somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জঙ্গী মোবাশ্বেরের পিতার সাক্ষাৎকার ও কিছু প্রশ্ন

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোবাশ্বেরের দুর্ভাগা পিতার প্রতি আমি একজন সহমর্মী।এমনিতেইতো পিতার কাধে সন্তানের লাশ পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বোঝা তার উপর সেই লাশটি যদি হয় লক্ষ কোটি মানুষের ঘৃণা আর অভিশাপের প্রতিমূর্তি তাহলে সেই পিতার বুকটি ব্যথা বেদনা ব্যর্থতায় কতখানি কাতর হতে পারে তা ভুক্তভোগী ছাড়া কল্পনা করাও কঠিন।সেই পিতার সাক্ষাৎকারে দুটি সরল স্বীকারুক্তির উপর আমি কিঞ্চিত আলোকপাত করতে চাই, ১। ছোটবেলা থেকেই সন্তানের ধর্মে আসক্তি এবং ২।হঠাৎ করে ছবি আঁকা ছেড়ে দেয়া।ধর্ম কর্ম করা খারাপ কাজ আমি বলবনা কিন্তু বাচ্চা বয়সেই সন্তানের ধর্মের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়াটাকে কোনো অবিভাবকেরই সুলক্ষণ হিসেবে দেখা সুবিবেচনাপ্রসূত হবেনা যেমন সুবিবেচনার পরিচয় দিতে পারেননি মোবাশ্বেরের পিতাও।উপরুন্ত তিনি ছেলের এই অনুরাগকে উৎসাহই দিয়েছেন।বাচ্চা একটি ছেলে সে হবে উচ্ছল প্রাণবন্ত।পৃথিবীর সমস্ত কিছুর প্রতিই থাকবে তার অফুরান জিজ্ঞাসা এবং কৌতুহল।সে নাটক দেখবে সিনেমা দেখবে সে হাসবে নাচবে খেলা করবে নাচগান করবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবে।তার চারদিকের আবদ্ধ দেয়াল যতটুকু সম্ভব ফাঁক করে দিয়ে বাইরের মুক্তবাতাসকে অবারিত করে দিতে হবে সে সাথে নৈতিকতার শিক্ষাটাও তার মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে যাতে সে অফুরান স্বাধীনতায় বিনষ্টের জোয়ারে ভেসে না যায়।শিশুদের মগজ হলো একটি সদ্য বিকাশমান ফুলের মতো যা তার স্বাভাবিক নিয়মেই বিকশিত হবে পাঁপড়িগুলি পাখা মেলবে অঙ্গে অঙ্গে বর্ণিল রঙ মাখবে।আর এই স্বাভাবিক বিকাশের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো পর্যাপ্ত আলো বাতাসের যোগান দেয়া।আলো বাতাসহীন একটি বদ্ধ প্রকোষ্টে আবদ্ধ করে একটি নিষ্পাপ শিশুর মাথায় এক অলীক জগতের রুপকল্প ঢুকিয়ে দেয়া হয় যেখানে আনন্দ নেই উচ্ছাস নেই জীবন নেই যৌবন নেই আছে সব ভীতিকর চিত্রকল্প,শুধু ভয় প্রকম্পিত ঝপতপ এর বাইরে গেলে অকল্পনীয় সব শাস্থির বর্ণনা যা শুনলে একজন বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত আতংকিত হয়ে পড়ে সেখানে একটা কোমলমতি বাচ্চার মানসিকতায় কি পরিমান নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা কি আমরা চিন্তা করে দেখেছি ?মোবাশ্বেরের বাবা ছেলের ধর্মানুরাগকে শুধু সমর্থনই করেননি সন্তান যাতে ধর্মের বাণীগুলি আরো স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারে সেজন্য কোরানের অনূবাদও কিনে দিয়েছেন।এখানেও তিনি মারাত্নক ভুল করেছেন।মানুষ যতদিন কিছু না বুঝে পাখির মতো কোরানের সূরাগুলি মুখস্থ করে তার নিত্যদিনের ধর্মকর্ম করেছে ততদিন মানুষ অহিংসভাবেই তা করেছে কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে যখন এর মর্মার্থ মানূষের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছে গেছে তখনই মানুষ ক্রমাগত সহিংস হতে শুরু করেছে।মানুষের অসহিষ্ণুতা বারুদের মতো বিষ্ফোরুন্মুক হয়ে উঠছে।এর কারণ আমরা কখনো খুঁজে দেখিনি বরং খুঁজার কথা বললেই নাস্তিক মুর্তাদ ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বা হচ্ছে।আবার এই হত্যাকান্ডগুলি নিয়েও কোনো প্রতিবাদ হয়না ভাবটা অনেকটা এরকম অপরাধের উপযুক্ত শাস্থি হয়েছে তাতে প্রতিবাদের কি ?কোরানেও নাস্তিক মুর্তাদ বেদ্বীন বিধর্মী সম্পর্কে কঠোর সব উক্তি আছে।বিধর্মী কাফেরের সাথে যুদ্ধে পিছু হটলেও কঠোর শাস্থির কথা বলা হয়েছে।হতে পারে আয়াতগুলি বিশেষ সময়ে বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে মুসলমান ধর্মবেত্তাদেরও উচিৎ ছিল এসব আয়াত নাজেল হওয়ার সেই বিশেষ সময় আর প্রেক্ষাপটকে সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে পরিষ্কার করে তোলে ধরা কিন্তু তা না করে সাঈদীর মতো আলেমরা আয়াতগুলির সার্বকালীনতারই প্রচার করে এসেছেন দিনের পর দিন ধরে।জঙ্গীবাদের গুরুরা এইসব আয়াতকেই জেহাদী ভাষা ও ভঙ্গিতে আবৃত্তি করে তরুণদের রক্তে আগুণ ধরিয়ে দেয় আর এই আগুণ এমনই আগুণ যা একবার ধমনীতে সঞ্চারিত হলে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার না হওয়া পর্যন্ত নিস্তার নেই।মোবাশ্বেরের বাবা ছেলেকে প্রাঞ্জল করে কোরান বুঝাতে গিয়ে তার হাতে যে কোরান নয় একটি কেলাসনিকভ রাইফেল ধরিয়ে দিয়েছিলেন এখন তিনি তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছেন নিশ্চয়। মীর সামীহর জঙ্গী হয়ে ওঠার একটি জ্বলন্ত পূর্বাভাস ছিল হঠাৎ তার আঁকাআঁকি বন্ধ করে দেয়া।মীর হায়াত কবির যদি একটু সচেতন হতেন তাহলে এই সিম্পটম থেকেই তিনি বুঝে নিতে পারতেন ছেলেটি গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে।একটি ছেলে যে ছবি আঁকতো সে কেন ছবি আঁকা বন্ধ করে দেবে ?তারতো তখনই বুঝা উচিৎ ছিল ছেলেটি ইসলামী ফান্ডামেন্টালিজমে ডুবে যেতে বসেছে।ইসলামের অভ্যুদয়ইতো ছিল প্রতিকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।কাবার তিনশত ষাট মূর্তিকে ভেঙ্গে সেখানে একেশ্বরের নিশান উড়ানো হয়েছে।কোনো জীবের প্রতিকৃতি ইসলামে প্রবলভাবে নিষিদ্ধ যদিও যুগের সাথে চলতে গিয়ে অথবা অস্থিত্বসংকট থেকে বাঁচাতে গিয়ে এ ক্ষেত্রে অনেক সংশোধন করতে ইসলাম বাধ্য হয়েছে কিন্ত জিহাদীরাতো আপোষহীন তারা এই সংশোধণী মানবে কেন?তাইতো তালেবানরা হাজার বছরের প্রাচীন বৌদ্ধমূর্তি ডিনেমাইট দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলে আইসিস পালমারের আসিরিয় সাম্রাজ্যের স্থাপনাগুলি ধ্বংস করে ফেলে।মরু প্যাগানদের রক্তবিধৌত মতবাদ প্রচার ও প্রসারে বড় অন্তরায় হলো বিশ্বের প্রতিটি দেশের নিজ নিজ সংস্কৃতি।এই সংস্কৃতির অঙ্গ সামাজিক উৎসব নাচ গান বাদ্য খেলাধূলা ইত্যাদি।যখনই একটি কিশোর যুবক এইসব সামাজিক আনন্দ উৎসবকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে বা এর বিরুদ্ধাচারন করে তখনই অবিভাবকদের এব্যাপারে সিরিয়াসলী সচেতন হওয়া প্রয়োজন।মির হায়াত কবির যে ভুল করেছেন আমরা যেন সেই ভুল না করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×