দিনটি ছিলো শুক্রবার (৩০ আগস্ট, ২০১৯) ছুটির দিন, পেশাগত জীবনে পাশাপাশি হাটা ওমর ফারুকের সাথে ছুটির দিনে মোটরবাইকে করে উদ্দ্যেশ্যেহীন ঘুরে বেড়ানোর লোভ সামলাতে পারিনা। আমরা দুজনেই পেশাগত কারনে অনেকটা বোতলবন্দি, মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়ানোই একমাত্র বিনোদন।
নিজ বাসস্থান বিয়ানীবাজার বারইগ্রাম থেকে উদ্দ্যেশ্যেহীন যাত্রা বড়লেখার দিকে, ৭০-৮০ তে সাধারনত ওমর ফারুক বাইক চালাতে চায়, আমার বাধার কারনে পারেনা তবে এদিন আমার বাধাহীনতায় বাইক প্রায় এই গতিতে চলতে থাকলে কুলাউড়া অব্দি। কুলাউড়া উপজেলার ব্রাক্ষনবাজারে গিয়ে একটি অতি সাধারন গ্রামের মসজিদে জুমা'র নামায আদায় করে প্রকৃতির সান্নিধ্য নিতে শর্টকাটে কমলগঞ্জ উপজেলার ভিতরে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উদ্দ্যেশ্যে।
যেতে যেতে চোখে পড়লো ব্রাক্ষনবাজার থেকে হিঙ্গাজিয়া এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে অনেকগুলো মসজিদ। এতো কম জায়গায় এতো মসজিদ কোথাও বোধহয় দেখা হয়নি। আস্তে আস্তে কুলাউড়া পেরিয়ে শমসেরনগর, কমলগঞ্জ যেতে চোখে দেখলাম নয়নাভিরাম দৃশ্য। বড় বড় রাবার বাগান, পুরোনো বিভিন্ন স্থাপনা, চা বাগান, শমসেরনগর পুরোনো এয়ারপোর্ট। তবে কমলগঞ্জ থেকে লাউয়াছড়া উদ্যানের রাস্তার কাজ চলায় স্বাভাবিক গতিতে চলা যায়নি।
বেলা সোয়া দুইটায় লাউয়াছড়া উদ্যানে পৌছে উদ্যানের ভিতরে ঢুকলাম। দুই বছর আগে গিয়েছিলাম তখন যা দেখেছিলাম তার চেয়েও মনে হলো অনেক বৃক্ষ কমে গেছে। শুক্রবার হওয়ায় পর্যটকের ভিড় থাকার কথা থাকলেও পর্যটক নাই বললেই চলে। শুক্রবার নাকি পর্যটক কম থাকেন, শীতে পর্যটক বেশী হয় জানালেন সেখানকার স্থানীয়রা। ভিতরের বিভিন্ন রাস্তা ধরে অনেকক্ষন ঘুরলাম, সাথে ওমর হালকা-পাতলা হওয়ায় তার গতি আমি মোটুর চেয়ে ঢের বেশী। লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান বলার কারন বুজা যায় যতো গভীরে যাওয়া যায়। গহীন অরন্যে বিভিন্ন পোকা, প্রানীর ডাক নীরবতার মধ্যে মনকে জাগিয়ে তুলে। এযেনো অন্যরকম অনুভুতি, প্রকৃতিপ্রেমীরা এই অনুভুতির জন্য বোধহয় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যায়। তবুও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে উদ্যানে, সুযোগ এসেছে মৌল্ভীবাজার-১ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সজ্জন ব্যাক্তি শাহাব উদ্দিন রয়েছেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর পদে, আশা করা যায় তার দ্বারা উপকৃত হবে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লিলাভুমি পুরো মৌলভীবাজার।
চারটার দিকে লাউয়াছড়া থেকে বেরিয়ে শ্রীমঙ্গলের দিকে ছুটলাম। চা বাগানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সাথে শ্রীমঙ্গলে বানিজ্যিকভাবে গড়ে উঠা রিসোর্ট গ্রান্ড সুলতানে সময় কাটানোর পাশাপাশি, পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকের পাশে গড়ে উঠা প্রাকৃতিক কাশবন সৌন্দর্যের ভিন্নমাত্রা বাড়িয়েছে।
শ্রীমঙ্গল থেকে মৌলভীবাজার, মৌলভীবাজার থেকে রাজনগর হয়ে কুলাউড়ায় সান্ধ্যকালিন বিরতির পর বড়লেখায় আবারো আড্ডা বিরতিতে ছিলাম অনেক্ষন। পুরো সফরে দেখা হয় অনেক প্রিয়জনের সাথে কুলাউড়া যায়যায়দিন ও বিয়ানীবাজার টাইমস প্রতিনিধি আহাদ ভাই, বড়লেখার সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রব, কাজী রমিজ, তপন কুমার দাস, এজে লাভলু, তারেক মাহমুদ সহ আরো অনেকের সাথে। বড়লেখা মিডিয়া হাউসের আড্ডায় দই চিড়ার আয়োজন ছিলো চমৎকার, সেজন্য তপন দাকে আলাদা করেই ধন্যবাদ দিতেই হয়।
আলাদা করে বলতেই হয় পুরো জার্নিতে বিরক্ত বা ক্লান্তিবোধ করিনি একবারো। পুরো মৌলভীবাজার জেলাই আমার কাছে পর্যটন এলাকা মনে হয়। বড়লেখায় মাধবকুন্ড, শাহবাজপুরের চা বাগান, হাকালুকি হাওর, জুড়ির চা বাগান বেস্টিত এলাকা, কুলাউড়া-রাজনগর-শমসেরনগর-কমলগঞ্জে নয়ন জুড়ানো চা বাগানের পাশাপাশি, বানিজ্যিকভাবে গড়ে উঠা কয়েকটি রিসোর্ট ভ্রমনপিপাসু মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে আমার পরামর্শ পুরো মৌলভীবাজার জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরতে কমপক্ষে ৫দিন হাতে নিয়ে আসবেন। আমি নিশ্চিত ৫দিনে আপনি নিয়ে যেতে পারবেন একরাশ তৃপ্তি, নিজেকে রেফ্রেশমেন্টের এক স্বপ্নভুমি মৌলভীবাজার ঘুরে যেতে পারেন পরিবার স্বজন নিয়ে।
বিঃদ্রঃ- (লেখা থেকে অনেক তথ্য বাদ পড়তে পারে, মৌলভীবাজারবাসী ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)