আজকের প্রথম আলোয় (অনলাইনে) জুরাইনের হত্যাকাণ্ডের আসামীদের খবরের নিচে একটি মন্তব্য নজরে পড়ল-
''বাহ তিন দিনের মধ্যে খুনিদের আটক করা পুলিশের বাহাদুরিই বটে। তার মানে অপরাধীদের ধরা পুলিশের জন্য কোন ব্যাপারই না। তাহলে কেন পুলিশ ইবরাহিমের খুনি ধরতে পারছে না ? ''-২৭.০২.১১ (প্রথম আলো)
অথচ প্রতিদিনই এমন অনেক খবর বেরয়, অমুক আসামী জামিনে মুক্ত। মিথ্যা পেপার দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে খুনের আসামী পলাতক।...ইত্যাদি ইত্যাদি...
তিন-চারদিন আগের একটি জাতীয় পত্রিকা (অনেকগুলো পত্রিকা পড়ার কারণে নির্দিষ্ট করে মনে নেই) ভেতরের পৃষ্ঠায় একটি খবর ছিল-
জনৈক এমপি হুমকি দিয়েছেন- তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় কোন নিউজ প্রকাশ করা যাবে না- কার্টুন আঁকা যাবে না...
কেন জানি নির্বাচনের পর পরই আমাদের কম-বেশী সব জনপ্রতিনিধিই নিজেদের রাষ্ট্রের মালিক ভাবতে শুরু করেন... তারা আইন-শৃঙ্খলাকে নিজেদের কুক্ষিগত করে নেন... শুধু অফিস-আদালত নয়- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকেও দলীয় নিয়োগে বাধ্য করেন...
ব্যাংক-শেয়ার বাজার সব জনপ্রতিনিধিদের করায়ত্তে...
জনগণের কিছু নয়--- জনগণের কিছু নেই...
জনগণ আসলে কি চায়??
দেশের সব সম্পদ কুক্ষিগত করেও জনপ্রতিনিধিরা যদি দেশে আইনের শাসন কায়েম করতে পারতেন তাহলেও অন্তত্ জনমানুষ স্বস্তিতে ঘুমাতে পারত। হাড়ভাঙ্গা খাঁটুনির পরও ডাল-রুটির স্বাদ তার কাছে অমৃত হত।
আমাদের মাননীয় জনপ্রতিনিধিরা কি একটু ভাববেন? আইনের ছোট্ট একটি ফাঁক একটা পরিবারের জন্য কি চরম বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে...
একটি দেশের অনেক উন্নয়ন সুবিধাই অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠির দ্বার পর্যন্ত পৌঁছায় না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায় সরকার তাকে কিভাবে সুরক্ষা দিচ্ছে... তার সোশ্যাল ভ্যলু সে কি পাচ্ছে-- এটা হচ্ছে সরকারের কাছে জনগণের মূল্যায়ণের প্রধান মাপকাঠি।
অনেকের পক্ষে এ খবর রাখাও অসম্ভব যে -- সরকার কত হাজার কোটি ঋণ নিয়ে কত হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করছে। তাদের এ নিয়েও আক্ষেপও নেই যে, অসুস্থ্য হলে সে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা চাইতে পাচ্ছে না। সন্তান মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও তাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারছে না--এ নিয়েও তার আক্ষেপ নেই। এসব বিষয় নিয়ে সে রাষ্ট্রের দ্বারস্থও হয় না। কিন্তু সে যখন অন্যায়ের শিকার হয়, সে যখন রাষ্ট্রের মুখোমুখি হয় ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায়, তার উপর যখন সবলের অত্যাচার চেপে বসে, সন্ত্রাসী আর বখাটের অত্যাচারে যখন তার জীবন তছনছ হয়ে যায়--- তখন তার রাষ্ট্রের দ্বারস্থ না হয়ে আর উপায় থাকে না। এধরণের পরিস্থিতিতে একমাত্র রাষ্ট্রই পারে তাকে সুরক্ষা দিতে-সুবিচার দিতে।
আর রাষ্ট্র যদি তাতে ব্যর্থ হয় তাহলে?
তাহলে সেই রাষ্ট্রের রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট, রঙিন আতশবাজি, প্রযুক্তির ঝলকানি সবকিছু ব্যর্থ হয়ে যায়... কারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা সবার আগে।
রাষ্ট্র তার সর্বস্তরের জনতাকে নাগরিক সুরক্ষা দিতে বাধ্য। না পারলে সেটা ব্যর্থ রাষ্ট্র।।।।।।।