করোনা আমাদের অনেক অনেক বেশি শিক্ষা দিচ্ছে। বিশেষ করে সঞ্চয় কাকে বলে বা সঞ্চয় কি জন্য দরকার সেটা আমরা অনেকে বেশ ভাল করে বুঝতে পারছি! সঞ্চয়ের এই বুঝ সাধারণত সবাই বুঝে তবে বয়স বাড়িয়ে, বয়সের আগে সাধারণত আমরা কেহ বুঝতে চাই না যে, সঞ্চয় জরুরী বিষয়! বুড়া হয়ে সঞ্চয় না থাকলে কার কি হচ্ছে সেটা আমরা চারি পাশেই দেখতে পারছি! যাই হোক, সঞ্চয় নিয়ে অনেক কথা বলা যায়। কোন গার্মেন্সে কাজ করা একজন সিনিয়র অপারেটর কিংবা মালিবাগের মোড়ে সিদ্ধ ডিম বিক্রেতা সঞ্চয় করে করে যখন জায়গা কিনে ফেলে সেখানে আমরা অনেকে বড় চাকুরী, ব্যবসা করেও ভাড়া থাকতে হয় বা হচ্ছে, সঞ্চয়ের মনোভাব হীনতাই এর মুল কারন বলে মনে হয়।
আমি সব কিছুতে নিজকে উদাহরণ দেই। সঞ্চয় নিয়ে আমারো তেমন মাথা ব্যাথ্যা ছিল না কখনো। বছর আটেক আগে ল্যাবএইডের চাকুরী ছেড়ে প্রায় এক বছরে পুরা বেকার, পরের বছর সেমি বেকার থাকায় আমি বুঝেছিলাম যে, মানুষের জীবন কাকে বলে, মানুষের জীবনে অর্থের কি দরকার! অর্থ না থাকলে যে মানুষ কি কষ্ট ও ভয়াবহ সময় পার করে, তা আমি নিজে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছিলাম (অনেক কথা লিখলে পৃষ্টার পর পৃষ্ঠা পার হয়ে যাবে)। তবে আমি এই সময়ে অনেক কিছু খুইয়ে ফেললেও কিছু ব্যাপার আমাকে চরম বেইজ্জতির হাত থেকে বাঁচিয়েছে। ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সহ নিজের কয়েকটা এলিকো ইন্সুরেন্স থেকে আমি ধার নিয়ে ছিলাম বলে আমাকে ব্যক্তি কারো কাছ থেকে ধার করতে হয় নাই, ইজ্জতের ফালুদা হয় নাই, তবে এভাবে আরো কিছু দিন চললে কি হত এখনো ভাবলে অবাক হয়ে পড়ি, কি করে সেই দুঃসময় পার করেছিলাম!
আমি লেখায় উদার হলেও, বাস্তবে চুপচাপ স্বভাবের! বাস্তবে আমি সামান্য তর্কেও যেতে চাই না, কারন আমার অভিজ্ঞতা প্রচুর, কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা এখন বুঝি! আমি মোটামুটি যেমন আমার শেষ জেনে গেছি, তেমনি অনেকের শেষ কি হবে তাও কল্পনা পারি, এটা জীবনের জার্নি, জীবনের পথই আমাকে শিখিয়েছে! হয়ত সঠিক হবে না, তবে কাছাকাছি নিশ্চয় হবেই! ফলে নিজকে এখন অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ হিসাবেই চিন্তা করি!
যাই হোক, যা বলছিলাম, সঞ্চয়! আজ কাগজ পত্র ঘেটে দেখলাম, আগামী দিন দশেকের মধ্যে আমার একটা দুই হাজার টাকার ডিপিএস সাত বছরের ম্যচুয়িরিটি পাবে, ব্যাংকে একাউন্টের পাশাপাশি লিঙ্কে আমি একটা ফর্ম ফিলাপ করে এই ডিপিএস করেছিলাম, যার খোজ আমি কখনো রাখি নাই, তবে মাসে মাসে একাউন্ট থেকে এই টাকা কাটার মেসেজ ব্যাংক থেকে মোবাইলে পেতাম, বুঝতাম এটা চালু আছে! এখন হিসাব করে দেখলাম, যদি আমি আমার জমানো মুল টাকাও ফেরত পাই তবে আগামী তিন মাস আবারো বসে বসে খেতে পারবো! আর সময়, আমার মনে হচ্ছে, এই তো সেই দিন, ব্যাংকার ফজলে ভাই আমাকে একটা ফর্ম দিয়ে বললেন, সাইন করে যান, কেমনে সময় পার হবে টের পাবেন না! আসলেই সাত বছর কি করে পার হয়ে গেল!
যা বলছি, যে কোন মুল্যে সামান্য হলেও সঞ্চয়ের অভ্যাস করুন। এতে আপনার লাভ, ক্ষতি নেই! এখন যারা বয়সে তরুণ আছেন, আপনাদের সামনে এখনো অনেক সময়, যদিও এই সময়টা খারাপ যাচ্ছে! সামনে এখনো অনেক সময়, সঞ্চয় করতে ভুলবেন না। সঞ্চয়ের জন্য মনে হতে পারে আপনি কিছু কিছু জায়গা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, হয়ত কোন হোটেলে খাচ্ছেন না বা কোন স্থান দেখা থেকে বিরত হচ্ছে, হয়ত কোন আত্নীয় কাছে যাচ্ছেন না, বন্ধুদের থেকে দূরে! হতে পারে এই মাসে বা কয়েক মাসে জামা জুতা কিনছেন না, কি আছে তাতে, এই সঞ্চয়ের কারনে হয়ত আপনার সারা জীবন কারো কাছে হাত পাত্তে হবে না, এর চেয়ে আর বড় সন্মান কি হতে পারে! যারা আগে বুঝে যাবেন, আগে কাজ করবেন, তারাই এগিয়ে থাকবেন। বয়স ফুরানোর আগেই আপনি আনন্দে থাকবেন।
তবে একটা অনুরোধ থাকবে, যে কোন ইনভেষ্টের আগে যাছাই বাছাই করতে হবে, যেন আপনি প্রতারিত না হন। লাভ কম হলেও ইনভেষ্টের জায়গা নিশ্চয় হতে হবে। কাকে বা কোথায় ইনভেষ্ট করছেন বা কোথায় টাকা জমাচ্ছেন সেটা আগেই ভেবে নিতে হবে! ছোট ছোট সঞ্চয়ের জন্য সরকারের ব্যাংক গুলো উত্তম, অন্তত মুলধন হারিয়ে যাবার সম্ভবনা নেই বা যাবে না!
আনন্দে কাটুক আমাদের সবার জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৩৩