শুরু করা নিয়েই কেটে গেলো মাস তিনেক। তবুও আমার মোবাইল গল্পটার শুরু হলো না। আজ ভেবেছি যেন তেন করে হলেও এটাকে মস্তিকের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে লেখার দুনিয়ার ছেড়ে দেবো। সেই ভাবনা থেকে লেখাটার শুরু। অবশ্য এ ভাবনার আগে মূল গল্পের একটা অপেক্ষা ছিল দীর্ঘ সময়। সেই প্রথম যে দিন মোবাইল কিনে আশ্চর্য রকম রোমান্টিক হয়ে বস্তুটার দিকে তাকিয়ে ভেবেছিলাম এবার হয়ত হবে এই তেল চিটচিটে জীবনে কোন রোমান্টিক কথার স্বপ্নকথন। আমার স্বপ্ন আশাপাশের বন্ধুদের স্পর্শ করছে, বিয়ে করিয়েছে, কাউকে কাউকে দুঃখ দিয়েছি, কেউ আবার অন্যকে দুঃখ দিয়েছে, কত রকমের গল্প। ক্ষণস্থায়ী, স্পল্প স্থায়ী, এবং দীর্ঘ স্থায়ী। কিন্তু কোন স্থায়ী আমার গল্পের নায়িকা হতে চাইনি। আমি বেকার ভাগ্য থেকে আরো বেশি বেকাত্বের দিকে ধাপিত হয়ে হতাশায় পুড়েছি। আর বন্ধুদের মনে মনে শাপান্তর করেছি। অবশেষে সেই নায়িকা যখন এলো তখন আমি বিয়ে করে এক সন্তানের পিতা।
প্রথমবার করা মেয়েটির মোবাইল কথা চলিত বাসের ঝাপটায় ওর জানলা দিয়েই শব্দের হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিলো। আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। দ্বিতীয়বার মোবাইলে একটাই প্রশ্ন ছিল আমি “শান্ত” কিনা। এখানে আমি না শব্দটি যথারীতি উচ্চারণ করেছিলাম। এই না শব্দের উপস্থিতি থেকেই মনে হয় গল্পটা জমে গিয়েছিল।
প্রথমবারের পর থেকে মেয়েটির ফোনের ব্যতিব্যস্ততা রকেট ট্রেনের মত ছিলা না। প্রতি দিন এক দুবার ফোন করে আমার নামের সত্যতা জানতে চাইতো। প্রতিবারই বিশ্রী উচ্চরণে আমি না কে রেখেও ওর বিশ্বাস ভঙ্গতার কোন বিপ্লব ঘটাতে পারলাম না। এখানে বলে নেওয়া ভালো পৃথিবীর সর্বচ্চ সাধু পুরুষটির মাঝেও পরনারী কাতরতা আছে এটা আমি বিশ্বাস করি। কেউ প্রকাশ্যে তা উচ্চরণ করে অন্যের ভ্রু কুচনানো সহ্য করে আর এই অন্য মানুষটি নিজের মনের মধ্যে তা গোপন করে নিজেকে কষ্ট দেয়। আমি দ্বিতীয় দলের।
এই না আর সত্যতার মল্লযুদ্ধ চলল সপ্তাহ খানেক। এর মাঝে গল্পের তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিত ষ্পষ্ট হলো। ছেলেটিও আমাকে ফোন করে শান্ত বানাতে চাইল। আমি ভাবনার খোরাক খুজে পেলাম আনমনে। মনে হলো এখানে বিরহের ভোরটা রাত্রের সহবাস থেকে এখন মুক্ত হয়নি। ইচেছ করলে আমি একে পুনরায় রাতের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারব। ফিরিয়ে দেওয়ার এই দৈত্যটা আমাকে কুপোকাপ করে একটা মীমাংসা চাইল। আমি ছেলে হিসাবে একটা ছেলের কাছে শুনার সহজ লভ্যতার জন্যই দুটো ফোনের উৎস একটি নামের মাঝে এসে কেন থেমে যাচ্ছে সেই প্রশ্নটি ছুড়ে দিলাম। ঘটনাটা বেড় হলো সাধারণ মানের রোমান্তিক গল্প হয়ে। ছেলে মেয়েতে ভালোবাসা ছিল। মেয়েটা ছেলেটিকে প্রত্যখ্যান করে শান্তকে ভালোবাসতে চাইছে। শান্ত অবস্থার ঢাকায়। নানার বাড়ি ওদের দুজনার গ্রামে। কিছুদিন আগে সে ঐখানে গিয়ে মাসখানেক ছিল। সেই থেকে মেয়েটির সাথে শান্তর পরিচয়। পরিচয় পর্ব থেকে ভালবাসর বাতাস কতটা বেগবান হয়েছিল ছেলেটির অজানা। আমার জানার প্রশ্ন হলো শান্ত কেন ইচ্ছে করেই মেয়েটিকে ভুল নাম্বার দিয়েছিল। ছেলেটিক আমাকে শান্ত সেজে মেয়েটিকে এ পথ থেকে ফেরাতে বলল। আমি শান্ত হয়ে শান্তও উৎস আর খুজতে পারলাম না মেয়েটির কাছ থেকে। তাই আমার প্রশ্নটি অমিমাংসিত হয়ে রইল।
শুরু হলো আমার শান্ত হয়ে মেয়েটিকে ফেরাবার পালা। এই ক্ষেত্রে প্রথমেই সেই মল্লযুদ্ধটায় সমাপ্তি হলো মেয়েটির জেতার মাঝ দিয়ে। আমি শুধু ক্ষমা চেয়ে আমার সত্য জীবনের প্রতিচ্ছবি ওর সামনে উপস্থাপন করলাম। আমার স্ত্রী এবং সন্তানের সাথে ওর আলোচনার রাস্তা তৈরী করে দিয়ে ওকে বুঝাতে চাইলাম আমি মিথ্যে নই। এতোতেও ফেরার রাস্তাটা প্রশস্থ করা গেল না। ও সব মিথ্যে ভেবে আরো বেশি জেদী হতে লাগল। ভালোবাসার অন্ধত এখানে আবারো সত্য রূপে তার অবস্থান স্পষ্ট করে গেলো। আবার যুদ্ধের শুরু। ওকে হারাতে হবে, বুঝাতেই হবে।
আমি পারিনি। বরং নিজেই হেরে গিয়ে সম্পকের নতুন পরিনতির দিকে ধাপিত হলাম। অজানা সেই সময়, অজানা সেই আকাঙ্খা, কোথাও উচু নিচ, কোথাও শব্দের নিরবতা, কোথাও ভয় আমার সাথি হয়ে রইল। ছেলেটিকে যে কথা দিয়েছিলাম ওর কাছে ওই রকমই রইলাম আর বলতে লাগল চেষ্টা করছি। কিন্তু নিজের স্ত্রীর কাছে একই রকম থাকতে পারলাম। সে আমার পরিবর্তনকে ধরে আমার সব কিছু ধরে ফেলল। কোন রাগা রাগি নয় অশান্তি না করে সে শুধু আমাকে মোবাইলহীন করে দিয়েছিলো।
এ গল্পটার অন্যরকম সম্পাতির দিকে এরপরে আর আমি যাওয়ার সাহস করেনি। কেননা আমি যতটা না স্বামী, তারচেয়েও বড় একজন পিতা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১০ বিকাল ৩:১৭