somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৌতুহলী মনের কিছু জানতে চাওয়া (প্রসঙ্গ জনগণ সকল ক্ষমতার উতস)

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুদ্ধাপরাধ নিয়ে বরাবরই জামায়াতে ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু যেই চারটি কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন বাতিল করা হলো, সেগুলোর মাঝে যুদ্ধহাপরাধ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ নেই। প্রথমে দেখে নেই অভিযোগগুলো কি কিঃ
১। নীতিগতভাবে জামাত জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস বলে মানে না, আল্লাহতাআলাকে সকল ক্ষমতার উৎস বলে মনে করে।
২। যেকোন সাম্প্রদায়িক দলের নিবন্ধন নিষিদ্ধ। জামাতের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং বিশ্বাস থেকে এটা প্রতিফলিত যে জামাত একটি সাম্প্রদায়িক দল।
৩। কোন রেজিস্টার্ড দল ধর্ম বা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য করতে পারবে না। কিন্তু জামাতের শীর্ষ পর্যায়ে কোন নারী বা অন্য ধর্মাবলম্বী কেউ থাকতে পারে না।
৪। জামাত ভারতে প্রতিষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক দলের শাখা এবং বিভিন্ন দেশে এর শাখাসমূহ রয়েছে।
প্রথমেই বলে নেয়া ভাল আমাদের সংবিধান, আমাদের নির্বাচন কমিশনের সব নীতিমালা মনুষ্য সৃষ্টি এবং এখানে যথেষ্ট নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হলেও এটা স্বীকার করতে হবে মানুষের জ্ঞান সীমিত, সকল জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার উৎস মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তাআলা, যিনি কেবল মুসলিমদের নন, অন্যান্য সকল ধর্মের মানুষের সৃষ্টিকর্তা। একদিকে আমরা গণতন্ত্রের কথা বলছি, যেখানে বলা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতই গ্রহণযোগ্য। এই সিস্টেম জনগণের, জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা। আরেকদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের মতামতকে এখানে অবমূল্যায়িত করা হয়েছে। মাননীয় আদালত যদিও জামাতের ব্যাপারে এই রায় দিয়েছে, কিন্তু যেকোন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে এই অভিযোগসমূহ আসতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সত্যিকারের ভুল আসলে কোনটা? ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নীতিমালায় নাকি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনসংক্রান্ত নীতিমালায়?
এখন আমরা জানার চেষ্টা করি, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশি মুসলিম জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ব্যাপারে দর্শন কি? ঈসলামী রাজনৈতিক দর্শনের যেকোন অথেনটিক লেখায় দেখা যাবে সেখানে সকল সার্বভৌমত্বের মালিক বলে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে আল্লাহতাআলাকে। আল্লাহতাআলা বলেন, "শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।" [সূরা আরাফ, আয়াত ৫৪]
এরপর শূরা কাউন্সিলের সদস্যদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে বিভিন্ন আইন প্রণয়নের অধিকার দেয়া হয়েছে। মানুষকে আল্লাহতাআলা খলীফা হিসেবে পাঠিয়েছেন এই পৃথিবীতে, যারা আল্লাহর দেখানো পথে পৃথিবীতে বা মহাবিশ্বে সকল কিছুর নেতৃত্ব দিবে। আল্লাহ বলেন, "আমি আকাশকে খেলাফতের দায়িত্ব দিতে চেয়েছি, আকাশ ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে, আমি পাহাড়কে খেলাফতের দায়িত্ব দিতে চেয়েছি, পাহাড় ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে... বোকা মানুষদের আমি খেলাফতের দায়িত্ব দিতে চেয়েছি, তারা খুশীমনে সে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে, তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।" [আয়াতটা হুবহু মনে নেই, আয়াত নাম্বারও মনে নেই, তবে কাছাকাছি রকমের একটি আয়াত কুরআনে আছে]। অর্থাৎ মানুষকে যে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
"তারা বলেঃ আমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং আনুগত্য করি; কিন্তু অতঃপর তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তারা বিশ্বাসী নয়।তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে আহবান করা হয তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়।সত্য তাদের স্বপক্ষে হলে তারা বিনীতভাবে রসূলের কাছে ছুটে আসে। তাদের অন্তরে কি রোগ আছে, না তারা ধোঁকায় পড়ে আছে; না তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের প্রতি অবিচার করবেন? বরং তারাই তো অবিচারকারী ?...... তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃêত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।" [সূরা নূর, আয়াতঃ ৪৭ - ৫৪]।
আমাদের দেশে হানাফী মাজহাব অনুসরণ করা হয় সবচেয়ে বেশি। তাই এখন আমি ইমাম আবু হানিফার খেলাফত সংক্রান্ত ফায়সালাসমূহ এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি,
১। সার্বভৌমত্বঃ
সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা (র.)-র মতবাদ ছিল সর্বজন স্বীকৃত মৌলিক মতবাদ। তিনি যেহেতু আইনজ্ঞ ছিলেন, তাই আইনের ভাষাতেই বলেছেন,
"আল্লাহর কিতাবে কোন বিধান পেলে আমি তাকেই দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করি। আল্লাহর কিতাবে সে বিধানের সন্ধান না পেলে রাসূলের সুন্নাহ এবং তাঁর সেসব"বিশুদ্ধ হাদীস গ্রহণ করি, যা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রসিদ্ধ। আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নায়ও কোন বিধান না পেলে রাসূলুল্লাহ (স.) র সাহাবীদের উক্তি অর্থাৎ তাদের ইজমা বা সর্বসম্মত মতের অনুসরণ করি। আর তাঁদের মতভেদের অবস্থায় যে সাহাবীর উক্তি খুশি গ্রহণ করি, আর যে সাহাবীর উক্তি খুশী বর্জন করি। কিন্তু এদের বাইরে গিয়ে কারো উক্তি গ্রহণ করি না ... অবশিষ্ট রইলো অন্য ব্যক্তিরা। ইজতিহাদের অধিকার তাদের যেমন আছে, তেমনি আছে আমারও।
একবার উনার ব্যাপারে কিয়াসকে 'নছ' (স্পষ্ট বিধানের) উপর অগ্রাধিকার দিতেন। এ অভিযোগ খন্ডন করে তিনি বলেনঃ
"আল্লাহর শপথ করে বলছি, যে বলে আমরা কিয়াসকে 'নছ'-এর ওপর অগ্রাধিকার দেই- সে মিথ্যা বলে, আমাদের ওপর মিথ্যা দোষারোপ করে। আচ্ছা, নছ-এর পরও কি কিয়াসের কোন প্রয়োজন থাকতে পারে?"
২। খেলাফত নিষ্পন্ন করার সঠিকপন্থাঃ
খেলাফত সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-এর অভিমত এই ছিল যে, প্রথমে শক্তি প্রয়োগে ক্ষমতা অধিকার করে পরে প্রভাব খাটিয়ে বায়আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করা তা সম্পাদনের কোন বৈধ উপায় নয়। মতামতের অধিকারী ব্যক্তিদের সম্মতি এবং পরামর্শক্রমে প্রতিষ্ঠিত খেলাফতই সত্যিকার খেলাফত। এমন এক নাজুক পরিস্থিতিতে তিনি এই মত ব্যক্ত করেছেন, যখন এ মত মুখে উচ্চারণকারীর ঘাড়ে মস্তক থাকার কোন সম্ভাবনাই ছিল না।
তৎকালীন খলীফা আল-মনসুর-এর সেক্রেটারী রবী ইবনে ইউনুসের উক্তি তিনি ইমাম মালেক (রঃ), ইবনে আবি যে'ব এবং ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-কে ডেকে বলেন, 'আল্লাহ আতালা এ উম্মাতের মধ্যে আমাকে এ রাজত্ব দান করেছেন, এ ব্যাপারে আপনাদের কি মত?' আমি কি এর যোগ্য? [উল্লেখ্যা মুয়াবিয়া (রাঃ)-র আমল থেকে খেলাফতে রাজতন্ত্র চলে আসছিল ইসলামী মসনদসমূহে]
ইমাম আবু হানীফা তাঁর জবাবে বলেন,
"দ্বীনের খাতিরে সত্য পথের সন্ধানী ব্যক্তি ক্রোধ থেকে দূরে থাকে। আপনি আপনার বিবেককে জিজ্ঞেস করলে নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন যে আপনি আমাদেরকে আল্লাহর খাতিরে ডাকেননি; বরং আপনার অভিপ্রায় হচ্ছে, আমরা আপনার অভিপ্রায় অনুযায়ী কথা বলি। সত্য কথা এই যে, আপনি এমন পন্থায় খলীফা হয়েছেন যে, আপনার খেলাফতের ব্যাপারে মতামতের অধিকারী ব্যক্তিদের মধ্য হতে দু'জন লোকের ঐক্যমতও স্থাপিত হয়নি। অথচ মুসলমানদের সর্বসম্মতি এবং পরামর্শক্রমেই খেলাফত সম্পন্ন হয়। দেখুন ইয়ামনের অধিবাসীদের বায়আত না আসা পর্যন্ত আবু বকর সিদ্দিক (রঃ) দীর্ঘ ছ'মাস যাবত সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন।" এরপর উনাকে দিরহাম উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখান করেন। আর তাঁর এই নিস্পৃহতার কারণেই প্রাণ রক্ষা পেয়েছিলেন খলীফা মনসুরের হাত থেকে। [১]
এরপর আসি, সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে, যেখানে প্রায়ই আশংকা করা হয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বে অমুসলিমদের জান-মালের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দান করা হতে পারে, তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে বাধা দান করা হতে পারে। এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান সুস্পষ্ট।
আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। [সূরা নাহল, আয়াত ৯০]
যখন তোমরা কথা বল, তখন সুবিচার কর, যদিও সে আত্নীয়ও হয়। [সূরা আন-আম, আয়াত ১৫২]
কুরআনেই নানা জাতি-বর্ণ-গোত্রের স্বীকৃত দিয়ে বলা আছে, "হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার।" [সূরা হুজরাত, আয়াত ১৩]
দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। [সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৬]।
অতএব, অমুসলিমদের ভয়ের কোন কারণ নেই।

আর বাকী রইলো নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ, এই ব্যাপারে একটি ধর্মভিত্তিক দলকে বিভিন্ন সুপারিশ করা যেতে পারে, কিন্তু এর জন্য কোন দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে না। নারীদের রাজনৈতিক তৎপরতায় শরয়ী দিক নির্দেশনার ব্যাপারে আবদুল হালীম আবু শুক্কাহ রচিত "রাসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা, দ্বিতীয় খন্ড" থেকে কিছু বিষয় তুলে ধরছি,
নারীদের রাজনৈতিক বিষয়ে যত্নশীল ও আগ্রহী হওয়া প্রসঙ্গে উম্মে সালামা বলেছেন, "আমিও মানব মন্ডলীর অন্তর্ভুক্ত।" ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেছেন, "আমি মসজিদে গমনকারী লোকজনের সাথে মসজিদে গেলাম, যেখানে ইমামাএর আহবানে সাড়া দিয়ে পুরুষরা অংশগ্রহণ করেছিল।"
"মুমিন নারী ও পুরুষ একে অপরের সহযোগী। তারা সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎ কাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। তাদের প্রতিই আল্লাহ রহম করবেন। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।" [সুরা তাওবাহ, আয়াত ৭১]
কখনো কখনো রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা দেয়া নারীর জন্য ফরয হয়ে পড়ে। নির্বাচনে নারীর অধিকার সম্পর্কে ডঃ মুস্তাফা আস-সাবায়ী রহমতুল্লাহর [যিনি দামেশক বিশেবিদ্যালয়ের শরীয়া কলেজের প্রধান এবং শরীয়া বিষয়ক অধ্যাপক] একটি মত হলো, পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি পর্যালোচনা করার পর আমরা দেখতে পেয়েছি যে, ইসলাম নারীকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করে না। নির্বাচন হচ্ছে জাতির জনপ্রতিনিধি বাছাই করার প্রক্রিয়া বিশেষ। এসব প্রতিনিধি আইন প্রণয়ন ও সরকারের কার্যাবলী পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে জাতির প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং নির্বাচন প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রতিনিধি বাছাইয়ের কার্যক্রম, যে ক্ষেত্রে একজন লোক ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোটদানের মাধ্যমে প্রতিনিধি সভায় তার পক্ষ থেকে কথা বলা ও তার অধিকারসমূহ রক্ষার জন্য প্রতিনিধি বাছাই করে। তাই নারীকে তার অধিকারসমূহ সংরক্ষণ এবং তার পক্ষ থেকে বক্তব্য পেশের জন্য একজন উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ করতে ইসলাম বাধা দেয় না।। কারণ সমাজের অন্যান্য সদস্যের মত সেও একজন নাগরিক। আইনসভায় নারীর মনোয়নের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, ইসলামের মূলনীতি যখন নারীকে ভোতার হতে বাধা দেয় না তখন কি তাকে প্রতিনিধি হতে বাধা দেবে? জাতির প্রতিনিধিত্ব দুটি প্রধান কাজ ছাড়া আর কিছু নয়,
১। আইন প্রণয়ন, ২। পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ
আর এই সংশ্লিষ্ট কুরআন আয়াতটি উপরেই দেয়া হয়েছে, "মুমিন নারী ও পুরুষ একে অপরের সহযোগী। তারা সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎ কাজে নিষেধ করে..."
মিশরের অন্যতম ইসলামিক স্কলার ডঃ ইউসুফ আল কারদাভী বলেন, অনেকে প্রতিনিধি সভায় নারীর মনোয়নের বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। তাদের মতে এর ফলে কর্তৃত্ব নারিদেরকে দেয়া হয় অথচ তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বরং মূলগতভাবে কুরআন যে বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছে তা হচ্ছে এই যে, পুরুষরা নারীদের ব্যবস্থাপক। এই বিধানকে উল্টে দিয়ে আমরা কি নারীদেরকে পুরুষদের ব্ব্যবস্থাপনার কর্তৃত্ব দিতে পারি? এখানে উনার স্পষ্ট বক্তব্য হলোঃ
১। যেসব মেয়েরা প্রতিনিধি সভার মনোনয়ন লাভ করবে তাদের সংখ্যা হবে সীমিত এবং যেখানে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে পুরুষদের। সিধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতেই, তারাই হবে আইন প্রণয়নের চাবিকাঠি এবং দন্ডমুন্ডের মালিক। কাজেই আইনসভায় মেয়েদেরকে মনোনয়ন দিলে বা নির্বাচিত করলে তারা পুরুষদের উপর কর্তৃত্বের অধিকারিণী হয়ে যাবে এ কথা বলার কোন সুযোগই নেই।
২। যে আয়াতে নারীদের উপর পুরুষদের ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে তা কেবল দাম্পত্য জীবনের জন্য প্রযোজ্য। কারণ দাম্পত্য বা পারিবারিক জীবনে পুরুষ পরিবারের মালিক এবং পরিবারের ব্যাপারে সেই দায়িত্বশীল। মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেছেন,
"পুরুষরা নারীর জন্য ব্যবস্থাপক। কারণ, আল্লাহ তাদের একজনকে অপরজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং যেহেতু পুরুষ তার অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে থাকে। [সূরা নিসা, আয়াত ৩৪]" মহান আল্লাহর বাণী "যেহেতু পুরুষ তার অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে থাকে" অংশটি এ ইংগিত প্রদান করে যে, পুরুষের এই ব্যবস্থাপনার কর্তৃত্ব পারিবারিক পরিমন্ডল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এটি এমন এক মর্যাদা যা আল্লাহতাআলা নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে পুরুষকে দান করেছেন, "নারীদেরও পুরুষদের ওপর ঠিক তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপরে পুরুষদের রয়েছে মর্যাদা।" [সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২২৮] পারিবারিক গন্ডির বাইরে কতিপয় নারীর কতিপয় পুরুষের উপর কর্তৃত্ব নিষিদ্ধ করে কুরআন মজীদে কিছুই বলা হয়নি। বরং যা নিষেধ করা হয়েছে পুরুষের উপর নারীর ব্যাপক কর্তৃত্ব।
ইমাম বুখারীর আবু বকর (র.) থেকে একটি মারফু হাদীস বর্ণনা করেছেন, "সেই জাতি কখনো সফল্কাম হতে পারে না যে তার সকল দায়িত্ব একজন আন্রীর উপর অর্পণ করেছে।" এখানে যাবতীয় সকল কাজ বোঝানো হয়েছে। তবে ফতোয়া দান, ইজতিহাদ, শিক্ষাদান, হাদীস বর্ণনা করা, প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা -- এসব ব্যাপারে নারীর কর্তৃত্বে বাধা নেই। এমনকি ইমাম আবু হানীফা 'কিসাস' ও 'হুদুদের' ক্ষেত্রেও নারীর সাক্ষ্য বৈধ বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। প্রাচীন অনেক ফকীহও 'কিসাস' এবং 'হুদুদের' ক্ষেত্রে নারীর সাক্ষ্য বৈধ বলেছেন। ইমামা তাবারী ঢালাওভাবে অনুমতি দিয়েছেন, ইমাম হাযমও। এসব দলিল প্রমাণ করে যে, বিচার কার্যে নারীর কর্তৃত্বের পরিপন্থী কোন সুস্পষ্ট শরয়ী দলিল নেই। [৩]

সূত্রসমূহঃ
১। খেলাফত ও রাজতন্ত্র, সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী, পৃষ্ঠা ২০৭-২০৯
২। Political System of Islam- Guiding Principles in Government, Dr. Jamal Badawi Click This Link.
৩। রাসূলের (স.) যুগে নারী স্বাধীনতা (দ্বিতীয় খন্ড), আবদুল হালীম আবু শুক্‌কাহ্‌। পৃষ্ঠা ২৪৫-২৫১
৪। Click This Link
৫। Click This Link


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×