দুইটা জিনিস আমাকে খুবই ইমোশনাল করে দেয়। আবেগে আপ্লুত হই। সেই দুইটা জিনিস হচ্ছে মা আর মাটি। মা এবং দেশ এই দুইটা জিনিস সবার ভাগ্যে সয় না। যাদের ভাগ্যে এই দুইটা জিনিস আছে তারা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবান।
১.
আজ যখন অফিসে বসে একটা গান শুনছিলাম। তখন মাকে খুব মনে পরছিলো। সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে আমার মা কেমন আছেন তার খবর হয়তো মুহুর্তেই নিতে পারি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই সুসময়ে। কিন্তু চাইলেই আমি মায়ের মুখটা দেখতে পারিনা, মাকে ছুঁতে পারিনা, মায়ের আঁচলে মাথা রাখতে পারিনা। বিষয়টা ভাবতেই চোখটা টলমল হয়ে গেলো। পাশের এক কলিগ জিজ্ঞেস করলো, হেই, আর ইউ ওকে? আমি খুব উদাস দৃষ্টি নিয়ে বললাম, আই আ্যাম অলরাইট। কিন্তু আমি জানি আসলে আমি অলরাইট নয়।
তার কিছুক্ষন পরে আমি ওকে জিজ্ঞেস করমাল, তোমার মা কি বেঁচে আছেন? তখন সে একটু উদাস হয়ে গেলো। আমার মনে হলো কোথাও একটা খোঁচা লেগেছে ওর। সেটা কাটিয়ে উঠে বললো, ওর বয়স যখন তিন তখন ওর মা মারা যান। আমি আর কথা বাড়ালাম না।
শুধু চিন্তা করলাম আমি কত সৌভাগ্যবান। আমি দৌড়ে বাথরুমে চলে গেলাম যদি কেউ দেখে ফেলে যে আমি কাঁদছি।
২.
আরো একবারের ঘটনা। তখন আমি সদ্য বিদেশে এসেছি। কাজের কারনে একজন তার পাসপোর্ট সহ বিভিন্ন ডকুমেন্টস দিলো। ইউকেতে রেসিডেন্স পারমিট কার্ড বলে একটা কার্ড দেয়া হয়। সেই কার্ডের মধ্যে তার স্ট্যাটাসের জায়গায় লেখা "রিফিউজি"। আমি খুবই অবাক হলাম কারন আমাদের সিলেটে একটা সাধারন গালি ছিলো রিফুজি বা রিফিউজি। যাদের ঘর বাড়ি নাই এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে সিলেটে বাস করে তাদেরকে ছোট করার জন্য বলা হতো "রিফুজি"। তারপর ওকে আমি জিজ্ঞেস করলাম। তোমার দেশ কোথায়? সে জানালো তার দেশ নাই। বুঝলাম কোথাও কোন সমস্যা আছে। তখন জিজ্ঞেস করলাম তোমার দেশ নাই কেনো? সে বললো, আমরা তোমাদের মতো ভাগ্যবান নই বলে। আমি যেখানে জন্ম গ্রহন করেছি, আমার বাপ-দাদারা যেখানে জন্ম গ্রহন করেছেন আমাদেরকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে। আমরা খুবই দুর্ভাগ্যবান। কারন আমার জন্ম প্যালেস্টাইনে।
আমার তখনো মনে হয়েছিলো আমি কত ভাগ্যবান। আমি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম নিজের একটা দেশ থাকা কত প্রয়োজন। একটা দেশের জন্য, একটু মটির জন্য, এক টুকরা সবুজ জমিনের জন্য মানুষের কত কান্না, কত যুদ্ধ, কত মৃত্যু। যাদের কারনে আজ আমরা দেশ পেয়েছি, যাদের জন্য আমরা পরিচয় দিতে পারি "বাংলাদেশী" সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আমাদের কত কৃতজ্ঞ থাকা উচিত তা হয়তো বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে বোধগম্য হয়।
--উপপাদ্য