somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

Louisa (1950); লুইসা; শুধু দর্শক নয় নির্মাতাদেরও মাষ্ট ওয়াচ ছবি!

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Louisa (1950); লুইসা - শুধু দর্শক নয় নির্মাতাদেরও মাষ্ট ওয়াচ ছবি। ১৯৫০ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি নিয়ে অনেক কথা বলা যায়, অনেক তথ্য জেনে আপনি নিশ্চিত আবেগে আপ্লুত হবেন। সামান্য কিছু কথা বলবো, আমেরিকার নির্বাক যুগের থেকে যখন সবাক যুগে আসলো, মানে ছবি বানানোর যখন মুল যাত্রা, সেই প্রথম দশকে এমন এমন ছবি হয়েছে যে, যেগুলো না দেখলেই নয় এবং আমি মনে করি সেই ছবি গুলোই এখনো ধুয়ে ধুয়ে নুতন ছবি করা হচ্ছে এবং সেই হলিউডের ছবি গুলো এখনো ক্লাসিক বা পথ প্রদশক। হলিউডের এই ছবি গুলো সারা বিশ্বে এমনই হয়ে আছে যে, ছবি বানাতে হলে এই ছবি গুলো দেখতেই হবে বা এই ছবি গুলো থেকে শিক্ষা নিতেই হবে। পূর্ন দৈর্ঘ ছবি কাকে বলে, ছবির সিকোয়েন্স, ক্যামেরার কাজ, ঘটনা, পাত্রপাত্রী, সংলাপ, হাঁটাচলা ইত্যাদি এখনো অনুকরণীয়।

লুইসা তেমনি একটা হলিউডি ছবি, ছবির পরিচালক আলেক্সজান্ডার হল (তিনি অনেক নামকরা পরিচালক এবং বহু ছবি পরিচালনা করেছেন), ১৯৫০ সালের মে মাসের শেষ দিনে এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল এবং সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ছবি মুক্তির কিছু দিনের মধ্যেই প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার কামাই (অংকটা চিন্তা করে দেখতে পারেন) করে ফেলেছিল। ছবিটা একটা পূর্ন দৈর্ঘের হালকা কমেডি ছবি। কমেডির ফাঁকে ফাঁকে বিনোদনের প্রায় সব ব্যবস্থাই আছে এই ছবিতে, নাচ গান পার্টি হালকা রেমান্টিসিজম সব কিছুর এক অপূর্ব মিশ্রন এই ছবি। ছবির মুল নায়ক মিঃ রেনাল্ড রিগ্যান (যাকে আপনারা নিশ্চয় সবাই চিনে থাকবেন, পরে তিনি আমেরিকার দুই দুই বারের নির্বাচিত প্রেসিডন্ট ছিলেন) এবং তার চরিত্রের নাম ছিলো নোটন, পিউর চাকুরীজীবি এবং ভেজাল মুক্ত জীবন। পিতাহারা এই পরিবারে বৃদ্ধ মাতা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার মুল পরিবার, সাথে ছিল একজন গৃহকর্মী (কম সময়েও যার অভিনয় অসামান্য)।


ছবির ঘটনা আপনাদের সামনে বলে দেই, ছবি দেখতে বসলে আনন্দ পাবেন। নোটন পরিবারে পিতা মারা যাবার পরের ১০ বছরে সময়, তার মায়ের যেন কিছুতেই আর সময় কাটে না। এদিকে বউ শাশুড়ির মধ্যেও ধন্ধ লেগে আছে, মি নোটন সব দেখে যাচ্ছেন কিন্তু কিছু করতে পারছেন না, অবশেষে একদিন মায়ের সাথে বসলেন এবং সব কথা বলে দিলেন, পরিবারে কোথায় কেমন সমস্যা হচ্ছে। মায়ের মনে আঘাত লাগলো। মা নুতন জীবন শুরু করার চিন্তা করলেন এবং নুতন করে আবারো প্রেমে পড়লেন, এই মায়ের নামই লুইসা, যার নামেই ছবির নাম। মিসেস লুইসা ভাল্বাসেন একজনকে এবং তাকে বিবাহ করার সিধান্ত নেন কিন্তু মাঝে এসে বাগড়া দেয় নুতন প্রেমিক, যে কিনা আবার মি নোটনের বস (এই দুই বৃদ্ধের অভিনয় আপনাকে সারা জীবন মনে রাখতে হবে, এত চমৎকার অভিনয় এদের)। এদিকে মি নোটনের ১৭ বছরে মেয়েও প্রেম করছে, প্রেমিকা নিয়ে বিরাট দহরম ঘরে বাইরে, ছোট ছেলেও সব দেখে যাচ্ছে। মি নোটনের স্ত্রী একজন টিপিক্যাল গৃহিণী, এই চরিত্র আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটা ঘরে ঘরেই এখন!


যাই হোক, শেষে মায়ের পছন্দের দূর্বল পাত্রই জয়ী হয় এবং তারা বিবাহ করে নুতন জীবন শুরু করে! নানান ঘটনার মধ্যে দিয়ে, নানান হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে ঘটনার সমাপ্তি হয়। ১৯৫০ সালের মুক্তি পাওয়া ছবিতে এমন ঘটনা চিন্তা করতে পারাও পরিচালকের মুন্সীয়ানা বটেই এবং এই ঘটনার কারনেই হয়ত এই ছবি সারা বিশ্বে হিট হয়ে পড়ে।

কেন এই ছবি দেখবেন?
১। ততকালীন আমেরিকান পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা, যার সাথে আমাদের পরিবারের অনেক কিছুর মিল পাওয়া যায়।
২। সংলাপ, এই ছবির সংলাপ শুনলে এমনিতেই হেসে গড়াগড়ি খাবেন, এই ধরেন একজন সাধারন নাগরিক পুলিশকে বকা দিচ্ছে, তোমরা কিসের চাকুরী করো, হারিয়ে যাওয়া কাউকে খুঁজে বের করে দিতে পার না!
৩। বুড়োদের প্রেমের সাথে সাথে একটা তৎকালীন টিনএজ প্রেম দেখানো হয়েছে।
৪। ফটোগ্রাফি, অসাধারন (আপনাকে অবশ্যই তৎকালীন ভাবনায় নিয়ে যাবে)।
৫। পূর্নাং গল্প, সাধারন গল্পে, সমাধান শেষে (পূর্ন দৈর্ঘের ছবি হয়ত এই জন্যই বলে)।
৬। হাস্যরস, যারা হাস্যরস পছন্দ করেন, তারা না হেসে পারবেন না।
৭। কেন দৃশ্যই অহেতুক মনে হবে না, মনে হবে এর পরের ঘটনা এমনি হবে, এবং হচ্ছিলোও তাই।
৮। অভিনয়, প্রতিটা চরিত্রের অভিনয় দূর্দান্ত, এদের অভিনয় দেখে আপনি অন্যদের অভিনয় বিচার করতে পারবেন।
৯। ভাষা ইংরেজী হলেও এমন সহজ করে প্রতিটা সংলাপ লেখা হয়েছে যে, বুঝতে কারোই সমস্যা হয় না, খুব সহজ এবং সাধারন ইংরেজী ভাষা। যারা ভাষা না বুঝার জন্য ছবি দেখেন না, তাদেরো এই ভাষা বুঝতে সমস্যা হবার কথা নয়, এতই সাধারন সংলাপে লেখা। ছবি বুঝতে ভাষার ব্যবহার প্রয়োজনীয়।
৮। নির্ভেজাল আনন্দ
ইত্যাদি ইত্যাদি

এই ছবিটাকে আমি মুভি লাভার্সদের জন্য একটা মাষ্ট ওয়াচ ছবি বলবো এবং সাথে এই কথাও বলবো যে, যারা ছবির নির্মাতা এবং আগামীতে ছবি বানাতে চান তারাও যেন এই ছবি দেখেন এবং ছবি কি, কাকে সিনেমা বলে সেটার ধারনা এই ছবি থেকে পাবেন। সিনেমা নির্মান মুলত একটা বিরাট অভিজ্ঞতার ব্যাপার, এমন ছবি না দেখলে ছবি নির্মান হয়ে উঠবে না। বিশেষ করে যারা ছবি নির্মানে উৎসাহী, তাদের আমি আরো পরিস্কার করে বলবো, হলিউডের ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে নির্মানকৃত ছবি গুলো দেখুন (সাদাকালো ছবি সহ)।

এই প্রসঙ্গে আরো একটা কথা বলে দেই, যারা এই সময়ের (পুরানো) মধ্যে নির্মানকৃত বলিউড তথা বোম্বের হিন্দি ছবি গুলো দেখেন বা দেখেছেন তাদের অভিজ্ঞতা কম নয়, তবে আমি আমার হলিউডের এই সময়ের ছবি গুলো দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, এই যে আপনার বলিউডের ছবির কথা বলেন, এই সব ছবি মুলত হলিউডে পুরানো ছবি গুলোর নকল ছবি, বোম্বে মুলত সেই সময়ে কয়েকটা এমন ইংরেজী ছবি দেখে একটা হিন্দি ছবি বানানো হত, জুড়ে দেয়া হত ফ্যান্টাসী ও গান (গানের প্রতি এই উপমহাদের মানুষের আবেগ বলে শেষ করার মত না)। ইংরেজী এই ছবি গুলোই ছিল একমাত্র মৌলিক ছবি, যদিও এখন আর এমন চিন্তা করা যায় না।

সবাইকে ধন্যবাদ, ছবিটা আমি মুলত একটা এপস (ওল্ড হলিউড ফিল্ম) দিয়ে মোবাইল ভায়া হয়ে বড় টিভিতে দেখেছিলাম। পরে ইউটিউবে সার্চ করে দেখি, এই ছবি ইউটিউবে আছে! অহেতুক মাঝে মোবাইলের ব্যাটারী শেষ করলাম। আপনারা যারা ছবিটা দেখতে চান, তাদের জন্য লিঙ্ক তুলে দিলাম। আগেই বলে দিলাম, এটা একটা মাষ্ট ওয়াচ ছবি, না দেখলে পাস্তাবেন এবং এই ছবি দেখে শেষ করে নিশ্চয় আমাকে স্মরণ করবেন যে, উদরাজী ভাই সত্যই একটা ভাল হাসির ছবি সাজেষ্ট করেছেন। আবারো ধন্যবাদ।

ভালবাসা নিন, আনন্দে সবাই জীবন কাটান।


* মি রেনান্ড রিগানের অভিনয় আমাদের দেশের মি বুলবুল আহমেদের কথা মনে করিয়ে দেয়, আমাদের হিরো মি বুলবুল আহমেদ এমনি নিরীহ চরিত্রের জন্য অসাধারন অভিনেতা ছিলেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৬
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান ইসরাইলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ আর আমাদের সুন্নী-শিয়া মুমিন, অ-মুমিন কড়চা।

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

(ছবি: © আল জাযীরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক)

শ্রদ্ধেয় ব্লগার সামিউল ইসলাম বাবু'র স্বাগতম ইরান পোষ্টটিতে কয়েকটি কমেন্ট দেখে এই পোষ্ট টি লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি গরীব মানুষ, লেখতে পারিনা। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×