somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

র‍্যাগিংপ্রুফ!!! B-) B-) B-)

২৪ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৯ সাল। রুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছি। পরিচিত এক বড় ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ মারফত তার হলে উঠলাম। বলে রাখা ভালো পরীক্ষার্থীদের জন্য রুয়েটের বড় ভাইয়েরা যথেষ্ঠ করেন। এক কথায় অমায়িক। নিজেদের সীট ছেড়ে দিয়ে না ঘুমিয়ে পরীক্ষার্থীদেরকে ঘুমানোর জায়গা দেন। হোক সে চেনা কিংবা অচেনা।


প্রসঙ্গে আসি। জীবনের প্রথম র‍্যাগ খাওয়ার কাহিণী। রাত ১২টা কি ১টা বাজে। সারাদিন জার্নি করে খুবই ক্লান্ত থাকার দরুণ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে দরজা খোলায় ঘুম ভেঙে গেল। দুজন নেতা গোছের বড় ভাই রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুষার কে?"


সবারই মোটামুটি ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। আমি বললাম, “ভাইয়া আমি”। বলার পর তারা সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে বললেন (হুমকি-ধামকি সমেত)। খালি গায়ে হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে উঠে বসলাম। উনাদের বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দিলাম।


-তুই তুষার?
-জ্বি ভাইয়া।

-ভাইকে চিনস?
-না ভাইয়া।

-সালাম দে।
-আস্লামুয়ালাইকুম, ভাইয়া।


বুঝলাম যে ভাইকে সালাম দিতে বলা হয়েছে উনিই নেতা। এও বুঝতে পারছিলাম র‍্যাগ খাচ্ছি ভালোমতই। পরে জেনেছিলাম উনি বিশাল কড়া মাপের র‍্যাগ দেন। নাম-ডাক আছে। আমার দোষ ছিল করিডোরে যত্রতত্র সিগারেট টানা। আমি যে বড় ভাই মারফত হলে ছিলাম উনিও জানতেন যে আমাকে সাইজ করা হবে। ব্যস, কি আর করা। ৫ ৪ ৩ ২ ১ অ্যাকশন...


-কে উঠাইছে?
-অমুক ভাইয়া।

-একটু আগে বাথরুমে সিগারেট খাইয়া আসলি?
-না ভাইয়া। (আসলেই খাইনি)

-সিগারেট খাস?
-জ্বি ভাইয়া।

-তাইলে বললি যে খাস নি।
-এখন খাইনি বলেছি ভাইয়া।

-ওই একটা বিড়ি ধরা। ওরে দে টানুক। কি পারবি তো?
-না ভাইয়া।
-না টানলে মারুম কইতাছি। টান।


হাত বাড়িয়ে নিতে যাব এমন সময় বললেন, টানতে হবে তবে পিছন দিয়ে। না পারলে ওই রাস্তা দিয়েই ঢুকায় দিব। থেমে গেলাম। উনারা মনের সুখে টানতে লাগলেন।


-ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা দিতে আসছিস। তোরে কয়টা বেসিক ম্যাথ ধরি। কি কস?
-জ্বি ভাইয়া ধরেন।

-ধর তুই একটা চোর। একবারই প্রশ্ন বলা হবে। একবারেই উত্তর দিতে হবে।
-জ্বি ভাইয়া, আমি একটা চোর।

-তুই ডাব চুরি করতে গেছস। ওই বাগানে ঢুকতে হলে তিনটা গেইট পার হয়ে যেতে হবে। প্রত্যেক গেইটে দারোয়ানের সাথে ডিল হলো তোর কাছে যে কয়টা ডাব থাকবে তার অর্ধেক তাকে দিতে হবে। চুরি শেষে তুই যখন বের হয়ে আসলি তখন তোর হাতে যদি একটা ডাব থেকে থাকে তাহলে কয়টা ডাব তুই চুরি করেছিলি?
-৮টা।

-গুড। একটা ঘরে দুইটা হারিকেন আছে। জোরে বাতাস হলো। একটা নিভে গেল। কয়টা হারিকেন থাকল?
-২টা।

-নামতা বল। প্যাকের ঘরের।
-জ্বি ভাইয়া শুনি নাই কখনো।
-আরে তোর তো দেখি খুবই বাজে অবস্থা। দ্যাখ এইভাবে, প্যাক একেক কে প্যাক, প্যাক দুগুনে প্যাক প্যাক...... বল বল। হাত গোনা বাদে।


এই প্রথম লজ্জা লাগল। তারপরেও অনেক্ষণ হাসের মত প্যাক প্যাক করলাম। শেষ হল বহু কষ্টে। (দুইবার লেগেছিল পারফেক্ট হতে)


-আচ্ছা এবার তোর আইকিউ টেস্ট করা যাক।
-জ্বি ভাইয়া।

-ধর একটা ঘরে একটা মেয়ে উলঙ্গ অবস্থায় শুয়ে আছে। তুই কি করবি?

এমন সময় একজন মাথা উঁচু করে আমার র‍্যাগ দেওয়া দেখছিল। ওকে ডেকে উত্তরটা দিতে বললেন। শাস্তিস্বরূপ।

-না ভাইয়া, কিছু করব না।
-হা হা। তুই কি হিজড়া নাকি? কিছু করবি না! এক কাজ করিস কালই হারবাল চিকিৎসা নিবি। ঘুমা বলছি, নইলে এর পর কিন্তু তোরে ধরব।

বেচারি ভয়ে ঘুমিয়ে গেল। এবার আমার পালা।

-বল তুই বল। কি করবি?
-জ্বি ভাইয়া। পিচ্চি-পাচ্চা(বোন) উলঙ্গ হয়ে ঘুমতেই পারে। গায়ে কাঁথাটা ঠিক করে দিয়ে দিব। জেগে থাকলে কোলে নিব।

-জাতীয় সংগীত গাইতে পারস?
-জ্বি ভাইয়া।

-ওকে গা।
-আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি......

-ওয়েট...ওয়েট। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় তো দাঁড়ায়তে হয় জানস না? বেয়াদব।
-ভাইয়া, আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু আপনিও তো দাঁড়ান নি। মূলত সবারই তো দাঁড়ানো উচিৎ।
-হুমম। ওকে নেক্সট......


আরো আইকিউ টাইপ প্রশ্ন করেছিলেন। প্রায় এক ঘন্টা ধরে। একই সাথে আইএসএসবি এর প্রিপারেশন চলছিল বলে মোটামুটি সবই পেরেছিলাম। একপর্যায়ে রেগে গিয়ে আমাকে জামা-কাপড় খুলে করিডোর থেকে ঘুরে আসতে বললেন। হকিস্টিক নিয়ে আসা হয়েছে। না করলে ‘মাইর’।


কি আর করা! লজ্জা-শরম আমার একটু কমই ছিল। অগত্যা আস্তে করে সাবলীলভাবে প্যান্ট খুলতে উদ্যত হতেই থামিয়ে দিলেন। বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন “এই প্রথম কাউকে র‍্যাগ দিতে পারলাম না। তুই একটা জিনিষ! কি খাবি বল? চল হোটেল ফ্রি তোর জন্য। যা মনে চায় খাবি”।


হোটেলে যেয়ে দেখি আমার বড় ভাইও আছে। সে মিচকি হেসে ওই নেতা টাইপ ভাইকে বললেন, “ভাই বলেছিলাম না। পারবেন না। আমার ছোটভাই বলে কথা। আমার মতই”।


আমি তো টাসকি। পুরা ঘটনা প্রিপ্লানড ছিল। তবে মনের ভেতর ভয় থাকলেও আমি বেশ মজা পেয়েছিলাম। এর পর শাবিপ্রবিসহ অনেক জায়গাতেই র‍্যাগ খেয়েছি। তবে খাওয়ার মত নয়। র‍্যাগ আমার জন্য নয়। প্রতিবারেই ভাইয়েরা আমার খুশি হয়ে খাইয়িয়েছে।


এমনকি শাবিপ্রবিতে র‍্যাগ দিতে না পেরে জনৈক বড়ভাই(নেতা) প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার আগেই আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন শাহ্‌ পরাণ হলে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সীট পেতেই এক বছরের মত লেগে যায়। এচিভমেন্ট!


বড় হয়ে গেছি। কেউ এখন র‍্যাগ দেয় না। অ্যানিওয়ান প্লিজ? ওপেন চ্যালেঞ্জ!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×