ফেসবুকিং ২০০৭ থেকে তবে একটিভ ফেসবুকিং বলা যায় ২০০৯ সাল থেকেই। ফেসবুক এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না হয়ে উঠেছে সংবাদ মাধ্যমের এক প্রধান হাতিয়ার। অনেকেই আবার ফেসবুককে ব্যবসার অন্যতম মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে থাকি।
ফেসবুকে ব্যবসা আঁতকে উঠলেন?
প্রত্যেক প্রডাকশন কোম্পানীর মার্কেটিং প্লানে ফেসবুক এখন একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে। আমারও থাকে, আমি করে যাচ্ছি হরহামেশা। জীবনের ভালো বন্ধু, ব্যবসায়ীক বন্ধু, তথ্য ভান্ডার অনেক কিছুই পেয়েছি ফেসবুক থেকে। ফেসবুকের কল্যানে অনলাইনে কাজের স্পিডটা আবার ফিরে পেয়েছি, পেয়েছি সাহায্যকারি বন্ধু।
তবে অনেকেই ফেসবুককে গুজবের রাজধানীও বলে থাকেন। বলাটাই স্বাভাবিক বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে গুজব ছড়ানোর কাজ করে থাকে কিছু কুচক্রী। তবে সচেতন ব্যবহারকারিরাই ঠিকই বুজতে পারেন কোনটি গুজব কোনটি সত্য!
যা হোক যে প্রসঙ্গে আজকের লেখা-
Saleh Ahmad Shueb, কাতার প্রবাসী, ফেসবুকের ভালো বন্ধু, সবসময় সরব থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, ব্যাক্তিগতভাবে খুব পরিচিত না হলেও বোধহয় তাকে চিনি ছোটবেলা থেকে, আমার নানার বাড়ী গ্রামেই উনারও বাড়ী।
হঠাৎ ইনবক্সে একটি মেসেজ তার এক প্রবাসী বন্ধুর নামে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলে কে নাকি টাকা ধার চাচ্ছে, তিনি খবর নিয়ে জেনেছেন তার বন্ধুর এ্যাকাউন্ট ক্লোনিং এর মাধ্যমে এ কাজটি করছে, তার অনুরোধেই আজকের এই লেখা... তবে এরকম অভিযোগ আমার কাছে নিতান্ত কম নয়, প্রায় সবার প্রব্লেম সলভ করেছে আমার অফিসের টিম।
আইডি ক্লোনিং কি?
আপনার আইডির সাথে হুবুহু মিল রেখে আরেকটি আইডি খুলে ফেলা এবং তথ্য প্রায় সমান দেয়া থাকে, এবং আস্তে আস্তে মূল আইডির ফ্রেন্ডদেরকে রিকুয়েস্ট পাঠানো শুরু করে, অনেকেই যাচাই না করে ছবি দেখে ধরে নেই আগের আইডি হারিয়ে নতুন আইডি দিয়ে এড করছেন। এখানেই শুরু হয় আইডি ক্লোনিং কারসাজি। টাইমলাইনে আপনার মনে হবে না যে দুই ব্যাক্তির এক্টিভিটি আপনি দেখছেন।
আইডি ক্লোনিং পরে যা করে প্রতারকরাঃ
আসল উদ্দ্যেশ্য প্রতারনা করে টাকা নেয়া।
প্রতারনার প্রথম স্টেপ এ বিভিন্ন আকর্ষনীয় ইভেন্টে শর্ট লিংকের মাধ্যমে তৈরি করে ফিসিং বা স্পামিং লিংকটি বন্ধুর ইনবক্সে দেয়। আপনার সহজ-সরল বন্ধুটি কোনো ফটো এলবাম বা কোন গুরুত্বপুর্ন লিংক ভেবে ক্লিক করে সেখানে আসা ফরমে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দেয় যা দিয়ে প্রতারকরা প্রথমেই বন্ধুর আইডিটি নিজের করে নেয় এবং গোপন তথ্য ও আইডি ফিরিয়ে দেবার কথা বলে ব্ল্যাকমেইলিং করে বিকাশে টাকা আদায় করে নেয়। এ পন্থায় কাজ না হলে আইডির ভিতরে থাকা বন্ধুদের একই ধরনের ফিশিং লিংক দিয়ে আইডী নিজের আয়ত্বে নেয়ার চেষ্টা করে। তবে এখন ফেসবুকের সিকিউরিটি টিমের দক্ষতায় ফিসিং এ পদ্ধতি অনেকটাই ব্যার্থ।
প্রতারনার দ্বিতীয় স্টেপ এ তারা বন্ধুদেরকে বিপদের কথা বলে টাকা ধার চায়, অনেকেই বিপদে পড়েছেন আপনজন ভেবে টাকা দিয়ে দেয় বিকাশ নাম্বারে।
তৃতীয় স্টেপ এ সাধারনত দুটি স্টেপ এ ব্যার্থ হলে নুডিটি ছবি এবং উল্টাপাল্টা তথ্য দিয়ে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধুদের বিভ্রান্ত করে এবং আপনাকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টায় রত থাকে এবং আপনাকে ব্ল্যাকমেইলিং করার চেষ্টা করে।
এরকম পরিস্থিতিতে অনেকেই বিপর্যস্থ হয়ে পড়েন এবং ফেসবুক অহেতুক একটি ঝামেলা মনে করে নিজের সক্রিয় আইডিটি ডিএ্যাক্টিভ করে দেন নতুবা প্রতারনাকারীদের টাকা দেন।
এরকম পরিস্থিতিতে যা আপনার করনীয়ঃ
প্রথমত, কারো একবার আইডি থাকলে সিওর না হয়ে দ্বিতীয়বার একই রকম আইডি থেকে রিকুয়েস্ট এলে একসেপ্ট করবেন না। ভালো করে ব্যাক্তিগতভাবে খবর নিয়ে একসেপ্ট করবেন।
দ্বিতীয়ত, কাছের কেউ টাকা ধার চাইলে ব্যাক্তিগতভাবে কথা বলে পরে টাকা ধারের বিষয়টি কনফার্ম হয়ে নিবেন, কনফার্ম না হয়ে টাকা দিবেন না।
তৃতীয়ত, ক্লোন আইডির ব্যাপার নিশ্চিত হলে, নিকটস্থ থানাতে জিডি করুন এবং বিটিআরসি এর নির্দিষ্ট অভিযোগ মেইলে অভিযোগ পাঠান তবে এক্ষেত্রে অনেক সময় দেরী হয়।
চতুর্থত, জিডি কপিসহ আশেপাশে থাকা সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে ভালো ধারনা আছে এমন কারো সাথে যোগাযোগ করুন, আশা করি সমস্যার সমাধান করা যাবে।