somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা এবং আমাদের ব্রেইন : বিজ্ঞান কি বলে !!? ৪র্থ পর্ব ( শেষ পর্ব )

০৬ ই মে, ২০১৫ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালোবাসার মানুষের ব্রেন কনসেপ্ট:
এটা অবশ্য বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বেশীর ভাগ মানুষেরই সে কেমন ধরনের মানুষকে ভালোবাসবে সে সম্বন্ধে তার একটা নিজস্ব পছন্দ গড়ে ওঠে, সে কারনেই আমাদের সম্ভাব্য প্রেমিক প্রেমিকার ধারনা বা কনসেপ্ট, অর্থাৎ যে ধরনের মানুষদের সাথে প্রেমে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। এই প্রেফারেন্সটা কিন্তু নানা ধরনের হতে পারে. আর অবশই প্রভাবিত হয় অনেক কারনে, যাদের মধ্যে, বাবা মার প্রভাব, সাংস্কৃতিক কিছু প্রবনতা, এবং কেমন মানুষের সাথে তাদের পরিচয় হয়েছে ইতিমধ্যে এবং সেই অভিজ্ঞতাগুলো ইত্যাদি। একটি সাম্প্রতিক গবেষনা চেষ্টা করেছে মেয়েদের গড়পড়তা কোন ধরনের পুরুষের প্রেমে পড়ার সবচেয়ে বেশী সম্ভাবনা থাকে; দেখা গেছে সেই পুরুষটি মসৃন চামড়ার সাদামাটা একজন মানুষ, অনেকে যে ধরনের অতি পুরুষালী বা ম্যাচো পুরুষদের মেয়েদের পছন্দ বলে মনে করেন, সে রকম কিছু থেকে অনেক ভিন্ন। পছন্দের এই কাল্পনিক বা ভার্চুয়াল পুরুষটির সবচেয়ে কাঙ্খিত গুনাবলীগুলো শুধু মাত্র তার যৌন আকর্ষনীয় ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট না, বরং সেই বৈশিষ্টগুলোও গুরুত্বপুর্ন যা ইঙ্গিত করে তার একটি কেয়ারিং মানসিকতা আছে। স্পষ্টতই স্কটল্যান্ডের সেইন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীর পছন্দর এই গড়পড়তা পুরুষটি, একটি কনসেপ্ট বা ধারনারই ফলশ্রুতি, শুধু মাত্র গবেষনাটি যেখানে হয়েছে এটি সেই পরিবেশটির সীমানায় সীমাবদ্ধ। কিন্তু এই গবেষনার গুরুত্বপুর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষ কেমন হবে সেই সম্বন্ধে আসলেই যে আমরা একটা মানসিক ধারনা বা কনসেপ্ট ধারন করি সেটাকে দেখানো। ভালোবাসার সাহিত্যকর্মের ইতিহাসে, সম্ভবত বিষয়টি এতো বেশী গুরুত্ব পায়নি, যেমনটা পেয়েছে দান্তের সাহিত্য কর্মে, যার মানস প্রেয়সী বিয়েত্রিস এর প্রতি ভালোবাসা পশ্চিমা সাহিত্যকর্মে একটি কিংবদন্তীর প্রেমকাহিনী। কিন্তু দান্তে তার প্রথম সাহিত্যকর্ম La Vita Nuova (বা নতুন জীবন) এ বিষয়টি বেশ স্পষ্ট করে বলেছিলেন, তিনি যা সত্যি সত্যি লিখতে চেয়েছেন তা আসলে বিয়েত্রিসকে নিয়ে না ( যার ততদিনে মৃত্যু হয়েছে) বরং ‘‘lo gloriosa donna de la mia mente’’ বা তার মনের সেই অসাধারন রমনীকে নিয়ে লিখতে চেয়েছেন।
ভালোবাসা এবং সম্পর্কর ক্ষেত্রে আমরা আরো একটু গভীরে যেতে পারি, এবং একটা রুপরেখা দাড় করাতে পারি ব্রেনের যে রাসায়নিক পদার্থ আমাদের সেই প্রিয় মানুষটার ধারনার ভিত্তি তৈরী করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো আমরা মানুষের উপর এই কাজটা করতে পারিনি কিন্তু অন্য কোন অপেক্ষাকৃত কম জটিল প্রানীদের উপর করা সম্ভব হয়েছে,যেমন প্রেইরী ভোল,ইদুর,মারমোসেট বা বানর ইত্যাদি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে এসব প্রানীদের মধ্যে যে প্রক্রিয়াটি কাজ করে,অবশ্যই অনুরুপ কোন,শুধু আরো অনেক বেশী জটিল কোন একটি প্রক্রিয়া মানুষের মধ্যেও কাজ করে।
হয়তো এ বিষয়ে অনুসন্ধানের প্রথম ধাপটি হতে পারে,রোমান্টিক ভালোবাসার সময় ব্রেনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর সক্রিয় রাসায়নিক প্রক্রিয়াটি অনুধাবন করা,বিশেষ করে অক্সিটোসিন,ভেসোপ্রেসিন ও ডোপামিন। সাবকর্টিকাল এলাকা সহ ব্রেনের বেশীর ভাগ এলাকা,যেখানেই অক্সিটোসিন ও ভেসোপ্রেসিনের রিসেপ্টর পাওয়া গেছে, দেখা গেছে তারা রোমান্টিক ভালোবাসা এবং মার ভালোবাসা, উভয় ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই নিউরো মডুলেটরগুলোর কি ভুমিকা আছে মেটিং এর জন্য জোড় বাধা বা বন্ড বা সম্পর্ক তৈরী করার ক্ষেত্রে, সেটা বুঝতে আমাদের ভরসা করতে হবে আপাতত প্রেইরী ভোলদের উপর করা গবেষনায়।
অক্সিটোসিন এবং ভেসোপ্রেসিনের আমাদের শরীরে আরো অনেক ধরনের কাজ করে, তবে এই্ আলোচনার জন্য যেটা প্রাসঙ্গিক সেটা হলো, তারা শুধু মাত্র বন্ডিং বা সম্পর্ক বাধার জন্যই জরুরী না, কোন কিছু শেখার প্রক্রিয়া এবং মেমোরী বা স্মৃতির সাথে জড়িত,তবে তা শুধুমাত্র সামাজিক আচরনের প্রেক্ষাপটে।এই দুটি নিউরোমডুলেটরই ব্রেনে নিঃসরিত হয় এবং মাত্রায় বেড়ে যায় যখন প্রেইরী ভোল জুটি যৌন সঙ্গম করে। খুব ঘনিষ্ঠভাবে এরা জড়িত নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিন এর সাথে,যা আমাদের ব্রেনের রিওয়ার্ড মেকানিজমের সাথে সংশ্লিষ্ট। যদিও প্রেইরী ভোলদের সাথে মানুষের তুলনা বহুদুর। কিন্তু মানুষ সহ নানা প্রানীর ব্রেনে অনুরুপ কর্মকান্ডের সময় এদের মাত্রা বেড়ে যাবার কারনে,বিজ্ঞানীরা মনে করছেন,মানুষের শরীরে এই কেমিক্যালগুলো রোমান্টিক এবং মাতৃত্বের ভালোবাসার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডগুলোর সাথে বিশেষভাবে জড়িত,তার মানে অবশ্য এটাই যে এদের একমাত্র কাজ, সেটা কিন্তু না। প্রেইরী ভোলের গল্পে যে বায়োলজীক্যাল মজার ব্যাপারটি আছে সেটা হলো দুটি ভোল প্রজাতির মধ্যে ভিন্নতা:প্রেইরী এবং মনতান (Montane)ভোল। প্রেইরী ভোল প্রধানত: একসঙ্গী নির্ভর একজামী প্রজাতি ( কদাচিৎ বহুগামী),মনতান ভোল অন্যদিকে তাদের প্রকৃতিতেই বহুগামী,কোন দীর্ঘ মেয়াদী সম্পর্ক এরা গঠন করে না। নিউরোবায়োলজিষ্টরা তাদের গবেষনায় দেখেন যে, যদি প্রেইরী ভোলের ব্রেনে এই দুটি হরমোন নিঃসরন বন্ধ করা যায়,তারাও বহুগামী হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি প্রেইরী ভোলদের এই হরমোন দেয়া হয় কিন্তু তাদের যৌনসঙ্গম থেকে বিরত রাখা হয়,তারা কিন্তু তাদের সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্থ থেকে যায়,অর্থাৎ একগামী(যদিও যৌন সম্পর্কহীন)সম্পর্ক বজায় রাখে।স্বভাবতই কারো মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যদি বহুগামী প্রকৃতির মনতান ভোলদের এই হরমোনের ইনজেকশন দিলে কি তারা একগামী,এক সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্থ ভোলে পরিনত হবে প্রেইরী ভোলদের মত। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম ঘটে না আসলে,মনতান ভোলদের এই ইনজেকশন দিলে তারা একগামী হয়ে যায় না। ব্যাপারটা প্যারাডক্সিক্যাল মনে হলেও একে সহজ জীববিজ্ঞানীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব এবং কনসেপ্ট গঠনের ক্ষেত্রে এর বেশ প্রাসঙ্গিকতা আছে।


ব্রেনের বিভিন্ন সেকশনে অক্সিটোসিন এবং ভেসোপ্রেসিনের রিসেপ্টর সমৃদ্ধ এলাকা, এছাড়া দুটো প্যানেলে দুই ধরনের ভালোবাসার সময় অ্যাক্টিভেশন প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে, একটি প্যানেলে সংলিশ্ট ব্রেনের অংশগুলো দেখানো হয়েছে। C = caudate nucleus; GP =globus pallidus; hi = hippocampus; hTh = hypothalamus; P = putamen; PAG = periaqueductal (central) gray; M = nucleus of Meynert; rf = retrorubal fields/ intralaminar/subthalamic nuclei; SN = substantia nigra; Tha = lateral thalamus; VTA = ventral tegmental area, .( A. Bartels,S. Zeki/ NeuroImage 21 (2004) 1155–1166)
পিটুইটারী গ্রন্থি হতে নিঃসরিত হয়ে এই নিউরো হরমোনগুলো কাজ করতে পারে শুধু সেই কোষগুলোতে যেখানে তাদের রিসেপ্টর আছে;প্রেইরী ভোলদের ব্রেনের রিওয়ার্ড সেন্টারে ভেসোপ্রেসিন এবং অক্সিটোসিন এর রিসেপ্টরের সংখ্যা অনেক বেশী।এখনও সুষ্পষ্ট ভাবে এদের চিহ্নিত করা যায়নি কিন্তু এদের মধ্যে অনেকগুলো অংশই রিওয়ার্ড প্রসেসের সাথে জড়িত। অনেকগুলোর অবস্থান সাবকর্টিক্যাল এলাকায়। মনতান ভোলদের ব্রেনে অক্সিটোসিন এবং ভেসোপ্রেসিন রিসেপ্টর থাকে না বা থাকলেও প্রেইরী ভোলদের তুলনায় পরিমানে অনেক কম। সেকারনে মনতান ভোলদের এই বাড়তি দুই হরমোন ইনজেকশন দিলেও তাদের একগামীতে পরিণত করে না, কারন তাদের রিওয়ার্ড সেন্টারে যথেষ্ঠ পরিমান রিসেপ্টরই থাকেনা, যেখানে কিনা এই হরমোন অনু সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে। তার অর্থ এখানে দেখা যাচ্ছে, এই হরমোন দুটি যারা বন্ড বা সম্পর্ক গঠনের ভুমিকা রাখে, যা বিভিন্ন পরীক্ষায় জোরালো প্রমান পাওয়া গেছে,তারাই এই ভোলদের বিশ্বস্থ ও একগামী রাখে এবং তাদের রিসেপ্টরের অনুপস্থিতি এদের আরেক প্রজাতিকে করে বহুগামী।এই হরমোনগুলো মানুষের ক্ষেত্রে কি একই ভাবে কাজ করে কিনা তা নিয়ে ‍এখনও গবেষনা চলছে (কিছু রিসেপ্টর ভ্যারিয়ান্টের কথা এই লেখার শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে); এবং যদি তা করে ব্যাপারটা বিস্ময়কর হবে,বিশেষ করে যখন মানুষের ব্রেনের গঠন যখন ভোলদের তুলনায় বহুগুন জটিল। তাসত্ত্বেও খুব একটা অবাক বিষয় হবে না যদি ভোলদের ব্রেনের মধ্যে মানুষের রোমান্টিক এবং যৌন প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে পারে এমন একটি আদি বা ভেস্টিজিয়াল সিস্টেম খুজে পাওয়া যায় ভবিষ্যতে। মানুষকে প্রায়,এবং ভুলবশত একগামী প্রানী মনে করা হয়। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের হার,বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক ও আরো কমবেশী গোপন বা আকস্মিক সম্পর্ক,এছাড়া দেহ ব্যবসা আর পর্নোগ্রাফি রম রমা ব্যাবসা কিন্তু অন্য কথা বলে। অবশ্য এর অর্থ এই না যে মানব জাতির মধ্যে অনেকেই একগামী সম্পর্ক বা সিরিয়াল একগামী সম্পর্ক বজায় রাখে না। নিউরোবায়োলজিষ্ট স্পষ্টতই জানার জন্য আগ্রহী এবং চেষ্ঠা করছেন,মানুষের মধ্যে যারা একগামী সম্পর্ক বজায় রাখে তারা তাদের বহুগামী অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশী পরিমান অক্সিটোসিন বা ভেসোপ্রেসিন হরমোন তৈরী করে কিনা এবং একগামীদের ব্রেনের রিওয়ার্ড সেন্টারে এই হরমোনগুলোর বেশী পরিমান রিসেপ্টর আছে কিনা।মানুষকে তার সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে তিনটি বা আরো বেশী শ্রেনীতে ভাগ করা যেতে পারে:যা শুরু বেশী মাত্রায় বহুগামীতা বা প্রমিসকিউয়াস থেকে কঠোরভাবে একগামী অবধি আর নানা রেন্জের এই পার্থক্যগুলো নির্ভর করে ভেসোপ্রেসিন আর অক্সিটোসিনের রিসেপ্টরের বিস্তৃতির উপর, আর বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মানুষ কিংবা ভোল, প্রজাতি হিসাবে যত দুরবর্তী হোক না কেন, প্রজাতির প্রত্যেক সদস্যদের মধ্যে এই রিসেপ্টরের সংখ্যায় ব্যাপক ভিন্নতা আছে।
অক্সিটোসিন এবং ভেসোপ্রেসিন,কোন প্রানী কেমন সঙ্গী বা সঙ্গীনির সাথে থাকতে চায় তার একটা ধারনা তৈরীতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে,অন্তত প্রেইরী ভোলদের চিন্তার জগতে। এবং তারা এই কাজটি করে সুনির্দিষ্ট গন্ধর মাধ্যমে তাদের মেটিং সঙ্গীর একটি স্পষ্ট এবং শক্তিশালী প্রোফাইল তৈরী করে; যখন এই কনসেপ্টটা তৈরী হয়,এই গন্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট পোফাইলটা বেশ দীর্ঘ স্থায়ী হয়।এই গন্ধটা কোন একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীর সাথে সুখকর দেখা সাক্ষাতের অভিজ্ঞতার সাথে স্থায়ীভাবে জড়িত হয়। এটি একইভাবে ভিজুয়াল (দৃশ্যগত) ডোমেনেও কাজ করে,যেমনটা দেখা গেছে ভেড়াদের মধ্যে,যখন কোন শিশু ভেড়ার উপস্থিতিতে মা ভেড়ার ব্রেনে অক্সিটোসিন নিঃসরিত হলে,মা ভেড়াটি তাদের চোখে দেখার মাধ্যমে চিনতে পারে শিশুটি চিনে নেয়,এবং শিশুটির মায়ের মতো আচরন করে শিশু ভেড়াটা বড় না হওয়া পর্যন্ত। ইদুরদের মধ্যে গবেষনায় দেখা গেছে যদি এই দুই নিউরোমডুলেটর যে কোন একটার জিন জেনেটিক ইন্জ্ঞিনিয়ারিং এর মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে দেয় ইদুরের জন্মের আগেই,ইদুরটি অন্য যে ইদুরদের সাথে দেখা হবে তাদের সম্পর্কে কোন প্রোফাইল বা কনসেপ্ট তৈরী করতে পারেনা। পুরোপুরি স্মৃতিভ্রংশ হবে তারা এ ক্ষেত্রে এবং সেকারনেই বহুগামী হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন খুব বেশী বাড়াবাড়ি হবে না যদি বলা হয়,নিউরোকেমিক্যালের মধ্যস্থতায় ঘটা অভিজ্ঞতাগুলোর পুরোপুরি বৈশিষ্ট আছে কনসেপ্ট গঠনের প্রক্রিয়ায়,যদিও এই কনসেপ্ট গঠন একেবারে প্রাথমিক মুল এবং রাসায়নিক পর্যায়ে। কিন্তু কোন স্বতন্ত্র সদস্যের বিষয়ে আমাদের ব্রেনে কনসেপ্টটি মুলত তৈরী হয় সাক্ষাৎকার এবং যৌনমিলনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে,যা জন্মের পরে ঘটে,এবং এর সাথে জড়িত সুখকর,উপভোগ্য একটি অভিজ্ঞতা সঙ্গী বা সঙ্গীনির সাথে যার একটি সুনির্দিষ্ট গন্ধ আছে।
ভালোবাসা এবং সৌন্দর্য:
আমরা সাধারনতঃ জানি, ভালোবাসার অনুভুতি সৃষ্টি করার জন্য সম্ভবত নিশ্চিৎ একটি উপায় হচ্ছে সুন্দর মখাবয়ব।ঐতিহাসিক কাল থেকেই,সেই প্লেটোর সময় থেকে ভালোবাসার পথকে বর্ণনা করা হয়েছে সুন্দরের মধ্য দিয়েই। দান্তে বিয়েত্রিসকে ভালোবেসেছিলেন কারন বিয়েত্রিস তার কাছে ছিল অনিন্দ্য সুন্দরের উপমা; কৃষ্ণ তার সৌন্দর্য দিয়ে মন চুরি করে নেয় কিংবা মজনু,লাইলীর সৌন্দর্য এ বিমোহিত হয় প্রেমে,যদিও সে অনেকের চোখেই সুন্দর নয়:মজনু তার উত্তরে বলে,আমার চোখ ধার করে দেখো।কামনা থেকে সৌন্দর্য আর ভালোবাসার অবস্থান খুব একটা দুরে না,আর বেশীর ভাগ তীব্রতম ভালোবাসার সাথে দৃঢ় ভাবে জোড় বেধে আছে যৌন বাসনার। কারন এই দুটি অভিজ্ঞতাই ব্রেনের একই অংশ শেয়ার করে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন একটি আকর্ষনীয় চেহারা,যৌন উত্তেজনা এবং সেই সাথে ভিজুয়াল সৌন্দর্য এর কোন অভিজ্ঞতায় ব্রেনের এমন কিছু অংশকে জড়িত করে যার নাম অরবিটো ফ্রন্টাল কর্টেক্স। রোমান্টিক ভালোবাসায় দুটি ক্ষেত্রেই শুধু এই একটি ব্রেণের কমন অঞ্চল সক্রিয় করে তা কিন্তু না।ভালোবাসার মানুষের চেহারা দেখলে দুটি কর্টিক্যাল অঞ্চল সক্রিয় হয়,ইনসুলা আর অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট এবং একই কাজ করে যৌন উদ্দীপক কোন ছবি। আকর্ষনীয় কোন চেহারা, এছাড়া প্রিয়জনের মুখচ্ছবি শুধুমাত্র ফ্রন্টাল কর্টেক্সকেই ডি অ্যাক্টিভেট বা নিষ্ক্রিয় করেনা,অ্যামিগডালাকেও নিষ্ক্রিয় করে (আগে উল্লেখ করা হয়েছে ভালোবাসার মানুষের ছবি দেখলে অ্যামিগডালা ডি অ্যাক্টিভেট হয়); যা ‌ইঙ্গিত করছে,ভালোবাসার বা কাঙ্খিত মানুষের ছবির দিকে তাকালে আমাদের ক্রিটিক্যালী বা সমালোচনামুলক জাজমেন্ট করারা ক্ষমতাই শুধু কমে না,এছাড়া সেই আদিম কৌতুহল,অজানা আশঙ্কা যা ব্যবহার আমরা অন্য কোন অপরিচিত চেহারার মধ্যে বিভ্রান্তি বা অস্বস্তিকর কিছুর চিহ্ন খুজি সেটাও স্থগিত থাকে। এছাড়া অরবিটো-ফ্রন্টাল কর্টেক্স যুক্ত থাকে অ্যামিগডালা এবং আরো বেশ কিছু কর্টিক্যাল এবং সাবকর্টিক্যাল এলাকার সাথে যেমন অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্স,প্যুটামেন,কডেট নিউক্লিয়াই,যা রোমান্টিক ভালোবাসার অভিজ্ঞতার সময় সক্রিয় হয়।সে কারনে ভালোবাসা আর সৌন্দর্যের ঘনিষ্ট এক্সপেরিমেন্টাল সম্পর্কর কারন বিজ্ঞানীরা মনে করছেন সম্ভবত ব্রেনের এই অংশগুলোর অন্তরঙ্গ অ্যানাটোমিকাল অবস্থান এবং সংযোগ,যারা এই দুটি অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত। এদের অ্যানাটোমিক্যাল লিঙ্কটি এতই ঘনিষ্ট যে এই অভিজ্ঞতাগুলোকে আলাদা করা সম্ভব হয়না।

পরিশিষ্ট:
নিউরোবায়োলজিষ্টরা এ বিষয়ে ক্রমাগত গবেষনা করে যাচ্ছেন,বিশেষ করে পেয়ার বন্ডিং এর ব্যাখ্যা খুজতে। গবেষনায় পাওয়া এসব নানা তথ্যগুলো আমাদের ভালোবাসা নামের বিবর্তনের এই মহা শক্তিশালী কৌশল এর স্নায়বিক ভিত্তিটা বুঝতে সাহায্য করে যাচ্ছে। বিবর্তনের এই কৌশলটি প্রজাতির বংশবৃদ্ধি এবং রক্ষনাবেক্ষনের কাজটিকে আমাদের জন্য একটি গভীর আনন্দময় এবং সুখকর অভিজ্ঞতায় রুপান্তরিত করেছে,যা নিশ্চিৎ করেছে প্রজাতির অব্যাহত অস্তিত্ব রক্ষার প্রক্রিয়াটি।
শেষ করি ডঃ জেকি ‘র একটি মন্তব্য দিয়ে: Yet the biological study of love, and especially romantic love, must go beyond and look for biological insights that can be derived from studying the world literature of love, and thus bring the output of the humanities into its orbit.


ভালোবাসায় আমাদের ব্রেন: সুত্র: Scientifi c American, February 2011 /Graphics by James W. Lewis, West Virginia University (brain), and Jen Christiansen)

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×