somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মোটিভেশনাল স্পিকার - মা (২)

০১ লা মে, ২০১৯ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যদি কখনো স্কুলে যেতে না চাইতাম, আমার আম্মা বলতেন পড়ালেখা করে যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে। আর পড়া লেখা না করলে গরু-রাখাল হওয়া লাগবে। আমি ছোট বেলায় গরু রাখালি করাটকে খুবই অপছন্দ করতাম। অতএব গরু রাখালি যাতে না করতে হয় সেজন্য মনের অনিচ্ছা সত্বেয় স্কুল মিস করতাম না। নিয়মিত ছাত্র হিসেবে স্কুলে ভালো লেখা-পড়া করার চেস্টা করতাম। যদিও আমি কোনদিনই ভালো ছাত্র ছিলাম না। যতটুকু ভালো রেজাল্ট আমার জিবনে তার সবটুকুরই সম্পুর্ন অবদান আমার মোটিভেশনাল স্পিকার আম্মা আর স্কুল শিক্ষক আব্বার। আব্বা আমাকে শিখাতেন টেকনিক, যে টেকনিক ফলো করলে সহজে পরীক্ষার সব প্রশ্নের উত্তর সময়ের ভিতরে দেয়া সম্ভব, যে টেকনিকগুলো খুবই কাজের ছিলো পড়া মনে রাখার জন্য।




একটু পরে মিটিং আছে আমার ডক্টোরাল সুপারভাইজারের সাথে। গত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে গবেষনা নামক এক ধরনের পড়াশুনার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার মতো গাধা টাইপের ছাত্রদের জন্য গবেষনা খুবই কঠিন বিষয়, তবুও পথ চলতে চলতে কিভাবে যে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমি আজ গবেষনার ছাত্র হয়ে গেলাম ভেবে মাঝে মাঝে অবাক না হয়ে পারিনা। এই যে এতো কষ্টের গবেষনা করছি, দিনকে রাত বানিয়ে আর রাতকে দিন বানিয়ে কতো যে বই-পত্তর, জার্নাল-আর্টিক্যালের পাতা উল্টাচ্ছি বুঝে কিংবা না বুঝেই, মনে হয় সবই বৃথা, কোন প্রয়োজন ছিলোনা এসবের। এই লেখাটা যখন লিখছি তখন মনে হচ্ছে, গরু-রাখাল হলে কিইবা এমন হতো। রাখাল জিবন কি খুবই খারাপ হতো। এমনকি বর্তমান জিবনের চেয়ে কি খারাপ হতো। মাঝে মাঝে মনে হয় রাখাল জিবনই হয়তো ভালো হতো। সুপারভাইজারের পিছনে ঘুরতে হতোনা, জার্নাল, আর্টিক্যাল, সেমিনার ই্ত্যাদির পিছনে ঘুরতে হতোনা। হয়তো কোন গুগল সার্চেরও প্রয়োজন পরতো না।

পেশাগত জিবনে আমি যে প্রফিট & লস, ব্যালেন্স শিট, ফিক্সড আ্যাসেট, ডেপ্রিসিয়েশান ইত্যাদি বিষয়ক হিসাব নিকাশ কষতে কষতে কম্পিউটার স্ক্রিনে আমার ঘোলাটে চোখ লাল করে ফেলি তারও হয়তো দরকার পরতো না। রাখাল যদি হতাম, কিছু গরু নিয়ে ছোট্ট গ্রামের উতরের বনদ্ (উত্তরের বন্দ) কিংবা দকনের বন্দে (দক্ষিণের বন্দ) মাঠে গরু চড়াতাম। থাকতো রাখালিয়া-ডাকাতিয়া বাঁশি। সে বাঁশিতে সুর তুলতাম। মাটির গন্ধে ম ম করতো আমার সারা শরীর। সুপার মার্কেটের অর্গানিক আর ফ্রি রেঞ্জ ইত্যকার বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে হতো না। গান গাইতাম আপন সুরে...... ও বন্ধুরে এএএএএএ

গতকাল একটা ইভেন্টে আ্যাটেন্ড করেছিলাম। "লরিয়েল" এর হেড অফ দি ইনোভেশন, মার্ক আ্যপটার ছিলেন একমাত্র বক্তা। তার প্রায় ৪৫ মিনিটের পিচে তিনি ইনোভেশন নিয়ে অনেক কিছু বললেন। সারমর্মটা ছিলো যেকোন কিছুতেই ইনোভেটিভ হওয়া সম্ভব। নতুন কিছু উদ্ভাবনই নয় শুধু বরং নতুন কিছু সংযোজনও ইনোভেশন। একটু পরে যখন আমি আমার সুপারভাইজারের সাথে মিটিংয়ে যাবো, তখন আমি ভাবছি ৪০০/৫০০ গরু/গাভি নিয়ে যদি আমি ফ্রেশ মিল্কের একটা ফার্ম করতে পারতাম, আর দেশের মানুষকে প্রতিদিন সকালবেলা তাদের দরজায় নক করে পিওর মিল্ক উপহার দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো কিছু একটা ইনোভেটিভ ও পাশাপাশি সাস্থ্যকর হতো।

আমাদের মোটিভেশনাল মায়েদেরকে আমার অনুরোধ শুধু পড়ালেখার প্রতি জোড় না দিয়ে অন্য বিষয়েও জোড় দিতে হবে। আমরা শুধু স্কুল-কলেজ পড়ুয়াই চাইনা, আমারা বিশ্বসেরা খেলোয়ার চাই, বিশ্বসেরা ব্যবসায়ী চাই, বিশ্বসেরা কৃষক চাই, বিশ্বসেরা শিল্পী চাই, বিশ্বসেরা স্কলার চাই, বিশ্বসেরা বিজ্ঞানী চাই, বিশ্বসেরা রাজনীতিক চাই। এমনকি বিশ্বসেরা রাখালও চাই। যার হবেন ইনোভেটিভ, সৎ ও ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য পথ-প্রদর্শক।



ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×