somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হস্তীভক্ষন ও বিদ্যুৎখাতের স্টিকী পোষ্টঃ ডিবাংক

২৬ শে এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
হস্তীভক্ষণ, গার্মেন্টস ও আমাদের বিদ্যুৎখাত শীর্ষক পোষ্টটি স্টিকী করা হইছে আজ ২ দিন হইলো। লেখাটিতে কন্সেপচুয়াল কিছু ভয়াবহ ভূল আছে।

লেখক যে সমাধানটা দিতে চাইছেন সেটা হইলো "ছোট ছোট শিল্পপার্ক করে পাওয়ার প্লান্ট করলে " বিদ্যুত সমস্যা সমাধান হবে। এইটাকে তিনি লেখার শুরুতেই অতিকায় হস্তী কাটাকুটি করে ভক্ষনের সাথে তুলনা করেছেন। কিন্তু টেকনিকালি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিদ্যুত প্লান্ট ইনফিসিবল। তবে আমার কাছে যেটা সবচেয়ে ভয়ংকর মনে হয়েছে সেটা লিখেছেন শেষ লাইনে "এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কেবল সরকারের পক্ষে এ খাতের চাহিদা পূরণ করা কখনই সম্ভব হবে না। " আমি মনে করি সরকারকেই পুরা দ্বায়িত্ত নিতে হবে, এবং সরকারের পক্ষেই এটা সম্ভব। আপনার দেশে কোন শিল্পপার্ক বা চিড়িয়াখানাতেই বিনিয়োগকারী আসবে না, যদি আপনি ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত না দেন। এখানে নিজে বানিয়ে বিদ্যুত ব্যবহারে উৎসাহিত করা একটা ভয়ংকর আত্মঘাতী প্রস্তাব।

এই খাতে বেসরকারীকরন করলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সাথে, সাধারন মানুষও কারেন্ট বিল দিতে গিয়ে ফতুর হবে।

বিদ্যুত বিষয়ে হাবযাব চিন্তার আগে জানতে হবে, বিদ্যুত কিভাবে তৈরী হয়, কি দিয়ে তৈরী হয়, সংকটের কারন কি?

সমস্যার কারন
১। গ্যাস সংকট
২। পাওয়ার প্লান্ট সংকট
৩। পুরাতন পাওয়ার প্লান্টের লাইফ টাইম শেষ কিন্তু রক্ষনাবেক্ষনের অভাব।
৪। ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে কারিগরি সমস্যা হেতু লাইন লস।

গ্যাস সংকট বিষয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছে বলতেছে আরো বলবে। ডঃ এম তামিম ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ফকরুদ্দিন সাহেবের বিদ্যুত ও জ্বলানী বিষয়ক সহকারী উপদেষ্টা(এই পোষ্টখানাও নুতন তৈয়ার হইছিল), আমার সম্মানিত শিক্ষক। আজ থেকে মাত্র কয়েক বছর আগেও উনি গ্যাস রপ্তানির পক্ষে ছিলেন। বহুজাতিক কম্পানীগুলার হিসাবেও বলা হচ্ছিল বাংলাদেশ গ্যাসে ভাসতেছে। এদেরই মদদে ক্ষমতা পাবার পর...উনি বললেন গ্যাস নাই। তাইলে স্যার, আগে যদি আপনার কথা মত রপ্তানি করতাম, আজকে রাস্তায় বসতে হইতো আমাদের। তিনি গত ২ বছর নজর দিলেন গভীর সমুদ্রে গ্যাস এক্সপ্লোরেশনে। আরো মনযোগ দিয়ে তৈরী করলেন কয়লানীতির খসড়া। হেহে। এখন আমাদের নাকি তাপ বিদ্যুতের দিকে নজর দিতে হবে। মাল মুহিতের স্টিকুলাস প্ল্যানেও কয়লার কথা লেখা আছে গুরুত্ব সহকারে।এর মানে যেকোন উপায়েই( ওপেন মাইনিঙ্গেও অরুচি নাই) ফুলবাড়িয়ার কয়লা বাহির করতে হবে। খুড়াখুড়ি করে, ফুল বাড়িয়া মানুষগুলার বাস্তুভিটা উচ্ছেদ করে, না হয় বাহির করলাম, এরপর? আমাদের তো কয়লা ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট তেমন নাই। সমাধান রপ্তানী। কাকে? দোস্তরাষ্ট্র ভারত হে না! কয়লা দিন বিদ্যুত নিন। কিন্তু কাচা কয়লা যে দামে বেচবেন তার চেয়ে বেশী দামেই দাদাদের বিদ্যুত কিনতে হবে। ভারত নিজেই ভয়াবহ বিদ্যুত চাহিদা মিটাইতে হিমসিম। তাইত মাঝে মাঝে উনারা আমাদের সমুদ্র সীমানায় মাছ মারতে আসেন। নেপালের সাথেও জলবিদ্যুত উৎপাদনের দেন দরবার করছেন।

এই রকম একটা অবস্থায় আমাদের যাওয়া উচিৎ কম গ্যাস খরচ করে কিভাবে বেশী বিদ্যুত বানানো যায় সেদিকে।এর মানে বড় পাওয়ার প্লান্টের (গ্যাস টার্বাইন, স্টীম টার্বাইন, কম্বাইন্ড সাইকেল) দিকে অগ্রসর হওয়া উচিৎ।

স্টিকীকৃ্ত "হস্তীভক্ষন" থিওরীতে আমরা যদি আগাই তাইলে
ছোটছোট পাওয়ার প্লান্ট তৈ্রী হবে(উপজেলায় উপজেলায় একটা! মোট উপজেলা আমাদের কয়টা জানি? :( ), এদের গ্যাস দিবে সরকার। ছোট মানে গ্যাস জেনারেটরে বিদ্যুত। এর মানে বেশী গ্যাসে কম বিদ্যুত। এর মানে এক ইউনিট বিদ্যুতে অধিক ব্যয়। এই ব্যয় বাড়াবে শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যয়। এর মানে বিদেশী পন্যের সাথে হিটেই আউট। পাওয়ার প্লান্টের রক্ষনাবেক্ষন, নিরাপত্তাও একটা গুরুত্বপূর্ন ইস্যু। সামান্য ভূলচুকে ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যেক উপজেলায় একটা করে করলে এই দূর্ঘটনার সম্ভাবনাও বাড়ে।

জনরোষের ভয়ে সরকারও বিদ্যুৎ সমস্যায় উল্টাসিধা ডিসিশন নিচ্ছে। যেমন ঢাকা চিটাগাঙ্গে ফ্যানের পাখা ঘুরাইতে সার কারখানা বন্ধ করে গ্যাস বাচাইতেছে(নিউজঃ Govt to shut CUFL to save gas । কিন্ত সারের প্রকট অভাব কেমনে ট্যাকেল দিবে? সহজ জবাব, সার আমদানি হবে। কোথেকে? কেন ভারত। এরমানে বেশী দামে সার কিনে আগামী বছরে চালের দাম বাড়বে। সময় মত সার না পাইয়া সারের দাবিতে কিছু কৃ্ষক বিষ অথবা গুল্লি খাইলেও করার কিছু নাই, সরকারের গদিতে থাকতে হইলে ঢাকা চিটাগাঙ্গে পাখা বাতাস করতে হবে।হাহ!

শামীম সাহেব ঢাকা থেকে সকল গার্মেন্টস সরানোর যে প্রস্তাব করেছেন সেটাকে ১০০% সমর্থন করি। তবে তার আগে সরকারকেই শিল্প পার্ক স্থাপন করে সেখানে বিদ্যুত,পানির সুব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে, কারখানা প্রতিস্থাপনের হ্যাপা কোন বিবেকবান(!) ব্যবসায়ী ভূলেও নিবে না।

লেখাটা এখানেই শেষ করতাম, কিন্তু অনেকেই বলবেন, খালিতো ঝারিপট্টি লইলেন নিজে একটা সমাধানতো দিবার পারলেন না!

সমাধান মোটেও সহজ না।
১। সরকারের প্রথম ১০০দিনেই বিদ্যুত নিয়ে ভাবা উচিৎ ছিল। ঘরে ঘরে জঙ্গি খোজার চেয়ে এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির দিকে তেনাগ নজর দেয়া উচিৎ।
২। বিরোধী বেগম বাড়ি হারায়া, এখন বিদ্যুতের ইস্যুতে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। লজ্জা থাকলে বিদ্যুত বিষয়ে উনার কোন কথাই বলা উচিৎ না। কারন আজকের অবস্থার জন্য উনি(বিদ্যুত মন্ত্রানালয়ের দ্বায়িতে ছিলেন ৫ বছর, উৎপাদন শুন্য মেগাওয়াট) ও উনার খাম্বা পুত্রই দায়ী।

৩।গ্যাসের বাচাইতে এর অবাধ ডিসট্রিবিউশন বন্ধ করতে হবে। দুনিয়ায় আর কোথাও এই রকম পাইপে করে বাসাবাড়িতে গ্যাস দেয়ার সিস্টেম আছে কিনা জানা নাই।গ্যাসে ভাসতেছে যারা সেই সবদেশেও সিলিন্ডারে করে গ্যাস বিক্রি হয়। সিলিন্ডারে বিক্রি করলে গ্যাস সাশ্রয় কয়েক গুন বাড়বে। একটা দিয়াশলাই কাঠির জন্য কেউ চুলা জ্বেলে রাখবে না, সারা রাত চুলার উপরে কাপড়ও শুকাবে না।

৪। তেলের দাম এখন অনেক কম আন্তর্জাতিক বাজারে। দুনিয়ার কোথাও এত সিএনজি চলে না বাংলাদেশের মত। সিএনজি কনভারশন আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিলিয়া কমাইতে হবে।
৫। সরকারকে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী: দুই ধরনের চিন্তাই করতে হবে। বিদ্যুতের সাথে গ্যাস ও সারের সরবরাহের হিসাবটাও বরাবর করতে হবে। বড় পাওয়ার প্লান্ট হিসেবে কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের কথা ভাবতে পারে।
৬। গ্যাসের বিকল্প হিসাবে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ শুরু করতে হবে। তড়িঘরি করে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। নাইলে আরেকটা টেংরাটিলা ঘটতে পারে।
৭। নেপালের জলবিদ্যুতে ইনভেস্ট করা যেতে পারে। ভারতে স্থল ভাগ দিয়ে আনার জন্য, তাদেরকেও বখরা দিয়ে ম্যানেজ করতে হবে।
৮। রাশিয়ার কারিগরী সহায়তায় পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে কতদূর অগ্রসর হইলো জানা গেল না। ঘনবসতির দেশে এই ধরনের স্থাপনায় উচ্চপ্রযুক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯। জনগনকে অকারন হল্লা, বিদ্যূৎ কেন্দ্র ভাংচুর, মিটিং মিছিল না করে, আগামী বছর কি অবস্থা হবে তা ভাবতে হবে। সরকারকেও কথা বার্তায় সতর্ক হইতে হবে। লাঠি দেখায়ে দেশ চালানো যায় না। সংকট কাটাইতে সংযম ও শৃংখলা জরুরী। অন্য উপায় ধরলে, আগামী পাচ বছরে ধবংস অনিবার্য।
------------------------------------------------
অন্যান্য পুষ্ট- খুচা দিয়া পড়েন
ব্যানানা বাংলাদেশ-৩ (গডফাদারের স্টিমুলাস মূলা)

ব্যানানা বাংলাদেশ-২ (প্রথম আলোর ইহুদীডিম্ব!)
ব্যানানা বাংলাদেশ-১ (ইকোনমিক হিটম্যান)
কন্সপিরেসি থিওরী-পারট ৩ (সিউডো-জ়ঙ্গি রাষ্ট্রের ছায়া)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০০
৪৭টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×