somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুন আজাদ বোঝার মতো বুদ্ধি সবার থাকেনা...

১৮ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের এক বন্ধু, যখনই সে শুনবে কোন বই বিখ্যাত হয়েছে বা কোন পুরুষ্কার পেয়েছে তখনই সে সেটার উপরে ঝাপিয়ে পড়বে। যেভাবেই হোক বইটা জোগাড় করে পড়ে ফেলবে এবং সেটা নিয়ে তার জ্ঞান গর্ভ বক্তিমা শুনিয়ে দিবে আড্ডায়। সিনেমার বিষয়েও একই কাহিনী। এই একটি বাতিক ছাড়া দুনিয়ার তাবৎ সব বিষয়ে সে ছিল অমায়িক। সে থাকলে আড্ডায় চায়ের বিল, কোকের টাকা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের কোন টেনশনই করতে হতো না। বিনিময়ে শুধু তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় আমাদের সায় দিয়ে যেতে হতো। বিষয়টা মাঝে মাঝে খুব বিরক্তিকর হলেও ভাল মানুষ সেই বন্ধুটিকে কষ্ট দিতে চাইতাম না। তাই বলে মাঝে মাঝে মজাও যে করতাম না, তা কিন্তু নয়।

Gladiator একসময়ের বেশ আলোচিত ইংরেজী সিনামা ছিলো। এই ছবির বিভিন্ন রিভিউ আর আলোচনা পড়ে পড়ে বন্ধুটি সিনামা দেখার আগেই বিশেষজ্ঞের মত যখন তার বিখ্যাত বক্তিমা দিতে শুরু করলো তখন আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম এইবার তাকে একটু সাইজ করতে হবে। সুতরাং শুরু হলো আমাদের দুই নাম্বারী। ওয়েব সাইট ঘেটে ঘেটে সব পেজ বের করে সেগুলো এডিট করে আমরা প্রিন্ট নিয়ে রেডী। কবে বন্ধুটি Gladiator দেখবে এবং তার বিখ্যাত আলোচনা শুরু করবে। যথারীতি একদিন সে ছবিটি দেখে চকচকে চোখে বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে চলে এলো আড্ডায়। আমরা আগেই প্রস্তুত ছিলাম.. শুরু হলো বিটলামী। সবাই খুব সিরিয়াস ভাব নিয়ে বিভিন্ন দেশের সিনামা বিষয়ক বিখ্যাত ওয়েব সাইটের পেজ পড়তছি.. আর হতাশাব্যাঞ্জক ভাব করছি Gladiator এর বিষয়ে। বন্ধুটিও আগ্রহী হলো বিষয় কি জানার জন্য। তাকে আমরা বুঝাতে সক্ষম হলাম যে বড় বড় চলচিত্র বিশেষজ্ঞরা এটি নিয়ে অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করলেও ছবি দেখার পর সবাই বেশ হতাশ হয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে রিভিউ প্রকাশের অভিযোগও নাকি তারা তুলেছেন। সর্বপরি Gladiator একটা ভূয়া ছবি। এসব শুনে বন্ধুটি আমাদের হাত থেকে প্রায় জোর করেই সকল প্রিন্ট আউট কেড়ে নিয়ে এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললো। আমরা তখন আরেক প্রস্থ চা'য়ের অর্ডার দিয়ে ছবি কেমন দেখেছে জানতে চাইলাম। বন্ধুটি খুব বিরক্ত নিয়ে Gladiator এর মত একটা ভূয়া ছবির সমালোচনা করতে শুরু করলো। এই দৃশ্যুটা ভাল লাগে নাই.. শেষের বিষয়টা ঠিক মিললো না.. মাঝখানে ঐ ডায়লাগটা কেমন বেখাপ্পা লেগেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা সব ভেতরে ভেতরে হেসে অস্থির... হাসি চাপতে না পেরে প্রসংগ বদলে হাসির গল্প শুরু করলাম এবং চেপে রাখা হাসি বের করে সেযাত্র রক্ষা।

এই বন্ধুটিকে নিয়ে করা আরো অনেক রকম মজার গল্প আছে.. পরে আরেকদিন শুনানো যাবে। তবে এরকম শুধু আমাদের সেই গ্রুপেই ছিলো না। অসংখ্য দেখেছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অন্তত এক ডজন বোদ্ধা(!) কে চিনি যারা কোনরকম জগাখিচুরী একটা ছবি বা বই হিট হলেও তার ভেতরে অনেক ভাল ভাল জিনিষ দেখতে পায় আবার ভাল কোন ছবি/বই কোন কারনে পাবলিক না খেলে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়। এদের আসলে নিজস্ব চিন্তা চেতনা বলে কোন বস্তু থাকে না। আট দশজনে কি বলে সেটাই তাদের মতামত। যেটা বললে সবাই পাত্তা দিবে সেটাই তারা তোতা পাখির মত আউড়ে যায়।


যাই হোক, মূল প্রসংঙ্গে ফিরে আসি। কথা হচ্ছিলো হুমায়ূন আযাদকে নিয়ে। হুমায়ুন আযাদের সম্পর্কে বুঝে হোক আর না বুঝে হোক একটা মন্তব্য বেশ শুনা যায়। তা হলো, "হুমায়ুন আজাদ বোঝার মতো বুদ্ধি সবার থাকেনা..."। মজার বিষয় হচ্ছে যারা এসব মন্তব্য করে থাকেন তাদের বেশীর ভাগেরই হুমায়ুন আযাদের বই পড়েও দেখেননি। এমনকি বই পড়া তাদের কাছে বিরক্তিকর একটি বিষয় ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আলোচনা করতে এসে তো একটা ভাব নিতে হবে। তাই অমুক বোদ্ধা বড় ভাই বলেছেন হুমায়ুন আযাদ বুঝার মত বুদ্ধি সবার থাকে না.. সুতরাং আমাকে বুদ্ধিমান হতে হবে। আমাকেও বলতে হবে হুমায়ূন আযাদ বুঝার বুদ্ধি তোমার নাই, আমার আছে। হুমায়ুন আযাদ এক্ষেত্রে কি বলেছেন সেটা যাচাইয়ের সময় কোথায়। তার সকল কথা অমৃত সমান। হোক সেটা জন্মদাত্রী "মা" কে অপমান করে কোন বাক্য বা সমগ্র নারী জাতীকে হেয় করে করা কোন বক্তব্য। তাই, 'শুধু মাত্র বুদ্ধিমানেরাই রাজার পোষাক দেখবে', এই মূলো ঝুলিয়ে ধুর্ত খলিফা হাতিয়ে নেয় স্বর্ণমূদ্রা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:২৩
২৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×