ছবিগুলো ব্রেভহার্ট মুভির। উইলিয়াম ওয়ালেস এর ছবি। অত্যাচারি, শোষক ব্রিটিশ দের হাতে তার বাবার মৃত্যু হয়। স্বাধীন স্কটল্যান্ড এর স্বপ্ন বুনে যিনি লড়াই করেছেন, সফলতার মুখ দেখে জেতে পারেননি। মৃত্যুর পর বাবার মৃত্যু দেখে হতবিহবল ওয়ালেস এর রিক্ত রক্তশুন্য ফ্যাকাসে মুখমন্ডল টি ছবিতে দেখা যাচ্ছে। এই ওয়ালেস একদিন স্কটল্যান্ড এর স্বাধীনতার জন্যে সারাটি জীবন সংগ্রাম করে যায়। কখনো দেশপ্রেমে, কখনো পিতৃহত্যার প্রতিশোধ কখনোবা প্রেমিকা হত্যার প্রতিশোধ এর মন্ত্র জ্বেলে সে ঝাপিয়ে পরে, ঝাপিয়ে পরে অনাচার আর শোষণ এর বিরুদ্ধে, আবির্ভূত হয় প্রবল বিক্রমে। নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করে মৃত্যুবরণ করে স্কটিসদের স্বাধীনতার দীপ জ্বেলে যান।






এই ছবিগুলো গ্ল্যাডিয়েটার মুভির। মাক্সিমাস; একজন বীর যোদ্ধা, একজন গ্ল্যাডিয়েটার। সে চেয়েছিল স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সাধারণ একটি জীবন ধারণ করতে। দক্ষ, রণকুশলী মাক্সিমাস এর এই সৌভাগ্য হয়নি। ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তার অবর্তমানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তার স্ত্রী কে, সন্তান কে। রণক্লান্ত মাক্সিমাস তার বাড়ীতে ফিরে আসে, ফিরে আসে সন্তান কে কোলে নিয়ে আদর করবে, স্ত্রীকে তার যুদ্ধ জীবনের গল্পগুলো শুনাবে। কিন্তু তা আর হয়নি।
স্ত্রী-সন্তানের ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখে নির্বাক মাক্সিমাস আর্তনাদ ও করেনি। কবরে শায়িত করে পাশে বসে শব্দহীন অশ্রু বিসর্জন করে। এই ছবিটি স্তব্ধ, ক্রুদ্ধ, বাকহীন আর যন্ত্রণাক্লিস্ট মাক্সিমাসের, যার ওই দৃস্টিতে বারবার ভেসে আসে স্ত্রী-সন্তানের ঝুলন্ত লাশ, ভেসে আসে পিতা মাক্সিমাসের জন্যে সন্তানের অপেক্ষার দৃশ্য; সব ভেসে আসে দাসবন্দী জীবনে কখনো বা গ্ল্যাডিয়েটার জীবনে বাঘ এর সাথে লড়াই এর সময় এমনকি বিষাক্ত ছুরিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর আগমুহুর্তে।

ব্রেভহার্ট বা গ্ল্যাডিয়েটার মুভির ওয়ালেস বা মাক্সিমাস তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ দেখেছে। কিন্তু সামনা সামনি মরতে দেখেনি। কিন্তু একজন দেখেছে। সে সানাউল্লাহ-র মেয়ে; সুরাইয়া।


তার ওই দৃস্টি দেখেছে নির্মমভাবে প্রকাশ্যে তার বাবাকে পিটিয়ে মারবার দৃশ্য, হত্যা করার দৃশ্য। সে দেখেছে এমনই এক দৃশ্য যা সিনেমার দৃশ্যেও বিরল। এই দৃস্টি আজ ভয়ার্ত, শঙ্কাপূর্ন কাল হবে ক্রুদ্ধ আর ক্ষুব্ধ। কিন্তু এই ক্রোধ আর পুঞ্জীভূত ক্ষোভ কি পারবে ওই ছবির মত আমাদের সমাজ কে বদলে দিতে।.………… জানিনা।

হয়তো ওর চোখের পলক খুব কম পড়বে, চোখ বন্ধ করলেই বাবার মৃত্যু-দৃশ্য ভেসে উঠবে তাই; হয়তো স্তব্ধ আর নীরব রাত্রিগুলো সে নির্ঘুম কাটাবে, আবার এই দুঃস্বপ্ন দেখে উঠার ভয়ে; অনেক বড় হবে সে, বিয়ে ও হয়তো করবে কিন্তু কোনো সন্তান হয়তো চাইবে না – তার মত তার সন্তানকেও যদি এমন দৃশ্য দেখতে হয় এই ভয়ে; হয়তোবা জীবন সায়াহ্নে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ভাসা ভাসা দৃশ্যে সে দেখবে তার বাবাকে, ঈসাড়ায় হাত দিয়ে তাকে ডাকছে যেমন ডেকেছে মাক্সিমাসকে তার সন্তান, মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে।