বাংলাদেশে মুসলমানিত্ব সাংস্কৃতিকভাবে (Culturally) আমদানী হয়েছে। এটা খুবই সিগনিফিকেন্ট ব্যাপার যে এ দেশে একাডেমিক্যালী কনভিন্স হয়ে বাপ-দাদার ধর্ম-বিশ্বাস পরিত্যাগ করে মুসলমান হতে হয় নি। আমরা আমার বাপকে প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে ওযু করে মসজিদে দেখেছি, তাই আমরাও গিয়েছি। সারাদিন কাজের শেষে ইশার নামায পড়ে ঘুমোতে দেখেছি, তাই আমরাও ইশার নামায পড়ে ঘুমিয়েছি। ঈদের দিন উৎসব দেখেছি, তাই আমরাও ঈদের মজা লুটেছি। নামের আগের মুহাম্মাদ আর নামের শেষের আহমদ, হোসাইন, ইসলাম, উদ্দিন জন্মগতভাবেই বরাদ্দ পেয়েছি।
একটু ঘুরিয়ে যদি বলি আমাদের মা-বাবাকে যদি সকালে উঠে পূজোর ঘরে দেখতাম, তাহলে সম্ভবত আমরা মসজিদে যেতাম না। ঈদের মাঠের বদলে স্বরস্বতী পুজায় আমাদের কাছে উৎসবের মাধ্যম হয়ে উঠতো। তিনবার আলহামদুলিল্লাহ পড়ে স্ত্রী অধিকার দেয়ার বদলে তখন সাত পাঁকের বাঁধনই বিয়ের যৌক্তিক উপায় বলে বিবেচিত হতো। আমাদের নামের শুরুতে যদি শ্রী থাকতো বড় হয়ে তা কি মুহাম্মাদ হতো?
"ইসলাম ইজ দ্যা কমপ্লিট কোড অব লাইফ" বলার আগে একবারও কি ভেবে দেখেছি কিভাবে কমপ্লিট কোড অব লাইফ? বরং এ আমাদের অন্ধ বিশ্বাস। মুসলমান হিসাবে সম্ভবত এটাই আমার চরম ব্যর্থতা। একজন মুসলমান কখনো বাই বর্ন জান্নাতের উত্তরাধীকারী হতে পারেন না। ডাক্তারের সন্তান মেডিক্যাল সাইন্স না পড়ে যেমন ডাক্তার বলে বিবেচিত হতে পারেন না, একজন মুসলমানও শুধু নামের আগে পিতা প্রদত্ত মুহাম্মাদ লাগালেই মুসলমান হতে পারেন না। ইসলামে অন্ধ বিশ্বাসের কোন স্পেস নেই। বাস্তবতা হলো ইসলামের মৌলিকত্ব নিয়ে আমরা মুসলমানরা মোটেও পড়াশোনা করি না। তাই হুজুরের বয়ান শুনে অন্ধ বিশ্বাসের জায়নামায বিছিয়ে পুলসিরাত পাড়ি দেয়ার স্বপ্নে আমরা বিভোর।
অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দ্ব্যার্থহীন ঘোষনাঃ
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ "(হে রাসূল) আপনি বলুন যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে ? (সূরা যুমার ৯)
আচ্ছা একজন শ্রী যুক্ত ব্যক্তি শুধু নামের আগে শ্রী ব্যবহার করার কারনেই জাহান্নামে যাবে? আর নামের আগে মুহাম্মাদ লিখে শিরক করে, মুহাম্মাদ সাঃ এর নির্দেশিত পথে না চলেই জান্নাতে চলে যাবে?
জাহেলিয়াতের অনুসারী আসহাবে রাসূল কি করে মাত্র ২৩ বছরে তাদের জীবনকে আমূল বদলে ফেলেছিল? একবার ভেবেছেন? হ্যাঁ, তারা এমনভাবে জেনে বুঝে ইসলাম গ্রহন করেছিল যা তাদের বাপ-দাদার বিরুদ্ধে জিহাদের ময়দানে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। তারা একাডেমিক্যালি কনভিন্স হয়েই জাহেলিয়াতের রীতিনীতি ও বিশ্বাস ছেড়েছিল। সাংস্কৃতিকভাবে ইসলামের স্রোতে স্রেফ গা ভাসানো টাইপের কাজ ছিল না সেটি। বরং স্রোত তৈরী করার বড় ঝুঁকিটা নিয়েছিল। ঠিক জেনেবুঝে।
মনে পড়ে আবু বকর রাঃ ও ওনার সন্তান আব্দুল্লাহ রাঃ এর ঘটনা। ইসলাম গ্রহন করার পর আব্দুল্লাহ রাঃ বলছিলেনঃ বাবা আমি তোমাকে বদর যুদ্ধে আমার তরবারীর নিচে পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমার জন্মদাতা পিতা, তাই তোমাকে কতল করি নি। আবু বকর রাঃ বললেনঃ তুমি কতল করো নি ঠিক আছে, কিন্তু আমার তরবারীর নিচে পড়লে তুমি আর আজ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে না।
আবু বকর রাঃ বুঝেছিলেন সন্তানের ভালবাসার চেয়েও ইসলাম অনেক বড়। ইসলামের আনুগত্য পৃথিবীর সবকিছুর উপরে।
কিন্তু আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক মুসলমানিত্ব চলছে। ঠিক যেভাবে আইয়ামে জাহেলিয়াতের আনুগত্য করতো ইসলাম পুর্ব সাহাবীরা। বাংলাদেশের ইসলামের বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে ইসলাম নিয়ে ব্যক্তিগত একাডেমিক পড়াশোনা নেই। আছে হুজুরের নসিহত। বিশ্বাসের কৃত্রিম ফানুষ আর আবেগ। জেনে-বুঝে কনভিন্স হয়ে ইসলামের উপর দাঁড়িয়ে নেই। বরং ইসলামকে নিছক এক ধর্ম মনে করে পথ চলছে লাখো পথিক।
মুখস্ত এক গালি শিখেছে "নাস্তিক"। তাতেই যেন ঈমানের পূর্নতা! আরে বেটা! তুমিই বলো ইসলাম কি? ইসলামের মানবিক সমাধান কি? কি করে ইসলাম মানবতার সমাধান?
আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করি- প্লিজ ইসলাম সম্পর্কে জানুন। কোরআন পড়ুন, হাদীস পড়ুন, ইসলামী সাহিত্য পড়ুন। তারপর দাবী করুন আপনি মুসলমান। এই সাংস্কৃতিক মুসলমানিত্ব দিয়ে আধুনিক জাহেলিয়াতের মোকাবেলা করে মানবতার মুক্তি তো দূরের কথা ব্যক্তি হিসেবে আল্লাহর কাছেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
খুব খেয়াল করে, জেনেবুঝে বলুন- ইন্নানি মিনাল মুসলিমিন।