somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একা

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রকিব সাহেব দেওয়ানি মামলা দেখেন। তাই এই বয়সেও নিজেকের পেশাটা ধরে রাখতে পেরেছেন হয়তো। বাসায় ফিরেই গায়ে জড়ানো কালো গাউনটা খুলে রাখতে গিয়ে উকিল মশাইয়ের ক্যামন যেন অদ্ভুত একরকম শূন্যতা অনুভূত হতে লাগলো। বুড়িকে তো কিছুক্ষণ আগেই হাসপাতাল দেখে বাসায় ফিরলেন। কিন্তু মনে হচ্ছে কতকাল হয়ে গেছে। আর ছেলেমেয়ে তো আছেই সাথে। কিন্তু মনে হচ্ছে বুড়ি অনেক বেশি একা। তিনি নিজেও অনেক একা হয়ে গেছেন। এতো বড় বাড়ীটাতে বুড়ো একা একা প্রেতাত্মার মত হেঁটে বেড়ান।

বুড়ি নামটা তারই দাওয়া ছিল। তখন তিনি এক তাগড়া যুবক সবে মাত্র পাশ করে বেরিয়েছেন। চাকরিতে ঢুকবেন ঢুকবেন অবস্থা। আর অমনি দুম করে বিয়ে হয়ে গেল। মেয়ের বয়স তখন হবে হয়তো ষোল/সতেরো! বিয়ের রাতে সেকি কান্না। কিছু বলতেও পারছিলেন না। বলতে গেলে কান্নার শব্দ যেন আরো বেড়ে যায়। মেয়ে বলে কিনা এক বুড়ার সাথে বিয়ে হল! আর কি তেজ! শুনে হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন একটু। এটা কোন কথা হল? মাস্টার্স পাশ ছেলে বুড়া! উনিও সাথে সাথে নাম দিয়ে দিলেন বুড়ি। সেই থেকেই শুরু সংসার জীবনে। একাকীত্বের জীবনের সমাপ্তি। এক ছেলে আর তিন মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিলেন। নাতিনাতনিরও মুখ দেখা হল। এখন না হয় বয়স হয়েছে। কিন্তু চামড়ায় ভাঁজ দিয়ে কি আর মনটাকে ঢেকে রাখা যায়? এখনো যেন সেই মাস্টার্স পাশ করা সেই যুবক তিনি। আর কিন্তু সেই ষোল/সতেরো বয়সের সেই আদরের বুড়ি আর সেই বুড়ি নেই। তার বয়সটা বেড়ে গেছে।

চেম্বার থেকে সরাসরি যখন দেখতে গিয়েছিলেন, বুড়ি হাতটা ধরে খুব সুন্দর করে বলছিল, "ক্যামন আছো?" বুড়ো কিছু বলতে পারেন না। সেই স্নেহ জিজ্ঞাসার উত্তরটা অমায়িক হাসি দিয়েই দিলেন। "আব্বা, আম্মা সকাল থেকে কিছুই খায় নাই। স্যালাইন দিয়ে আর কতটুকু কাজ হবে?" ছেলের কথাটা শুনে মনে উদ্বিগ্নতা আর ভয় জন্মালেও সেটা চেহারায় প্রকাশ করলেন না। এই সময়টা বুড়িকে হতাশ করার নয়। পাশে বসে বুড়ি হাতটা দুহাতে ধরে কোলে নিয়ে বললেন, "বাসায় ফিরবে না? খেয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় চলে এসো।" আরো কিছুক্ষণ থাকলেন। বুড়িকে একটু স্যুপ খাওয়ানো গেল। বেশি খেতে পারেননি বুড়ি। পুরো মুখে ঘা হয়ে গিয়েছে। ডাক্তার আগের সব ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছেন বেশ কয়দিন হল। ক্যান্সার পুরো মস্তিষ্কে ছড়িয়ে গেছে। আর কোন চিকিৎসা নেই। দুই/চার হপ্তা হয়তো বাঁচবে। যাবার সময়ে বুড়ি বলেছিলেন, "কাউকে ডাকবা? তওবা পড়াতো আমাকে!" কিছু না বলে চলে আসতে হল। এই কথার উত্তর তার কাছে নেই।

এসব সাত-পাঁচ ভেবে ভেবে ইজি চেয়ারে বসে একটা সিগারেট ধরালেন বুড়ো। অ্যাশট্রেতে এখনো কালকের ছাই পড়ে আছে। বাসায় তিনি ছাড়া কেউ নেই।

হঠাৎ পাশে টেবিলে ফোনটা বেজে উঠলো, ছেলের ফোন। কল রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে ছেলের কান্না বিজড়িত অস্পষ্ট কন্ঠস্বর শোনা গেল। বুড়ো কল কেটে দিয়ে সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে রেখে তারপর শরীরটা ইজিচেয়ারে এলিয়ে দিয়ে চোখটা বন্ধ করে ফেললেন।

বয়সের চাপটা এখন মনে হল খুব বেশি অনুভব করছেন বুড়ো। ছেচল্লিশ বছর পর আজকে অনেক একা লাগছে রকিব সাহেবের।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×