somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় কবিতা

১৬ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আব্দুল হাই শিকদারের একটি কবিতা পড়ে ভালো লাগলো। কবিতাটিতে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ'র আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি'র ছায়া দেখা গেলেও এর প্রেক্ষিত ভিন্ন।

কসম

আবদুল হাই শিকদার

আমি সেরাতুল মুসতাকিমের ভাষায় বলছি,
আমি কোরআন বেদ বাইবেল ত্রিপিটকের উপর হাত রেখে বলছি,
আমি আমাদের উর্বর শস্যক্ষেত, নিসর্গ নীলাকাশের নামে বলছি,
আমি উত্তরের একলা নদী দুধকুমারকে স্পর্শ করে বলছি,
আমি আমাদের মহান পূর্বপুরুষদের ত্যাগ ও সংগ্রামের শপথ করে বলছি,
আমি আমার সকল সামর্থ্যকে একত্রিত করে বলছি।

আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতার নাম আমি বদলাতে পারবো না।
আমার মমতাময়ী মায়ের নাম আমি বদলাতে পারবো না।
আমার শৈশবের গ্রামের নাম আমি বদলাতে পারবো না।
আমার প্রিয়তম নারীর নাম আমি বদলাতে পারবো না।
আমার শিশুর তুলতুলে গাল আমি বদলাতে পারবো না।

যারা আমার মাতৃভূমিকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করার জন্য বিছিয়েছে মাকড়সার জাল
পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে,
যারা ক্ষতবিক্ষত লাশের উপর হিংস্র উল্লাসে বর্বর নৃত্য করেছে,
যারা ড্রাকুলার মতো পান করেছে মানুষের রক্ত,
বিশ্বময় পাঠিয়েছে ভুল এবং বীভতস বার্তান্ধ
ন্ধতাদের কথায় আমি বদলাতে পারি না।

আমি উত্তরের ভাওয়াইয়ার আকাশকে বদলাতে পারবো না।
জালালের ভাটিয়ালি গান আমি বদলাতে পারবো না।
লালনের একতারা বদলাতে পারবো না।
হাছন রাজার নেশার ঘোর আমি বদলাতে পারবো না।
আমি আব্বাসউদ্দীনের বদলে আদভানিকে ভালোবাসতে পারবো না।
আমি পাগলা কানাইয়ের বদলে পবন দাশকে নিতে পারবো না।

আমি মায়ের বদলে মাসি কিনতে পারবো না।
আমি হীরার বদলে কাচ কুড়াতে পারবো না।
আমি দাদীকে দিদা বলতে পারবো না।
আমি পানির বদলে জলপান করতে পারবো না।
আমি কপোতাক্ষের বদলে ময়ূরাক্ষীকে আপন করতে পারবো না।
আমি আড়িয়াল খাঁর বদলে দামোদরকে ভাই বলতে পারবো না।

আমি লালবাগের দুর্গের বদলে ফোর্ট উইলিয়াম নিতে পারবো না।
আমি ষাট গম্বুজের বদলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নিতে পারবো না।
আমি পল্টনের বদলে গড়ের মাঠ নিতে পারবো না।
আমি প্রবীর মিত্রের বদলে প্রসেনজিতকে নিতে পারবো না।
আমি ভাই গিরিশ সেনের বদলে গয়াকাশি নিতে পারবো না।
আমি শিলাইদহের বদলে শান্তিনিকেতন নিতে পারবো না।
আমি নজরুলের বদলে নরেন্দ্র মোদিকে নিতে পারবো না।

আমি শেরে বাংলার বদলে মহাত্মা গান্ধীকে নিতে পারবো না।
আমি ভাসানীর বদলে ভক্ত প্রহল্লাদ সাজতে পারবো না।
আমি হোসেনী দালানের বদলে হাওড়া ব্রিজ দেখতে পারবো না।
আমি সোনারগাঁর বদলে সোনাগাছি যেতে পারবো না।

শরীয়তুল্লাহর বদলে শিয়ালদা,
শমশের গাজীর বদলে শরীর,
শাহজালালের বদলে শবরমতী,
রমনার বদলে রাজঘাট,
কুমিল্লার বদলে কলকাতা নিতে পারবো না।
আমি ঢাকার বদলে দিল্লিকে প্রণাম করতে পারবো না।
আমি ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’র বদলে ‘সেই সময়’ নিতে পারবো না।
আমি আবু জাফর শামসুদ্দীনের বদলে সুনীলকে নিতে পারবো না।
আমি বিষাদ সিন্ধুর বদলে সুধা সিন্ধু হতে পারবো না।
আমি মৈমনসিংহ গীতিকার বদলে গাদ্দার নিতে পারবো না।
আমি দীনেশ সেনের বদলে মূর্তিমান প্রলোভন নিতে পারবো না।

যারা আমার পদ্মাকে শুষ্ক বালুতে পরিণত করেছে,
যারা টিপাইমুখ দিয়ে আমার কল্লোলিনী মেঘনাকে হত্যা করতে চাচ্ছে,
যারা আমার তারুণ্যকে মাদকাসক্ত করেছে,
যারা আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে নৃশংস শান্তিবাহিনী,
যারা আমার হূদয়কে করেছে বিভেদ ও হানাহানিতে নিক্ষেপ,
যারা আমার ভাইকে করেছে ভাইয়ের ঘাতক,
যারা আমার ডান হাতকে লাগিয়ে দিয়েছে বাম হাতের বিরুদ্ধে,
তাদের কথায় আমি বদলে যেতে পারি না।

আমি আমার লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তে ভেজা নিশানকে ধুলায় গড়াতে দিতে পারি না।
আমি আমার শহীদ ভাইদের রক্তচিহ্ন ফেলে শ্বাপদসঙ্কুল পথে যেতে পারি না।
আমি আমার স্বাধীনতার বদলে সোনার শিকল গলায় পরতে পারি না।

আমি আমার সেনাবাহিনীকে ভাড়া খাটা বেশ্যায় পরিণত করতে পারি না।
আমি অভিশপ্ত ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে পারি না।
আমি ওয়াশিংটনের মাস্তানির নিচে বুক পেতে দিতে পারি না।
আমি তেলআবিবের টাকায় মানবাধিকার প্রচার করতে পারি না।

যারা আমার বিডিআরকে ধ্বংস করেছে,
যারা আমার সেনাবাহিনীকে হত্যা করেছে পিলখানায়,
যারা আমার ভাইদের প্রতিদিন হত্যা করে সীমান্তে,
যারা আমার মাথার ভিতরে তৈরি করেছে কালচারাল কলোনি,
যারা আমার স্বাধীন মানচিত্রকে করেছে অরক্ষিত,
যারা ন্যায় ও সত্যকে হত্যা করছে প্রতিদিন,
যারা আমার রাত্রির আকাশকে করেছে চাঁদশূন্য,
যারা সূর্যের মুখে ছিটিয়েছে নোংরা বর্জ্য,
যারা জীবন থেকে উধাও করেছে নিরাপত্তান্ধ
যারা আমাদের নিক্ষেপ করেছে অশ্রদ্ধা ও অসহিষ্ণুতায়,
যারা আমাদের প্রতিটি সূর্যোদয়কে করেছে অস্থির ও টালমাটালন্ধ

কসম পলাশীর আম্রকাননের,
কসম ঈশা খাঁর সমরজয়ী অমর তরবারির,
ন্ধকসম আল্লাহর, তাদের কথায় আমরা বদলে যেতে পারি না।

আমি মঙ্গাপীড়িত ধরলার ক্ষুধার্ত রোদন ধ্বনির শপথ করে বলছি,
আমি দক্ষিণে আছড়েপড়া ক্ষুব্ধ সমুদ্রের গর্জনের কসম খেয়ে বলছি,
আমি মেঘনার প্রতিটি ঢেউয়ের দোলাকে বক্ষে ধারণ করে বলছি,
আমি পদ্মার ব্যথিত বালু মাথায় স্থাপন করে বলছিন্ধ

যারা আমাদের বদলাতে চায় আমরা তাদের বদলে দেব।
মীরজাফর বিভীষণকে বানাবো মীর মর্দন কিংবা মেঘনাদ।
শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রয়কারীদের দেনা শোধ করে
এই মৃত্তিকায় ফিরিয়ে আনবো,
ন্ধএই মায়ের পায়ের কাছে।

তারপর বলবো কেন তুমি আধিপত্যবাদের কাছে হূদয় বন্ধক দিয়েছিলে?
তারপর বলবো কেন তুমি খ্যাতি ও প্রতিপত্তির লোভ?
তারপর বলবো কেন তুমি সিংহাসন এবং সিংহাসন?

দ্যাখো এই মাটি আমার মায়ের পবিত্র জায়নামাজ।
দ্যাখো এই মাটি আমাদের প্রপিতামহদের ত্যাগের কথা বলে।
দ্যাখো এই মাটি তিতুমীরের মতো টকটকে লাল।

এবার বল কেন তুমি তোমার ভাইকে সাম্প্রদায়িক বলেছো?
এবার বল কেন তুমি সমঝোতা ও সম্প্রীতির বদলে
ঘৃণা এবং হানাহানিকে মোক্ষ জ্ঞান করেছো?
এবার বল কেন তুমি তোমার মাকে কালিমা মলিন করেছো?

তারপর আমরা আমাদের সম্মিলিত পাপ যমুনার জলে ধুয়ে নেবো।
তারপর এই পাপকে আমরা পাঠাব মৃত্তিকার গহ্বরে।
তারপর এই পাপ ছাপপান্ন হাজার বর্গমাইলের বাইরে পাঠাব।
তারপর এই পাপ বস্তাবন্দি করে পাঠিয়ে দেবো আধিপত্যবাদের উঠানে।

ন্ধতারপর বলবো এই পাপ ধারণ করার জন্য আমার মাতৃভূমি প্রস্তুত নয়

কসম সালাম বরকত রফিক জব্বারের,
কসম ১৯৭১ সালের,
কসম কর্ণফুলীর তীরে অপেক্ষমাণ আমাদের ভবিষ্যতের,
কসম শাহজালালের আজান ধ্বনির,
কসম আমার মন্দির মসজিদ গির্জা প্যাগোডার,
কসম লক্ষ লক্ষ শহীদের প্রতি ফোটা রক্তের,
ন্ধকসম কসম কসম আমরা এইসব করবো।

তারপর জমজমের পানিতে ধুয়ে নেব মাতৃভূমির শরীর।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:৪৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×