মানুষের জীবনের সুখ-আর দুঃখগুলো হয়তো পর্যায়ক্রমে আসে। একান্ত কিছু দুঃখ থাকে, যা শুধু নিজেই অনুভব করা যায়। যদিও পাশে হাজার মানুসের সহানুভূতি থাকে, ভালবাসা থাকে। দুঃখ ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা থাকে। কিন্তু তারপরেও দুঃখ আর কষ্টগুলো শুধু নিজেরই থাকে।
গত ৩০ জানুয়ারী আমার দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীতে এসেছে। প্রথম মেয়ের পরে দ্বিতীয় সন্তান পুত্র। স্বভাবতই আনন্দের মাত্রাটা বেশি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই যে আনন্দের চেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টের মুহুর্তটা আমার জীবনে আসবে, ভাবিনি একবার। আমার সন্তান জন্ম গৃহণ করার পরেই সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির কোলে দেওয়া হয়, আমার মায়ের কোলে। কিন্তু আনন্দটা স্থায়ী হয়নি। রবিবার দুপুরের পরে আমার মা হঠাৎ করে স্ট্রোক করে। নয়দিন অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ছিল। তারপর পৃথিবীর সবমায়া ত্যাগ করে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন স্রষ্টার জাগতিক নিয়মে। মায়ের মৃত্যুর চেয়ে দুনিয়ায় আর কোন কষ্ট আছে কিনা জানিনা।
রাত ১০টা বাজলেই মোবাইলে কল আসত, বাবা বাড়ি আয়। মনের ভুলে এখনও মাঝে মাঝে অপেক্ষা করি মায়ের ডাকের জন্য। মা আর ডাকে না, নিশ্চুপ যখন একা থাকি, মায়ের কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। মাকে ডাকতে পারি না। মা আমার হারিয়ে গেছে না ফেরার দেশে।
সন্তানের মুখ দেখে চেষ্টা করি দুঃখ ভোলার। তবুও যেন খুজে ফিরি মায়ের স্নেহ, মায়ের ডাক।
সন্তানের কষ্ট, সন্তানের অনুভূতি একমাত্র মা বুঝতে পারে। ২০০০ সালের দিকে নোয়াখালী চাকরী করতাম। মোবাইল ছিল না তখন, চিঠি দিলে ৩/৪ মাসও লেগে যেত, অণেক সময় পৌছাতে। একদিন কাউকে না জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় নোয়াখালী থেকে। রাত ৩টার দিকে যখন বাড়ির সামনে পৌছালাম, আমার দুঃখিনি মা বসে আছে দরজা খুলে। ডাকতে হয়নি, তার আগে মা ডেকে উঠেছিলেন বাপ এসেছিস। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কিভাবে বুজলেন আমি বাড়ি আসছি। উত্তরে বলেছিলেন, তুমি গতকাল সন্ধ্যায় যখন রওনা দিয়েছ, তখনই আমি বুঝতে পেরেছি আমার বাবা বাড়ি আসছে।
মা এখন আর অপেক্ষা করে না আমার জন্য। আমি অপেক্ষা করি মায়ের ডাকের জন্য। মা আর ডাকে না। কবরের পাশে দাড়িয়ে চেষ্টা করি, মাকে অনুভব করার জন্য। পারি না। অনেকে স্বপ্নে দেখে, মা তুমি আমার স্বপ্নেও আসো না। মা তোমাকে অনেক ভালবাসি, এখন বুঝি সেই ভালবাসার গভিরতা। তুমি থাকতে কখনও বুঝিনি। দুনিয়ার সমস্ত জায়গায় তোমার অভাব অনুভব করি। মা, তুমি ভাল থেকে। আল্লাহ্ আমার মাকে তুমি ভাল রেখে।