২০১৩এর ৫ মে। আমার বাবা (বীর মুক্তিযোদ্ধা) কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন নশ্বর পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। সবার বাবার মতো আমার বাবাও ছিলেন আমার কাছে অনেক আপন। বাবার স্মৃতিগুলো আমাকে বেশ ভাবায়। তাড়া করে অতীতের কাছে নিয়ে যায়। সবকিছুই চোখের সামনে ভাসতে থাকে জ্বলজ্বল করে।
আজ বাবা নেই আমাদের মাঝে। বাড়িতে গেলে বাবার শূন্যতা অনুভব করি খুব বেশি। বাবার লাগানো মেহগনি গাছের কাছে দাড়ালে বাবার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। যাঁদের বাবা নেই তাঁরা বুঝতে পারেন বাবা থাকা আর না থাকার পার্থক্যটা। ছোটবেলায় বাবা বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনে আনতেন। আমি ছোটবেলায় তেমন একটা মাছ খেতে পারতাম না । বমি আসত। ইলিশ মাছের ডিম খেতে পারতাম। বাবা তাই ডিম ইলিশ দেখে কিনতেন। আমার জন্য ডিম রাখা হতো। একসাথে বসে ভাত খেতাম। বাবা তখন বলতেন -''কীরে ডিম খেতে কেমন লাগছে?'' আজ ইলিশের ডিম খাই কিন্তু বাবার মতো অমন করে কেউ জিজ্ঞেস করেনা । বাবার গম্ভীর কণ্ঠ বারবার আমাকে খুব অতীত স্মৃতির কাছে টেনে নেয়। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া দূরে থেকে করতে হয়েছে বলে বাবার সান্নিধ্য খুব কম পেয়েছি বলে মনে করি। ঈদে বাড়িতে গেলে ঈদের নামাজ শেষে দাদাদাদির কবর যিয়ারত করতাম। এখনও ঈদ আমাদের মাঝে আসে কিন্তু বাবাকে খুঁজে পাই না। বাবার মুখের আওয়াজ শুনতে পাই না। গরুর গোশতের সাথে চালের পিঠা বাবার খুব পছন্দ ছিল। গরুর ভুরিটাও তেমন খেতেন। আজ এসব খেলে চোখে পানি জমে যায়। কী নিষ্ঠুর নিয়ম পৃথিবীর তাই না! নিষ্ঠুর বলি না কেন এভাবেই আমাদের সবাইকে একদিন বিদায় নিতে হবে। আজ বাবা নেই কাল আমি নেই। শুধু থাকবে আমাদের কিছু স্মৃতি। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে বলি ''রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছাগিরা।'' আল্লাহ বা্বাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে শান্তিতে রাখো।