somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আগুনে পাখি
আমি সাধারন একজন মানুষ। সম্প্রতি ডাক্তার হয়েছি। চেষ্টা করি সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরতে। কোন দলবিশেষের প্রতি আগ্রহ/আক্রোশ নেই। সত্যকে তুলে যে ধরে আমি তারই পক্ষে

অ্যান্টিবায়োটিকঃ আসলে কি খাচ্ছি ?

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাঙালির একটা প্রচলিত কু-অভ্যাস হলো সামান্য অসুখেই ঔষধ সেবন করা।
আমরা সবাই জানি আমাদের শরীরের নিজস্ব একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, যাকে Immune System বলা হয়। শরীরে সামান্য কাটা-ছেড়া থেকে শুরু করে বড় অসুখ - যাই হক না কেন, শরীর নিজের ক্ষমতা দিয়ে প্রথমে তা সারাবার চেষ্টা করে। যখন তা ব্যর্থ হয়, তখন সেবন করতে হয় ঔষধ।

অবশ্য কিছু রোগে / শারীরিক অবস্থায় (AIDS, ডায়াবেটিস, বার্ধক্য) এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়, ফলে উচ্চমাত্রার ঔষধ দরকার পড়ে - এটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।

আমরা ঔষধের দোকানে যেসকল ঔষধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিনতে পারি তাদেরকে বলে Over The Counter Drug/ OTC ঔষধ। এদের মধ্যে আছে প্যারাসিটামল, ওমিওপ্রাজল, অ্যান্টি-হিস্টামিন ইত্যাদি।

এখন, আমাদের মধ্যে ইদানীং একটা প্রচলন শুরু হয়ে গেছে যে জ্বর, সর্দি বেধে গেলেই মুড়ির মত নানান ব্র্যান্ডের অ্যান্টিবায়োটিক গেলা শুরু হয়ে যায়।

আপনাকে এখন প্রথমে জানতে হবে, What Is Antibiotics ?
=> Anti মানে বিরুদ্ধে, Biotics মানে অণুজীব (এখানে ব্যাক্টেরিয়াকে বোঝানো হয়)। সুতরাং ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে যে ঔষধ, তাকেই অ্যান্টিবায়োটিক বলে ( সহজতর অর্থে )।



এখন মনে করুন, আপনার দেশ বরাবর ধেয়ে আসছে যুদ্ধজাহাজ,
আপনাকে একটা পিস্তল দিয়ে জাহাজটা আক্রমণ করতে বলা হল -- কোন লাভ হবে না।

তেমনি আমাদের দেহে সর্দির কারণ নানারকম ফ্লু ভাইরাস, আর ভাইরাস জ্বরের কথা তো জানেনই সবাই।
এদের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে বিন্দুমাত্র লাভ হবে না।
আপনি হয়তো ঔষধ খেয়ে সাময়িক তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন। 250/500 mg এর সিপ্রো খেয়ে ফেললেন সামান্য জ্বরেই - ভাবলেন মেরে ফেললাম সব জীবাণু।

বাহ!! কি ভালো কথা :)

মেরে ফেলেছেন, অবশ্যই মেরে ফেলেছেন। তবে সেটা জ্বর বা সর্দির জীবাণুকে নয়, আপনার নিজের দেহের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলেছেন।
আর সাথে কি করছেন জানেন ?
যে অপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো বেঁচে গেল, তারা ওই ঔষধের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলবে। অর্থাৎ, একটা পর্যায়ে গিয়ে ওই ঔষধ আপনার শরীরে আর কোন কাজ করবে না।

একে বলা হয়, Antibiotic Resistence.

দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে আমরা সামান্য অসুখেই উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক কিছু ক্ষেত্রে আমরা নিজেরা বা, মাঝে মাঝে ডাক্তারের কারণে সেবন করি। ফলে ওই ঔষধগুলো যখন শরীরে প্রকৃত দরকারে আসে, তখন আর কাজ করেনা।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অনেক চিকিৎসাবিজ্ঞানী এই অভিমত দিয়েছেন যে, এমন একটা সময় আসবে, যখন মানুষ সামান্য সর্দিজ্বরেই মারা যাবে। কথাটা এখনকার প্রেক্ষাপটে হাস্যকর শোনালেও ভবিষ্যতে এটা ঘটতে যাচ্ছে।



আরেকটা কথা শেষ করতে চাই। কোন অসুখে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক দিলে আমরা সাধারণত অসুখ আপাতদৃষ্টিতে সেরে গেলে বাদ দিয়ে দিই। কিন্তু এতে রোগটা আরও ভয়ানকভাবে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা জন্মায়। তাই ডাক্তার প্রদেয় ডোজ সম্পন্ন করা উচিত, নিজে নিজে ডাক্তারি করে শরীরের ক্ষতি না করাটাই ভালো।

সুতরাং, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের আগে মোড়ের দোকানের ভাই অথবা, পাশের বাড়ির ভাবী নয় - বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন :)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×