ শক্তি জড়িয়ে পড়লে এ ছবিটা পাল্টে যেতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে এটাই পরিষ্কার যে তারা লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে। তাই হতাহতর পরিমান নিয়ে তারা খুব একটা চিন্তিত না।

যে বিশাল ব্যয়ভার পূর্ব বাংলার এ অভিযানের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে এবং এখনও করে চলা হয়েছে, তা থেকেও সরকারের মনোভাব আন্দাজ করা যায়। সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্তাদের মতে অর্থনৈতিক ক্ষতিগুলো অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ। আকাশপথে ২৫,০০০ হাজার সৈন্য পরিবহন করা বিপদজনক ও ব্যয়বহুল। পশ্চিম পাকিস্তানে রিজার্ভ সৈন্যর ডিভিশন দুটো হল ৯ম ও ১৬ তম ডিভিশন। এখন রিজার্ভ সৈন্যের কমতিটুকু নতুন নিয়োগের মাধ্যমে পূরন করতে হচ্ছে যা ব্যয়বহুল।
চীনাদের সমরাস্ত্র সাহায্য এ ভাটা পড়েছে। কিছু কিছু লক্ষন দেখে মনে হয় চীনারা হয়ত পাকিস্তানের সামরিক সরকারের জন্য তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো নতুন করে বিবেচনা করছে। এ অবস্থায় পাকিস্তান সরকার তার নাজুক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে নগদ ১ মিলিয়ন ডলার গোলাবারুদ ক্রয়ের জন্য ইউরোপীয়ান অস্ত্র বিক্রেতাদের দিয়ে বসে আছে।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×