somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি : মৃত্যু যার পায়ের তলে(সুমন প্রবাহন বিষয়ে)

২৬ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেহেদী হাসান

পাঁচটার সময় একটা ফোন এসে শুধু জানাল সুমনের বাসায় আয়। কিন্তু ফোনের ভাষায় অন্যকিছু ছিল। গিয়ে সুমনের বাসায় ঢুকব অমনি আরেক ফোন এসে জানিয়ে গেল কবি সুমন প্রবাহন আর নেই। মনে হল, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছি। মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেল। উপরে ওঠা সম্ভব হল না, স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম।

এক ধাক্কায় চোখের সামনে রঙিন, সাদাকালো বিস্তর নেগেটিভ ভেসে এল। মনে পরে, জহুরুল হক হলের ছাদে মদ খেয়ে পড়ে থাকা; বারান্দায় ডুকরে কেঁদে ওঠা, লঞ্চের ছাদে চিৎকার করে গাওয়া-যদি মরি কোন দিন নদীর উজানে/আমারে ভাসায়ে দিও ভাটিয়ালি গানে।একসময় সকাল-সন্ধ্যা কাটত একত্রে। মাঝখানে লম্বা বিরতি; দিন আগে একত্রে তিন দিন বাস। বহুদিনের জমানো, না পড়া কবিতাগুলো পড়া হল। মনে হল জীবন মৃত্যুর দ্বৈত স্বত্তা তাড়া করছে অনুক্ষণ তাকে। এর মধ্যেই লিখে ফেলল একটি গল্প। আসলে সে গল্প লেখে নি। এঁকেছে নিজের নীল পোর্টেট। মজা করে বললাম, এই গল্প কিন্তু তুই ছাপবি না, তোর মরার পর আমরা ছাপবো। কে জানত এই মহেন্দ্রক্ষণ এত তাড়াতাড়িই!

প্রাণশক্তি উছলে পড়া টগবগে এক কবি হঠাৎ বছর তিনেক আগে থেকে মন বৈকল্যের অভিযোগে গাদা গাদা পিলে নিথর। ডাক্তারের নির্দেশে দরজাবন্দি কবিতা। মধ্যে একদিন দেখা হলে, অস্ফুট আর্তনাদ একটু বের হল আবার কাজ করবার। বলেছিল,ইচ্ছে হয় কোদাল হাতে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ি।

জীবন্ত লাশ হয়ে আমাদের বিচরণ। রোবট আর মানুষের ফারাক অতি সামান্য। মাথায় ঘুরপাক খায় সংসারের জটিল অংক। কি করে বুঝবো, কবিতা লেখাও একটি কাজ। যদি নাও তুমি নিষ্কাম কর্ম হিসেবে? কাব্যের ঘোরকে বুঝিয়ে দেবে মুখ, চোখ, হাত, পা দিয়ে-এর কোন পণ্য মূল্য নাই। লিখেছিল ও, বাড়িতে ছোট্ট একটি রেইনট্রি গাছ আছে আমার, ওর গোড়ায় এক সময় কাদা আর জল দিয়েছিলাম, আমার অর্জন বলতে ও টুকুই। সত্যিই তাই!

জমা হয়েছিল বেশকিছু কবিতা। যদিও দুই মলাটে একক হয়ে কারো হাতে পৌঁছায়নি। পাণ্ডুলিপিটা সারাক্ষণ আগলে রাখত। পেলব ছোঁয়ায় ভরিয়ে দিত যেন নাড়িছেঁড়া সন্তান। ওর ভাষায় "যে মরে মরুক, আমি ঠিকই বেঁচে থাকব
কবিতায়,মানুষের ভালবাসায়"।

মা মারা যাবার পর দুটো কথা বলবে এমন আদম সন্তান ছিল না সমাজে। কোথায় না আশ্রয় খুঁজেছে সে? নিয়মমত সবাই সযতনে এড়িয়ে গেছে তাকে; সে আজিজ মার্কেট, ছবির হাট, মধুর ক্যান্টিন কিংবা হোক ঘর। ঘটনায় অংশগ্রহণ ছিল আমার-আমাদের। পাড়ার একটি কুকুর তার জন্য এগিয়ে এলেও মালিক যে ওই আদম সন্তানেরই জাত। অসহ্য মাথাব্যথায় দেয়ালে মাথা ঠোকাত, ঘুমুতে পারত না সারারাত। আমরা কী করে বুঝব কত কষ্টে ওকে লিখতে হয়েছিল,"ঈশ্বরের অসীম একাকিত্বও আমার একাকিত্বের কাছে একা।" এমনি করেই তৈরি হয়েছিল তার চলে যাবার দশা।

সুমন আসলে মরেনি। জীবন-মরণের সীমা সে আগেই পেরিয়ে গিয়েছিল। মেঘের দেশে ছিল তার বাস, ছিল মেঘের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ। যদিও চাইছিল না, কিন্তু আমরা তাকে বাধ্য করেছি দেহান্তর করাতে। জবাবদিহিতার জন্য আমরা যেন তৈরি থাকি। মুখ নীলাভ হয়ে আছে, যেন সকলের পাপ শুষে নিয়ে মুক্তি দিয়ে গেছে আমাদের; আর ধ্যানমগ্ন চোখ ইঙ্গিত করেছ নিচুতার উর্ধ্বে ওঠার। ভুল লিখেছিলি সিগারেটে এক কাঠিতে আগুন ধরে ক'জনার?এক নয় বন্ধু, তিন পুড়িয়ে চার নম্বর কাঠিতে যে আগুন লেগেছে তা চির অগ্নিময়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৯
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×