somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্ঞান-এর প্রয়োজনিয়তা (পর্ব ১)

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নবী (সঃ ) বলেন, "আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীন বা ধর্মে পারদর্শিতা দান করেন।“ আর তা এ কারণে যে, সে যখন পারদর্শিতা অর্জন করবে, তখন আমল করবে। আর তার সে আমল সুন্দর হবে। ইমাম আল-গাযালী (রহ ) যেমন বলেছেন, একজন ফকীহ তথা দ্বীনে পারদর্শী র সর্বনিম্ন স্তর এই যে, তিনি এতোটুকু জানবেন যে, দুনিয়ার চেয়ে আখিরাত উত্তম। এই জানা যখন সত্য়ে পরিণত হয় এবং তার উপর বিজয়ী হয় তখন সে নিফাক (কপটতা) ও রিয়া (প্রদর্শনী মনোভাব) থেকে মুক্ত হয়ে যায়।

রাসূল (সঃ ) এক ব্যক্তিকে অন্য এক ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করে বলেন, তাকে শেখাও। তিনি লোকটিকে কুরআন শেখাতে লাগলেন। যখন এ আয়াতে পোছলেন, "কেউ "অনু পরিমাণ সত্কাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসত্কর্ম করলে সেও তা দেখবে। (সূরা যিলযালঃ ৭-৮)

আমল (কর্ম) সঠিক হওয়ার জন্য ইলম (জ্ঞান) পূর্বশর্তঃ
একথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আমল তথা কর্মের জন্য ইলম তথা জ্ঞান অত্যাবশ্যক। যাতে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী আমল শুদ্ধ, সঠিক ও যথাযথ হতে পারে। সেই আমল আল্লাহর ইবাদত হোক বা হোক না তা মানুষের সাথে আচরণ ও আদান-প্র্দানমূলক। উমার ইবনে আবদিল আযীয (রহ ) বলেনঃ "যে ব্যক্তি জ্ঞান (ইলম) ছাড়া কাজ করে, সে যতটুকু ঠিক করে তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে।"

ইলম ছাড়া কোন ইবাদত সঠিক হয় নাঃ
এক ব্যক্তি রাসূল (সঃ ) এর সামনে যথাযথভাবে রুকু-সিজদা না করে ও করে নামায শেষ করায় তিনি তাকে বললেন, যাও, আবার সালাত আদায় কর, তুমি সালাত আদায় করনি। এর কারণ হলো, তার সালাত ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও বিক্ষিপ্ত যে যেন কোন সালাতই আদায় হয়নি।

ইলম ছাড়া কোন আচরণ সঠিক হবে নাঃ
স্পষ্টভাবে যা কিছু হালাল তা করা বা না করাতে কোন দোষ নেই. ঠিক তেমনিভাবে যা কিছু স্পষ্টভাবে হারাম তা করার পেছনে কোন যুক্তি বা ওজর থাকতে পারে না. আর যা কিছু এ দু’য়ের মাঝখানে সন্দেহযুক্ত - যা অধিকাংশ মানুষ জানে না, যে এটা হালাল না হারাম, সে ক্ষেত্রে সন্দেহের শেষ সীমা পর্যন্ত ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে. যেমন রাসূল (স: ) বলেছেন: "যে সন্দেহ থেকে দূরে থাকলো সে তার দীন ও মান-ইজ্জতের মুক্তি কামনা করলো। আর যে সন্দেহে পড়লো সে হারামের মধ্যে পড়লো। যেমন একজন রাখাল সংরক্ষিত ভূমির পাশে ছাগল চরায়। যে কোন মুহূর্তে সে সংরক্ষিত ভূমিতে ঢুকে যেতে পারে।"

আমাদের পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠগণ ব্যবসায়ীদেরকে কেনাবেচার ও লেনদেনের রীতিনীতি, নিয়ম-কানুন ভালো মত জেনে নেয়ার অথবা এ বিষয়ে একজন পারদর্শী ফকীহর পরামর্শ গ্রহণ করার উপদেশ দিতেন। একইভাবে তাঁরা মানুষের নেতৃত্ব দিতে অথবা মানুষের উপর কর্তৃত্ব করতে সক্ষম, এমনদেরকে পদে অধিষ্ঠিত হওয়া অথবা দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বেই এ সংক্রান্ত জ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জনেরও উপদেশ দিতেন। যাতে সে তার জ্ঞানের আলোকে পথ চলতে পারে। তাদের থেকে এ কথাটি প্রচলিত আছে: "নেতৃত্ব দেয়ার আগে তা ভালোভাবে জেনে বুঝে পারদর্শিতা অর্জন কর."

নেতৃত্ব- কর্তৃত্ব -এর পদসমূহের নিয়োগ লাভের পূর্বশর্ত ইলম (জ্ঞান):
নবী ইউসুফ (আ ) চাচ্ছিলেন মিসর -রাজ তাঁকে মিসরের মাটিতে এমন নেতৃত্বের আসনে অধিষ্টিত করুন যেখানে তাঁর মত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষকে করা হয়. তিনি নিজের গত যে সকল যোগ্যতার কথা তুলে ধরেন তার শীর্ষে হলো হিফয ও ইলম তথা আমানতদারী ও জ্ঞান। তিনি বলেন: "আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন, আমি তো উত্তম রক্ষক, জ্ঞানী।" সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বমূলক কর্মসমূহে, যেমন রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচারপতির দায়িত্ব পালন করা ইত্যাদি, যারা নিয়োগ লাভ করবেন তাদের জন্য ফকিহগণ এই শর্ত আরোপ করেছেন যে, তাকে এতোখানি স্বতন্ত্র জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে যাতে তিনি মুজতাহিদের স্তরে পৌঁছতে পারেন। কেউ কোন ফতোয়া জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজ জ্ঞান দ্বারা ফতোয়া দিতে পারেন, কোন আদেশ করলে সত্য-সঠিক আদেশ করতে পারেন, কোন বিচার করলে ন্যায়বিচার করতে পারেন এবং কোন আহবান জানালে দূরদৃষ্টির সাথে জানাতে পারেন। উম্মতের অপরিহার্য দায়িত্ব যে, তারা তাদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবে। সে দায়িত্ব পালনের জন্য যেন যোগ্যতম রা ছাড়া অন্য কেউ সেই পদে অধিষ্ঠিত হতে না পারে।আল্লাহর শরীয়ত তথা বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ কোন মুসলিমদের রাজনীতি ও বিচার বিভাগের পদে আসীন হোক, ফকিহগনের কেউ তা বৈধ মনে করেননি। কারণ আল্লাহর শরীয়ত হলোই দু'জন মুসলিমের মধ্যে বিচার-ফয়সালার ভিত্তি। সুতরাং সে বিচারে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে হয় অজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে অথবা নিজের খেয়াল-খুশিমত বিচার করবে। সেক্ষেত্রে সে হবে জাহান্নামী। বুরাইদা (র: ), রাসূল(স: ) থেকে বর্ণনা করেছেন: "দুই প্রকারের বিচারক জাহান্নামে যাবে। জান্নাতে সেই যাবেন যিনি সত্যকে জেনে সেই অনুযায়ী বিচার করেন। আর যে সত্যকে জানলো এবং অন্যায়ভাবে সিদ্ধান্ত দিল, সে যাবে জাহান্নামে, অনুরূপভাবে যে অজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে মানুষের মধ্যে বিচার করে সেও জাহান্নামে যাবে।" [১]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×