শ্যামল কান্তি, আপনার অসহায় ছবিটিই এখন বাংলাদেশের
শাশ্বত মুখ।যতদিন যতবার আমরা এই বিশেষ ছবিটির দিকে
তাকাব বিবর্ণ ক্যানভাসের অন্তরালে দেখতে পাব শ্যামল কান্তির
অবয়ব নিয়ে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি কান ধরে আর
আমাদের চারপাশে চলছে দুর্বৃত্তের আদিম উল্লাস, এবং
সে উল্লাসে যখন ধর্ষিতা হয় একাত্তরে আমাদের নাড়ির
ভেতর স্পন্দিত ধ্বণি ‘জয়বাংলা’ তখন লজ্জায় মুখ ঢাকে
একাত্তরের রক্তভেজা স্বপ্ন স্বাধীনতার সকল প্রাপ্তি ষ্টেনগান কাধে
দৃপ্তপায়ে হেঁটে যাওয়া মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তিসেনা আমাদের অযুত
নিযুত স্বপ্নের বাংলাদেশ।শ্যামল কান্তি; আমরা এখন এক
ভুতুড়ে শহরের অধিবাসী।আমাদের ঘাড়ের উপর প্রতি মুহুর্তে
ড্রাকুলার তপ্ত নিঃশ্বাস ভয়ে আতংকে ঠানঠান শিরদাঁড়া
আমরা এতটাই নিবীর্য এখন নিজেদেরকে মানুষ ভাবার সাহসটুকু
ও আমাদের নেই পাছে মাথাটা স্থানচ্যুৎ হয়ে খসে পড়ে রাস্তায়।
আমাদের খুলির ভেতর মগজ আছে একথাও আমরা প্রকাশ
করতে ভয় পাই কেননা তা নিমিষে ছিটকে পড়তে পারে বিছানা
বালিশে চামড়া চ্যালা রাস্তার উন্মুক্ত ইটের কোয়ায় প্রকাশকের
বইয়ের তাকে।আমাদের সমস্ত শরীর এখন একিলিসের গোড়ালির
মতো অরক্ষিত দুর্বল হয়ে গেছে। রোদ কোথায় ? আমাদের
গেলাস ভর্তি স্বপ্নের রোদ এক লহমায় গিলে ফেলেছে পুনরুত্থিত
মধ্যযুগ। অদ্ভুত আঁধার এখন ধাপিয়ে বেড়ায় রাজপথ।জয়বাংলা
আর আল্লাহু আকবারের যুগলবন্দীতে বেজে চলে অভূতপূর্ব সহিংস
সংগীত।নেপথ্যে খেলে যান কুশলী কালোয়াত; আমাদের বাস্তুভিটা
থেকে উড়ে যায় ঘর,আমাদের ধড় থেকে ছিটকে পড়ে মাথা,
আমাদের মাথা থেকে ঝরে পড়ে হলুদ মগজ। এক অদ্ভুত সময়
এখন এনাকুন্ডার আলিংগনের মতো ঘিরে ফেলছে চারপাশ।
শ্যামল কান্তি; তবুও জানবেন অন্ধকারই শেষ কথা নয়;
সাগর বেলার একটি বালুকণার ভেতর যে অনূ পরিমান জ্যোতি
লোকিয়ে থাকে তা ই একদিন দেখবেন বড় হতে হতে আমাদের
গ্রহের সমান হয়ে গেছে। দেখবেন আপনার দুই হাত লম্বা হতে হতে
অবলীলায় আমাদের বুকের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে ; আপনার দুই কান
আমাদের হৃদপিন্ড হয়ে যাচ্ছে। দেখবেন কান নয়, আপনি খামছে
ধরেছেন আমাদের ঘুমিয়ে থাকা হৃদপিন্ডটাকেই।আপনার স্পর্শেই জেগে
উঠছে আমাদের স্পন্দনহীন ধমনীগুলি।বলখে বলখে প্রতিটি কোষে
কোষে শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ছে উষ্ণ রক্তের স্রোত।দেখবেন
আমাদের মরা গাঙ্গে আবার
একাত্তরের বান ডেকে যাচ্ছে, শ্যামল কান্তি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ সকাল ১০:০৭