somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন ভালো করা রান্না

৩০ শে জুন, ২০০৯ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খেতে পছন্দ করেন? রান্না করতে হবে এই ভয়ে মুখরোচক খাদ্য গত বছরে খেয়েছিলেন? কিংবা , তেল চর্বির ভয়ে খানা দানা বাদ দিয়ে ঘাসজীবী হয়েছেন ? তাহলে এই পোস্টটা আপনার এবং অবশ্যই আমার জন্য। উপরের সব কটি প্রশ্নের উত্তরে আমাকে হ্যাঁ দাগাতে হয় :-/:((/:):((

কিন্তু, এর মধ্যে আবার গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়া হলো রান্নার শখ।:|:|:|:| খুউউউউউউব যে পিঁয়াজ কাটতে আর বাটনা বাটতে ভালোবাসি তা নয়, তবে মনটা খারাপ হলে টুকিটাকি রান্না করে আপন মানুষ গুলোর সাথে একাট্টা বসে হা হা হি হি করতে খুব ভালো লাগে। B-):D:)

তো বেশি কথা না বলে , এই রকম মন ভালো করা, তেল কম, ক্যালরি কম, ঝামেলা কম , মসল্লা কম, স্বাদ কম থুক্কু বেশি একটা রান্না হয়ে যাক। দুনিয়ায় যাবতীয় সিরিয়াস বিষয় নিয়ে পড়তে পড়তে আর ভাবতে ভাবতে যাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা রোজ একটু কম পড়ে , তারাও চলে আসুন। এই হালকা পোস্টে কিছু ভারি মজা নেওয়া যাক।

বিষয় ঃ মোরগ পোলাউ খাওয়া ( রান্নার জন্য রহিমারে ডাক দে)
উপকরণঃ
মোরগ -- ৪০০ গ্রাম। ( আমি রান্না করলে দুইটা)
বাসমতি চাল -- দুই কাপ ( চায়ের কাপ) ।মুরগী বাড়লে , চাল বাড়বে।
আদা-- ১ চা চামচ উচু করে ( আপনাকে না , চামচটা উচু করে)
রসুন-- আদার অর্ধেক পরিমাণ ( একটু বেশি হইলেও ক্ষতি নাই)
গরম মসল্লা --- সামান্য ( গালি দিয়েন না , ব্যাখ্যা নিচে)
ধনিয়া -- আস্ত , ১ চা চামচ
জিরা-- আস্ত ।১ চা চামচ। গুড়া হইলেও সমস্যা নাই ।
তেজপাতা -- দুইটা , বড়
পিঁয়াজ -- ভীম সাইজ হলে একটা আর দেশী হইলে ৪/৫টা
কাঁচামরিচ , লবণ, হলুদ, আলু --- ইচ্ছা মত ।


প্রথমে একটু ব্যাখ্যায় যাই । গরম মসল্লা বলতে আসলে তেমন নির্দিষ্ট কোন ব্যাপার স্যাপার নেই। অঞ্চল ভেদে এতে নানা জিনিস মিশ্রিত হতে পারে। তবে আমার আম্মাজানের রান্না ঘরে আমি সাধারনত গোল মরিচ, লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ , সাথে তেজপাতা পেয়েছি । বিস্তারিত জানতে , উইকি মামুর শরণাপন্ন হউন । পরিমাণ ব্যাপারটা আসলেই আন্দাজের । মোরগের জন্য মসল্লা সবচেয়ে কম লাগে । সুতরাং , ৮টা এলাচ, দুই ইঞ্চি দারচিনি, ৮/১০ টা গোল মরিচ আর ৫/৬ টা লবঙ্গ হলেই চলবে। দুই বারে ব্যবহার করবেন ।
দ্বিতীয় ঘটনা হইলো , এইটা কম মাংস আর চাল দিয়ে দুইজনের জন্য রান্না করা যায়, আবার আমার মত যারা ভীষন ব্যস্ত তারা বেশি মাংস, বেশি চাল , মসলার পরিমাণ প্রয়োজন মত সামান্য এডিট করে নিয়ে দুই তিন দিনের জন্যও রান্না করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ২ টা মাঝারি ধরনের মোরগ আর ৭/৮ কাপ চাল দিলেও সমস্যা নাই। আলুবাজ ভাইয়েরা সাথে আলু দিতে পারেন। বিরানীর মত খোসাসহ ধুয়ে নিয়ে মাঝখান থেকে দুই টুকরা করতে হবে। বেশি বড় হলে চার টুকরা। তবে, খেয়াল রাখবেন , যাই করেন, আলু যেন গলে না যায় । কাঁচামরিচ বা হলুদ না দিলেও চলে , দিলেও ক্ষতি নাই ।
এখন শেষ দুর্ঘটনা হইলো , আসল রেসিপিতে সওফ বা সুইট ফেনেল সিড বলে একখান জিনিস ছিলো । বহু খুঁজে পেতে বের করলাম , ঐটা হলো মৌরি। সাথে সাথে বুঝলাম, আমার জিহবার সাথে মারামারি ঠেকানোর জন্য এইটার একটা বিকল্প দরকার । তো নিচে বিকল্পসহ বর্ননা

প্রথমেই ল্যাপ্টপ খুলুন। খুঁজে পেতে সামহোয়ার ইন ব্লগ থেকে ইশঠার, মেগা ইশঠার , ইন্ঠার গ্যালাক্টিক মিছাইল গায়ক ওয়েস্টার্ণ মিলনের " মৌরি" গানটা বের করে তা ফুল ভলিউমে চালিয়ে দিন।রান্নায় এইটুক মৌরিই যথেষ্ঠ।
মাংসের জন্য যাকে ক্রয় করেছেন তাকে প্যাকেট থেকে বের করে গভীর মনযোগের সাথে প্রেমময় দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করুন। নিজে না পারলে লিঙ্গ নির্ণয়ের জন্য কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
এইবার গানের ছন্দে ছন্দে কোমর দুলিয়ে নাচুন আর নাচতে নাচতে মোরগ কেটে ফানা করে ফেলুন। টুকরো বড় ছোটতে তেমন কিছু যায় আসে না , আল্লাহর চোখে সবাই সমান! ( আলহামদুলিল্লাহ) । পিয়াজের অর্ধেকটা কুচি করুন। বাকি অর্ধেক চাকা চাকা করে চার পাচ টুকরা হইলেই হবে। দেশী ছোট পিয়াজ হলে দুই ফালি করুন।
এইবার আপনার বাড়িতে কোন ঘরে একটা চুলা আছে সেইটা খুঁজে বের করুন। এই ব্যাপারে ব্লগার নরাধমের " ফোন এ ফ্রেন্ড" সাহায্য নিতে পারেন। একই সাথে একটা পানির কলও খুঁজে বের করতে পারলে খুব ভালো হয়।

এবার একটা বড় পাত্রে মাংসের টুকরো নিয়ে তাতে আদা, রসুন, অর্ধেক গরম মসল্লা সহ আস্ত ধনিয়া দিয়ে দিন। বড় চাকা করে কাটা পিয়াজ দিন।( হলুদ, কাচামরিচ যদি দিতে চান) লবণ দেবেন যেন মাংস আর আলুতে ঢুকে কিন্তু একটু কম করে । লাগলে পরে এডিট করার সুযোগ পাবেন।মাংস ডুবিয়ে পানি দিন। পাত্রের মুখ নতুন জামাই এর মত ঢেকে দিয়ে ৩০ থেকে চল্লিশ মিনিট জ্বাল দিয়ে ঝোল বানান। মাংস নামানোর ১৫ মিনিট আগে , একটা বাটিতে চাল নিয়ে ঠান্ডাপানিতে ভিজতে দিন। যারা আলুবাজ, তারা এই সময় হাড়িতে আলুর টুকরো যোগ করুন। বেশি আগে দিলে আলু গলে ডাল হয়ে যাবে। মাংস যদি ফার্মের মুরগী হয়, গন্ধ যাতে না থাকে এজন্য একটু বেশি আদা রসুন দিয়ে অনেক্ষণ জ্বাল দিতে পারেন। মাংস রান্না এই পর্বেই শেষ। সুতরাং যাবতীয় ক্যারিকেচার, এডিটিং এখানেই করে নিন। এরপর একটা ঝাঝরিতে ছেঁকে পানিটা বের করে নিন। এই ঝোলটাই হইলো আসল। ভিজানো চালের পানি ঝরায় নেন ।

এখন আরেক পাত্রে বউ থুক্কু তেল চাপান।বেশি মাখামাখি ভালো না লাগলে আগের পাত্রটিকেই পানিয়ে ধুয়ে তাতে দুই চা চামচ তেল গরম হয়ে উঠলে প্রথমে তেজপাতা দিন। তারপর বাকি গরম মসল্লা আর চা চামচের এক চামচ জিরা দিন , ফুটতে থাকুক। কিড়মিড় করে কিছুক্ষণ ফুটলে তাতে ঝোল ঢালুন। এইখানে খেয়াল করবেন, বাসমতি যতটুক তার দ্বিগুন ঝোল হবে। চাল যদি বাসমতি না হয় এবং আপনি বাঁশ খান, ( চিনিগুড়া , বালাম, ইত্যাদি ) তাহলে পানির পরিমাণের গন্ডগোল হইলে রাগ ইমন দায়ী থাকবে না । তবে চিন্তা কইরেন না , ঝোল কম পড়লে পানি মিশায় নেন। লবণ চেখে দেখেন আরো লাগবে কিনা । এরপর ঝাঝ্রি থেকে শুধু মাংসের টুকরা গুলা ঝোলে দেন। (মসলা ফেলে দিবেন) । তারপর পানি ফুটে উঠলে প্রি সোকড চাল দিবেন । মুখ ঢেকে মাঝারি আঁচে সিদ্ধ হতে দিন। পানি শুকিয়ে আসলে খুব সাবধানে নাড়ুন যাতে চাল না ভাঙে। হয়ে গেলো মোরগ পোলাউ । রহিমার রান্না শেষ । আপনি এখন খুন্তি হাতে মাতবরি বাদ দিয়ে খেতে বসুন।

রহিমার জন্য টিপ্সঃ চাল সিদ্ধ হলো কিনা খেয়াল রাখতে হবে । পানি বেশি হয়ে গেলে ঢাকনা খুলে শুকিয়ে নেওয়া যায়। আর সিদ্ধ না হতেই শুকিয়ে এলে জ্বাল একেবারে কমিয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে দমে রাখতে হবে । মিনিট দশেক রেখে দিলেই হলো ।

আপনার জন্য টিপ্সঃ এই রেসিপি অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করার দরকার নাই । মাংস , মসল্লা আর চাল, আলু যেভাবেই রান্না করেন, সুস্বাদু হইতে বাধ্য। সুতরাং, ( চিৎকার করে) রহিমা আ আ আ আ , কোকের বোতল এইদিকে ...

[ পরিশেষ ঃ মসল্লা ফেলে দেওয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লাগে নাই। এই জন্য ভাবছি , আস্ত মসল্লা গুলোকে একটা কাপড়ে বেধে ( জিরা , ধনিয়া ইত্যাদি) দেওয়া যায়। তারপর কাপড় উঠিয়ে নিলেই দাঁতের নিচে পড়বে না । বাকি সব তো একই । প্রথম পর্বের গরম মসল্লা ফেলে দিয়ে দ্বিতীয় পর্বে কেন আবার ঐ গরম মসল্লা দিয়েই বাগাড় দিতে হবে , আমি নিজেই বুঝিনি। পরীক্ষা করে জানাবো নে পরে। ]
২২টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের ট্যাক্স এর টাকা খরচ করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তারা কি আমাদের সেবা দিতে পারছে?

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৭:৩৬



আমার আব্বুর চাকরির সুবাধে বিভিন্ন জেলায় ঘুরা লাগে। তাই কমলাপুর ট্রেন স্টেশনও বহুবার গিয়েছি। আমরা গুলিস্থান থেকে ঢাকা টু দাউদকান্দি বাসে চরে ভবেরচর যাই। এখন কথা হচ্ছে কমলাপুর এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই জঞ্জাল স্বাধীনতার পর থেকেই, শুধু এক যুগের নয়....

লিখেছেন আমি সাজিদ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

এক, মানুষের মেন্টালিটি পরিবর্তন না হলে কোনও সরকার কিছু করে দিতে পারবে না।
দুই, কোন কারনে উপরের এক নাম্বার মন্তব্যটি করলাম?
স্বৈরাচার পতনের পর কি কি পরিবর্তন হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৮




মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১২




নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়

লিখেছেন জাহিদ শাওন, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৫০


এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×