সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হল বাংলাদেশে পেপালের কোন সার্ভিস নেই। অর্থাৎ একজন বাংলাদেশী নাগরিক পেপালে রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবে না। পেপাল না থাকার কারণে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা যে সকল অসুবিধায় পড়ছে সেগুলো হল -
১) যে কোন আউটসোর্সিং সাইট থেকে আয় করতে না পারা। এমন অসংখ্য সাইট রয়েছে যারা কেবলমাত্র পেপালের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে থাকে। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি সাইটে ফ্রিল্যান্সিং এ আমাদেরকে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়।
২) অন্যান্য সার্ভিস ব্যবহার করে উচ্চমূল্যে অর্থ উত্তোলন। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে ব্যাংক থেকে ব্যাংকে ওয়্যার ট্রান্সফার একটি চমৎকার পদ্ধতি। কিন্ত এই পদ্ধতিতে প্রতিবার উত্তোলনে ৪৫ ডলার খরচ পড়ে। আর পেওনার ডেবিট মাস্টারকার্ড মোট অর্থের ৩% কেটে রাখে, যা বড় অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে মোটেও ভাল পদ্ধতি নয়।
৩) অন্যান্য সার্ভিসের মাধ্যমে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে সরাসরি অর্থ গ্রহণ করা যায় না। ফলে সবসময় একটি আউটসোর্সিং সাইটের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয় এবং তাদেরকে ১০% থেকে ১৫% ফি দিতে হয়। গত তিন বছরে আমি বিভিন্ন দেশের অসংখ্য ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ পেয়েছি। আমার এমন কয়েকজন ক্লায়েন্ট রয়েছে যারা প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত আমাকে প্রতি মাসে কাজ দিচ্ছে। তারা এতটাই বিশ্বস্থ যে কাজ শেষে অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ছাড়াই আমি কাজ শুরু করে দিতে পারি। আবার অনেক সময় কাজ শুরুর পূর্বেই প্রজেক্টের পুরো বা আংশিক টাকা পেয়ে যাই। মোট কথা হচ্ছে এক্ষেত্রে মধ্যবর্তী আউটসোর্সিং সাইটের সাথে আমার কোন লেনদেন নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ওইসব সাইটগুলোকে ১০% ফি দিয়ে অনেক পথ ঘুরিয়ে আমাকে অর্থ গ্রহণ করতে হয়। এভাবে প্রতি ১০০০ ডলারে ১০০ ডলার আউটসোর্সিং সাইটকে দিতে হচ্ছে। সাথে আরো ৩০ থেকে ৫৫ ডলার দিতে হচ্ছে পেওনার বা ব্যাংক ট্রান্সফারের জন্য। কিন্ত আমার যদি একটি পেপাল একাউন্ট থাকত তাহলে হাজার প্রতি এই অতিরিক্ত ১৩০ থেকে ১৫৫ ডলার দেশে নিয়ে আসতে পারতাম।
৪) পেপাল না থাকা ইকমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করার প্রথম ও প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে এখন সবাই ইমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবসার করার দিকে ঝোঁকে পড়ছে। আর এই পেপালের কল্যাণে আজ ইকমার্স এতটা জনপ্রিয় এবং লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কেবলমাত্র পেপাল থাকলেই যে কত ধরনের ইকমার্স ব্যবসা করা সম্ভব তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। উদাহরণসরূপ, পেপাল থাকলে ফ্রিল্যান্সাররা আউটসোর্সিং সাইটগুলোতে নতুন প্রজেক্টের জন্য বসে না থেকে নিজের ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি সফটওয়্যারগুলো বিক্রি করতে পারত। অন্যান্য রপ্তানি ক্ষেত্রে এই পেপাল আমাদের দেশের জন্য হতে পারত যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কিন্তু আমরা সেই পোশাককে মধ্যসত্ত্বভোগী ছাড়া সরাসরি বিদেশী কোন ভোক্তার হাতে পৌছে দিতে পারি না। অথচ পেপাল থাকলে এরকম অসংখ্য ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ঘরে বসেই প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করা যেত।
৫) পেপাল না থাকার ফলে অনেকে আবার ভিন্ন পথ অবলম্বন করছে। ইন্টারনেটে এমন অনেক ফোরাম রয়েছে যেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে পেপালের সার্ভিস পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে পেপাল একাউন্ট আছে এমন কোন ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিলে সে তার পেপাল একাউন্ট ব্যবহার করে টাকা পেতে সাহায্য করে। পরবর্তীতে সে ব্যাংক ট্রান্সফার বা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এই পদ্ধতিটি মোটেও নিরাপদ এবং গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশে পেপালের সার্ভিস না থাকার ব্যাপারে পেপালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, পেপাল সবসময় তার সার্ভিস বিভিন্ন দেশে সম্প্রসারণে ইচ্ছুক। একটি নতুন দেশে সার্ভিস দিতে সে দেশের বিভিন্ন আইনকানুন মেনে তাদেরকে একটি জটিল পরিবর্তনের মাধ্যমে যেতে হয়। আরও নতুন দেশে পেপালকে পৌছে দিতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। তবে ঠিক কত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে পেপালের সার্ভিস পাওয়া যাবে এ ব্যাপারে তারা কোন নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারছে না।
http://www.trueonlineearn.com

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


