somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির পাতা থেকে - ১: প্রিয় বন্ধু এনামুল আজিম (যে হতে পারতো আরেক রামানুজন)

২৫ শে জুন, ২০০৯ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে ৬ বছর আগে ২০০৩ সালের এই সময়ে (২৬ শে জুন), প্রচন্ড ব্রৃষ্টি হচ্ছিলো। চট্টগ্রাম শহরের আনেক রাস্তা পানিতে সয়লাব। সগরিকা রোডের কাছেই এক হোটেলে দুপুরের খাবার জন্য রিক্সা থেকে নেমে এলো একটি ছেলে। ফুটপাথের নিচের নালায় প্রচন্ড গতিতে পানি বয়ে যাচ্ছে। আনেক জায়গাতে পানির জন্য কোনটা ড্রেন কোনটা রাস্তা/ফুটপাথ বোঝা মুশকিল। ফুটপাথ পার হতে গিয়ে ছেলেটি এরকম একটি নালায় পা দিয়ে ফেলেছিলো। মুহুর্তের মধ্যেই দূরন্ত গতির পানি তাকে আপন করে নিলো .........................

এভাবেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলো এনামুল আজিম রানা, আমার অত্যন্ত প্রিয় এক বন্ধু; কায়কোবাদ স্যারের মতে যে হতে পারতো আরেকজন রামানুজন


এনাম এর সাথে পরিচয় স্কুল জীবন থেকে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে একই সেকশনে পড়তাম আমরা। আমাদের সাথে কখনো ফুটবল ক্রিকেট খেলতে আসত না সে, বরং তার আকর্ষন ছিলো ভিডিয়ো গেইমস-এ। টিফিন পিরিয়ডে প্রায়-ই চলে যেত স্কুলের পাশেই ভিডিয়ো গেইমস-এর দোকানে। আনেক সময় দেরি করে আসায় শাস্তি পেত স্যারদের কাছে। ওই সময় পর্যন্ত এনামকে এরকম-ই জানতাম।

ক্লাস এইট পর্যন্ত লেখাপড়াতে তেমন নজরে না আসলেও নাইন এ উঠার সময় ফাস্ট হয়ে আমাদের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। তার পর থেকেই আমরা আবিস্কার করলাম ওর গণিত প্রতিভা। ও সেই সময়ে গণিতের এমন আনেক বিষয় নিয়ে কথা বলতো যেগুলোর মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারতাম না। তবে ওকে আমরা যারা ভাল জানতাম, তারা মনে করতাম আমাদের আনেক গণিত স্যারকে ও পড়াতে পারবে। ক্লাস নাইন-টেন-টেস্ট পরিক্ষায় ফাস্ট হয়েও ও SSC তে অল্পের জন্য stand করতে না পারাটা আমাদের কাছে অদ্ভুত লেগেছিল (সেই বার আমাদের স্কুল থেকে science থেকে মাত্র ২ জন stand করেছিল /:) )।

SSC পরিক্ষার পর আনেক বার ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। ও তখন ধর্ম আর দর্শন নিয়ে লেখাপড়া করছিলো। ওই বয়সে এই সংক্রান্ত এত এত বই দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেই সময়ে ও কার থেকে যেন একটা Programmable Calculator পেয়েছিলো। তাই দিয়ে একটা গেইম এর প্রোগ্রাম করে আমাকে অবাক করে দিয়েছিল।

কলেজ লাইফ এ আলাদা হয়ে গেলেও মাঝে মাঝে ওদের বাসায় যেতাম। তখন দেখেছিলাম গণিতের প্রতি ওর তীব্র আকর্ষন। ওকে মাঝে মাঝে বলতাম, "এইসবে এত সময় দিলে বইয়ের পড়া কবে করবি? " ও হাসতো আর বলতো "এত পড়তে হয় না, পরীক্ষার আগে কয়দিন পড়লেই হবে।"

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার দিন হল থেকে বের হয়েই ওর সাথে দেখা। ও এমন একটা প্রশ্ন নিয়ে আলাপ করছিলো যেট ছিলো সবচেয়ে সহজ। দুই-তিন লাইনেই যেটা হয়ে যায়; আর ও বলছিলো ওর জায়গায় (বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটা প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা দেয়া থাকে) পোষায় নাই !!! আমি ওকে সমাধান বলে দিতেই ও হাসতে হাসতে বলল এতো সহজ সমাধান যে করতে পারে নাই সে কিভাবে বুয়েটে চান্স পাবে!!! সে ঠিক-ই চান্স পায় এবং তা প্রথম দিকেই।

বুয়েটে ভর্তির পর ওর সাথে দেখা সাক্ষাত খুব কম হোত। সে মাত্র দুইবার আমার রুমে এসেছিল। আমিও খুব কম যেতাম। বুয়েটে ভর্তির বেশ কিছুদিন পর ওর সাথে দেখা, জিজ্ঞাস করলাম কম্পিউটার কিনেছে কিনা? সে বলে ২ বছর না কিনলেও হবে ...... এই সময় যা শিখাবে তা তার মাথাতেই আছে। আমিও অবলিলায় তা বিশ্বাস করলাম। কারন এইটা এনাম। তার রুমে দেখতাম তার ঘুমানোর জায়গা ছাড়া সব জায়গাতে শুধু বই আর বই। বেশীর ভাগ-ই ইংরেজী ..... সাইন্স ফিকশন থেকে শুরু করে গণিত, ধর্ম ইত্যাদি। বই পড়ার নেশার সাথে সিনেমা দেখার-ও নেশা ছিল, বিশেষ করে বাংলা সিনেমা। সবসময় হাসি খুশী দেখতাম ........ তবে পরীক্ষার সময় মনে হোত কিছুই খেয়াল করতো না। কোন এক টার্ম ফাইনালের সময় একদিন ক্যান্টিনে ওর পাশে বসেই খেলাম, আরেক বন্ধুর সাথে গল্প ও করছিলাম, কিন্তু ওর কোন হূস নাই, গভীর ভাবে কি যেন চিন্তা করছে.................


রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে ও আজ আমাদের মাঝে নেই। এই সব কিছুই আজকে স্ম্রৃতি। ওর মোটা চশমা, হাসি মাখা মুখ, গভীর চিন্তার চেহারা মাঝে মাঝেই মনকে নাড়া দিয়ে যায়। আমি প্রার্থনা করি এনাম কে আল্লাহ বেহেস্ত নসিব করুক। ওকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুক।

ওর অনেক কাজের কথা আমি শুনেছি, আশা করি সেগুলো আলোর মুখ দেখবে।
এনাম এর বড় ভাই, সহব্লগার শ্রদ্ধেয় পারভেজ ভাই কে এই ব্যাপারে সর্বাত্মক সহায়তা করার ইচ্ছা রাখি।


এনাম কে নিয়ে কায়কোবাদ স্যারের লেখা - পারভেজ ভাই এর ব্লগ থেকে
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০০৯ ভোর ৫:৩৬
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×